জনতা ব্যাংকের কুষ্টিয়ার কুমারখালী শাখায় সুদ মওকুফের নামে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা লোপাট করা হয়েছে। তদন্তে তার প্রমাণ পেলেও জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযোগ আছে, ২০২২ সালে সেই টাকা লোপাটের ঘটনা তদন্তে প্রমাণ হওয়ার বিষয়টি ধামাচাপা দেন জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা।

দেশে রাজনৈতিক ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর প্রধান কার্যালয়ের একটি দল এ ঘটনা আবার তদন্ত করছে। এখনো বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

২০২২ সালের তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, জনতা ব্যাংকের কুমারখালী শাখার অধিকাংশ কৃষি ও পল্লি ঋণ ২০০৮ সাল থেকে বিতরণ করা হয়। ঋণগুলো অনাদায়ী হয়ে ২০১২ সালে খেলাপি হয়ে যায়। কিন্তু, তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক ঋণগুলো খেলাপি না দেখিয়ে সুদের টাকা আয় খাতে নিতে থাকেন। 

ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই সময় দেওয়া অধিকাংশ ঋণ ভুয়া ছিল। জামানতের বেশিরভাগ জমির দলিল ও কাগজপত্র স্থানীয় কম্পিউটারের দোকান থেকে তৈরি করা ছিল। এজন্য পরে ঝামেলা হতে পারে ভেবে ব্যবস্থাপক ঋণগুলো খেলাপি দেখাননি। 

তদন্ত কমিটি সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ সালে নতুন শাখা ব্যবস্থাপক এসেও আগের ব্যবস্থাপকের পথ অনুসরণ করেন। তবে, পরের ব্যবস্থাপকরা খেলাপি ঋণগুলো চিহ্নিত করেন। 

জনতা ব্যাংকের এ শাখায় ২০২০-২১ সালে ব্যবস্থাপক হন সাজ্জাউল করিম সুজন। তিনি ঋণ হিসাবের কাল্পনিক একটি বিবরণী (হাতে লেখা) তৈরি করে সুদ মওকুফের জন্য প্রধান শাখায় পাঠান এবং প্রকৃত তথ্য গোপন করে মওকুফ বাবদ ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার ২৫৯ টাকা বরাদ্দ করিয়ে নেন। এই টাকা যথাস্থানে ও যথারীতি জমা হচ্ছে কি না, এটা তদন্ত করার জন্য প্রধান কার্যালয় দায়িত্ব দেয় কুষ্টিয়া এরিয়া অফিসকে। সে সময় তদন্ত দল শাখা ব্যবস্থাপক সাজ্জাউলের বিভিন্নভাবে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পায়। এর মধ্যে প্রায় ৫৩ হাজার টাকা শাখাটির ক্যাজুয়াল লেবার রবিউল ইসলামের ব্যক্তিগত হিসাবে জমা করে তা পরে অন্য হিসাবে স্থানান্তর করা হয়।

সাজ্জাউল ফেঁসে যাচ্ছেন, জানতে পেরে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের তৎকালীন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল জব্বার তৎকালীন এরিয়া প্রধান অভিমন্যু কুমার মন্ডলকে ফোন দেন এবং কাউকে দায়ী না করে স্বাভাবিক একটি তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বাধ্য করেন। ব্যাপারটি তখন ধামাচাপা পড়ে। 

তদন্ত কমিটির প্রধান ও কুষ্টিয়া এরিয়া অফিসের সাবেক সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার আসলাম শেখ অভিযোগ করেছেন, আব্দুল জব্বার এরিয়া অফিসের প্রধানকে ফোনে ধমক দিয়ে তদন্ত প্রক্রিয়া স্থগিত এবং কাউকে দায়ী না করে স্বাভাবিক রিপোর্ট দিতে বাধ্য করেন।

এ বিষয়ে এরিয়া প্রধান অভিমন্যু বলেন, তদন্ত করতে টিম করেছিল। নাম মনে নেই, তবে হেড অফিস থেকে একজন কর্মকর্তা আমাকে চাপ দিয়েছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী সরকারের পতনের পর সাজ্জাউলের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়। এরপর জনতা ব্যাংক প্রশাসন নতুনভাবে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২৭ এপ্রিল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে একটি দল তদন্তে আসে এবং বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে।

পুনরায় তদন্তের বিষয়টি জানতে পেরে বর্তমানে কুষ্টিয়া এরিয়া অফিসে কর্মরত স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদ কুষ্টিয়া এরিয়া কমিটির সভাপতি সাজ্জাউল তদন্ত কার্যক্রম থামানোর চেষ্টা করছেন বলে ব্যাংকের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাজ্জাউল বলেছেন, “তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ৫ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।” তিনি এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য সাংবাদিকদেরকে অনুরোধ করেন।

এ ব্যাপারে প্রধান কার্যালয়ের তৎকালীন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক জব্বারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

নতুন তদন্তের বিষয়ে কমিটির প্রধান জনতা ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক নাসির উদ্দিন মাহমুদ জানিয়েছেন, তদন্ত এখনো চলছে। রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়নি। 

অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেল কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব কথা ফোনে বলা সম্ভব নয়।

ঢাকা/কাঞ্চন/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর তদন ত কর স জ জ উল তদন ত ক তৎক ল ন কম ট র র জন য ন ত কর মওক ফ ঋণগ ল

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন আজ বিকেলে, ক্লাস ১৩ নভেম্বর

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক (পাস) প্রোগ্রামে ভর্তি কার্যক্রম আজ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টা থেকে শুরু হচ্ছে। আবেদন করা যাবে আগামী ১৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত। এ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে ১৩ নভেম্বর থেকে। গত রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে।

ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন যেসব শিক্ষার্থী

২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালের এসএসসি বা সমমান এবং ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালের এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন ভর্তির জন্য। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি (ভোকেশনাল), এইচএসসি (বিজনেস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি) ও ডিপ্লোমা-ইন-কমার্স উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন। এ-লেভেল, ও-লেভেল ও বিদেশি সনদধারীদের ক্ষেত্রে নির্ধারিত নিয়মে সরাসরি ডিন অফিসে বা ই–মেইলে আবেদন করতে হবে শিক্ষার্থীদের।
যেসব শিক্ষার্থী গত দুই শিক্ষাবর্ষে (২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪) স্নাতক (সম্মান), স্নাতক (সম্মান) প্রফেশনাল বা স্নাতক (পাস) প্রোগ্রামে ভর্তি হয়ে রেজিস্ট্রেশন কার্ড পেয়েছেন, তাঁরা এই শিক্ষাবর্ষে নতুন করে ভর্তি হতে পারবেন না। তবে পূর্ববর্তী ভর্তি বাতিল করে নতুন শিক্ষাবর্ষে আবেদন করতে পারবেন। একই সঙ্গে কোনো শিক্ষার্থী দ্বৈত ভর্তি হলে তাঁর উভয় ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশন বাতিল হবে।

আবেদন ফি ৪০০ টাকা

ভর্তি ফি হিসেবে প্রাথমিক আবেদন ফি ৪০০ টাকা, যার মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ ২৫০ টাকা এবং কলেজের অংশ ১৫০ টাকা। ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পর রেজিস্ট্রেশন ফি ৭২০ টাকা জমা দিতে হবে। কলেজ কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করে অনলাইনে নিশ্চয়ন করবে। তবে নিশ্চয়ন ছাড়া কোনো আবেদনকারীকে মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। আবেদন ফি ১৯ অক্টোবরের মধ্য জমা দিতে হবে।

আরও পড়ুনবাংলাদেশ বিমানে ইন্টার্নশিপ, দৈনিক হাজিরায় সম্মানী ৬০০ টাকা৪ ঘণ্টা আগে

আবেদনকারীদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রতিটি কলেজের জন্য আলাদাভাবে কোর্সভিত্তিক মেধাতালিকা প্রণয়ন করা হবে। একই মেধা নম্বরপ্রাপ্ত হলে এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ (৪০: ৬০ অনুপাতে) এবং প্রয়োজনে মোট নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করা হবে। এরপরও সমতা থাকলে বয়স কম শিক্ষার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ভর্তি কার্যক্রম ধাপে ধাপে প্রথম মেধাতালিকা, দ্বিতীয় মেধাতালিকা, কোটার মেধাতালিকা এবং প্রথম ও দ্বিতীয় রিলিজ স্লিপের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। তবে এবারও তৃতীয় রিলিজ স্লিপে আবেদন করার সুযোগ থাকবে না।

বিস্তারিত দেখুন এখানে

আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ, সুযোগ পাবেন ৪৮ জেলার যুবরা১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫আরও পড়ুন১২ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে সরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন আজ বিকেলে, ক্লাস ১৩ নভেম্বর