‘কালো পাহাড়’, ‘সাদা পাহাড়’ বা ‘বাহাদুর’, ‘বীর বাহাদুর’– এগুলো কোরবানির জন্য তৈরি ষাঁড়ের নাম। বড় শখ-আহ্লাদ করে খামারি বা চাষিরা রেখেছেন এমন নাম। লালনপালনও করেছেন সন্তানসম মমতায়। উদ্দেশ্য একটিই, কোরবানির হাটে বেশি দামে বিক্রি করে খরচ উসুল। বাড়তি উপার্জন দিয়ে কেউ নতুন করে পুষবেন বাছুর, আগামী বছরের জন্য। কেউ গড়বেন ঘর। তবে হাটের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে বড় আকারের এসব বড় গরু বিক্রি করে দাম মিলবে কিনা– এ নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই তাদের।
‘বীর বাহাদুরে’র জাত ফ্রিজিয়ান। পিরোজপুর সদরের সরদার অ্যাগ্রোতে ষাঁড়টি বেড়ে উঠছে তিন বছর ধরে। উপজেলার কলাখালী ইউনিয়নের জিন্নাত আলী মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের কাছে এ খামারটি। এখানে শাহীওয়াল, ফ্রিজিয়ান ও সিন্ধি জাতের ১২টি গরু প্রস্তুত। প্রতিষ্ঠানটি এস এম জিয়াউল এহসান পলাশ ও তাঁর দুই ভাইয়ের মালিকানাধীন। জিয়াউল এহসানের ভাষ্য, ‘বীর বাহাদুরের’ ওজন ২৫ মণের বেশি। দাম হাঁকছেন ৯ লাখ টাকা। এ গরুটি ১ জুন ঢাকার হাটে নিয়ে যাবেন। এটিসহ আরও তিনটি গরু কেনার বিষয়ে ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জের এক ক্রেতা যোগাযোগ করেছেন। দাম নিয়ে তাদের মধ্যে কথাবার্তা চলছে।
তাঁর ভাই এসএম সোহেল সরদার এবারের ঈদে গরুগুলোর সঠিক দাম পাবেন কিনা, এ নিয়ে শঙ্কিত।
তাদের মতোই দুশ্চিন্তায় আছেন জেলার সাত উপজেলার খামারিরা। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই তাদের ব্যস্ততা বেড়েছে গরুর পরিচর্যায়। দম ফেলারও ফুরসত পাচ্ছেন না। দাম নিয়ে সবার কপালেই চিন্তার ভাঁজ। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, পিরোজপুরে ছোট-বড় মিলিয়ে নিবন্ধিত গরু-ছাগলের খামার আছে ৩২০টি। যদিও অনিবন্ধিত খামারের সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। এ বছর জেলার কোরবানির পশুর চাহিদা ৪০ হাজার ২৫৭টি। যদিও প্রস্তুত আছে ৪৬ হাজার ৭১৭টি পশু।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.
‘বিক্রির কথায় কান্না পাচ্ছে’
প্রায় ছয় ফুট উঁচু ‘কালো পাহাড়’ থাকে টিনশেডের মেঝেপাকা ঘরে। দিনে বেঁধে রাখা হয় সামনের বরইগাছে। গরম বাড়লে বাতাস করতে হয় হাতপাখা দিয়ে। প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে বাড়ির গাভির গর্ভে জন্ম নেওয়ার পর থেকে এমন আদরে বেড়ে উঠেছে ‘কালো পাহাড়’। ফ্রিজিয়ান জাতের এই ষাঁড়ের পেছনে দিনে প্রায় হাজার টাকা খরচ হয়। এসব জানান গরুটির লালনপালনকারী কৃষক টুটুল শেখ। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের বিলকাঠিয়া গ্রামে বাড়ি তাঁর।
বুধবার টুটুল শেখ বলেন ভাষ্য, স্ত্রী মিরানা খাতুন ও ছেলে সুরুজ আলী শেখের সহায়তায় গরুটি পালন করছেন। লেজ থেকে মাথা পর্যন্ত গরুটির দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে আট ফুট। প্রায় ৩০ মণ ওজনের ষাঁড়টি ১২ লাখ টাকায় বিক্রি করতে চান। সেই টাকায় আবারও গরু কেনা ও জমি কেনার আশা তাঁর।
মিরানা খাতুন পাশ থেকে বলেন, ‘প্রতিদিনই চার-পাঁচবার গোসল করাই। কারেন্ট চলে গেলি পাখা দিয়ে বাতাস করি। সারাক্ষণ গোয়ালঘরে পড়ে থাকি। বিক্রির কথা শুইনে খুবই কষ্ট হচ্ছে, কান্না পাচ্ছে।’
তাঁর ছেলে সুরুজ আলী শেখ অবশ্য বাস্তববাদী। গরুটি বিক্রি নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তিনি বাজার পরিস্থিতির কথা জানান। একই দুশ্চিন্তায় একই এলাকার কাজল হোসেনের। তিনি তিন বছর ধরে ফ্রিজিয়ান জাতের গরু লালনপালন করছেন। ২০-২২ মণ ওজনের গরুটির নাম শখ করে রেখেছেন ‘বাহাদুর’। কাজলও চান, পাঁচ লাখ টাকায় বাড়ি থেকে গরুটি বিক্রি করতে। যদিও এখনও কেউ দাম বলেনি। তাই খুব দুশ্চিন্তায় আছেন।
প্রায় ২৫ মণের ‘সাদা পাহাড়’ নিয়েও একই সংকটে নন্দলালপুর ইউনিয়নের আলাউদ্দিন এলাকার অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আনারুল ইসলাম। তিন বছর চার মাস বয়সী ষাঁড়টির পেছনে দিনে খাবার খরচ ৭০০-৮০০ টাকা। আশা করছেন, ১০ লাখ টাকায় বিক্রি হবে। এখনও ক্রেতা মেলেনি। ২ জুন ঢাকার নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
হাটেও অভিন্ন চিত্র
প্রতি বুধবার কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক সড়কের আলাউদ্দিন নগরে বসে পশুর হাট। এদিন প্রায় ১৬ মণ ওজনের ষাঁড় নিয়ে আসেন সুমন মাহমুদ। তাঁর খামার কুষ্টিয়ার লাহিনীপাড়ায়। সুমন বলেন, ছোট ও মাঝারি গরু বিক্রি হচ্ছে। আট লাখ টাকার গরুর দাম চার লাখ টাকা বলছেন ক্রেতা।
আলাউদ্দিন নগর পশুহাটের সভাপতি হামিনুর রহমানের ভাষ্য, গত বছরের তুলনায় এবার ঈদে পশু বিক্রি দুই-তৃতীয়াংশ কম হচ্ছে। বুধবারের হাটে বিক্রি হয়েছে ৭২২টি গরু ও ৫৭৯টি ছাগল।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, কুমারখালীতে ২২ হাজার ৪০০টির মতো পশু কোরবানির জন্য তৈরি করা হয়েছে। হাটে ছোট ও মাঝারি গরু বেচাকেনা শুরু হয়েছে। বড় গরু বিক্রি নিয়ে চিন্তিত সবাই।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গর প রস ত ত ক রব ন র ত ন বছর র জন য উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি সংশোধন
হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকার্য পরিচালনার জন্য ১৪ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবকাশকালীন বেঞ্চ গঠন করেছেন প্রধান বিচারপতি। তবে এ বিষয়ে ২৮ আগস্ট জারি করা সুপ্রিম কোর্টের ৩৯৭-এ নম্বর বিজ্ঞপ্তির আংশিক সংশোধন আনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সরকার এক তথ্য বিবরণীতে বিজ্ঞপ্তির আংশিক সংশোধনের বিষয়টি জানায়।
সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি ইউসুফ আব্দুল্লাহ সুমন যৌথভাবে ডিভিশন বেঞ্চে বসবেন। তারা হাইকোর্টের মূল ভবনের ২৩ নম্বর কক্ষে নির্ধারিত তারিখে বেলা ১১টা ৪০ থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শুনানি গ্রহণ করবেন।
এ সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ও মানি লন্ডারিং আইন সংশ্লিষ্ট মামলা, জরুরি ফৌজদারি মোশন, ফৌজদারি আপিল ও জামিন সংক্রান্ত আবেদনপত্র, জেল আপিল, রিভিশন এবং অন্যান্য ফৌজদারি বিবিধ মামলার শুনানি হবে। এছাড়া, বেঞ্চে স্থানান্তরিত বিষয়গুলোতেও শুনানি ও আদেশ দেওয়া হবে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/টিএই