চিকিৎসক-কর্মচারীদের সঙ্গে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের মারামারি-সংঘর্ষের জেরে আজ শুক্রবারও রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে।

গত বুধবার সকাল থেকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এই অচলাবস্থা চলছে। চিকিৎসাসেবা কখন চালু হবে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

আজ সকাল ১০টার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক ও নার্স নেই। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নতুন রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন। আগে যেসব রোগী এখান থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন, তাঁদের অনেকে ফলোআপের জন্য এসে তা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেক সাধারণ রোগী ইতিমধ্যে অন্যত্র চলে গেছেন। আর কিছু সাধারণ রোগী এখনো হাসপাতালে আছেন। তাঁরা বলছেন, চিকিৎসার মাঝপথে তাঁরা এখন কোথায় যাবেন? তাই হাসপাতালে রয়ে গেছেন। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের কেউ হাসপাতাল ছেড়ে যাননি বলে জানা গেছে।

‘চিকিৎসা-খাবার কিছুই পাচ্ছি না’

ছয় মাস ধরে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত কোরবান হোসাইন। তাঁর ডান চোখ ইতিমধ্যে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। বুধবার হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় বাঁ হাত ভেঙে গেছে বলে জানান কোরবান।

কোরবান হোসাইন বলেন, ‘এখানে সব চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে। ডান চোখের প্রভাব বাঁ চোখেও পড়ছে। বাঁ চোখ জ্বালাপোড়া করে, পানি বের হয়। আমি এখন বাঁ চোখও হারানোর শঙ্কায় আছি। তিন দিন ধরে চিকিৎসা ও খাবার কিছুই পাচ্ছি না।’

বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেক সাধারণ রোগী ইতিমধ্যে অন্যত্র চলে গেছেন। আর কিছু সাধারণ রোগী এখনো হাসপাতালে আছেন। তাঁরা বলছেন, চিকিৎসার মাঝপথে তাঁরা এখন কোথায় যাবেন? তাই হাসপাতালে রয়ে গেছেন। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের কেউ হাসপাতাল ছেড়ে যাননি বলে জানা গেছে।

হাসপাতালে কবে আবার চিকিৎসাসেবা চালু হবে, তা জানা নেই বলে উল্লেখ করেন কোরবান হোসাইন। তিনি বলেন, ‘এখান থেকে চিকিৎসা আর হবে না বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আমার ধারণা, আমরা হাসপাতালে থাকায় এখানকার কর্মচারী ও ডাক্তাররা তাঁদের খেয়ালখুশি মতো রোগী নিয়ে সিন্ডিকেট চালাতে পারছেন না। তাই তাঁরা আমাদের বের করে দিতে চান।’

ভোগান্তিতে অন্য রোগীরা

কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী গাউসুল আজম। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুলিতে এক চোখ হারিয়েছেন তিনি। মারামারি-সংঘর্ষের জেরে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ হওয়ার বিষয়টি জানতেন না গাউসুল।

গতকাল বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া থেকে গাউসুল ঢাকায় আসেন। এসে দেখতে পান, হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা বন্ধ। চিকিৎসাসেবা চালুর অপেক্ষায় আছেন তিনি। কিন্তু কবে চালু হবে, তা তাঁর জানা নেই।

আজ গাউসুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক চোখ নেই। আরেক চোখেও কিছু সমস্যা অনুভব করছি। কয়েক দিন পরপর এখানে ডাক্তার দেখাতে আসি। কিন্তু এভাবে সেবা বন্ধ থাকলে তো সমস্যা। এই হাসপাতালের বিকল্পও নেই। আর বেসরকারি হাসপাতালে তো অনেক খরচ। দ্রুত চিকিৎসাসেবা চালু হোক, এটাই চাই।’

চোখের কয়েকটি পরীক্ষা করানোর জন্য আজ ডেমরা থেকে এই হাসপাতালে আসেন মামুন সরকার। এসে দেখতে পান, সব সেবা বন্ধ। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘চোখের কয়েকটি পরীক্ষা করাতে এসেছি। এই পরীক্ষাগুলো সাধারণ হাসপাতালে পাওয়া যায় না। কিন্তু এখানে সব সেবা বন্ধ রয়েছে। কবে চালু হবে, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।’

নারায়ণগঞ্জের মো.

কাউসার আহাম্মেদ সম্প্রতি এই হাসপাতাল থেকে তাঁর চোখের অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। গত মঙ্গলবার সকালে তিনি আবার চোখের অবস্থা দেখাতে আসেন। তখন তাঁকে ভর্তি দেন চিকিৎসক। ভর্তির পর তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু বুধবারের সংঘর্ষের জেরে চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে গেলে বিপাকে পড়েন তিনি।

কাউসার প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন দিন যাবৎ চিকিৎসা পাচ্ছি না। চোখ নিয়ে শঙ্কায় আছি। চিকিৎসা না পেলে অবস্থা আরও খারাপ হবে। এই অবস্থায় অন্য কোথাও যেতেও পারছি না।’

চিকিৎসাসেবা চালু নিয়ে অনিশ্চয়তা

আজ সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুধবারের পর আর কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এখানে ঘটেনি। নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁরা হাসপাতালে অবস্থান করবেন।

হাসপাতালে দায়িত্বরত সহকারী আনসার কমান্ডার অমৃত বালা প্রথম আলোকে বলেন, এখনো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। কবে হাসপাতালে চিকিৎসক ও কর্মচারীরা আসবেন, তা তাঁরা জানেন না।

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক খায়ের আহমেদ চৌধুরী গতকাল প্রথম আলোকে বলেছিলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত রোগীদের অন্তত ৯০ শতাংশ সুস্থ আছেন, যাঁদের বাড়ি পাঠানো যেতে পারে। এর বাইরে যাঁদের চিকিৎসার প্রয়োজন হবে, তাঁদের অন্য হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া উচিত। কারণ, চিকিৎসকেরা এই মুহূর্তে রোগীদের কোনো ওষুধ দিলে রোগীরা মনে করবেন, তাঁরা শত্রুতাবশত কিছু খাইয়ে দিচ্ছেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত রোগীরা উন্নত চিকিৎসাসেবা না পাওয়ার অভিযোগ করছেন। এ প্রসঙ্গে খায়ের আহমেদ চৌধুরী গতকাল বলেছিলেন, ‘তাঁরা আমাদের চিকিৎসায় সন্তুষ্ট নন। সবাই বিদেশে যেতে চান। এখন পর্যন্ত সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে প্রায় ১৫ জনকে পাঠানো হয়েছে। আমি মনে করি, বাকিদের অন্য কোনো হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিত। না হলে এই সংকটের সমাধান হবে না।’

আজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসপাতাল বন্ধ। কোনো চিকিৎসক ও কর্মচারী প্রবেশ করতে পারছেন না। কবে নাগাদ পুনরায় সেবা চালু হবে, সেটা জানা নেই। হাসপাতালে কোনো রোগীর অবস্থানের তথ্যও আমার কাছে নেই।’

আরও পড়ুনমারামারির পর দুদিন ধরে চিকিৎসাসেবা বন্ধ ১২ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনচক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে মারামারি-বিক্ষোভ, দিনভর স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ২৮ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক স ঘর ষ র রব ন হ স চ ক ৎসক দ র অন ক রব ন অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

জবিতে ছাত্রদলের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রদলের একাংশ সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করেছে।

শনিবার (৩১ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে নানা প্রজাতির ফলজ ও বনজ গাছের চারা রোপণের মাধ্যমে এ কর্মসূচি পালন করেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।

ছাত্রদলের নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য ছিল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শকে স্মরণ করে পরিবেশবান্ধব এক উদ্যোগ নেওয়া। দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় এবং পরিবেশ রক্ষার চিন্তা থেকেই এই আয়োজন করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

দিনাজপুরে আমের বাম্পার ফলন স্বপ্ন দেখাচ্ছে

বজ্রপাতে গাছ লম্বালম্বি দ্বিখণ্ডিত, উৎসুক মানুষের ভিড়

জবি ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক সুমন সরদার বলেন, “একটি চারা গাছ লাগানো মানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কিছু রেখে যাওয়া। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা পরিবেশ রক্ষায় কাজ করছি। রাজনীতি হোক মানুষের উপকারের জন্য—এটাই আমাদের লক্ষ্য।”

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জবি ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন সৌরভ, ফারুক রানা, সাখাওয়াতুল ইসলাম খান পরাগ, আরিফুল ইসলাম আরিফ, ইয়াসির আরাফাত, রায়হান হোসেন অপু, রবিন মিয়া শাওন ও মো. মেহেদী হাসান।

এছাড়া ছাত্রদলের সদস্য মেহেদী হাসান ইমন, সজীব আহসান, মাশফিকুল ইসলাম রাইন, মো. মনিরুজ্জামান, মিঠু আলী, রেদোয়ান চৌধুরী, নাইমুর রহমান, ইভান, মাহমুদুল হাসান নাইম এবং কর্মী আশরাফুল ইসলাম, সৈরভ আহমেদ, আকরাম খান, আবু হুরাইয়া মোবাশ্বের, শাহরুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ