গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে দিনভর বৃষ্টি হচ্ছে। ঘড়ি দেখেই বুঝতে হলো সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার ট্রেন বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ২০ মিনিটে। আমার বাড়ি ফেরার আবেগের সঙ্গে আবহাওয়ার কেমন যেন বিরোধ মনে হচ্ছে। যাহোক, এত সাতপাঁচ না ভেবে সব গোছগাছ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘বিসমিল্লাহ’ বলে।
রাত ৭টা ২০ মিনিট, মোহাম্মদপুরে
বের হচ্ছি মোহাম্মদপুর থেকে। রাস্তায় বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে আমার ছাতাটা পেরে উঠবে বলে তেমন আত্মবিশ্বাস পাচ্ছি না। এই অবস্থায় ‘ভেক্টর’ পড়ার জ্ঞানটুকু কাজে লাগাচ্ছি। উঠলাম লেগুনায়, বাসস্ট্যান্ড থেকে ফার্মগেট। লেগুনায় উঠেই মনে হচ্ছে, আজকে খোদা আমার ধৈর্য পরীক্ষার পরিকল্পনায় আছেন। কিন্তু আমার কাছে ভালোই লাগছে।
লেগুনার ছাদের ফুটো দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে। গাড়ি চলছে বেশ হেলেদুলে। জানালার পর্দা হঠাৎ খুলে গিয়ে বৃষ্টির ঝাপটা এসে পড়ছে। পাশের এক চাচা দৃঢ় উদ্যমে ওই পর্দা ধরে রাখছেন, বৃষ্টি থেকে বাঁচাচ্ছেন আমাদের। সিন্দবাদের জাহাজেই এসে পড়েছি বলে মনে হচ্ছে।
রাত ৮টা, ফার্মগেটে
এখন পর্যন্ত সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই চলছি মনে হচ্ছে। কিন্তু আমার বাড়ি ফেরার রোমাঞ্চ যে এখন অন্য মাত্রায় চলে যাবে, আমি ভাবিনি। খুব বেশি যানজট হলে ২০ মিনিটের মতো দেরি হয়, কিন্তু আজ গুনে গুনে ৩০ মিনিট এই ফ্লাইওভারের নিচে। ২০°ডিগ্রি কোণে ছাতা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। আমার কমলাপুর যাওয়ার ‘আয়াত’ বাসের কোনো নামগন্ধও নেই।
এর মাঝে আবার মেট্রোতে করে মতিঝিল যাওয়া অথবা বাসে করে বিমানবন্দর চলে যাওয়ার চিন্তাও মাথায় ঢুকেছে। কিন্তু আমি ঠিক করলাম কমলাপুরই যাব, বাসেই যাব; যা হয় হোক। ওই বাসের আশায় গুড়েবালি। আমি উঠে পড়লাম আরামবাগ যাওয়ার বাসে।
রাত ৮টা ৩৫ মিনিট, বাসে বসে দুশ্চিন্তা
বৃহস্পতিবার সপ্তাহের অন্য দিনের চেয়ে গাড়ির চাপ বেশি। বাসের মতিগতি দেখে বুঝতে পারছিলাম, এখন সময়ের সঙ্গে বেশ হাড্ডাহাড্ডি একটা প্রতিযোগিতা হবে। বাস চলছে কচ্ছপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর আমি চাচ্ছি সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে। বাসে চুপচাপ বসে আছি, কিন্তু আমার মনে এখন ‘ফর্মুলা ওয়ান’-এর উত্তেজনা। ক্ষণে ক্ষণে ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি আর হতাশ হচ্ছি। আমার ট্রেন মিস করার সম্ভাবনা যে বেড়েই চলছে।
এমন সময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপ হওয়া এক ভাই বলে উঠলেন, ‘হায়, হায়! আমার মোবাইল! আমার মোবাইল!’ তখন পৃথিবীটা কেমন রাতের এই আঁধারের মতো নিষ্ঠুর মনে হতে লাগল। যাহোক, সবকিছু ছাপিয়ে আমার মাথায় ছিল ট্রেন ধরার চিন্তা। ৯টা ১০ মিনিটের আগে আমাকে আরামবাগ পৌঁছাতেই হবে, এরপর রিকশায় উঠতে হবে।
রাত ৯টা ১৮মিনিট, আরামবাগে
বাস থেকে নেমে দেখি অন্ধকার এক দ্বীপের মতো জায়গা। চার পাশের রাস্তায় হাঁটুপানি। গাড়ি, মানুষজনও অনেক কম। কিছুই চিনতে পারছি না। দূরে এক রিকশাওয়ালা মামাকে বললাম কমলাপুর নিয়ে যেতে। মামা বলেন, ওই দিকে রাস্তায় অনেক পানি, যাওয়া যাবে না। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে গেছে। আমি এখন কী করব! জোরে চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছা করছে। আমার ট্রেন যদি নিতান্তই দেরি করে, তাহলেই কেবল আমি আজ ট্রেনে উঠতে পারব।
এক ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম কমলাপুর কোনদিকে। উনার দেখানো পথে হাঁটতে লাগলাম, পিচ্ছিল রাস্তায় দৌড়াতেও পারছিলাম না। হঠাৎ দেখি রাস্তায় হাঁটুপানি, কেমন একটা অন্ধকার পরিবেশ। লোকজন কেউ পার হচ্ছে, কেউ দাঁড়িয়ে দেখছে।
আমার ঘড়িতে তখন ৯টা ২৫মিনিট। একটি হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এখান থেকে কমলাপুর হেঁটে যেতে কতক্ষণ লাগবে?’ উনি কেমন যেন হেসে বললেন, ‘ভাই, কম হইলেও ৩০ মিনিট লাগব, রাস্তায় ম্যালা পানি। কেমনে যাইবেন?’ এই কথা শুনে আমার কলিজার পানি যেন শুকিয়ে গেল। আর আমি বুঝলাম না, আমাকে একটা দুঃসংবাদ দেওয়ার সময় উনি এমন হাসলেন কেন?
যাহোক, নিজের মনকে বুঝ দিলাম, কোনো এক অজানা কারণে হয়তো আমার ট্রেনটা দেরি করবে। পায়জামা হাঁটু পর্যন্ত উঠিয়ে হাঁটুপানিতেই দ্রুত চললাম।
রাত ৯টা ২৭ মিনিট, রিকশায়
অনেকটা হেঁটে সামনে গিয়ে দেখি বেশ কিছু রিকশা আছে। কিন্তু কোনো চালকই কমলাপুরের কথা শুনে যেতে চাচ্ছিল না। বুঝতে পারছিলাম না ওই দিকে আসলেই কি কোনো বিপদ হয়েছে। একপর্যায়ে এক রিকশাওয়ালা বৃদ্ধ মামাকে বললাম, ‘আপনার কত টাকা লাগবে বলেন, তবুও আমাকে উদ্ধার করেন।’ এরপর মামা একটু হেসে বলল, ‘আচ্ছা, ওঠো মামা। দেখি কী হয়!’
ভাবছি, হয়তো গিয়ে দেখব ট্রেনটা ছেড়ে দিয়েছে। তবুও ট্রেন দেরি করার একটু হলেও সম্ভাবনা আছে। এই আশায় মামার দেওয়া পলিথিনে ধরে রিকশায় বসে আছি। এর শেষটা আমি দেখেই ছাড়ব।
রাত ৯টা ৩২ মিনিট, কমলাপুর রেলস্টেশনে
এত নাটকীয় অভিজ্ঞতার পর অবশেষে স্টেশনে পৌঁছালাম। ৫০ টাকার জায়গায় মামাকে ১০০ টাকা দেওয়ার পরও উনার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতাবোধ কাজ করছিল, অন্তত উনি তো আমাকে নিতে রাজি হয়েছিলেন। যদিও এখনো জানি না ট্রেন আছে নাকি ছেড়ে গেছে। স্টেশনে ভিড় কম ছিল না মোটেও। এর মাঝেই এবার দিলাম দৌড়।
দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। হঠাৎ দেখি প্ল্যাটফর্মের কাছে ডিসপ্লেতে ছাড়ার তালিকায় ১ নম্বরে আমার সেই ‘মহানগর এক্সপ্রেস’। দূরে তাকিয়ে দেখি ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে এখনো ট্রেন দাঁড়ানো। আমার চোখে পানি চলে আসে। মনে হচ্ছে আমার জন্যই সে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে। আমি খুশিতে চিৎকার দিয়ে আবার দৌড়াতে শুরু করলাম। কিন্তু এবারের দৌড় আর কোনো সংশয়ের নয়, বরং নিশ্চয়তার।
এই সেই ট্রেন। ট্রেনে উঠেই একবার স্থির হয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়লাম। মনে চাচ্ছিল নেমে গিয়ে রিকশাওয়ালা মামাকে কপালে একটা চুমু দিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে আসি। তা আর হয়ে উঠল না। ট্রেন ছেড়ে দিল। আর শেষ হলো আমার এই রোমাঞ্চকর যাত্রা। পথে ট্রেনের জানালা দিয়ে শহরটা দেখছিলাম আর মনে হচ্ছিল, খোদা কত বিচিত্র মানুষ আর তাদের বিচিত্র আবেগ দিয়ে এই শহরটা পূর্ণ করে রেখেছেন।
লেখক: হাসানুল বান্না, দ্বাদশ শ্রেণি, সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কমল প র আম র ম করল ম
এছাড়াও পড়ুন:
পানির নিচেও ছবি তুলতে পারে এই স্মার্টফোন
দেশের বাজারে আন্ডারওয়াটার ফটোগ্রাফি প্রযুক্তিনির্ভর নতুন স্মার্টফোন এনেছে ভিভো। ‘ভিভো ওয়াই৪০০’ মডেলের পানিরোধী ফোনটি ২ মিটার গভীর পানিতে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট পর্যন্ত নিরাপদ থাকে। ফলে পানির নিচে ছবি তোলার পাশাপাশি পানিতে পড়ে গেলেও ফোনটি নষ্ট হয় না। আজ বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে ভিভো বাংলাদেশ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৬ দশমিক ৬৭ ইঞ্চি অ্যামোলেড পর্দার ফোনটির রিফ্রেশ রেট ১২০ হার্টজ। পাশাপাশি পর্দার উজ্জ্বলতা ১ হাজার ৮০০ নিটস হওয়ায় সহজেই উন্নত রেজল্যুশনের ছবি ও ভিডিও দেখা যায়। ফোনটির পেছনে ৫০ ও ২ মেগাপিক্সেলের দুটি ক্যামেরা রয়েছে। সামনে রয়েছে ৮ মেগাপিক্সেলের সেলফি ক্যামেরা।
স্ন্যাপড্রাগন ৬৮৫ প্রসেসরে চলা ফোনটিতে ৬ হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারির পাশাপাশি ৪৪ ওয়াটের ফ্ল্যাশ চার্জিং সুবিধা থাকায় দ্রুত চার্জ করা যায়। ফলে ব্যাটারির চার্জ শেষ হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় না। ৮ গিগাবাইট র্যামযুক্ত ফোনটি দুটি সংস্করণে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। ১২৮ গিগাবাইট ও ২৫৬ গিগাবাইট ধারণক্ষমতার ফোনটির দাম যথাক্রমে ২৭ হাজার ৯৯৯ টাকা ও ২৯ হাজার ৯৯৯ টাকা। ফোনটি কেনার আগাম ফরমাশ দিলে পাওয়ার ব্যাংকসহ বিভিন্ন পুরস্কার পাওয়া যাবে।