গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে দিনভর বৃষ্টি হচ্ছে। ঘড়ি দেখেই বুঝতে হলো সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার ট্রেন বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ২০ মিনিটে। আমার বাড়ি ফেরার আবেগের সঙ্গে আবহাওয়ার কেমন যেন বিরোধ মনে হচ্ছে। যাহোক, এত সাতপাঁচ না ভেবে সব গোছগাছ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘বিসমিল্লাহ’ বলে।
রাত ৭টা ২০ মিনিট, মোহাম্মদপুরে
বের হচ্ছি মোহাম্মদপুর থেকে। রাস্তায় বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে আমার ছাতাটা পেরে উঠবে বলে তেমন আত্মবিশ্বাস পাচ্ছি না। এই অবস্থায় ‘ভেক্টর’ পড়ার জ্ঞানটুকু কাজে লাগাচ্ছি। উঠলাম লেগুনায়, বাসস্ট্যান্ড থেকে ফার্মগেট। লেগুনায় উঠেই মনে হচ্ছে, আজকে খোদা আমার ধৈর্য পরীক্ষার পরিকল্পনায় আছেন। কিন্তু আমার কাছে ভালোই লাগছে।
লেগুনার ছাদের ফুটো দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে। গাড়ি চলছে বেশ হেলেদুলে। জানালার পর্দা হঠাৎ খুলে গিয়ে বৃষ্টির ঝাপটা এসে পড়ছে। পাশের এক চাচা দৃঢ় উদ্যমে ওই পর্দা ধরে রাখছেন, বৃষ্টি থেকে বাঁচাচ্ছেন আমাদের। সিন্দবাদের জাহাজেই এসে পড়েছি বলে মনে হচ্ছে।
রাত ৮টা, ফার্মগেটে
এখন পর্যন্ত সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই চলছি মনে হচ্ছে। কিন্তু আমার বাড়ি ফেরার রোমাঞ্চ যে এখন অন্য মাত্রায় চলে যাবে, আমি ভাবিনি। খুব বেশি যানজট হলে ২০ মিনিটের মতো দেরি হয়, কিন্তু আজ গুনে গুনে ৩০ মিনিট এই ফ্লাইওভারের নিচে। ২০°ডিগ্রি কোণে ছাতা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। আমার কমলাপুর যাওয়ার ‘আয়াত’ বাসের কোনো নামগন্ধও নেই।
এর মাঝে আবার মেট্রোতে করে মতিঝিল যাওয়া অথবা বাসে করে বিমানবন্দর চলে যাওয়ার চিন্তাও মাথায় ঢুকেছে। কিন্তু আমি ঠিক করলাম কমলাপুরই যাব, বাসেই যাব; যা হয় হোক। ওই বাসের আশায় গুড়েবালি। আমি উঠে পড়লাম আরামবাগ যাওয়ার বাসে।
রাত ৮টা ৩৫ মিনিট, বাসে বসে দুশ্চিন্তা
বৃহস্পতিবার সপ্তাহের অন্য দিনের চেয়ে গাড়ির চাপ বেশি। বাসের মতিগতি দেখে বুঝতে পারছিলাম, এখন সময়ের সঙ্গে বেশ হাড্ডাহাড্ডি একটা প্রতিযোগিতা হবে। বাস চলছে কচ্ছপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর আমি চাচ্ছি সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে। বাসে চুপচাপ বসে আছি, কিন্তু আমার মনে এখন ‘ফর্মুলা ওয়ান’-এর উত্তেজনা। ক্ষণে ক্ষণে ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি আর হতাশ হচ্ছি। আমার ট্রেন মিস করার সম্ভাবনা যে বেড়েই চলছে।
এমন সময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপ হওয়া এক ভাই বলে উঠলেন, ‘হায়, হায়! আমার মোবাইল! আমার মোবাইল!’ তখন পৃথিবীটা কেমন রাতের এই আঁধারের মতো নিষ্ঠুর মনে হতে লাগল। যাহোক, সবকিছু ছাপিয়ে আমার মাথায় ছিল ট্রেন ধরার চিন্তা। ৯টা ১০ মিনিটের আগে আমাকে আরামবাগ পৌঁছাতেই হবে, এরপর রিকশায় উঠতে হবে।
রাত ৯টা ১৮মিনিট, আরামবাগে
বাস থেকে নেমে দেখি অন্ধকার এক দ্বীপের মতো জায়গা। চার পাশের রাস্তায় হাঁটুপানি। গাড়ি, মানুষজনও অনেক কম। কিছুই চিনতে পারছি না। দূরে এক রিকশাওয়ালা মামাকে বললাম কমলাপুর নিয়ে যেতে। মামা বলেন, ওই দিকে রাস্তায় অনেক পানি, যাওয়া যাবে না। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে গেছে। আমি এখন কী করব! জোরে চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছা করছে। আমার ট্রেন যদি নিতান্তই দেরি করে, তাহলেই কেবল আমি আজ ট্রেনে উঠতে পারব।
এক ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম কমলাপুর কোনদিকে। উনার দেখানো পথে হাঁটতে লাগলাম, পিচ্ছিল রাস্তায় দৌড়াতেও পারছিলাম না। হঠাৎ দেখি রাস্তায় হাঁটুপানি, কেমন একটা অন্ধকার পরিবেশ। লোকজন কেউ পার হচ্ছে, কেউ দাঁড়িয়ে দেখছে।
আমার ঘড়িতে তখন ৯টা ২৫মিনিট। একটি হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এখান থেকে কমলাপুর হেঁটে যেতে কতক্ষণ লাগবে?’ উনি কেমন যেন হেসে বললেন, ‘ভাই, কম হইলেও ৩০ মিনিট লাগব, রাস্তায় ম্যালা পানি। কেমনে যাইবেন?’ এই কথা শুনে আমার কলিজার পানি যেন শুকিয়ে গেল। আর আমি বুঝলাম না, আমাকে একটা দুঃসংবাদ দেওয়ার সময় উনি এমন হাসলেন কেন?
যাহোক, নিজের মনকে বুঝ দিলাম, কোনো এক অজানা কারণে হয়তো আমার ট্রেনটা দেরি করবে। পায়জামা হাঁটু পর্যন্ত উঠিয়ে হাঁটুপানিতেই দ্রুত চললাম।
রাত ৯টা ২৭ মিনিট, রিকশায়
অনেকটা হেঁটে সামনে গিয়ে দেখি বেশ কিছু রিকশা আছে। কিন্তু কোনো চালকই কমলাপুরের কথা শুনে যেতে চাচ্ছিল না। বুঝতে পারছিলাম না ওই দিকে আসলেই কি কোনো বিপদ হয়েছে। একপর্যায়ে এক রিকশাওয়ালা বৃদ্ধ মামাকে বললাম, ‘আপনার কত টাকা লাগবে বলেন, তবুও আমাকে উদ্ধার করেন।’ এরপর মামা একটু হেসে বলল, ‘আচ্ছা, ওঠো মামা। দেখি কী হয়!’
ভাবছি, হয়তো গিয়ে দেখব ট্রেনটা ছেড়ে দিয়েছে। তবুও ট্রেন দেরি করার একটু হলেও সম্ভাবনা আছে। এই আশায় মামার দেওয়া পলিথিনে ধরে রিকশায় বসে আছি। এর শেষটা আমি দেখেই ছাড়ব।
রাত ৯টা ৩২ মিনিট, কমলাপুর রেলস্টেশনে
এত নাটকীয় অভিজ্ঞতার পর অবশেষে স্টেশনে পৌঁছালাম। ৫০ টাকার জায়গায় মামাকে ১০০ টাকা দেওয়ার পরও উনার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতাবোধ কাজ করছিল, অন্তত উনি তো আমাকে নিতে রাজি হয়েছিলেন। যদিও এখনো জানি না ট্রেন আছে নাকি ছেড়ে গেছে। স্টেশনে ভিড় কম ছিল না মোটেও। এর মাঝেই এবার দিলাম দৌড়।
দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। হঠাৎ দেখি প্ল্যাটফর্মের কাছে ডিসপ্লেতে ছাড়ার তালিকায় ১ নম্বরে আমার সেই ‘মহানগর এক্সপ্রেস’। দূরে তাকিয়ে দেখি ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে এখনো ট্রেন দাঁড়ানো। আমার চোখে পানি চলে আসে। মনে হচ্ছে আমার জন্যই সে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে। আমি খুশিতে চিৎকার দিয়ে আবার দৌড়াতে শুরু করলাম। কিন্তু এবারের দৌড় আর কোনো সংশয়ের নয়, বরং নিশ্চয়তার।
এই সেই ট্রেন। ট্রেনে উঠেই একবার স্থির হয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়লাম। মনে চাচ্ছিল নেমে গিয়ে রিকশাওয়ালা মামাকে কপালে একটা চুমু দিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে আসি। তা আর হয়ে উঠল না। ট্রেন ছেড়ে দিল। আর শেষ হলো আমার এই রোমাঞ্চকর যাত্রা। পথে ট্রেনের জানালা দিয়ে শহরটা দেখছিলাম আর মনে হচ্ছিল, খোদা কত বিচিত্র মানুষ আর তাদের বিচিত্র আবেগ দিয়ে এই শহরটা পূর্ণ করে রেখেছেন।
লেখক: হাসানুল বান্না, দ্বাদশ শ্রেণি, সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কমল প র আম র ম করল ম
এছাড়াও পড়ুন:
বাজেটে করমুক্ত আয়সীমায় ছাড় নেই, করপোরেট কর বাড়বে
মূল্যস্ফীতি চড়া। মানুষের প্রকৃত আয় কমছে। কিন্তু আগামী বাজেটে সাধারণ করদাতাদের আয়করে বড় কোনো ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনা নেই সরকারের। গতকাল শনিবার পর্যন্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমায় কোনো পরিবর্তন আসছে না। অর্থাৎ করমুক্ত আয়সীমা বাড়ছে না।
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য কর বাড়তে পারে। পুঁজিবাজারে অনিবন্ধিত কোম্পানির ক্ষেত্রে বাড়বে করপোরেট করহার। আবার লাভ হোক, লোকসান হোক, নির্দিষ্ট হারে যে কর দিতে হয়, সেটা এবার বাড়তে পারে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে কর ছাড় দেওয়া হতে পারে। যেমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ন্যূনতম কর কিছুটা কমবে। জমি কেনাবেচায় কর কমানো হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া হতে পারে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামীকাল সোমবার আগামী অর্থবছরের (২০২৫-২৬) বাজেট দেবেন। তিনি টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে এবারের বাজেট উপস্থাপন করবেন। এটা হবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। দেখা যাচ্ছে, সরকার বাজেটের কর খাতে বড় কোনো পরিবর্তন আনছে না। কিছু হেরফের করা হচ্ছে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে কর ছাড় দেওয়া হতে পারে। যেমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ন্যূনতম কর কিছুটা কমবে। জমি কেনাবেচায় কর কমানো হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া হতে পারে।করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিতঅর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা ২০২৫-২৬ করবর্ষে অপরিবর্তিত থাকছে। তবে করস্তরগুলোর সর্বোচ্চ স্তরে ধনীদের জন্য সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ কর বসানোর প্রস্তাব থাকতে পারে, যা এখন ২৫ শতাংশ।
বর্তমানে ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা। অর্থাৎ, বছরে এই পর্যন্ত আয় হলে কর দিতে হয় না। আবার মোট আয় থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা বাদ দিয়ে করের পরিমাণ হিসাব করা হয়। এ ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হলে মানুষ স্বস্তি পায়। বাংলাদেশে করমুক্ত আয়সীমা কম এবং মূল্যস্ফীতির হার চড়া—এ দুই বিবেচনায় ছাড় দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন অনেকেই।
আরও পড়ুনমূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ, বাড়তে পারে দারিদ্র্য১৮ ঘণ্টা আগেসূত্র জানায়, এবার কোনো ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনা গতকাল পর্যন্ত ছিল না। তবে বাজেটে পরের দুই করবর্ষে করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা রাখার ঘোষণা থাকবে। সে ক্ষেত্রে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত গেজেটভুক্ত ব্যক্তিদের করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা করা হতে পারে।
ন্যূনতম করে ছাড় দেওয়া হতে পারে নতুন করদাতাদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে। বর্তমানে এলাকাভেদে ন্যূনতম কর ৩ তিন থেকে ৫ হাজার টাকা, যা নতুন করদাতাদের জন্য কমিয়ে এক হাজার টাকা করা হতে পারে।
বেসরকারি চাকরিজীবীদের করযোগ্য আয় গণনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বাদযোগ্য অঙ্কের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। এখন নানা ধরনের ভাতাসহ সাড়ে চার লাখ টাকা পর্যন্ত আয় বাদ দেওয়া যায়। এই অঙ্ক বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করা হতে পারে। এতে কিছুটা ছাড় পাবেন চাকরিজীবীরা।বর্তমানে সারা দেশে ১ কোটি ১১ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। এর মধ্যে বছরে গড়ে ৪০ লাখের মতো টিআইএনধারী রিটার্ন দেন। মানে হলো, কর দেন অনেক কমসংখ্যক মানুষ।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হলে তা নিচের দিকে থাকা করদাতাদের জন্য স্বস্তি নিয়ে আসত। এমনিতেই উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে তাঁদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আগামী অর্থবছরে আয়কর রিটার্নের প্রমাণপত্র দেখানোয় বড় ছাড় আসছে। বর্তমানে ৪৫ ধরনের সেবা নিতে আগের অর্থবছরের রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র লাগে। এই সেবার সংখ্যা কমিয়ে আনা হচ্ছে। সঞ্চয়পত্র কেনাসহ বেশ কিছু খাতের এই বাধ্যবাধকতা থাকছে না। তবে ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা থাকছে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হলে তা নিচের দিকে থাকা করদাতাদের জন্য স্বস্তি নিয়ে আসত। এমনিতেই উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে তাঁদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জাহিদ হোসেন, অর্থনীতিবিদকরমুক্ত দানের আওতায় স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা ও সন্তানের পাশাপাশি আপন ভাই ও আপন বোনকে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। এর মানে হলো, আপন ভাইবোনকে দান করলে তা করমুক্ত থাকবে।
বেসরকারি চাকরিজীবীদের করযোগ্য আয় গণনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বাদযোগ্য অঙ্কের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। এখন নানা ধরনের ভাতাসহ সাড়ে চার লাখ টাকা পর্যন্ত আয় বাদ দেওয়া যায়। এই অঙ্ক বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করা হতে পারে। এতে কিছুটা ছাড় পাবেন চাকরিজীবীরা।
নিয়োগকর্তার কর পরিপালন সহজ করার জন্য কর্মচারীদের দেওয়া পারকুইজিট (বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা) অনুমোদনের সর্বোচ্চ সীমা ১০ লাখ টাকা বাড়িয়ে ২০ লাখ টাকা করার ঘোষণাও থাকতে পারে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের আয় এবং জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সর্বজনীন পেনশন স্কিম বা কর্মসূচি থেকে প্রাপ্ত সুবিধাভোগীর আয় করমুক্ত থাকবে।
করপোরেট কর বাড়বেবাজেটে করপোরেট কর বাড়তে পারে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে করপোরেট কর সাড়ে ২৭ শতাংশ করা হতে পারে। ব্যাংকসহ আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থায় লেনদেনের শর্তে করপোরেট কর ২৫ শতাংশই থাকবে। তবে সে শর্ত পূরণ কঠিন হতে পারে।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য ২০ শতাংশ করপোরেট কর অব্যাহত থাকছে। পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করা মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার সাড়ে ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশ করার প্রস্তাবও করতে পারেন অর্থ উপদেষ্টা। এ ছাড়া সিকিউরিটিজ লেনদেনের মোট মূল্যের ওপর ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ওপর করহার কমানো হতে পারে।
বর্তমানে বছরে তিন কোটি টাকার বেশি টার্নওভার (বছরে লেনদেন) হয় এমন প্রতিষ্ঠানকে লাভ-লোকসান নির্বিশেষে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ কর দিতে হয়। এটি বাড়িয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হতে পারে। মানে হলো, পণ্য বা সেবা বিক্রির মোট আয়ের ওপর ১ শতাংশ কর দিতে হবে।
ফ্ল্যাট ও জমি কেনায় কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বর্তমানে যে করহার আছে, তা এলাকাভেদে কয়েক গুণ বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে। এমনকি অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করার সুযোগও রাখা হতে পারে।জমি কেনাবেচায় করছাড়বর্তমানে জমি কেনায় করহার বেশি। এই করহার কমানোর প্রস্তাব করতে পারেন অর্থ উপদেষ্টা, যাতে কালোটাকা তৈরি না হয়। এখন কর ফাঁকি দিতে অনেকেই জমির মূল্য কম দেখান। এতে কালোটাকা তৈরি হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, জমি কেনাবেচার ওপর কর এলাকাভেদে ৬, ৪ ও ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে, যা এখন ৮,৬ ও ৪ শতাংশ।
ফ্ল্যাট ও জমি কেনায় কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বর্তমানে যে করহার আছে, তা এলাকাভেদে কয়েক গুণ বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে। এমনকি অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করার সুযোগও রাখা হতে পারে।
বাজেট বক্তৃতায় পাচার অর্থ ও সম্পদের ওপর কর ও জরিমানা আরোপ করার ঘোষণা দিতে পারেন অর্থ উপদেষ্টা। জানা গেছে, জন্মসূত্রে বাংলাদেশি ছিলেন, কিন্তু পরে নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেছেন, এমন ব্যক্তিরা যদি বাংলাদেশে অর্জিত আয়ের ওপর যথাযথভাবে কর না দেন এবং নানা উপায়ে বিদেশে পাচার করেন, তাহলে ওই অর্থের ওপর কর ও জরিমানা আরোপ করা হতে পারে।
শুল্ক হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে দাম কমতে পারে বাস, মাইক্রোবাস, চিনি, বিদেশি মাখন, ড্রিংক, সিরিশ কাগজ, ক্রিকেট ব্যাট ইত্যাদির। দাম বাড়তে পারে রড, ফেসওয়াশ, লিপস্টিক, চকলেট ইত্যাদির।ব্যাংকে জমা টাকায় শুল্কছাড়বাজেটে আবগারি শুল্ক বসানোর সীমা বাড়তে পারে। বর্তমানে এক লাখ পর্যন্ত ব্যাংক হিসাবের স্থিতিতে কোনো আবগারি শুল্ক দিতে হয় না। এটি বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করার কথা চিন্তা করা হচ্ছে। এ ছাড়া আবগারি শুল্ক আরোপের স্তরও পুনর্বিন্যাস করা হতে পারে।
প্রতিবছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কোনো ব্যাংক হিসাবে আমানতের পরিমাণ যদি একবার আবগারি শুল্ক আরোপের সীমা অন্তত একবার স্পর্শ করে, তাহলে নির্দিষ্ট হারে আবগারি শুল্ক দিতে হয়।
ভ্যাট ও শুল্কে পরিবর্তন আসছেবাজেটে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) বাড়ানোর কারণে রেফ্রিজারেটর, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) ও মুঠোফোনের দাম বাড়তে পারে।
শুল্ক হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে দাম কমতে পারে বাস, মাইক্রোবাস, চিনি, বিদেশি মাখন, ড্রিংক, সিরিশ কাগজ, ক্রিকেট ব্যাট ইত্যাদির। দাম বাড়তে পারে রড, ফেসওয়াশ, লিপস্টিক, চকলেট ইত্যাদির।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকার যদি পুরোনো ছকে একটু এদিক-সেদিক করে বাজেট করে, তাহলে আশাহত হব। পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের জন্য একটি উদাহরণ তৈরি করার সুযোগ অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে ছিল। তারা বৈষম্যবিরোধী চেতনায় একটি কর্মসংস্থানমুখী ও জনকল্যাণের বাজেট তৈরি করতে পারত।সরকার গঠিত অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান‘আশাহত করবে’আগামী বাজেটের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ইতিমধ্যে সরকার জানিয়েছে। সেখানে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়নি। বাজেটে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ও অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সুপারিশের প্রতিফলনও খুব একটা থাকছে না। করের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে, বড় কোনো পরিবর্তন নেই।
সরকার গঠিত অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকার যদি পুরোনো ছকে একটু এদিক-সেদিক করে বাজেট করে, তাহলে আশাহত হব। পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের জন্য একটি উদাহরণ তৈরি করার সুযোগ অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে ছিল। তারা বৈষম্যবিরোধী চেতনায় একটি কর্মসংস্থানমুখী ও জনকল্যাণের বাজেট তৈরি করতে পারত।’ তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে সময়ের অভাবের অজুহাত দেওয়া হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ, সরকার ৯ মাস সময় পেয়েছে।