প্রতি ২০ মিনিটে গাজায় একটি শিশু নিহত বা আহত হচ্ছে: জাতিসংঘ
Published: 31st, May 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু করার পর সেখানে ৫০ হাজারের বেশি শিশু নিহত বা আহত হয়েছে।
জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটি হুঁশিয়ার করে বলেছে, এ উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার মাত্রা দিন দিন খারাপ থেকে আরও খারাপ হচ্ছে।
ইউনিসেফ গত মঙ্গলবার এ বিবৃতি প্রকাশ করে। এতে আরও বলা হয়, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার সবচেয়ে বেশি মূল্য দিচ্ছে শিশুরা। সেখানে প্রতি ২০ মিনিটে গড়ে একটি শিশু হয় নিহত, না হয় আহত হচ্ছে।
ইউনিসেফের প্রধান ক্যাথরিন রাসেল বলেন, ‘মারাত্মক লঙ্ঘন (আইনের)। অবরুদ্ধে ত্রাণ। ক্ষুধা। বাড়িঘর, স্কুল, হাসপাতাল—সব বিধ্বস্ত। এটা শৈশবকে ধ্বংস করা। জীবনেরই ধ্বংস। এরা শিশু—এরা সংখ্যা নয়। এভাবে কোনো শিশুর বেঁচে থাকার কথা নয়। আর একটি শিশুও নয়।’
বিবৃতিতে ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাবিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক এদুয়ার বেগবেদে বলেন, ‘এই (গত) সপ্তাহান্তে ৭২ ঘণ্টায় দুটি ভয়াবহ হামলার চিত্র গাজায় শিশুদের ওপর নির্মম যুদ্ধের অমানবিক মূল্য আরেকবার স্পষ্ট করে তুলেছে।’
গাজায় গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩০৯টি শিশু নিহত হয়েছে এবং ৩ হাজার ৭৩৮টি শিশু আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।‘শুক্রবার আমরা ভিডিওতে দেখেছি, খান ইউনিসে আল-নাজ্জার পরিবারের পোড়া ও ছিন্নভিন্ন শিশুদের মরদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে টেনে বের করা হচ্ছে। ১২ বছরের নিচে ১০ ভাইবোনের মধ্যে শুধু একটি বেঁচে আছে বলে জানা গেছে, তা–ও গুরুতর আহত অবস্থায়।’
‘সোমবার ভোরে আমরা গাজা সিটির একটি জ্বলন্ত স্কুলে আটকে পড়া এক ছোট শিশুর ছবি দেখেছি। ভোরের ওই হামলায় অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে, যাদের মধ্যে ১৮টি শিশু।’
আরও পড়ুনগাজায় খাবারের খোঁজে ‘রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে’ ক্ষুধার্ত শিশুরা২৬ মে ২০২৫‘এই শিশুরা, যাদের জীবন কখনোই শুধু সংখ্যায় রূপান্তরিত হওয়ার কথা নয়, তারাই এখন এক দীর্ঘ, বিভীষিকাময় তালিকার অংশ হয়ে গেছে। শিশুদের বিরুদ্ধে গুরুতর (মানবাধিকার) লঙ্ঘন করা হচ্ছে, ত্রাণ অবরুদ্ধ, ক্ষুধা, বারবার জোরপূর্বক স্থানচ্যুতি ঘটছে এবং হাসপাতাল, পানি সরবরাহব্যবস্থা, স্কুল ও বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। মূলত গাজা উপত্যকায় জীবনই ধ্বংস হয়েছে।’
মারাত্মক লঙ্ঘন (আইনের)। অবরুদ্ধে ত্রাণ। ক্ষুধা। বাড়িঘর, স্কুল, হাসপাতাল—সব বিধ্বস্ত। এটা শৈশবকে ধ্বংস করা। জীবনেরই ধ্বংস। এরা শিশু—এরা সংখ্যা নয়। এভাবে কোনো শিশুর বেঁচে থাকার কথা নয়। আর একটি শিশুও নয়।—ক্যাথরিন রাসেল, ইউনিসেফের প্রধান‘১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি (ইসরায়েল ও হামাসের) শেষ হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩০৯টি শিশু নিহত হয়েছে এবং ৩ হাজার ৭৩৮টি শিশু আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। অক্টোবর ২০২৩ থেকে মোট ৫০ হাজারের বেশি শিশু নিহত বা আহত হয়েছে। আর কত শিশুর লাশ লাগবে? আর কত ভয়াবহতা সরাসরি সম্প্রচারিত হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সত্যিকার অর্থে এগিয়ে আসবে, তাদের প্রভাব ব্যবহার করবে এবং এ নির্মম শিশু হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে সাহসী ও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেবে?’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অক্টোবর ২০২৩ থেকে গাজায় মোট ৫০ হাজারের বেশি শিশু নিহত বা আহত হয়েছে। আর কত শিশুর লাশ লাগবে? আর কত ভয়াবহতা সরাসরি সম্প্রচারিত হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সত্যিকার অর্থে এগিয়ে আসবে, তাদের প্রভাব ব্যবহার করবে এবং এ নির্মম শিশু হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে সাহসী ও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেবে?’আরও পড়ুনগাজার মানুষেরা জোরপূর্বক অনাহারের শিকার, বিবিসিকে জাতিসংঘের কর্মকর্তা১০ ঘণ্টা আগে‘ইউনিসেফ আবারও সংঘাতরত পক্ষগুলোকে সহিংসতা বন্ধ, বেসামরিক নাগরিকদের—বিশেষ করে শিশুদের রক্ষা, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও মানবিক আইনের প্রতি সম্মান দেখানো, মানবিক সহায়তা অবিলম্বে প্রবেশের (গাজায়) অনুমতি এবং সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।’
আরও পড়ুনযুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের কীভাবে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল১৯ ঘণ্টা আগে‘গাজায় শিশুদের নিরাপত্তা দরকার। তাদের দরকার খাদ্য, পানি ও ওষুধ। তাদের দরকার যুদ্ধবিরতি। কিন্তু এর চেয়েও বেশি দরকার—এই নৃশংসতা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে এখনই সম্মিলিত পদক্ষেপ।’
আরও পড়ুনগাজার স্কুলে ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের ১৮ জনই শিশু২৬ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউন স ফ ইসর য় ল ন হত ব আর কত দরক র
এছাড়াও পড়ুন:
উদ্ভূত পরিস্থিতিকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বলল বৈষম্যবিরোধীরা
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের রংপুরের বাড়িতে হামলার ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রীতিকর’ বলেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আর হামলার ঘটনার সঙ্গে দলের দুই কর্মী ‘জড়িত থাকায়’ বিএনপি দুঃখ প্রকাশ করেছে।
রোববার রাতে রংপুর স্টেডিয়ামে অবস্থিত সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের সঙ্গে বৈঠকে শেষে দুই সংগঠনের নেতারা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
এর আগে রাত নয়টার দিকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের সঙ্গে বৈঠক করতে যান বিএনপির রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান (সামু), সদস্যসচিব মাহফুজ উন নবী, মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ, সদস্যসচিব রহমত আলী, জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ, সদস্যসচিব জামিল আহমেদসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫-২০ সদস্য।
বৈঠক শেষে রাত সাড়ে নয়টার দিকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম। তিনি বলেন, ‘আমরা আনন্দিত এনসিপি ও বিএনপির প্রতিনিধিরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এখানে এসেছেন। তাঁদের যেসব কর্মী ও সহযোদ্ধা আবেগে হোক বা যেকোনো কারণেই হোক আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিছু কর্মকাণ্ড করেছিলেন। আমরা তাঁদের চিহ্নিত করার সুযোগ দিয়েছিলাম। তাঁরা নিজে থেকে এসেছেন। তাঁরা এ রকম আর কিছু করবেন না ভবিষ্যতে। আমরা আশা করব, তাঁরা তাঁদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যেটা নিয়মের মধ্যে পড়ে সেভাবে চালিয়ে যাবেন। কিন্তু কোনো ধরনের ভাঙচুর, কোনো কিছু নষ্ট করা, মবের মাধ্যমে অন্যায়ভাবে বাধা সৃষ্টি করা এসব কর্মকাণ্ড শুধু রংপুরে কেন, বাংলাদেশের কোথাও করার সুযোগ নেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম বলেন, জাতীয় পার্টির কারও বিরুদ্ধে ভাঙচুর বা হামলার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁদের সঙ্গেও কথা বলা হবে।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান (সামু)। তিনি বলেন, ‘দুই দিন আগে রংপুরে একটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। আমাদের অঙ্গসংগঠনের দুজন সদস্য এই ভুলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। আমরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা সরি বলেছেন। আমরা মনে করি, তাঁরা যেহেতু ভুল বুঝেছেন, ভবিষ্যতে এ রকম কোনো ঘটনা ঘটাবেন না।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ উদ্ভূত পরিস্থিতিকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি দাবি করেন, গত ২৯ মে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়েছিল। জাতীয় পার্টির সন্ত্রাসী বাহিনী এর ওপর হামলা চালান। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সময়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বাসায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ রকম একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রীতিকর ঘটনায় রংপুরে উত্তেজনা বিরাজ করে।
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘আমরা আমাদের অবস্থান থেকে নিশ্চিত করেছি, এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি রংপুরে যেন আর না হয়, এ জায়গা থেকে সচেতন থাকব।’
গত বৃহস্পতিবার রাতে রংপুর নগরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা জি এম কাদেরের বাড়ি দ্য স্কাইভিউয়ের জানালার কাচ ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেন। হামলার সময় জি এম কাদের ওই বাড়িতে ছিলেন।
জি এম কাদেরের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় গতকাল শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরের পায়রা চত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগরের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ও জেলা আহ্বায়ক ইমরান আহমেদের সঙ্গে কথা বলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম। হামলাকারীদের ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নেতার কাছে তথ্য চেয়েছে সেনাবাহিনী।