আলোকচিত্রী মুনেম ওয়াসিফের একক দৃশ্যশিল্প প্রদর্শনী চলছে বেঙ্গল শিল্পালয়ে। ‘পাঠশালা’য় ফটোগ্রাফি শেখানোর পাশাপাশি প্যারিসের এজেন্সি ভ্যু আর মুম্বাইয়ের প্রজেক্ট ৮৮-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ওয়াসিফের প্রদর্শনী হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ‘ক্রমশ’ শিরোনামের বর্তমান প্রদর্শনীটি শুরু হয়েছে গত ১৪ এপ্রিল, যা শেষ হবে ৩১ মে শনিবার।

‘ক্রমশ’ শব্দটি শুনলে প্রথমে মাথায় আসে একটি বিবর্তনের গল্প। সাধারণত এ ধরনের গল্পগুলো ফুটে ওঠে দিনপঞ্জিকার মতো ধারাবাহিকতায়। কিন্তু আর্টিস্টিক জার্নি সব সময়ের নিয়মের ঘেরটোপে আটকা পড়ে না। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে মুনেম ওয়াসিফের ছবি নির্মাণ যেন একই কাজের ভেতরে ক্রমাগত বিবর্তিত হয়েছে, আবার কখনো বাঁক বদল করেছে। কিন্তু সমাজ বদলের এক নীরব ধারাভাষ্যের ভূমিকায়, এই বিবর্তন কেবল ভবিষ্যতের দিকে না গিয়ে বারবার একই স্থান বা বস্তুর কাছে ফিরেছে, কিন্তু প্রতিবারেই ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে।

প্রদর্শনীর শিল্পকর্মগুলোর স্থানিক পটভূমি পুরান ঢাকা। পুরান ঢাকার প্রতি শিল্পীর এই পক্ষপাতিত্ব গড়ে উঠেছে দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার সঙ্গে সম্পৃক্ততায়, নানান ভঙ্গিতে কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে একে আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। কেবল ঘোরাফেরা বা কাজ নয়, তিনি অনুপ্রেরণা নিয়েছেন সাহিত্য থেকেও। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও শহীদুল জহির যেভাবে মানবের নিত্যকার স্বপ্ন, আশা, খামখেয়ালিপনা, ইতিহাস ইত্যাদি প্রকাশের একটি মাধ্যম হিসেবেই কেবল একটি অঞ্চলকে তার আঞ্চলিকতাসহ ব্যবহার করেছিলেন, সেভাবেই পুরান ঢাকার উপাদানগুলোকে ব্যবহার করলেও ওয়াসিফও মূলত একটি বৃহত্তর ক্যানভাসের চিত্রই প্রকাশ করতে চেয়েছেন। তাঁর চিত্রকর্ম নিয়ে প্রকাশিত বই ‘বিলংগিং’ও তিনি উৎসর্গ করেছেন এই দুই সাহিত্যিককে, পুরান ঢাকা নিয়ে তাঁদের গল্প ও স্বপ্নের জন্য। মুনেম ওয়াসিফ এরপর উল্লেখ করেছেন মার্কেজ, বোর্হেসসহ অন্যান্য লাতিন সাহিত্যিকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ও প্রভাব নিয়ে। এ থেকে ম্যাজিক রিয়েলিজমের প্রতি তাঁর ঝোঁক অনুমান করা যায়। সে জন্যই হয়তো বিশেষ করে কোনো স্থানের আপন নির্যাসকে ফিজিক্যাল এগজিসট্যান্সের বাইরে গিয়ে অনুভূতির আলোকে ধরার চেষ্টা টের পাওয়া গেছে প্রদর্শনীর নানান অনুষঙ্গজুড়ে।

‘ক্রমশ’র যাত্রাপথটি যেমন সরলরৈখিক নয়, প্রকাশের মাধ্যমও তেমনি একমাত্রিক নয়। প্রদর্শনীটি সাজানো হয়েছে আলোকচিত্র, ফিল্ম ও ভাস্কর্যের মিশ্র মাধ্যমে। তিনটি পর্বে—‘অন্তর্গত’, ‘সামান্য’ ও ‘খেয়াল’ নামে। এই তিন ধরনের সমন্বয়ে; অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নানান স্তরের মিথস্ক্রিয়ায় একে অপরের সীমানাকে অতিক্রম করে যায়।

আলোকচিত্রী মুনেম ওয়াসিফের একক দৃশ্যশিল্প প্রদর্শনী চলছে বেঙ্গল শিল্পালয়ে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রক শ ক রমশ

এছাড়াও পড়ুন:

স্বামী-সন্তানের সঙ্গে বান্দরবানে বেড়াতে যাচ্ছিলেন, মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে বাসের চাকায় মৃত্যু নারীর

চট্টগ্রামের পটিয়ায় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ার পর বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নারীর নাম ফজিলাতুন নেসা (২৮)। তিনি মাগুরা জেলার মহম্মদপুর থানার মহেশপুর গ্রামের আলিমুজ্জামান সুজনের স্ত্রী।

পুলিশ জানায়, স্বামীর সঙ্গে মোটরসাইকেলে গতকাল রোববার চট্টগ্রামে বেড়াতে আসেন ফজিলাতুন নেসা। তাঁদের ছয় বছর বয়সী সন্তানও সঙ্গে ছিল। গতকাল চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটের একটি বাসায় তাঁরা রাত্রিযাপন করেন। সকালে সেখান থেকে মোটরসাইকেলে করে তাঁরা বান্দরবানের উদ্দেশে রওনা দেন। আলিমুজ্জামান মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন এবং তাঁর পেছনে ছয় বছর বয়সী সন্তান হুমায়ের হাম্মাদ, এরপর ফজিলাতুন নেসা বসে ছিলেন।

সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ার নয়াহাট এলাকায় পৌঁছায় মোটরসাইকেলটি। সেখানে সামনে থাকা একটি লেগুনা হঠাৎ সড়কে থেমে গেলে তাৎক্ষণিক মোটরসাইকেলটির ব্রেক কষেন আলিমুজ্জামান। এ সময় ফজিলাতুননেসা মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়েন। এর পরপরই পেছন থেকে একটি যাত্রীবাহী বাস ফজিলাতুন নেসাকে পিষ্ট করে। তাঁকে উদ্ধার করে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

গতকাল রাতে চট্টগ্রাম নগরের যে বাসাটিতে ফজিলাতুন নেসা ছিলেন, সেটি তাঁর স্বামী আলিমুজ্জামানের বন্ধু রবিউল ইসলামের। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রবিউল ইসলামের বোন আশরিফা আহমদ ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ফজিলাতুন নেসার স্বামী নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির কনিষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক। পরিবার নিয়ে পাহাড় দেখতে বান্দরবানে বেড়াতে যাচ্ছিলেন তিনি। বেড়াতে যাওয়ার পথেই স্বামী-সন্তানের সামনে দুর্ঘটনায় তাঁর প্রাণহানি হয়েছে।

পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট ওয়াসিম আরাফাত দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নিহত নারীর লাশ আইনি–প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। লেগুনা ও বাসের চালককে আটক করা সম্ভব হয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ