কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে দেশের নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ধসে গেছে বেড়িবাঁধ। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। ডুবে গেছে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি। দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন পার করছেন। এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে খালের পানির তোড়ে ভেসে দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। বরগুনার তালতলীতে ঝড়ে ছিঁড়ে পড়া তারে বিদ্যুৎস্পর্শে এক গৃহবধূ মারা গেছেন।
স্রোতে ভেসে গেল দুই বোন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোকর্ণ গ্রামে খাল থেকে মারিয়া আক্তার (১২) ও সামিয়া আক্তার (৯) নামে দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মারিয়া ও সামিয়া গোকর্ণ গ্রামের সৌদিপ্রবাসী মিনার আলীর মেয়ে। তারা স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিল।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার সকালে আকাশি হাওরপাড়ে গরু চরাতে যায় মারিয়া ও সামিয়া। প্রতিদিনের মতো দুপুরে বাড়ির উদ্দেশে গরু নিয়ে রওনা দেয় তারা। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে খালের পানি বেড়েছে। মারিয়া ও সামিয়া গরু নিয়ে সেই খাল পার হতে গিয়ে স্রোতের তোড়ে ভেসে যায়। গরু ডাঙায় উঠে বাড়ি পৌঁছায়। সন্ধ্যা নেমে এলেও দুই বোন বাড়ি না ফেরায় তাদের মা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। এক পর্যায়ে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয়। শনিবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে খালের পৃথক স্থানে দুই শিশুর মরদেহ ভাসতে দেখেন স্থানীয়রা।
ঝড়ে ছেঁড়া তারে বিদ্যুতায়িত গৃহবধূ
বরগুনার তালতলী উপজেলায় বাড়ির পাশে ঝড়ে ছিঁড়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক তারে বিদ্যুতায়িত হয়ে মুক্তা আক্তার (১৮) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাত সোয়া ৮টায় উপজেলার ছোটবগী ইউনিয়নের ঠংপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মুক্তা আক্তার ওই এলাকার রাজিব সিকদারের স্ত্রী। মুক্তার স্বামী রাজিব সিকদার বলেন, ‘পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গাফিলতি এবং অবহেলার জন্য আমার স্ত্রী প্রাণ হারাল। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’ পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তালতলী জোনাল অফিসের প্রকৌশলী এমদাদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
সুন্দরবনে দুটি হরিণের মরদেহ উদ্ধার
জলোচ্ছ্বাসে বাগেরহাটে সুন্দরবনের ভেতরে করমজল, সুপতি, ভোলা, কটকা, দুবলা এলাকায় পাঁচটি মিষ্টি পানির পুকুরে নোনাপানি ঢুকেছে। বিপাকে পড়েছে বন্যপ্রাণীরা। এদিকে প্লাবিত হয়েছে বনের বিস্তীর্ণ এলাকা। শ্যালার চর এলাকা থেকে ভেসে যাওয়া একটি হরিণ শাবক উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে দুবলার চর এলাকা থেকে দুটি হরিণের মরদেহ উদ্ধার করেছেন বনরক্ষীরা।
এদিকে শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের খুড়িয়াখালী-বগী ভারাণী খালের পাশের রিং বাঁধের দুটি স্থানের ১০০ ফুট ভেঙে গেছে। ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকছে লোকালয়ে।
সিলেটের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত
অব্যাহত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটে নদীর পানি বাড়ছে। প্রতি পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে গোয়াইনঘাট-রাধানগর সড়কের কিছু অংশের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। এতে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ উপজেলার নিম্নাঞ্চলসহ পর্যটন কেন্দ্র জাফলং ও বিছনাকান্দি পানিতে তলিয়ে গেছে। পাশের কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে সেখানকার পর্যটন কেন্দ্র সাদাপাথর ডুবে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন বন্যার আশঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, সারি, গোয়াইন ও ধলাই নদীর পানি বেশি বেড়েছে। তবে বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি।
টানা বৃষ্টির কারণে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে জরুরি যোগাযোগের জন্য কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার খাসিয়ামারা ও চিলাই, ছাতকের চেলা ও পিয়াইন, মধ্যনগরের সোমেশ্বরী, তাহিরপুরের যাদুকাটা, মাহারাম, বৌলাই, রক্তি ও পাটলাই এবং বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মরা যাদুকাটা নদীতে তীব্র বেগে নামছে পাহাড়ি ঢল। প্লাবিত হয়েছে তাহিরপুরের নিম্নাঞ্চলের কিছু গ্রাম। বড়দল নতুন হাটি গ্রামে একটি বাঁধ ভেঙে হাওরে ঢুকছে পানি। জগন্নাথপুর উপজেলায় নদনদীর পানি বেড়েছে। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় কয়েক দিনের বৃষ্টি ও ঢলে ধলাই নদীর পানি বেড়েছে। তবে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কয়েক ইউনিয়নে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের অন্তত তিনটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।
হাতিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ, আতঙ্ক
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার নিঝুমদ্বীপ বয়ারচর চরগাশিয়া ঢালচর এলাকায় জোয়ারে বেড়িবাঁধে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকার কয়েকটি স্থানে এক-তৃতীয়াংশ বাঁধ ভেঙে গেছে। যে কোনো মুহূর্তে স্বাভাবিক জোয়ারেও ভেঙে যেতে পারে বাকি অংশ। দ্রুত মেরামত না করলে ক্ষতির মুখে পড়বে বেড়িবাঁধের ভেতরের বসবাস করা প্রায় ৩০ হাজার পরিবার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.
ঢাকার চার ফ্লাইট নামল চট্টগ্রামে
বৈরী আবহাওয়ার কারণে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারেনি চারটি ফ্লাইট। শনিবার বিকেলে এগুলো চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করেছে। এর মধ্যে বিকেল ৪টা ৩৩ মিনিটে চট্টগ্রাম আসে শারজাহ-ঢাকা রুটের এয়ার অ্যারাবিয়ার ফ্লাইট ৫১৪, বিকেল ৪টা ৩২ মিনিটে অবতরণ করে কক্সবাজার-ঢাকা রুটের এয়ার অ্যাস্ট্রার ফ্লাইট ৪৪, বিকেল ৪টা ৪৭ মিনিটে অবতরণ করে রাজশাহী-ঢাকা রুটের ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস১৬৪ এবং বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে আসে সৈয়দপুর-ঢাকা রুটের ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস ১৮৮।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল জানান, আবহাওয়া পরিস্থিতি উন্নতি হলেই ফ্লাইটগুলো ঢাকায় চলে যাবে।
এদিকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার ডলু, হাতিয়া ও হাঙর খালের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে লোকালয়ে ঢুকছে পানি। ওই এলাকার বাসিন্দারা বসতঘর বিলীন হওয়ার শঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে।
লক্ষ্মীপুরের অনেক এলাকা এখনও বিদ্যুৎহীন
ঝড়-বৃষ্টিতে লক্ষ্মীপুরের সদর, কমলনগর, রামগতি ও রায়পুর উপজেলার অনেক এলাকা শনিবারও বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। ঝোড়ো হাওয়ায় অন্তত ১৬টি বিদ্যুৎ খুঁটি ভেঙে গেছে, অসংখ্য গাছ পড়ে গেছে লাইনের ওপর। এর ফলে কমপক্ষে ১০টি ইউনিয়নে সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। কিছু এলাকায় কাজ চললেও এখনও বেশির ভাগ স্থানে দিনরাত বিদ্যুৎহীন অবস্থা বিরাজ করছে। এতে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্র জানিয়েছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আজ থেকে ধাপে ধাপে সংযোগ চালু করা হবে।
ইন্দুরকানীতে পানিবন্দি ১০ গ্রামের মানুষ
পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ইন্দুরকানী, টগড়া, কালাইয়া, সাঈদখালী, বালিপাড়া, চর বলেশ্বর, চণ্ডীপুর, খোলপেটুয়া, কলারণসহ নদীতীরবর্তী অন্তত ১০ গ্রামের মানুষ। ইন্দুরকানী থানা ভবনসহ আশপাশে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
এদিকে কিশোরগঞ্জের ঘোড়াউত্রা নদীর পানি বাড়ায় পাটলি ঘাটে ফেরিতে অনেক যানবাহন আটকা পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যাম্বুলেন্সসহ পণ্যবাহী ট্রাক।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যুরো, অফিস ও প্রতিনিধি)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নদ বন য প ল ব ত হয় ছ র উপজ ল র নদ র প ন র ফ ল ইট এল ক র গ রস ত এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
ঘুমের মধ্যেই শেষ রিয়াজ রহিমার গোটা পরিবার
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সিলেটসহ উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জনজীবন চরম দুর্ভোগে পড়েছে। সিলেটের গোলাপগঞ্জে গভীর রাতে টিলাধসে একই পরিবারের চারজন মারা গেছেন। চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে জলাবদ্ধতা, পাহাড়ধস ও সড়কধসের ঘটনায় থমকে গেছে স্বাভাবিক চলাচল। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। নদনদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সোমবার ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক স্থানে বৃষ্টি হতে পারে।
শনিবার রাত ২টার দিকে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মণাবন্দ ইউনিয়নের বখতিয়ারঘাট এলাকায় টিলা ধসে পড়ায় এক পরিবারের চারজন নিহত হন। টিলার পাদদেশে একটি আনারস বাগানের পাশের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন রিয়াজ উদ্দিন (৫৫), তাঁর স্ত্রী রহিমা বেগম, মেয়ে সামিয়া বেগম (১৪) ও ছেলে আলী আব্বাস (৯)। হঠাৎ বিকট শব্দে টিলা ধসে ঘরের ওপর পড়ে। মাটিচাপা পড়ে ঘুমন্ত অবস্থাতেই মারা যান তারা। ভোরে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস যৌথ অভিযানে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে।
পাশের ঘরে থাকা রিয়াজের প্রথম স্ত্রী ও মেয়ে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জানান, কয়েক দিন ধরে মাইকিং করে টিলাধসের আশঙ্কায় সতর্ক করা হচ্ছিল। নিহতদের পরিবারের আবেদনে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
একই রাতে গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকার আমুড়া-শিকাপুর সড়কে টিলাধসের কারণে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে বসতঘর, দোকান ও রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় কয়েক ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। ফইল্ল্যাতলী বাজারে মহেশখালের পাশের সড়কের প্রায় ১০০ মিটার ফেটে ও দেবে গেছে। কিছু এলাকায় স্থায়ীভাবে পানি জমে আছে। সেনাবাহিনীর টিম, সিটি করপোরেশন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করলেও বৃষ্টি থামছে না বলে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। চসিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নালাগুলো বালুতে ভরাট হয়ে থাকায় পানি নামতে পারছে না। বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানি মিশে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯৪ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগের দিন মৌসুমি বৃষ্টি হয় সর্বোচ্চ ২৩৮ মিলিমিটার।
রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই, বড়ইছড়ি, সাপছড়িসহ ১৬টি স্থানে পাহাড়ধসে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। নিম্নাঞ্চলে ঢুকে পড়া পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই শতাধিক পরিবার। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, দুর্গতদের উদ্ধার ও আশ্রয় দিতে নেওয়া হয়েছে প্রস্তুতি। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী ৬৭২ জনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার, ছাতক ও তাহিরপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে। মৌলভীবাজারের বড়লেখায় পৌর শহরসহ পাঁচটি ইউনিয়নের গ্রাম ডুবে গেছে। দোকানপাট ও বাড়িঘরে পানি ঢুকে ৪-৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
গতকাল সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ময়মনসিংহে ৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিতে সানকিপাড়া, চরপাড়া, রেললাইন বস্তি, নতুন বাজার, বলাশপুরসহ বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে যায়। সড়কে হাঁটুপানি জমে যাওয়ায় মানুষের চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে।
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে মেঘনায় ট্রলারডুবির এক দিন পর উদ্ধার করা হয়েছে ইউএনএইচসিআর স্বেচ্ছাসেবক হাসিনা খাতুনের মরদেহ। এখনও নিখোঁজ এক পুলিশ সদস্যসহ আরও দু’জন। হাতিয়ায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় নিঝুমদ্বীপে ভেসে এসেছে দুটি মৃত ডলফিন।
সুন্দরবনের ঢাংমারী, করমজল, সুপতি, কটকা ও দুবলারচরের ৬টি মিঠাপানির পুকুরে ঢুকে পড়েছে লবণাক্ত পানি। এতে বনে মিঠাপানির উৎস সাময়িক বন্ধ হয়ে গেছে। স্রোতে ভেসে মারা গেছে দুটি হরিণ।
ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিতে দেশের ছয় জেলার নদনদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ফেনীতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী উদয় রায়হান জানান, সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই ও হালদা নদীর পানি সাতটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে বইছে। আগামী তিন দিন সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের নদনদীর পানি আরও বাড়তে পারে। ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ছে এবং তিস্তা সতর্কসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র বলছে, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, মনু, ধলাই, খোয়াই ও সোমেশ্বরী নদীর পানি আগামী তিন দিন বাড়তে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী নদীর পানি বাড়তে পারে। ফেনী জেলার মুহুরী নদী-সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে অবশ্য এসব নদীর পানি কমতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি আগামী তিন দিন বাড়তে পারে। কাল পর্যন্ত বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীগুলোতে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি উচ্চতায় জোয়ার হতে পারে।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যুরো, অফিস ও প্রতিনিধি)