মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডোর জাতিসংঘের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় একটি নতুন অবস্থান স্থাপনে ব্যবহার করতে পারে। আর এটি হলে ভারত ও চীন উভয় দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক চরম অবনতি হতে পারে। আরাকান আর্মিকে মানবিক করিডোরের সুবিধা দিলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। এতে করে নেপিদোর সঙ্গে ঢাকার সম্পর্কের অবনতি, অস্থিরতা, সংঘাত ও এমনকি যুদ্ধ পর্যন্ত হতে পারে। মানবিক করিডোর নিয়ে এক গোলটেবিলে বক্তারা এসব কথা বলেন।

শনিবার বিকেলে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ভূ-রাজনৈতিক নিরাপত্তা ও মানবিক করিডোর’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্নেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যানালাইসিস (সিজিএসএ)। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং মূখ্য আলোচক হিসেবে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না উপস্থিত ছিলেন। গোলটেবিলে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিজিএসএ নির্বাহী পরিচালক কর্নেল (অব.

) জগলুল আহসান।

গোলটেবিলে বিভিন্ন দলের রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, শিক্ষক, সাবেক রাষ্ট্রদূত, সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। গোলটেবিলটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস।

মূল প্রবন্ধে কর্নেল (অব.) জগলুল আহসান বলেন, মানবিক করিডোর নিয়ে সরকারের তিন ব্যাক্তি তিন রকম বক্তব্য দিয়েছেন। এটি বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হবে। এটি যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের নানান ভূরাজনৈতিক কূটকৌশলে ব্যবহার হতে পারে, যা বাংলাদেশের জন্য বড় নিরাপত্তা হুমকি হবে।

ভূরাজনৈতিক প্রভাব তুলে ধরে তিনি বলেন, ভারত মহাসাগর ঘিরে এক প্রকার বলয় তৈরির প্রতিযোগিতা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও ভারতের মতো বৈশ্বিক ও আঞ্চিলক শক্তিগুলোর আধিপত্য ও ক্ষমতা বিস্তারের বলয় হচ্ছে এ মহাসাগর। প্রকৃতপক্ষে বড় দেশগুলোর এ ভূকৌশলগত আধিপত্যের লড়াইয়ে ছোট দেশগুলো বৃত্তবন্দী। রাখাইনে মানবিক করিপডোর দেওয়ার আগে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে কয়েকটি বিষয় আগে নিশ্চিত হওয়া উচিত। এ করিডোর কি বাংলাদেশের ভূকৌশলগত লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে, নাকি ক্ষতি করবে। বাংলাদেশ কোনো দেশ বা জোটের ভূরাজনৈতিক কৌশল বাস্তবায়নের গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না। আর এ করিডোর দিয়ে কোনো বৃহৎ শক্তি জোট বা দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তাদের শত্রু হচ্ছি কি না।

গোলটেবিলে মানবিক করিডরের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের লুকোচুরি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আমীর খসরু বলেন, করিডর নিয়ে এই সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ নেই। দুই সার্বভৌম রাষ্ট্রের মধ্যে চুক্তি অথবা নিরাপত্তা কাউন্সিলে পাস না হলে এ বিষয়ে জাতিসংঘের ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই।

করিডর নিয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার নয় অভিযোগ করে তিনি বলেন, করিডর নিয়ে সরকারের অবস্থান এখন পর্যন্ত পরিষ্কার নয়। তারা কী চায় বোঝা যায় না। প্রথমে অস্বীকার করলেও সরকার পরবর্তী সময়ে করিডর নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে। কাতারেও আলোচনা করছে। এত গোপনীয়তার কী আছে?

নির্বাচন থেকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার জন্যই করিডর ইস্যু সামনে আনা হতে পারে অভিযোগ করে আমীর খসরু বলেন, জনগণের সরকারের দিকে না গিয়ে, রোডম্যাপ ঘোষণা না করে আর সবকিছু করছে সরকার।

করিডোরের বিষয়টি সরকারের পরিষ্কার করা দরকার জানিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এ নিয়ে আলোচনা দরকার। করিডর যদি দেয়া হয় তাহলে এটা নিয়ন্ত্রণ করবে কে আমি মনে করি বাংলাদেশ এটা পারবে না। আমাদের কত বড় একটা নিরাপত্তার ব্যাঘাত হবে! সরকারের এ রকম গোপন এজেন্ডা সম্পর্কে জনগণের সতর্ক হতে হবে। এ রকম সিদ্ধান্ত আসতে হবে সংসদ থেকে, দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জাতীয় নির্বাচন দেওয়া। অনেক পার্টি বলেছে, ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়। আমাকে যদি বলে তাহলে বলব ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে পারে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, করিডর দেয়ার সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকারের এজেন্ডার বাইরে। করিডোরকে সামনে এনে সরকার কিছু লুকানোর চেষ্টা করছে। নির্বাচিত সরকার করিডোর নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যতখানি এগিয়েছেন, এখন এমন তৎপরতা বন্ধ করুন। এটি স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন। অনেক জায়গাতেই মানবিক করিডর সামরিক করিডরে পর্যবসিত হয়েছে। 

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, করিডোর দিয়ে আমাদের স্বার্থ রক্ষা হবে না কি, মানবতা রক্ষা হবে– এটা ভেবে দেখতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানিরা বাংলাদেশে রয়েছে, তাদের বিষয়ে কাউকে মানবিক হতে দেখিনি। করিডোর দেওয়া সরকারের ম্যানডেটের মধ্যে নেই। নির্বাচন থেকে দৃষ্টি অন্য দিকে নিয়ে যেতে এটি সামনে আনা হয়েছে। এ সময় করিডোর নিয়ন্ত্রণ ও সরকারের এ সংক্রন্ত সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

বাংলাদেশ ভূরাজনীতির ফাঁদে জানিয়ে সিনিয়র সাংবাদিক এম এ আজিজ বলেন, করিডোরের নামে ছলচাতুরি করা হচ্ছে শুরু থেকেই। মিয়ানমারে বন্দর রয়েছে, চীন ও ভারতের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে, সে দিক দিয়ে সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি সামনে আসছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের ১৭ জন সদস্য বিদেশি নাগরিক। মূলত বিদেশি স্বার্থ রাখতে করিডোরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। করিডোরের সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সরকার নেওয়া উচিত বলে জানান তিনি।

গাজায় মানবিক করিডোরের নামে হত্যাযজ্ঞের চিত্র সামনে আসায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য নিলোফার চৌধুরী মনি। তিনি বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু মানবিক করিডোর কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, এখানে জাতিসংঘ ও বিশ্বের পরাশক্তি গুলোর একটা স্বার্থ আছে। কিন্তু আমাদের স্বার্থটা কি। আমাদের স্বার্থ হচ্ছে এই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো। আমরা আর একটা রোহিঙ্গা কেউ গ্রহণ করতে চাই না। গোপনে নয়, এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

আর গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ঘোষণার পরও নতুন করে প্রবেশ করেছে। করিডোর নিয়ে অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা ভালো না। এমন সিদ্ধান্তে এই সরকারের যাওয়া দরকার ছিল না। এই সরকারের মূল কাজ ছিল নির্বাচন দেওয়া। বিচার এবং সংস্কারের দোহায় দিয়ে নির্বাচন বিলম্বের সুযোগ নেই। বিএনপি একা নয়, অনেক দলই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব হুমায়রা নূর বলেন, করিডোর দেওয়ার বিষয়ে অনেক চিন্তা করা দরকার। তবে আমরা এটার সমর্থন করি না।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, মানবিক করিডোর স্থাপনের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন। এ বিষয়ে দেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর ড র কর ড র ন য় কর ড র দ র জন ত ক ভ র জন ত কর ড র র পর ষ ক র সরক র র অবস থ ন আম দ র ক র কর র জন য দরক র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ভারতীয় পাসপোর্টের অবনতি কেন?

চলতি বছরের শুরুতে এক ভারতীয় ভ্রমণ ইনফ্লুয়েন্সারের দেশটির দুর্বল পাসপোর্ট নিয়ে অভিযোগ করার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, ভুটান এবং শ্রীলঙ্কার মতো প্রতিবেশী দেশগুলো ভারতীয় পর্যটকদের বেশি স্বাগত জানালেও, বেশিরভাগ পশ্চিমা এবং ইউরোপীয় দেশগুলোতে ভ্রমণের জন্য ভিসা পাওয়া এখনও একটি চ্যালেঞ্জ।

শনিবার (১ নভেম্বর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের দুর্বল পাসপোর্ট শক্তির প্রতি ওই ভ্রমণ ইনফ্লুয়েন্সারের অসন্তোষ হেনলি পাসপোর্ট সূচকের সর্বশেষ র‌্যাংকিংয়ে প্রতিফলিত হয়েছে। ভিসা-মুক্ত ভ্রমণের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের পাসপোর্টের র‌্যাংকিং নির্ধারণ করে এই সূচক।

আরো পড়ুন:

জঙ্গি সন্দেহে ভারতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি ‘মুফতি মাসুদ’

অস্ট্রেলিয়ার বোলিং তোপে ১২৫ রানেই গুটিয়ে গেল ভারত

অক্টোবরে প্রকাশিত ২০২৫ সালের হেনলি পাসপোর্ট সূচকে ১৯৯টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ৮৫তম স্থানে, যা গত বছরের তুলনায় পাঁচ ধাপ নিচে। 

ভারতের তুলনায় অনেক ছোট অর্থনীতির দেশ রুয়ান্ডা, ঘানা এবং আজারবাইজান যথাক্রমে ৭৮তম, ৭৪তম এবং ৭২তম স্থানে রয়েছে।

বিবিসি যোগাযোগ করলেও ভারত সরকার এখনও এই প্রতিবেদন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

গত এক দশকে ভারতের স্থান ৮০তম স্থানে ছিল, ২০২১ সালে নেমে গিয়েছিল ৯০তম স্থানে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং সিঙ্গাপুরের মতো এশিয়ান দেশগুলোর তুলনায় এই স্থান হতাশাজনক, কারণ তারা ধারাবাহিকভাবে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।

গত বছরের মতো, এই বছরেও সিঙ্গাপুর ১৯৩টি দেশে ভিসা-মুক্ত ভ্রমণের সূচকে শীর্ষে রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া ১৯০টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় এবং জাপান ১৮৯টি দেশের মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।

এদিকে, ভারতীয় পাসপোর্টধারীদের ৫৭টি দেশে ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার রয়েছে, ঠিক আফ্রিকান দেশ মৌরিতানিয়ার নাগরিকদের মতো। দেশটি ভারতের সঙ্গেই ৮৫তম স্থানে রয়েছে।

পাসপোর্টের শক্তি একটি দেশের শক্তি এবং বৈশ্বিক প্রভাবকে প্রতিফলিত করে। এটি নাগরিকদের জন্য আরো ভালো চলাচলের সুযোগ তৈরি করে, ব্যবসা এবং শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করে। দুর্বল পাসপোর্টের মানে, বেশি কাগজপত্রের ঝামেলা, ভিসার খরচ বেশি, ভ্রমণের সুযোগ কম এবং ভ্রমণের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা।

কিন্তু র‌্যাংকে পতন সত্ত্বেও, গত এক দশক বা তারও বেশি সময় ধরে ভারতীয়দের ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার প্রদানকারী দেশের সংখ্যা বেড়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, ২০১৪ সালে- যে বছর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় এসেছিল, ৫২টি দেশ ভারতীয়দের ভিসা-মুক্ত ভ্রমণের সুযোগ দিয়েছিল এবং এর পাসপোর্ট সূচকে ৭৬তম স্থানে ছিল।

এক বছর পরে, এটি ৮৫তম স্থানে নেমে আসে, তারপর ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে ৮০তম স্থানে উঠে আসে, এই বছর আবার ৮৫তম স্থানে নেমে এসেছে। ইতিমধ্যে, ভারতীয়দের জন্য ভিসা-মুক্ত গন্তব্যস্থল ২০১৫ সালে ৫২টি থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে ৬০টি এবং ২০২৪ সালে ৬২টি হয়েছে।

২০২৫ সালের ভিসা-মুক্ত গন্তব্যস্থলের সংখ্যা (৫৭টি), ২০১৫ সালের (৫২টি) থেকে বেশি, তবুও এই দুই বছরেই ভারতের স্থান ৮৫। কেন?

বিশেষজ্ঞদের মতে, এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো বিদেশ ভ্রমণে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ, যার মানে দেশগুলো তাদের নাগরিক ও অর্থনীতির স্বার্থে আরো বেশি ভ্রমণ অংশীদারিত্বে প্রবেশ করছে। হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের ২০২৫ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ভ্রমণকারীদের ভিসামুক্ত গন্তব্যের গড় সংখ্যা ২০০৬ সালের ৫৮টি থেকে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ২০২৫ সালে ১০৯টিতে দাঁড়িয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, গত এক দশকে চীন তার নাগরিকদের ভ্রমণের জন্য ভিসামুক্ত গন্তব্যের সংখ্যা ৫০ থেকে ৮২টিতে বাড়িয়েছে। ফলে একই সময়ের মধ্যে সূচকে দেশটির অবস্থান ৯৪তম থেকে ৬০তম স্থানে উঠে এসেছে।

অন্যদিকে, ভারত জুলাই মাসের সূচকে ৭৭তম স্থানে ছিল (হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স প্রতি তিন মাস অন্তর হালনাগাদ করা হয়, যাতে বৈশ্বিক ভিসা নীতির পরিবর্তন প্রতিফলিত হয়), তখন ৫৯টি দেশে ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুযোগ উপভোগ করেছিল। কিন্তু দুটি দেশের ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার হারানোর পর অক্টোবরে ভারতের অবস্থান নেমে গেছে ৮৫তম স্থানে।

আর্মেনিয়ায় ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত আচল মালহোত্রা বলেন, একটি দেশের পাসপোর্টের শক্তিকে প্রভাবিত করে এমন আরও কিছু বিষয় রয়েছে। যেমন দেশটির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকদের স্বাগত জানানোর ক্ষেত্রে দেশটির উন্মুক্ততা।

উদাহরণস্বরূপ, বিশ্ব রাজনীতিতে ক্রমবর্ধমানভাবে একঘরে হয়ে পড়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট শীর্ষ ১০ থেকে বাদ পড়েছে এবং এখন ১২তম স্থানে রয়েছে। যা মার্কিন ইতিহাসে সর্বনিম্ন অবস্থান। 

মালহোত্রা স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৭০-এর দশকে ভারতীয়রা অনেক পশ্চিমা ও ইউরোপীয় দেশে ভিসামুক্তভাবে ভ্রমণ করতে পারতেন। কিন্তু ১৯৮০-এর দশকে খালিস্তান আন্দোলনের পর পরিস্থিতি বদলে যায়। এই আন্দোলনে ভারতের শিখ সম্প্রদায়ের জন্য স্বাধীন মাতৃভূমির দাবি তোলা হয়েছিল, যা দেশে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা সৃষ্টি করে। পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতাগুলো ভারতের স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ভাবমূর্তিকে আরো ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

মালহোত্রা বলেন, “অনেক দেশ অভিবাসীদের ব্যাপারে ক্রমশ সতর্ক হয়ে উঠছে। ভারতের বিপুল সংখ্যক মানুষ অন্য দেশে অভিবাসন করছে বা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও অবস্থান করছে, এটি দেশের সুনামকে প্রভাবিত করছে।”

তিনি আরো বলেন, একটি দেশের পাসপোর্ট কতটা নিরাপদ এবং এর অভিবাসন পদ্ধতি কতটা নিরাপদ, তাও অন্যান্য দেশে ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন রাখে।

ভারতের পাসপোর্ট নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। ২০২৪ সালে দিল্লি পুলিশ ভিসা ও পাসপোর্ট জালিয়াতির অভিযোগে ২০৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ভারত জটিল অভিবাসন প্রক্রিয়া এবং ভিসা প্রক্রিয়াকরণের ধীর গতির জন্যও পরিচিত।

মালহোত্রা মনে করেন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, যেমন সম্প্রতি চালু হওয়া ভারতের ই-পাসপোর্ট নিরাপত্তা বাড়াতে এবং অভিবাসন প্রক্রিয়া সহজ করতে সহায়তা করতে পারে। ই-পাসপোর্টে একটি ক্ষুদ্র চিপ থাকে যা বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ করে, ফলে এটি জাল করা অনেক কঠিন।

তবে ভারতের নাগরিকদের বিশ্ব ভ্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সেই সঙ্গে দেশের পাসপোর্টের র‌্যাংক উন্নত করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা এবং আরো বেশি ভ্রমণ চুক্তি সম্পাদন করা।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রেমিকার দেখা পেতে বোমা ছুঁড়ে গ্রেপ্তার প্রেমিক
  • বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ভারতীয় পাসপোর্টের অবনতি কেন?