ভেসে আসা কয়লায় জীবন চলে ৫ হাজার মানুষের
Published: 31st, May 2025 GMT
সুনামগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত উপজেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম তাহিরপুর। বোরো ফসলের বাম্পার হাউস হিসেবে পরিচিত এই উপজেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একাংশের স্থায়ী কর্মসংস্থান হয়নি আজও। ঢলের পানিতে আর বন্দরের পথে পথে কুড়ানো কয়লা বিক্রি করে চলে তাদের জীবন।
বর্তমানে উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ কুড়ানো কয়লায় জীবিকা নির্বাহ করছেন।
প্রতিবছরের মতো এবারও আগাম বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে আসছে। গত চার দিনের ভারী বৃষ্টিপাতে ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি নদী যাদুকাটা, মাহারাম, বৌলাই, রক্তি ও পাটলাইয়ে প্রবাহিত হচ্ছে প্রবল স্রোত। এতে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ৫০টিরও বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ পানির সঙ্গে সীমান্তের ওপার থেকে ভেসে আসছে পাহাড়ি কয়লা।
স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের কলাগাঁও ছড়া-সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ঢলের পানির সঙ্গে ভেসে আসছে থরে থরে কয়লা। বৃষ্টি, স্রোত উপেক্ষা করে সীমান্ত ঘেঁষা জনপদের শতাধিক বাসিন্দা সে কয়লা কুড়াতে নেমে পড়েছেন পানিতে। ঠেলা জাল দিয়ে কয়লা আহরণ করছেন তারা। সেই কয়লা তীরে থাকা সাহায্যকারীরা বস্তায় ভরছেন। পরে সনাতনী প্রক্রিয়ায় এসব কয়লা থেকে নুড়ি ও বালু ঝেড়ে তা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়।
উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস যাদুকাটা নদীসহ সীমান্তবর্তী ২০টি পাহাড়ি ছড়া থেকে কুড়ানো কয়লা। বছরের অন্য সময়ে বন্দরের সড়কে গাড়ি পড়া কয়লা কুড়িয়ে বিক্রি করেন তারা।
ছড়া থেকে কয়লা নিয়ে উঠে আসা কলাগাঁও গ্রামের কয়লা সংগ্রাহক সাকিরুল মিয়া বলেন, ভারী বর্ষণে কলাগাঁও ছড়া দিয়ে ঢলের পানি নামে। তার সঙ্গে বালু মিশ্রিত কয়লা ভেসে আসে মেঘালয় পাহাড় থেকে। তারা ঠেলাজাল দিয়ে স্রোতের বিপরীতে সেই কয়লা সংগ্রহ করেন। সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ ১০ বস্তা কয়লা সংগ্রহ করা যায় একেক বেলায়। এ কয়লা থেকে বালু ও নুড়ি ঝেড়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বস্তা প্রতি ২০০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারেন। এ ছাড়া বন্দরের পথে পরিবহন থেকে খসে পড়া কয়লাও কুড়িয়ে এনে বিক্রি করেন তারা। স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হলে অবশ্যই তারা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ এড়িয় যাবেন। বিশেষ করে সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে তারা স্থায়ীভাবে উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থানে আগ্রহী।
স্থানীয় কয়লা ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা জানান, প্রতিবছর বর্ষায় ভারত থেকে নেমে আসা যাদুকাটা নদী ও সীমান্ত ছড়াগুলো দিয়ে বালুর সঙ্গে মিশে থাকা কয়লা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। মেঘালয় পাহাড়ে যে কয়লা উত্তোলন করা হয়, তার একাংশ স্রোতের সঙ্গে নুড়ি ও বালু মিশ্রিত কয়লা হিসেবে ভেসে আসে এই অঞ্চলে।
তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি হাজী খসরুল আলম বলেন, সীমান্ত এলাকার ছড়াগুলোতে নারী শ্রমিকরা অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই কয়লা কুড়িয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। সরকার কর্তৃক এসব শ্রমিকদের তালিকা তৈরি করে প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
স্থানীয় সচেতন মহলের একাধিক সদস্য উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এই গোষ্ঠীটির কয়লা কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহের প্রবণতা দেখে বোঝা যাচ্ছে তাদের নতুন প্রজন্মও একই পথে চলছে। জীবিকার স্থায়ী বন্দোবস্ত না থাকায় এই কাজে যুক্ত হচ্ছেন তারা। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় স্থায়ী কর্মসংস্থানের অভাবে স্বাভাবিক সমাজ ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন তারা। অন্য কোনো কাজের দক্ষতা না থাকায় এই পথ বন্ধ হয়ে গেলে তাদের চোরাই কয়লা সংগ্রহের মতো ঝুঁকিপূর্ণ অপরাধকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার প্রবল শঙ্কা রয়েছে।
চারাগাঁও স্থল শুল্ক স্টেশনের কয়লা আমদানিকারক সামাদ মুন্সি বলেন, প্রতিবছর পাহাড়ি ঢলের স্রোতে ভেসে আসা কয়লা সংগ্রহ করেন হাজারো নারী-পুরুষ। এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করেন তারা। আবার শুষ্ক মৌসুমে রাস্তায় পড়ে থাকা কয়লা কুড়িয়ে পরিবারের চাহিদা মেটান। এসব কয়লা প্রতি বস্তা ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করে তারা। প্রায় ৫০ বছর ধরে ছড়া থেকে কয়লা তুলে এভাবে তারা বিক্রি করে আসছেন। গত ৫ বছর ধরে শ্রমিকদের কুড়ানো কয়লা অবাদে বিক্রির সুযোগ কম। তাদের এই কয়লা অবাদে বিক্রি এবং স্থায়ী কর্মসংস্থান নিশ্চিতে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা প্রত্যাশা করেন তিনি।
ইউএনও মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কয়ল ঢল র প ন উপজ ল র কর ন ত ব যবস ই কয়ল র কয়ল
এছাড়াও পড়ুন:
অপসারণের বৈধতা নিয়ে ফারুকের রিট কার্যতালিকা থেকে বাদ
বিসিবির সভাপতির পদ থেকে অপসারণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ফারুক আহমেদের রিট কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (২ জুন) বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে ফারুক আহমেদের শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। বিসিবির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মাহিন এম রহমান। আমিনুল ইসলাম বুলবুলের পক্ষে ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম ও রাষ্ট্রপক্ষে বদিউজ্জামান তফাদার, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এরশাদ হোসেন রাশেদ, রুহুল আমিন শিকদার উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গতকাল বিসিবির সভাপতির পদ থেকে অপসারণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন ফারুক আহমেদ।
রিটে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) কর্তৃক নতুন বিসিবি সভাপতি হিসেবে আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে নিয়োগের সিদ্ধান্তকেও চ্যালেঞ্জ করা হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিপিএল-সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এবং নয় পরিচালকের মধ্যে ৮ জনের অনাস্থার ভিত্তিতে ফারুক আহমেদের পরিচালক পদ বাতিল করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। এর ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিসিবি সভাপতির পদও হারান তিনি।
পরদিন শুক্রবার বিসিবি পরিচালনা পর্ষদের সভায় সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে নতুন সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরিচালকদের সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত হয়।
দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ১৭তম বিসিবি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন আমিনুল। ফারুক আহমেদের পর তিনি হলেন দ্বিতীয় সাবেক ক্রিকেটার, যিনি দেশের সর্বোচ্চ ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থার সভাপতির দায়িত্বে এলেন।
গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিসিবির সাবেক পরিচালক জালাল ইউনুস ও আহমেদ সাজ্জাদুল আলমের জায়গায় ফারুক আহমেদ ও নাজমূল আবেদীনকে বিসিবির পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন দেয় এনএসসি। পরে বোর্ড সভায় পরিচালকদের ভোটে ফারুক আহমেদ সভাপতি নির্বাচিত হন।
ঢাকা/এম/ইভা