বৈষম্যবিরোধী নারী সংগঠককে রাস্তায় ফেলে মারধর, ওসি প্রত্যাহার
Published: 31st, May 2025 GMT
ফরিদপুরের নগরকান্দায় বৈশাখী ইসলাম বর্ষা নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সংগঠককে প্রকাশ্যে রাস্তায় পিটিয়ে আহত করেছে বখাটেরা। বোনকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ এবং এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বর্ষার ওপর এ হামলা হয়। একই সময় উত্ত্যক্তের শিকার বর্ষার বোনকেও মারধর করে বখাটেরা। শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে নগরকান্দার ভবুকদিয়া এলাকায় বর্ষাদের নিজ বাড়ির সামনে রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে।
বর্ষা সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কলেজ শাখার সংগঠক। তাঁর অভিযোগ, শুক্রবার বিকেলে স্থানীয় বিএনপি কর্মীরা তাঁর ওপর হামলা চালায়। তবে নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারা মিয়া এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, হামলাকারীরা আওয়ামী লীগের দোসর। হামলাকারীদের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই।
এদিকে হামলার খবর পেয়ে রাতে নগরকান্দা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ফরিদপুর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা যান সেখানে। পুলিশ হামলায় জড়িতদের আটক করে থানায় নিয়ে আসার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে পড়ে। একপর্যায়ে পুলিশ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীকে মারধর করা হয়। পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে আটক ব্যক্তিদের থানায় নিয়ে যায়। বৈশাখীকে মারধর ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় শনিবার নগরকান্দা থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। নারী নির্যাতন দমন আইন ও হামলার ঘটনায় দুটি মামলা করেছেন বৈশাখী নিজে। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় অন্য মামলাটি করেছেন নগরকান্দা থানার এসআই আমিনুর রহমান।
শনিবার ঘটনার বিস্তারিত জানাতে গিয়ে বর্ষা বলেন, গত বৃহস্পতিবার তাঁর বোন বাড়ির পাশে দোকান থেকে পণ্য কিনে ফেরার পথে উত্ত্যক্তের শিকার হন। আমার বোন বাড়িতে কাঁদতে কাঁদতে এসে আমাকে বললে, আমি দোকানে গিয়ে ভবুকদিয়া গ্রামের জালাল ব্যাপারীর ছেলে শরীফ ব্যাপারীকে সেখানে পাই। আমি বোনকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করতে গেলে তারা আমার সঙ্গেও বাজে ব্যবহার করে। শুক্রবার সকালে নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারা মিয়ার উপস্থিতিতে সালিশে বিষয়টি মীমাংসা হওয়ার কথা। তারা মিয়াকে সকালে ফোন করলেও তিনি আসেননি। পরে দুপুরে আমি আমার বোনকে নিয়ে নগরকান্দা থানায় শরীফের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেই।
বর্ষা আরও জানান, বিকেলে তারা মিয়া আমাকে ফোন করে বলেন, তুমি সালিশের কথা বলে মামলা করছো কেন। এখানে তোমার বৈষম্য-টৈষম্য চলবে না। এখানে থাকতে হলে সালিশ মেনে থাকতে হবে। পরে আমি নগরকান্দা থানায় গিয়ে সব ঘটনা খুলে বললে পুলিশ শরীফকে আটক করতে আসে। একপর্যায়ে স্থানীয় সেকেন্দার কাজীসহ তাঁর ছেলে সাগর কাজী আমার বাড়ির সামনে এলে আমি তারা মিয়ার সঙ্গে আবার কথা বলি।
তারা মিয়া বলেন, তিনি রোববার সালিশ করে দেবেন। কথা শেষ হতেই সাগর কাজী ও সেকেন্দার কাজী আমাকে ও আমার বোনকে চুলের মুঠি ধরে রাস্তায় ফেলে লাথি দিতে থাকে এবং ব্যাপক মারধর করে। ঘটনাস্থলে দু’জন পুলিশ সদস্য উপস্থিত থাকলেও তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে সব। পরে আমি ফেসবুক লাইভে এসে হামলা ও মারধরের বিষয়টি বললে তা ভাইরাল হয়।
জানা গেছে, রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নিয়ে অভিযুক্ত শরীফকে আটক করে নিয়ে আসতে যায় পুলিশ। এ সময় স্থানীয়রা পুলিশের ওপর হামলা করে। সে সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপির নেতারা।
এর মধ্যে বর্ষার ওপর হামলার ঘটনার বিচার দাবিতে রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে জড়িতদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন তারা। এ সময় ছাত্র নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাগ্বিতণ্ডাও হয়।
এদিকে নগরকান্দা থানার ওসি সফর আলীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক বর্ষার ওপর হামলার ঘটনার পর তাঁকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়। শনিবার তিনি ফরিদপুর পুলিশ লাইনসে যোগদান করেছেন। বর্ষার ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম। তিনি তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম রধর নগরক ন দ ব এনপ র আম র ব কর ছ ন ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির প্রতি সমর্থন জানালেন গভর্নর ক্যাথি হোকৌ
নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকৌ গতকাল রোববার নিউইয়র্ক নগরের ডেমোক্রেটিকদলীয় মেয়রপ্রার্থী জোহরান মামদানিকে সমর্থন করেছেন। তাঁদের মধ্যে মতবিরোধ থাকা সত্ত্বেও হোকৌ তাঁকে ‘নিউইয়র্ক নগরকে সাশ্রয়ী করার বিষয়ে মনোযোগী একজন নেতা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক লেখায় হোকৌ জোহরানের প্রতি এ সমর্থন জানান। ফলে গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী ৩৩ বছর বয়সী জোহরানের অবস্থান আরও শক্তিশালী হলো। তিনি রাজ্যের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্র্যাট ও ক্ষমতাধর ব্যক্তি। এই সমর্থন হাউস মাইনরিটি লিডার হেকিম জেফরিস, সিনেট মাইনরিটি লিডার চাক শুমারের মতো অন্য শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্র্যাটদের ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি করেছে। তাঁরা এখনো জোহরানকে সমর্থন জানাননি। জেফরিস ও শুমার দুজনেই ব্রুকলিনের বাসিন্দা।
গভর্নর হোকৌর এ সমর্থন দুই মাসের বেশি সময় ধরে দুজনের মধ্যে বজায় রাখা সতর্ক দূরত্বের অবসান ঘটাল। গত জুনে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে (দলীয় বাছাইপর্বে) জোহরান সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে সবাইকে চমকে দেন। হোকৌ প্রথমে জোহরানকে সমর্থন জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
হোকৌ লিখেছেন, ‘কয়েক মাস ধরে আমি তাঁর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছি। আমাদের মধ্যে মতবিরোধ ছিল। কিন্তু আমাদের আলোচনায় আমি এমন একজন নেতাকে দেখেছি, যিনি আমার মতোই এমন একটি নিউইয়র্ক গড়তে চান, যেখানে শিশুরা তাদের এলাকায় নিরাপদে বেড়ে উঠতে পারবে এবং প্রতিটি পরিবারের জন্য সুযোগ হাতের নাগালে থাকবে। আমি এমন একজন নেতাকে দেখেছি, যিনি নিউইয়র্ক নগরকে সাশ্রয়ী করার দিকে মনোনিবেশ করেছেন। তাঁর এ লক্ষ্যকে আমি আন্তরিকভাবে সমর্থন করি।’
জোহরানের নির্বাচনী প্রচারের মূল ভিত্তি ছিল জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো এবং প্রগতিশীল বিভিন্ন এজেন্ডা, যেমন বিনা মূল্যে সিটি বাস, সরকারি গ্রোসারি এবং শহরের সবচেয়ে ধনী বাসিন্দাদের ওপর কর আরোপ।
জোহরান মামদানি