আজও বন্ধ চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা, চরম ভোগান্তি
Published: 1st, June 2025 GMT
ঢাকার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে টানা পঞ্চম দিন ধরে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। চিকিৎসক ও কর্মচারীদের সঙ্গে সম্প্রতি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতের মারামারি ও সংঘর্ষের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার সকাল থেকেই বন্ধ রয়েছে চিকিৎসাসেবা। এতে করে প্রতিদিনই চিকিৎসা নিতে আসা শত শত রোগীকে ফিরে যেতে হচ্ছে।
আজ রোববারও হাসপাতালটিতে কোনো চিকিৎসাসেবা চালু করা যায়নি। সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক ও নার্স নেই। সকাল থেকেই হাসপাতালের সামনে চিকিৎসা নিতে আসা অনেককে জড়ো হতে দেখা যায়। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নতুন রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন। এছাড়াও আগে যেসব রোগী হাসপাতাল থেকে আগে চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের অনেকে ফলোআপের জন্য এসেছেন। আবার অনেকে আসছেন অপারেশনের জন্য। হাসপাতাল বন্ধ থাকায় সেবা না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন চোখের চিকিৎসা করতে আসা রোগীরা।
এদিকে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত রোগীদের আশপাশের হাসপাতালের চক্ষু বিভাগ থেকে সেবা নিতে পরামর্শ দিয়েছে।
গতকাল শনিবার হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা.
আজিমপুর থেকে চোখের সমস্যা নিয়ে আসেন আজিজ মিয়া। তিনি সমকালে বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে কয়েক দিন ধরে সেবা বন্ধ, সরকার থেকে কেনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। সাধারণ জনগণ চিকিৎসাসেবা নিবে কোথা থেকে। অর্থসংকটে বেসরকারি হাসপাতালেও সেবা নিতে পারবো না। এখন আমরা কী করবো।’
মোহাম্মদপুর থেকে সেবা নিতে আসা এক প্রৌঢ় জানান, ‘আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হাসপাতালের সামনে আসি। এখন ১১টা বাজে কিন্তু হাসপাতালের গেট খুলেনি। এখানে এসে শুনি, হাসপাতাল অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ। আমরা এখন কি করবো, কোথায় যাব।’
অচলাবস্থা কাটাতে গত শুক্রবার হাসপাতালের কয়েকজন সচিব, হাসপাতাল প্রতিনিধি, ছাত্র প্রতিনিধিসহ বৈঠক হলেও সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি তারা। হাসপাতালটির চিকিৎসাধীন জুলাই যোদ্ধা রোহান আহমেদ বলেন, আমি হাসপাতালেই আছি। সব ধরনের সেবা কার্যক্রম বন্ধ আছে। আমাদের খাবার ও ওষুধ বাইরে থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে। দুপুরে চিকিৎসা চালুর বিষয়ে বৈঠক হলেও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
গত বুধবারও আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক হয়। বৈঠকে বেশ কয়েকজন উপদেষ্টাসহ এনসিপির নেতা নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও আবু বকর উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আহত ৮-১০ জন জুলাই যোদ্ধাকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে অন্যত্র স্থানান্তর করার বিষয়ে তারা সম্মত হয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, পুরো সেবা কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ করছেন। তাদের ভাষ্য, হাসপাতালের ভেতর জুলাই যোদ্ধাদের কিছু অংশ সহিংস আচরণ করেছে। ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা ঘটেছে বারবার। এতে আতঙ্কে রয়েছেন চিকিৎসক ও স্টাফরা।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসক ও কর্মীরা কাজে ফিরতে অনিচ্ছুক।’
এদিকে গতকাল স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন স্বাক্ষরিত ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৯ মে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যকর্মীরা হাসপাতালের অভ্যন্তরে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ফলে ওই দিন থেকেই হাসপাতালের নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে শুধু জুলাই অভ্যুত্থানে আহতরা অবস্থান করছেন। সারাদেশ থেকে আসা অন্য চক্ষু রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয় দুঃখ প্রকাশ করছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে ৫০ জন জুলাই যোদ্ধা হাসপাতালে ভর্তি। আত্মহত্যার চেষ্টা করা চারজন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং একজন সিএমএইচে ভর্তি আছেন। এ ছাড়া প্রায় ১৫০ জন সাধারণ রোগী ছিলেন, যারা নিরাপত্তার অভাবে হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন।
যে ঘটনার জেরে অচলাবস্থা
হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত চার রোগী সঠিক চিকিৎসা না পাওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে গত ২৫ মে বিষপান করলে উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটে। এরপর ২৭ মে পরিচালকের কক্ষে গিয়ে আরেক আহত শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এতে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়; তৈরি হয় অবিশ্বাসের আবহ। এরপর গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থায় যায়। হাসপাতালে ভর্তি জুলাই যোদ্ধা, কর্মচারী এবং রোগীদের সঙ্গে থাকা স্বজনদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়।
প্রসঙ্গত, হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকায় এসব রোগীকে এখন অন্যান্য হাসপাতালে ছুটতে হচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক ও পর স থ ত র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
৫ খুনের মামলায় ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্নাকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ
জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়াসহ পাঁচটি হত্যা মামলায় আলোচিত সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্নাকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তফা এর আদালত শুনানি শেষে এ পৃথক পৃথক আদেশ দেন। পুলিশ পাঁচটি খুনের মামলায় তামান্নাকে গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আবেদন করেছিল।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের চান্দগাও থানার ওসি আফতাব উদ্দিন বলেন, পাঁচটি খুনের মামলায় শারমিন আক্তার তামান্নাকে গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আবেদন করলে শুনানি শেষে আদালত গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালতে দাখিল করা আবেদনে উল্লেখ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে ১৮ জুলাই, ৩ আগস্ট ও ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ সন্ত্রাসীরা চবি ছাত্র হৃদয় চন্দ্র তরুয়া, ফজলে রাব্বী, সায়মান মাহিন, তানভীর সিদ্দিকী ও শহিদুল ইসলাম শহীদকে গুলি করে ও এলোপাতাড়ি মারধর করে খুন করেন। এ ঘটনায় আসামি শারমিন আক্তার তামান্নার সম্পৃক্ততা তদন্তে পাওয়া যাচ্ছে। তাই তাকে এসব খুনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো প্রয়োজন। আদালত পুলিশের পৃথক পৃথক আবেদনের উপর শুনানি শেষে আসামি তামান্নাকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ দেন।
গত ১১ মে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট বারৈইপাড়া থেকে তামান্নাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে নগরের বাকলিয়া থানা পুলিশের জোড়া খুনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর চেষ্টা করলে তামান্না হাইকোর্ট থেকে জামিন নেওয়ার নথি পুলিশের কাছে জমা দেন। পরে তাকে বাকলিয়া থানা থেকে বায়েজিদ বোস্তামি থানায় স্থানান্তর করা হয়। পরে তাকে ১২ মে ৩০ দিনের ডিটেনশন দিয়ে থানা থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এখন তিনি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ঢাকা থেকে গত ১৫ মার্চ ছোট সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারের পরদিন তার স্ত্রী তামান্নার প্রতিক্রিয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেই ভিডিওতে তিনি ‘কাড়ি কাড়ি’ টাকা খরচ করে কারাবন্দি সাজ্জাদকে জামিনে বের করে আনার কথা বলেন। পাশাপাশি তার বিরোধী পক্ষকে হুমকি দিয়ে বলেন ‘এখন তোমাদের পলাতক থাকার পালা।’ তামান্না তার ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিওটি শেয়ার করলেও পরে তা সরিয়ে নেন। এরপর ৮ এপ্রিল হত্যা মামলায় রিমান্ডে থাকা ছোট সাজ্জাদকে সঙ্গে নিয়ে রাউজান ও বায়েজিদ এলাকায় মাইকিং করে পুলিশ। তাকে রাস্তায় ঘুরিয়ে ‘সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে’ হুঁশিয়ারি করে পুলিশের এ মাইকিংয়ের ঘটনায় চটেন তার স্ত্রী তামান্না। এ ঘটনার পরদিন নিজের ফেসবুক পেজ থেকে একটি ভিডিও বার্তায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তামান্নার অভিযোগ, তার স্বামী সাজ্জাদকে রশি বেঁধে রাস্তায় ঘোরানো ‘অপমানজনক’ এবং তাতে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে’।