চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নগরের যানজট নিরসনে মনোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। সাড়ে ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ তিনটি রুটে মনোরেল নির্মাণ করতে অন্তত ২৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে।

প্রকল্প বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বিদেশি দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক চুক্তি (এমওইউ) করেছে সিটি করপোরেশন। প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছে ওরাসকম কনস্ট্রাকশন ও আরব কন্ট্রাক্টরস। আজ রোববার নগরের আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার মিলনায়তনে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হয়।

সিটি করপোরেশন ও চুক্তি স্বাক্ষরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি (পিপিপি) প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম নগরে মনোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। বিনিয়োগ করা হবে এনএএস ইনভেস্টমেন্ট ও ন্যাশনাল ব্যাংক অব ইজিপ্টের মাধ্যমে। প্রকল্পের আওতায় সম্ভাব্য তিনটি রুট বিবেচনা করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত (বহদ্দারহাট, চকবাজার, লালখান বাজার, দেওয়ানহাট ও পতেঙ্গা হয়ে) ২৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার, সিটি গেট থেকে শহীদ বশিরুজ্জামান চত্বর পর্যন্ত (এ কে খান, নিমতলী, সদরঘাট ও ফিরিঙ্গি বাজার হয়ে) ১৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার এবং অক্সিজেন থেকে ফিরিঙ্গি বাজার (মুরাদপুর, পাঁচলাইশ, আন্দরকিল্লা ও কোতোয়ালি হয়ে) পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার।

আরব কন্ট্রাক্টরস ও ওরাসকম পেনিনসুলা কনসোর্টিয়ামের প্রধান প্রতিনিধি কাউসার আলম চৌধুরী বলেন, মনোরেল নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে সমঝোতা স্মারক চুক্তি হয়েছে। এখন তাঁরা সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করবেন। এই কাজ করতে অন্তত নয় মাস থেকে এক বছর সময় লাগবে। এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। এখানে যানজট ও পরিবহনসংকট ক্রমবর্ধমান। মনোরেল একটি আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব সমাধান। আমরা এই প্রকল্পে পূর্ণাঙ্গ বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।’

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম নগরের গণপরিবহন খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে চলেছে মনোরেল প্রকল্প। এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামকে দক্ষিণ এশিয়ার গেটওয়ে হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন তাঁদের। মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর নগরকে কীভাবে সুন্দর ও পরিকল্পিত করা যায়, তার উদ্যোগ নিয়েছেন। যানজট নিরসনের জন্য ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়, স্মার্ট ট্রাফিক সিস্টেম চালু, নতুন বাস টার্মিনাল নির্মাণসহ অনেক উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে মনোরেল এই সমস্যাগুলোর একটি কার্যকর সমাধান হবে।

মেয়র শাহাদাত হোসেন জানান, প্রস্তাবিত মনোরেল প্রকল্পটির মোট দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে ৫৪ কিলোমিটার এবং এতে বিনিয়োগ করা হবে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা। পুরো অর্থায়ন আনবে বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান—ওরাসকম কনস্ট্রাকশন ও আরব কন্ট্রাক্টরস। এই বিনিয়োগের জন্য সিটি করপোরেশনের কোনো আর্থিক দায় থাকবে না। কেবল প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট ও ভূমি বরাদ্দ দেবে সিটি করপোরেশন।

অনুষ্ঠানে গ্রেটার চিটাগাং ইকোনমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামকে একটি স্মার্ট ও টেকসই নগরে রূপান্তরের অংশ হিসেবে মনোরেল প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও নগরবাসীকে নিয়ে একটি ইকোনমিক ফোরাম গঠন করে এই প্রকল্পকে বাস্তবায়নে কাজ করব।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এস এম সরোয়ার কামাল, গ্রেটার চিটাগাং ইকোনমিক ফোরামের সদস্যসচিব নাজির শাহীনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সড়ক বিশেষজ্ঞদের মতে, মনোরেল হলো এমন একটি রেলওয়ে, যেখানে ট্র্যাকটি একটি একক রেল বা বিম দিয়ে তৈরি। মনোরেল এক চাকার ট্রেন। এক চাকার ওপরই চলে। দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যে মনোরেল স্থাপন ও চালু করা সম্ভব।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত অন ষ ঠ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বাজেট ‘স্মল’, কিন্তু ‘বিউটিফুল’ নয়

‘স্মল ইজ বিউটিফুল’ বা ছোটই সুন্দর—অর্থনীতিতে এই ধারণা বিখ্যাত করেছিলেন ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ আরনেস্ট ফ্রেডারিক সুমাখার। ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত স্মল ইজ বিউটিফুল: এ স্টাডি অব ইকোনমিকস অ্যাজ ইফ পিপল ম্যাটারড বইয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, এই যে বিশ্বব্যাপী বড় বড় প্রকল্প, বিশাল ব্যয়, বড় বড় কোম্পানি—এসবই কি উন্নয়ন। নাকি মানুষের কল্যাণই আসল উন্নয়ন।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ গতকাল সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের যে বাজেট পেশ করলেন, সেটিও বড় ব্যয়ের বাজেট নয়, বড় বড় প্রকল্পের কথাও তিনি বলেননি। কিন্তু এই বাজেট মানুষকে স্বস্তি দেবে কতটা সেই প্রশ্ন যেমন আছে, তেমনি মানুষ যে আরও দারিদ্র্য হচ্ছে, কাজ হারাচ্ছে, কমছে আয়—তা থেকে উত্তরণ ঘটানোর মতো পরিকল্পনাও তিনি দেননি। ফলে নতুন বাজেট সব অর্থেই ‘স্মল’, তবে ‘বিউটিফুল’ কি না, সেই প্রশ্ন করাই যায়।

নতুন বাজেট বক্তৃতা ছোট, বাজেটের আকার কম, প্রতিশ্রুতি স্বল্প, আকাঙ্ক্ষা সীমিত। আবার অর্থ উপদেষ্টা সম্ভবত ধরেই নিয়েছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তাঁর তেমন কিছু করার নেই, বেসরকারি বিনিয়োগের বাধা দূর করার মতো শক্তি আয়ত্তে নেই, কর্মসংস্থানের সংকট কাটবে না, যাবে না রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। এ কারণে নতুন যে বাজেট তিনি দিয়েছেন, তা দিয়ে হয়তো আপাতত টিকে থাকা যাবে, সামনে খুব বেশি আগানো যাবে না।

বাজেট বক্তৃতা দিচ্ছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ