জুলাই অভ্যুত্থানে এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যাচেষ্টা ও সহিংসতা ও বিধিভঙ্গের অভিযোগে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯ চিকিৎসক, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী চাকরি হারাচ্ছেন। একই সঙ্গে আরও ১০ জনকে তিরস্কার ও সতর্ক করা হচ্ছে। এসব সিদ্ধান্ত এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশের আওতায় গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় আংশিক প্রতিবেদন উপস্থাপিত হলে এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সহিংসতায় জড়িত ১৫ জনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা

গত বছরের ৪ আগস্ট ক্যাম্পাসে এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যাচেষ্টা, মারামারি, ভাঙচুর ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তদন্ত কমিটি তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা অধ্যাদেশের ৬ (ঠ) ধারা অনুযায়ী চাকরি থেকে পদচ্যুতির সুপারিশ করে, যা সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত হয়।

অভিযুক্তদের মধ্যে আছেন—চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের ডা.

মো. রিয়াদ সিদ্দিকী, পেইন্টার নিতীশ রায়, ড্রাইভার সুজন বিশ্বশর্মা, সিনিয়র স্টাফ নার্স শবনম নূরানীসহ আরও অনেকে।

সরাসরি সংঘর্ষে জড়িত ১৯ চিকিৎসক

একই ঘটনায় ছাত্রজনতার সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে আরও ২৩ চিকিৎসককে শনাক্ত করা হয়। এদের মধ্যে ১৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরও চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে আছেন কিডনি প্রতিস্থাপন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান, নিউরোলজির অধ্যাপক ডা. মো. আহসান হাবিব, ক্লিনিক্যাল অনকোলজির অধ্যাপক ডা. নাজির উদ্দিন মোল্লাহ, এবং আরও অনেকে।

এক শিক্ষকের অভিযোগে আরেকজন বরখাস্ত

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. এএইচএম জহুরুল হকের বিরুদ্ধে বিধিভঙ্গ করে পদোন্নতির আবেদন করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকেও চাকরিচ্যুত করার সুপারিশ করা হয়েছে। অভিযোগকারী ছিলেন একই বিভাগের অধ্যাপক ডা. নাসিমা আখতার।

সিন্ডিকেট সভায় বিশৃঙ্খলায় জড়িতদের তিরস্কার

সিন্ডিকেট সভা চলাকালে অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার, গালাগাল এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ৯ চিকিৎসক ও ১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাদের তিরস্কার ও সতর্ক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বৈষম্যের শিকার কর্মচারীদের স্বীকৃতি

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৫তম সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যের শিকার ২২ জন কর্মচারীকে ভুতাপেক্ষাভাবে সব আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৯৬ জনের চাকরি স্থায়ী এবং ২২ জনের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

উপ-উপাচার্যের বক্তব্য

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ সমকালকে জানান, “তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে, তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে নেওয়া হবে।”

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক চ কর চ ক ৎসক তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে ১৫ নমুনায় ৯ জনের করোনা শনাক্ত হওয়ায় উদ্বেগ

রাজশাহীতে ১৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯ জনের শরীরেই করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাদের অধিকাংশই চিকিৎসক। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার ৬০ শতাংশ। বিষয়টি জানাজানি হলে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস নিয়ে রাজশাহীতে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আক্রান্ত ব্যক্তিরা কয়েক দিন ধরে হালকা জ্বর, সর্দি ও কাশিতে ভুগছিলেন। সোমবার (২ জুন) দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে নয়জনের নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক খন্দকার মো. ফয়সল আলম বলেছেন, “কয়েক দিন ধরেই নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্তের হার বেড়েছে। সোমবার ১৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়, তাদের মধ্যে ৯ জন পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে সম্ভবত সাতজন চিকিৎসক। সবাই হালকা উপসর্গে ভুগছেন, কিন্তু শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং সুস্থ হতে কিছুটা সময় লাগছে। মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষকরাই পরীক্ষাগুলো করছেন।”

অধ্যক্ষ আরো বলেন, “আক্রান্ত ব্যক্তিরা হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ায় বিষয়টি খুব একটা গুরুত্ব পাচ্ছে না। তবে, করোনা এখনো ঝুঁকিপূর্ণ, বিশেষ করে বয়স্ক ও ডায়াবেটিসসহ জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য। তাই, সতর্ক থাকা জরুরি। অন্তত ৬০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের শরীরে করোনা উপসর্গ দেখা গেলে দ্রুত পরীক্ষা করানো উচিত। মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে নমুনা জমা দিয়ে পরীক্ষাটি করা যায়। এ ক্ষেত্রে মাস্ক পরে আসা বাধ্যতামূলক এবং পরীক্ষার জন্য সরকারি ফি ১০০ টাকা নির্ধারিত। দুপুরের মধ্যে পরীক্ষার ফল পাওয়া যাচ্ছে।”

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে বিশ্বাস বলেছেন, “বর্তমানে একজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন, যার করোনা শনাক্ত হয়েছে। অনেকের পজিটিভ আসলেও শরীরের অবস্থা ভালো থাকায় তারা হাসপাতালে ভর্তি হননি। ভর্তি থাকা রোগীর চিকিৎসা যথাযথ প্রক্রিয়ায় চলেছে।”

ঢাকা/কেয়া/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ