আরব মন্ত্রীদের পশ্চিম তীর সফর আটকে দিয়ে চরমপন্থী আচরণ দেখিয়েছে ইসরায়েল: সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী
Published: 2nd, June 2025 GMT
ছবি: ইন্টারন্যাশনালে Saudi Arab নামে রাখা আছে
ক্যাপশন: সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল–সৌদ জর্ডানের আম্মানে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশ নেন। ১ জুন ২০২৫ ছবি: রয়টার্স
সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল-সৌদ বলেছেন, আরব মন্ত্রীদের প্রতিনিধিদলকে পশ্চিম তীরে ঢুকতে না দিয়ে ইসরায়েল প্রমাণ করেছে যে তারা চরমপন্থী ও শান্তি চায় না।
আম্মানে জর্ডান, মিসর ও বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেছেন। তাঁদের সবার আরবের একটি মধ্যস্থতাকারী দলের অংশ হিসেবে রামাল্লায় ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইসরায়েল বাধা দেওয়ায় তাঁরা সেখানে যেতে পারেননি।
প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল-সৌদ বলেন, ‘প্রতিনিধিদলকে পশ্চিম তীরে যেতে না দিয়ে ইসরায়েল তাদের চরমপন্থা দেখিয়ে দিয়েছে। দেশটি বুঝিয়ে দিয়েছে তারা শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজে বের করার যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করে। এতে আমাদের সংকল্প আরও দৃঢ় হয়েছে, ইসরায়েলের এই ঔদ্ধত্যকে মোকাবিলা করতে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে দ্বিগুণ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাব।’
এর আগে গত শনিবার ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ইসরায়েল গতকাল রোববারের নির্ধারিত একটি সভা করতে দিচ্ছে না। ওই সভায় জর্ডান, মিসর, সৌদি আরব, কাতার ও আরব আমিরাতের মন্ত্রীদেরও অংশ নেওয়ার কথা ছিল।
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিন ফারহান যদি পশ্চিম তীর সফরে যেতেন, তবে এটি হতো সাম্প্রতিক সময়ে একজন বড় সৌদি কর্মকর্তার প্রথম পশ্চিম তীর সফর।
এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, আরব মন্ত্রীরা একটি ‘উসকানিমূলক বৈঠকে’ অংশ নিতে চেয়েছিলেন। সেখানে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রচার নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।
জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইমান সাফাদি বলেন, সফর আটকে দিয়ে ইসরায়েল আবারও দেখিয়ে দিয়েছে, কীভাবে তারা আরব ও ইসরায়েলের মধ্যকার ন্যায্য ও সমন্বিত সমাধানের সব সুযোগ নষ্ট করছে।
ফ্রান্স ও সৌদি আরবের যৌথ সভাপতিত্বে ১৭ থেকে ২০ জুন নিউইয়র্কে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেখানে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদর আবদেলআত্তি বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির পর নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং পুনর্গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে এ সম্মেলনে আলোচনা হবে, যেন ফিলিস্তিনিরা তাঁদের ভূখণ্ডে থাকতে পারেন এবং ইসরায়েলের যেকোনো উচ্ছেদ পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
আরব মন্ত্রীদের সফর আটকে দেওয়ার বিষয়ে ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত আরব পার্লামেন্ট সদস্য আইমান ওদে বলেন, ওই প্রতিনিধিদলের উদ্দেশ্য ছিল গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করা, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভূমিকা আরও জোরদার করা এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে একটি রোডম্যাপ তৈরির জন্য জাতিসংঘে সৌদি আরব ও ফ্রান্স যে উদ্যোগটি নিয়েছে, তাতে সমর্থন দেওয়া।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আল আরাবিয়া টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আইমান ওদে বলেন, সৌদি-ফ্রান্সের এই উদ্যোগের মাধ্যমে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিকভাবে আরও ব্যাপক স্বীকৃতি দেওয়ার পথ খুলে যেতে পারে। তবে তিনি বলেন, এ পদক্ষেপ ইসরায়েল সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ওদে-এর মতে, ইসরায়েল সরকার ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে দুর্বল করতে চায়। কারণ, তারা একে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ‘মূল ভিত্তি’ হিসেবে দেখে।
ওদে বলেন, আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এই সফর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে শক্তিশালী করতে পারে, এমন ধারণা থেকে ইসরায়েল তাদের সফর আটকেছে।
ইসরায়েল এখন জাতিসংঘ ও অনেক ইউরোপীয় দেশের চাপের মুখে পড়েছে। এসব দেশ চায় ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ে উঠুক। এটাকেই দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান বলা হয়ে থাকে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পরর ষ ট রমন ত র মন ত র দ র ব ন ফ রহ ন সফর আটক র সফর আরব র ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।
এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।
এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।
সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।
শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’