ছবি: ইন্টারন্যাশনালে Saudi Arab নামে রাখা আছে

ক্যাপশন: সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল–সৌদ জর্ডানের আম্মানে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশ নেন। ১ জুন ২০২৫ ছবি: রয়টার্স

সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল-সৌদ বলেছেন, আরব মন্ত্রীদের প্রতিনিধিদলকে পশ্চিম তীরে ঢুকতে না দিয়ে ইসরায়েল প্রমাণ করেছে যে তারা চরমপন্থী ও শান্তি চায় না।

আম্মানে জর্ডান, মিসর ও বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেছেন। তাঁদের সবার আরবের একটি মধ্যস্থতাকারী দলের অংশ হিসেবে রামাল্লায় ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইসরায়েল বাধা দেওয়ায় তাঁরা সেখানে যেতে পারেননি।

প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল-সৌদ বলেন, ‘প্রতিনিধিদলকে পশ্চিম তীরে যেতে না দিয়ে ইসরায়েল তাদের চরমপন্থা দেখিয়ে দিয়েছে। দেশটি বুঝিয়ে দিয়েছে তারা শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজে বের করার যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করে। এতে আমাদের সংকল্প আরও দৃঢ় হয়েছে, ইসরায়েলের এই ঔদ্ধত্যকে মোকাবিলা করতে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে দ্বিগুণ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাব।’

এর আগে গত শনিবার ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ইসরায়েল গতকাল রোববারের নির্ধারিত একটি সভা করতে দিচ্ছে না। ওই সভায় জর্ডান, মিসর, সৌদি আরব, কাতার ও আরব আমিরাতের মন্ত্রীদেরও অংশ নেওয়ার কথা ছিল।

সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিন ফারহান যদি পশ্চিম তীর সফরে যেতেন, তবে এটি হতো সাম্প্রতিক সময়ে একজন বড় সৌদি কর্মকর্তার প্রথম পশ্চিম তীর সফর।

এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, আরব মন্ত্রীরা একটি ‘উসকানিমূলক বৈঠকে’ অংশ নিতে চেয়েছিলেন। সেখানে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রচার নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।

জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইমান সাফাদি বলেন, সফর আটকে দিয়ে ইসরায়েল আবারও দেখিয়ে দিয়েছে, কীভাবে তারা আরব ও ইসরায়েলের মধ্যকার ন্যায্য ও সমন্বিত সমাধানের সব সুযোগ নষ্ট করছে।

ফ্রান্স ও সৌদি আরবের যৌথ সভাপতিত্বে ১৭ থেকে ২০ জুন নিউইয়র্কে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেখানে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদর আবদেলআত্তি বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির পর নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং পুনর্গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে এ সম্মেলনে আলোচনা হবে, যেন ফিলিস্তিনিরা তাঁদের ভূখণ্ডে থাকতে পারেন এবং ইসরায়েলের যেকোনো উচ্ছেদ পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।

আরব মন্ত্রীদের সফর আটকে দেওয়ার বিষয়ে ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত আরব পার্লামেন্ট সদস্য আইমান ওদে বলেন, ওই প্রতিনিধিদলের উদ্দেশ্য ছিল গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করা, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভূমিকা আরও জোরদার করা এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে একটি রোডম্যাপ তৈরির জন্য জাতিসংঘে সৌদি আরব ও ফ্রান্স যে উদ্যোগটি নিয়েছে, তাতে সমর্থন দেওয়া।

সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আল আরাবিয়া টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আইমান ওদে বলেন, সৌদি-ফ্রান্সের এই উদ্যোগের মাধ্যমে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিকভাবে আরও ব্যাপক স্বীকৃতি দেওয়ার পথ খুলে যেতে পারে। তবে তিনি বলেন, এ পদক্ষেপ ইসরায়েল সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

ওদে-এর মতে, ইসরায়েল সরকার ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে দুর্বল করতে চায়। কারণ, তারা একে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ‘মূল ভিত্তি’ হিসেবে দেখে।

ওদে বলেন, আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এই সফর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে শক্তিশালী করতে পারে, এমন ধারণা থেকে ইসরায়েল তাদের সফর আটকেছে।

ইসরায়েল এখন জাতিসংঘ ও অনেক ইউরোপীয় দেশের চাপের মুখে পড়েছে। এসব দেশ চায় ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ে উঠুক। এটাকেই দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান বলা হয়ে থাকে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র পরর ষ ট রমন ত র মন ত র দ র ব ন ফ রহ ন সফর আটক র সফর আরব র ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

টিনএজ সিনড্রোম: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এক নীরব সংকট

এক সময় ছিল, যখন সন্তানের আবেগ, দুষ্টুমি বা হঠাৎ রাগ দেখে বাবা-মা মুচকি হেসে বলতেন—“বয়স হয়েছে, ঠিক হয়ে যাবে।” কিন্তু আজ, সেই দুষ্টুমি পরিণত হয়েছে এমন আচরণে, যা অনেক সময় বাবা-মা পর্যন্ত চেনেন না। সন্তান চোখে চোখ রাখে না, ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়, কথা বললে রাগে ফেটে পড়ে। এই চিত্র এখন বিশ্বব্যাপী। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন—আমরা এক ‘Adolescent Syndrome’ বা ‘Teenage Behavioral Crisis’-এর মুখোমুখি, যা বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে।

আচরণগত বিপর্যয়ের পেছনে বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিনএজ সিনড্রোমের প্রধান কারণ তিনটি:

হরমোনের দোলাচল: ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরনের ওঠানামা টিনএজারদের আচরণে গভীর প্রভাব ফেলে। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই হরমোনাল পরিবর্তন দীর্ঘস্থায়ী ও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে, যা আচরণে অতিরিক্ত আবেগ ও বিদ্রোহের জন্ম দেয়।

মস্তিষ্কের অসম্পূর্ণ বিকাশ: ১৩-১৯ বছর বয়সে মস্তিষ্কের যুক্তিবোধ ও নিয়ন্ত্রণ-সম্পর্কিত অংশ (prefrontal cortex) এখনও গঠনের পর্যায়ে থাকে। ফলে তারা আবেগে সিদ্ধান্ত নেয়, ঝুঁকি নেয়, এবং কখন কী বলতে হবে—তা বোঝে না।

প্রযুক্তির নীরব আগ্রাসন: TikTok, Instagram, Snapchat—এসব প্ল্যাটফর্মে মেয়েরা দিনে গড়ে ৬–৮ ঘণ্টা সময় কাটায়। সোশ্যাল মিডিয়ার ভুয়া সৌন্দর্য ধারণা, জনপ্রিয়তার চাপ, ফিল্টার সংস্কৃতি তাদের আত্মপরিচয়কে বিকৃত করে তুলছে।

কেন বেশি দেখা যায় মেয়েদের মধ্যে?

Emotional Sensitivity: মেয়েরা আত্মপরিচয় ও আত্মমূল্যায়নে বেশি স্পর্শকাতর।
Beauty Pressure: সোশ্যাল মিডিয়ায় নারীদের শরীর, ত্বক, স্টাইল—সবকিছু নিয়েই এক অনিয়ন্ত্রিত চাপ কাজ করে।
Hormonal Impact: মাসিক চক্র ও হরমোন ওঠানামা তাদের মুড, আবেগ ও আচরণে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

বাবা-মা কি আগের তুলনায় বেশি সমস্যায়?

হ্যাঁ, এবং এর পেছনে রয়েছে পরিবারে সংলাপের ঘাটতি। অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সারদের আধিপত্য। পিতামাতার নিজের মানসিক চাপ। বিকৃত প্রতিযোগিতামূলক সমাজব্যবস্থা। আজ অনেক অভিভাবক জানেন না—কীভাবে সন্তানের কাছে পৌঁছাতে হয়। তারা নিজেরাই কর্মব্যস্ত, ক্লান্ত, মানসিকভাবে নিঃশেষ।

বিশ্বের অবস্থা কী বলছে?

জাপানে টিনএজ আত্মহত্যার হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে। সুইডেনে, গত ১০ বছরে কিশোরীদের বিষণ্ণতা বেড়েছে ৪৭%। যুক্তরাষ্ট্রে, CDC বলছে—“Teenage girls are experiencing record levels of sadness, violence, and suicidal thoughts.” বাংলাদেশে, শহরাঞ্চলে স্কুলগামী কিশোরীদের মধ্যে বিষণ্ণতা বেড়েছে প্রায় ৫০% (মনোরোগ ইনস্টিটিউট, ২০২৩)।

তাহলে বাবা-মা কী করবেন?

শুনুন, শাসন নয় – সন্তানকে সময় দিন, তার কথার পেছনে আবেগ বুঝুন।
প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ করুন – নিজেরাও মডেল হোন প্রযুক্তি ব্যবহারে।
কাউন্সেলিংয়ে ভীতি নয় – প্রয়োজনে পেশাদার সহায়তা নিন।
নিজের মানসিক স্বাস্থ্যও রক্ষা করুন – সন্তানকে বোঝাতে গেলে নিজের ভেতরে শান্তি থাকা জরুরি।

একটি প্রজন্ম যেন না হারিয়ে যায়। এই সংকট নিছক পারিবারিক নয়—এটি এক সামাজিক দায়। টিনএজারদের অভ্যন্তরীণ যন্ত্রণা বোঝা না গেলে, আমরা এক ‘চুপ করে থাকা বিষণ্ণ প্রজন্ম’ হারিয়ে ফেলব। সন্তান যখন বিদ্রোহ করে, সে আসলে জানিয়ে দেয়— ‘আমি ভালোবাসা চাই, বোঝার মানুষ চাই।’ আমাদের দায়িত্ব তাদের ভাষা বুঝে নেওয়া।

তারা//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • থানা হোক ন্যায়বিচারের প্রথম ঠিকানা: আইজিপি
  • থানায় হয়রানিমুক্ত সেবা দেওয়ার আহ্বান আইজিপির
  • ট্রাম্পবিরোধী স্লোগান দিয়ে উড়োজাহাজে গ্রেপ্তার ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক
  • শিক্ষার গতিপথ ও উন্নয়ন নিয়ে ঢাবিতে সেমিনার
  • শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা 
  • ‘আমি কী অপরাধ করেছি’— সবাই জানেন শিরোনামটা...
  • নারীদের নিয়ে বারে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আচরণ, আমিরাতের ক্ষোভে রাষ্ট্রদূতকে ফেরত নিচ্ছে ইসরায়েল
  • অফিসে প্রেম করার আগে জেনে রাখুন
  • টিনএজ সিনড্রোম: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এক নীরব সংকট