এই বাজেটের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, বৈষম্যহীন ও টেকসই অর্থনৈতিক কাঠামো বিনির্মাণ। অর্থাৎ অন্তর্বর্তী সরকার এমন পরিবর্তন বা সংস্কার করতে চায়, যার মধ্য দিয়ে এই লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অর্জন করা যায়। কিন্তু বাজেটের ঘোষণায় দৃশ্যত সে রকম উদ্যোগ চোখে পড়ল না।

বিষয়টি হলো, রাজনৈতিক সরকারের আমলে অনেক কিছু করা সম্ভব হয় না। তাদের নানা ধরনের অঙ্গীকার থাকে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের সে রকম বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে সার্বিকভাবে কাঠামোগত পরিবর্তনের সূচনা হবে, তেমনটা আশা করেছিলাম। কাঠামোগত পরিবর্তন করতে চাইলে বেশ কিছু কৌশলগত সংস্কার প্রয়োজন। এসব পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদি। রাতারাতি তা করা সম্ভব নয়। আশা ছিল, সব ক্ষেত্রে না হলেও অন্তত কিছু ক্ষেত্রে এই সরকার এসব পরিবর্তনের সূচনা করবে; সেটা হলে আমরা কিছু দূর এগোতে পারতাম। কিন্তু শেষমেশ সে রকম কিছু দেখা গেল না।

আমরা জানি, আমাদের সমাজে দিনে দিনে বৈষম্য বাড়ছে। বিশেষ করে আমি বলব সুযোগ বৈষম্যের কথা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নারী অধিকারের ক্ষেত্রে যে বৈষম্য আছে, সেই বৈষম্য আমলে নেওয়া দরকার ছিল। এ ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তনের সূচনা হলে সমাজে বড় পরিবর্তনের ভিত্তি রচিত হতো।

আরও পড়ুনবাজেট ‘স্মল’, কিন্তু ‘বিউটিফুল’ নয় ১ ঘণ্টা আগে

দ্বিতীয়ত, যে ক্ষেত্রে আমি পরিবর্তন দেখতে চেয়েছিলাম সেটা হলো, অর্থনীতির কাঠামোগত পুনর্বিন্যাস। বিশেষ করে কর্মসংস্থান নিয়ে বলব। কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা গেলে সামাজিক বৈষম্য কমত বা সামগ্রিকভাবে মানুষের জীবনমানের উন্নতি হতো। সেটা হলে জীবনমান উন্নয়নের কাঠামোগত সম্ভাবনা তৈরি হতো।

এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগের কথা বলা দরকার। বিনিয়োগ না বাড়লে দেশে কর্মসংস্থান বাড়বে না। আর কর্মসংস্থান না বাড়লে মানুষের জীবনে নিরাপত্তা আসবে না। কিন্তু বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো নয়। দেশের বিনিয়োগের অনুকূল পরিস্থিতি নেই। ফলে কেবল বিনিয়োগ সম্মেলন করে বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব নয়। অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব অন্তর্নিহিত সমস্যা বা দুর্বলতা আছে, সেগুলো দূর করতে হবে।

এরপর বলতে হয় মূল্যস্ফীতির কথা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতির মাধ্যমে বা নীতি সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে; কিন্তু তাতে ফল হয়নি। মুদ্রানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে রাজস্ব নীতি ও বাজার ব্যবস্থাপনা করতে হবে। তা না হলে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা সম্ভব নয়। রাজস্ব নীতির বিষয়টি আমলে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাজেট গুরুত্বপূর্ণ। সরকার এই সময় বিভিন্ন পণ্যের শুল্ক হ্রাস-বৃদ্ধি করে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও বিশেষ কিছু দেখা গেল না।

দেশে প্রায় তিন বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। অনেক মানুষ আবারও দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে। এতে যেমন মানুষের জীবনমানের অবনতি হচ্ছে, তেমনি বিনিয়োগের পরিবেশও ব্যাহত হচ্ছে।

মোদ্দা কথা হলো, দেশের অর্থনীতিতে মূল যেসব সমস্যা আছে, তার কোনোটি যথাযথভাবে আমলে নেওয়া হলো না এই বাজেটে।

মুস্তফা কে মুজেরী: সাবেক মহাপরিচালক, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ঠ ম গত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট, তরুণেরা কেন আগাম ভোট দিচ্ছেন

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচন সামনে রেখে ৭ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বাদে অন্য কোনো নির্বাচনে নিউইয়র্কে এটাই সর্বোচ্চ আগাম ভোট পড়ার ঘটনা। আগামীকাল ৪ নভেম্বর নিউইয়র্ক নগরে মেয়র পদে ভোট গ্রহণ হতে যাচ্ছে।

গতকাল রোববার ছিল আগাম ভোট দেওয়ার শেষ দিন। এদিন প্রায় ১ লাখ ৫১ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। নগরের নির্বাচন কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, আগাম ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকে এটি এক দিনে সর্বোচ্চ ভোট পড়ার ঘটনা। তা ছাড়া এদিন ৩৫ বছরের কম বয়সী ভোটারদের উপস্থিতিও বেশি ছিল। এর মধ্য দিয়ে আগাম ভোট দেওয়া ভোটারদের গড় বয়সও কমে এসেছে। গড় বয়স ৫০ বছরে নেমে এসেছে।

আগের সপ্তাহের প্রথম দিকে কম বয়সী ভোটারের উপস্থিতি কম ছিল। ওই সপ্তাহের রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৮০ হাজার নিউইয়র্কবাসী ভোট দিয়েছিলেন। তবে গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত এই সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ৩৫ বছরের কম বয়সী ১ লাখের বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন, যার মধ্যে শুধু গতকাল রোববারই এ বয়সী ভোটারের সংখ্যা ছিল ৪৫ হাজারের বেশি।

আরও পড়ুনমামদানিকে বারাক ওবামার ফোন, করলেন নির্বাচনী প্রচারের প্রশংসা০২ নভেম্বর ২০২৫

নিউইয়র্কে চলতি বছর মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনের তুলনায় চারগুণের বেশি। এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমো ও কার্টিস স্লিওয়ার চেয়ে এগিয়ে আছেন।

নিউইয়র্কে চলতি বছর মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনের তুলনায় চারগুণের বেশি। এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমো ও কার্টিস স্লিওয়ার চেয়ে এগিয়ে আছেন।

নিউইয়র্কে সর্বপ্রথম মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয় ২০২১ সালে। ওই নির্বাচনে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। তবে ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা যায়নি। ওই নির্বাচনে এরিক অ্যাডামস তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্লিওয়াকে দ্বিগুণের বেশি ভোটে হারিয়েছিলেন।

অবশ্য চলতি বছর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের সংখ্যা গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগাম ভোটকে ছাড়াতে পারেনি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১০ লাখ মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তুলনায় মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের বয়স তুলনামূলক কম। এটা অবাক করা বিষয়। কারণ, সাধারণত যারা আগাম ভোট দেন তাঁদের গড় বয়স মোট নিবন্ধিতদের গড় বয়সের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে।

আরও পড়ুনব্যালটে মামদানি, অদৃশ্য ‘প্রার্থী’ ট্রাম্প১ ঘণ্টা আগে

চলতি বছরের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের তুলনায়ও অনেক বেশি। ওই সময় নিউইয়র্কে প্রায় ৪ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। সে সময় আগাম ভোট দেওয়া ভোটারের অধিকাংশের বয়স ছিল ৫৫ বছরের বেশি।

চলতি বছরের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের তুলনায়ও অনেক বেশি। ওই সময় নিউইয়র্কে প্রায় ৪ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। সে সময় আগাম ভোট দেওয়া ভোটারদের অধিকাংশের বয়স ছিল ৫৫ বছরের বেশি।

গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের গড় বয়স ছিল ৫১ বছর। তবে এবার মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটারদের গড় বয়স আরও কমে ৫০ বছরে নেমেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ