Samakal:
2025-11-03@07:35:48 GMT

কাফনের কাপড়

Published: 3rd, June 2025 GMT

কাফনের কাপড়

এক বিশাল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক সুবহান সাহেব। অন্যদিকে তার স্ত্রী শাজিয়া বড়সড় একটি বাংলো বাড়ির গৃহকর্ত্রী। সুবহান সাহেব স্থির করেছেন স্ত্রী শাজিয়াকে নিয়ে হজে যাবেন। হজের সময় সবাই যা করে– দূরে থাকা আত্মীয়দের ফোন করে তাদের ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। কাছে থাকা আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব সবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সময় হয়ে ওঠেনি। তাদের কাছ থেকে মাফসাফ চেয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে হজের জন্য বিমানযাত্রার কয়েক দিন আগে এক দুপুর বেলায় তিনি বাসায় মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করলেন। 
আয়োজন ছিল মধ্যাহ্নভোজের, কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষ আসতে থাকল। ইয়াসিন বুয়াকে কেউ দাওয়াত করেনি। কেউ তাকে অভ্যর্থনা জানায়নি। তবু সে এসেছে। চুপচাপ থালাবাসন পরিষ্কার করে যাচ্ছে, ঝাড়ু দিচ্ছে। কোনো একসময় বেগম সাহেবার সঙ্গে দেখা হবে– এই আশায় সে ধৈর্যের সঙ্গে অপেক্ষা করছে। আয়োজন শেষ হতে হতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেল। সবাই চলে যাওয়ার পর ক্লান্ত-অবসন্ন শাজিয়া সোফায় বসে পা দুটি নরম কার্পেটে বিছিয়ে দিয়ে একটু আরাম করার অবকাশ পেলেন। ইয়াসিন বুয়া দুই হাত শাড়ির আঁচলে মুছে নিয়ে খুব সাবধানে বেগম সাহেবার দিকে এগিয়ে গেল, যেন পায়ের ফাটা গোড়ালির ছোঁয়া কার্পেটে না লাগে। 
শাজিয়া বললেন, তুমি কখন এলে? 
বুয়া বলল, অনেক আগে। 
তুমি কিছু খেয়েছ? এত রাতে তুমি কী করে বাড়ি ফিরবে? 
তিনি উঠে গিয়ে কিছু টাকা এনে ইয়াসিন বুয়ার হাতে দিলেন। বললেন, আল্লাহ যেন আমাদের হজ কবুল করেন– এই দোয়া করো।
ইয়াসিন বুয়া টাকাটা নিল না। সে তার শাড়ির আঁচলের এক কোণে গিঁট খুলে কিছু টাকা বেগম সাহেবার হাতে তুলে দিল। এ তার সারাজীবনের সঞ্চয়। ছেলে আলতাফকে বিয়ে দেওয়ার জন্য এ টাকা সে জমিয়েছিল পাই পাই করে।
বিয়ের পর তাদের দুটি সন্তানের জন্ম হয়। তার স্বামী এপিএমসি ইয়ার্ডে লোডারের কাজ করত। একদিন মাল টানার সময় হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়। স্বামীর মৃত্যুর পরে ইয়াসিন বুয়া ইদ্দত পালন করেনি। ইদ্দতের সময় সে ঘরে বসে, মাথা ঢেকে রেখে, তার মৃত স্বামীর জন্য দোয়া বা শোক পালন করেনি। এ কারণে সবাই তার সমালোচনা করেছিল। কিন্তু তার কাছে শিশুদের ভবিষ্যৎ ছিল বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সে সময় সে ছিল যুবতী নারী। মাথায় ওড়না জড়িয়ে বেশক’টি বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করত। ছোট শিশু দুটির পেট ভরানোর জন্য এ কাজ না করে উপায়ান্তর ছিল না তার।  বিধবা মায়ের কঠোর পরিশ্রমের কারণে বাচ্চারা ঠিকঠাক বড় হয়েছে। 
ইয়াসিন বুয়া বিনীত স্বরে বলল, বেগম সাহেবা, আপনি তো হজে যাচ্ছেন। এখানে ছয় হাজার টাকা আছে। মক্কা শরিফে গিয়ে আমার জন্য একখণ্ড কাফনের কাপড় কিনবেন আর তা পবিত্র জমজম কূপের পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে আসবেন। তাহলে অন্তত পবিত্র পোশাক পরে পরলোকে যাত্রা করতে পারব। এটাই আমার জীবনের শেষ ইচ্ছা।
ইয়াসিন বুয়ার দেওয়া টাকার নোটগুলো দুমড়ানো-মুচড়ানো, মলিন। শাজিয়ার মনে হলো গরিব লোকজনকে নতুন নোট দিলেও তারা সেগুলো কাদা করে ফেলবে। তিনি মুখে ‘হ্যাঁ’ বললেন, কিন্তু মনে মনে বিরক্ত হলেন। টাকাগুলো এক জায়গায় রেখে সঙ্গে সঙ্গে হাত ধুতে চলে গেলেন যেন অপবিত্র কিছু স্পর্শ করেছেন।
২.


সুবহান সাহেব প্লেনে চেপে প্রথমে মদিনাতে গেলেন। মসজিদে নববিতে একনাগাড়ে চল্লিশ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার জন্য আট দিন অবস্থান করতে হয়। তিনি স্ত্রীকে বলেছিলেন, আমরা হজ করার নিয়তে যাচ্ছি। হজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো রকম কেনাকাটা না করাই ভালো। স্বামীর এ পরামর্শ মনে না রাখার মতো মহিলা শাজিয়া নন। 
মদিনার পর্ব শেষ করে তারা মক্কায় এলেন। দিন ও রাতের বেশির ভাগ সময় কাটতে লাগল হারাম শরিফে নামাজ আদায় করে, কাবা শরিফ তাওয়াফ করে এবং নানা রকমের এবাদতের মধ্য দিয়ে। 
এক দুপুরে, কাবা থেকে নামাজ পড়ে ফিরে আসার পর, হয়তো প্রখর রৌদ্রের মধ্যে হাঁটার ক্লান্তি কিংবা ভাতঘুমে শাজিয়ার চোখ বন্ধ হয়ে এলো। কিছুটা ঘুমিয়ে সতেজ বোধ করলেন তিনি। অল্প পরেই আসরের নামাজের জন্য যেতে হবে মসজিদুল হারামে। অজু করার জন্য বাথরুমে গিয়ে তিনি দেখতে পেলেন পাশের ঘরের জয়নব তাদের পানির ডিসপেন্সার থেকে বালতিতে পানি ঢালছে। শাজিয়া বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলেন, জয়নব, তুমি কী করছ?
চারপাশে চোখ বুলিয়ে জয়নব বলল, আমি জমজমের পানিতে কাফনের কাপড় ধুয়ে নিতে চাই। হাজিদের জন্য বাড়িতে বাড়িতে সীমিত পরিমাণে জমজমের পানি সরবরাহ করা হয় খাওয়ার জন্য। তার মনে হলো সেই পানি দিয়ে কিছু ধোয়া খুবই গর্হিত। শাজিয়া রাগান্বিত হলেন। ভুলে গেলেন হাজিদের জন্য রাগান্বিত হওয়া সমীচীন নয়। 
এমন সময় তার মনে পড়ল ইয়াসিন বুয়ার জন্য কাফনের কাপড় কিনে জমজম কূপের পানিতে ভিজিয়ে দেশে নিয়ে যেতে হবে। তিনি সুবহান সাহেবকে বললেন, চল, আজকে এশার নামাজ শেষে ফিরে আসার সময় ইয়াসিন বুয়ার কাফনের কাপড়টা কিনে ফেলি। 
রাতে হারাম শরিফে এশার নামাজ আদায় করে ফেরার সময় লাখ লাখ লোকের ভিড়ে সুবহান সাহেব ঠাওর করতে পারছিলেন না কাফনের দোকান কোথায় থাকতে পারে। বিভিন্ন দোকানে গিয়ে কাফনের কাপড় আছে কিনা জিজ্ঞেস করতে করতে হঠাৎ একটি কার্পেটের দোকান শাজিয়ার নজরে পড়ল। হজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো রকম কেনাকাটা করা সমীচীন নয়– এ কথা তিনি সম্পূর্ণ ভুলে গেলেন। 
শাজিয়া যখন মনোরম একটি তুর্কি কার্পেট কেনায় ব্যস্ত তখন সুবহান সাহেব চুপিসারে একজন দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনাদের কাছে কি কাফনের কাপড় আছে?
দোকানদার এক প্রস্থ কাফনের কাপড় বের করে দিল। প্লাস্টিকে মোড়া কাফনের কাপড়টি হাতে নিয়ে শাজিয়া বললেন, ওরে আল্লাহ, এত ভারী জিনিসটা কী করে আমরা দেশে নিয়ে যাব? –কাফন কেনার প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে তিনি কার্পেট কেনায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। 
৩.
হজ শেষে দেশে ফেরার পর শরীর খারাপ থাকায় শাজিয়া তিন দিন বিছানা থেকে নামতেই পারলেন না। একটু সুস্থ হয়ে তিনি বাক্সপ্যাটরা খুলে মক্কা থেকে কিনে আনা জিনিসপত্র একে একে বের করে প্রিয়জনদের দিতে লাগলেন উপহার হিসেবে। বেশ কজনের জন্য তিনি তাদের ফরমায়েশমাফিক বিশেষ স্টাইলের বোরকা এবং স্বর্ণালংকার নিয়ে এসেছেন। আর অন্য সবাইকে দিলেন একটি করে জায়নামাজ, একটি তসবিহ, একমুঠো খেজুর এবং এক বোতল জমজম কূপের পানি।  

প্রায় এক মাস কেটে গেছে। ইতোমধ্যে ইয়াসিন বুয়া কয়েকদিন চুপচাপ এসে ফিরে গেছে। তার আশা ছিল বেগম সাহেবা নিজেই তাকে ডাকবেন এবং উপহার দেবেন।  
একদিন বুয়া এসে অপেক্ষা করছে। অবশেষে শাজিয়া এলেন: সদ্য গোসল করেছেন, চুলে পানি লেগে আছে। তার সাক্ষাৎ পেয়ে ইয়াসিন বুয়া খুশিতে ফেটে পড়ল। সদ্য হজ করে আসা শাজিয়ার হাত জড়িয়ে চোখে ছোঁয়াতে ছোঁয়াতে তার মনে হলো তার আত্মাটি যেন পবিত্র হয়ে গেল। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল তার।
শাজিয়া হাত ছাড়িয়ে হালকা চালে বললেন, কেমন আছো, বুয়া? তারপর তাড়াতাড়ি নিজের ঘরে ঢুকে একটা জায়নামাজ আর তসবিহ নিয়ে এসে বললেন, নাও, এসব তোমার জন্য।
কিন্তু ইয়াসিন বুয়া যা চেয়েছিল সেটা ছিল না ওখানে। তার শেষ ইচ্ছা তো ছিল জমজমের পানিতে ধোয়া কাফন পরে আল্লাহর পথে রওনা হওয়া। 
উপহারগুলো নিল না ইয়াসিন বুয়া। চোখে অবিশ্বাস নিয়ে সে তাকিয়ে রইল বেগম সাহেবার দিকে। হতাশায় তার দৃষ্টি বাষ্পাচ্ছন্ন হয়ে উঠল। একসময় ভেতর থেকে সাহস সঞ্চয় করে স্পষ্টভাবে সে বলতে পারল, এগুলো আমি চাই না। আমার কাফনটা দিন।
ইয়াসিন বুয়ার কথায় শাজিয়া রেগে আগুন হয়ে উঠলেন। ধমক দিয়ে বললেন, ছি, কেউ কখনও জায়নামাজ ফিরিয়ে দেয়? এমন কথা বলে কেউ?
কিন্তু বুয়া অবিচল। সে স্পষ্ট কণ্ঠে বলল, আপনার শাশুড়ি যখন হজ করে ফিরেছিলেন, তখন একটা জায়নামাজ দিয়েছিলেন। এখনও সময় পেলে সেটাতেই নামাজ পড়ি। আর একেবারে নতুন, এত সুন্দর জায়নামাজ আমি কোথায় রাখব? আর কতদিন বাঁচব আমি? আর কয় রাকাত নামাজ আদায় করতে পারব?
সমাজ বলছে, চলে যাও। জঙ্গল ডেকে বলছে, বিশ্রাম নিতে চলে আসো। আমার আর কিছু চাই না, শুধুই একটা কাফন চাই।
ইয়াসিন বুয়ার দুর্বিনীত কথা শাজিয়াকে ক্ষিপ্ত করে তুলল। ক্রুদ্ধ কণ্ঠে বললেন, কোন কাফন, কীসের কাফন? মরার পরে কেউ না কেউ তো কাফন জড়িয়ে দেবেই। এত নাটক কীসের বুয়া? তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে? তুমি আমাকে কত টাকা দিয়েছিলে শুনি? তার দশগুণ ছুড়ে দেব তোমার মুখে! চলে যাও, আর কখনও আমার সামনে এসো না। 
হজ শেষে সদ্য প্রত্যাগত হলেও ভুলে গেলেন এভাবে মানুষের সঙ্গে ব্যবহার করা বা কথা বলা নিতান্ত অন্যায়। চিৎকার করতে করতে তিনি ঘরে ঢুকে গেলেন। কিন্তু ঘর থেকে দুটো পাঁচশ টাকার নোট নিয়ে বের হয়ে ইয়াসিন বুয়াকে কোথাও খুঁজে পেলেন না। 
শাজিয়া রাগী স্বভাবের মানুষ। সহজে কাউকে ছেড়ে দেন না। তিনি ছুটে গেলেন রান্নাঘরে। বাড়ির পেছনে গেলেন। গলির দিকে তাকালেন। কোথাও ইয়াসিন বুয়ার ছায়ামাত্র নেই।
বিপর্যস্ত মনে তিনি ভাবলেন, যাক, আপদ বিদায় হয়েছে। টাকার নোট দুটো চায়ের টেবিলের ওপর ফেলে রেখে সোফায় গা এলিয়ে দিলেন। 
ইয়াসিন বুয়া আর কোনো দিন তার চোখের সামনে এলো না। শাজিয়া ভাবলেন, ভালোই হলো। ঝামেলা মিটে গেল।
৪.
সেদিন ফজরের নামাজের জন্য ঘুম থেকে সময়মতো জেগে উঠতে পারেননি শাজিয়া। অনেক পরে উঠলেন। বাইরে থেকে যেন কারও কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো। বিছানা থেকে নেমে ধীরে ধীরে দরজার দিকে গেলেন তিনি। শুনতে পেলেন তার ছেলে ফরমান যেন কার সাথে কথা বলছে। 
বারান্দায় ইয়াসিন বুয়ার ছেলে আলতাফ দাঁড়ানো। তার চেহারা বিপর্যস্ত। ফরমান তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল: যা ঘটার, তা ঘটে গেছে। এতে কারও হাত নেই। এখন বাড়ি চলে যাও। আম্মি যখন ঘুম থেকে উঠবে, আমি তোমাদের বাড়িতে সবকিছু নিয়ে যাব। তিনি এখন ঘুমাচ্ছেন, আমি তাকে জাগাতে চাই না, তিনি খুব ভালো নেই। ডাক্তার বলেছেন তাকে অনেক বিশ্রাম নিতে হবে।
আলতাফ বলল, ভাইয়া দাফনের সময় ঠিক হয়ে গেছে। দেরি করার সুযোগ নেই।
ফরমান তার ধৈর্য হারিয়ে ফেলল। বলল, দেখ, তুমি তো আমাকে কোনো কাফন রাখতে দাওনি। আম্মি হজ থেকে ফিরে আসার পরে ছয়-সাত বছর পার হয়ে গেছে। কেন ইয়াসিন বুয়া এত বছর আম্মির কাছ থেকে তার কাফন চেয়ে নেয়নি? হয়তোবা সে এসে নিয়ে গেছে। কোথাও রেখেছে। বাসায় গিয়ে ভালো করে খুঁজে দেখো। 
শাজিয়া ছেলের কাছে এসে বললেন, কী হয়েছে, ব্যাটা? কার সঙ্গে কথা বলছো? 
ফরমান বিরক্ত হয়ে বলল, ঘুমাতে যাও আম্মি, তুমি কেন উঠে এসেছো? ইয়াসিন বুয়া মারা গেছে, তার ছেলে এসেছে। সে বলছে তার মায়ের কাফনের কাপড় নাকি আমাদের এই বাড়িতে রাখা আছে। 
শাজিয়ার মাথায় যেন একসাথে হাজারটা বজ্রপাত হলো। তিনি মনে মনে বললেন, হায় আল্লাহ এখন আমি কী করব? হাশরের মাঠে আমি কী করে জবাবদিহি করব?
তার মনে গভীর অনুতাপ সৃষ্টি হলো। তিনি অঝোরে কাঁদতে শুরু করলেন। তার কেবলই মনে পড়তে লাগল, ইয়াসিন বুয়ার জীবনের শেষ ইচ্ছে ছিল জমজমের পানিতে ভেজানো কাফন জড়িয়ে লাশের খাটিয়াতে ওঠা। এ জন্য হজে যাওয়ার আগে টাকা দিয়ে গিয়েছিল।
একসময় তার মনে হলো, কান্না করে কোনো ফায়দা হবে না বরং কিছু একটা করা উচিত। তিনি ফোন নিয়ে বসে গেলেন এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবকে একের পর এক ফোন করতে লাগলেন: আমার একটি জমজমের পানিতে ভেজানো কাফনের কাপড় দরকার। আছে তোমাদের কাছে? 
প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই উত্তর আসে, নেই। আমাদের বাসায় জমজমের পানিতে ভেজানো কোনো কাফন নেই। কোথাও আশার আলো দেখা গেল না। টেলিফোন রেখে শাজিয়া আবার কাঁদতে শুরু করলেন। 
৫.
ইয়াসিন বুয়ার দাফনের সব আয়োজন শেষ করে বিকাল তিনটার দিকে ফরমান বাসায় ফিরে এলো। তারপর সে তার আম্মিকে ইয়াসিন বুয়ার বাড়িতে নিয়ে গেল। 
ইয়াসিন বুয়ার মুখাবয়ব দেখে শাজিয়ার দুঃখ নতুন করে উথলে উঠল। তিনি আবার কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তার মনে হলো, ইয়াসিন বুয়ার নয়, এ যেন তারই শেষকৃত্য হচ্ছে। v

[কৈফিয়ত: এটিকে মূল গল্পের অনুবাদ হিসেবে গণ্য করা যাবে না। প্রায় সাড়ে সাত হাজার শব্দের একটি গল্পের অনুবাদ মুদ্রণের পরিসর দৈনিক পত্রিকাতে থাকে না। এটি নিতান্ত সংক্ষিপ্ত ভাবানুবাদ। মূল গল্পটির পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ পাওয়া যাবে ‘হার্ট ল্যাম্প’ নামীয় গ্রন্থে, যেটি এ বছর ম্যান বুকার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে।]
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জমজম র প ন ত ব গম স হ ব র আল ল হ র জন য ত র মন হজ শ ষ দ য় কর ফরম ন বলল ন করল ন র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনগুলোয় প্রথম আলোর জমজমাট আয়োজন

২৭ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে প্রথম আলোর। ৪ নভেম্বর ২০২৫ সংখ্যাটিতে লেখা থাকবে বর্ষ ২৮, সংখ্যা ১। যা কিছু ভালো, তার সঙ্গে প্রথম আলো—এই স্লোগান নিয়ে ১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বরে বেরিয়েছিল প্রথম আলোর প্রথম সংখ্যা। ঝকঝকে ছাপা, রঙিন ছবি, ১২ পৃষ্ঠার কাগজ, প্রতিদিন নতুন নতুন ফিচার পাতা, দলনিরপেক্ষতার অঙ্গীকার, বস্তুনিষ্ঠতার চর্চা, পেশাদারত্বের উৎকর্ষ আর নতুনকে মেনে নেওয়ার অবিরাম প্রয়াস—সব মিলিয়ে প্রথম আলো হয়ে ওঠে বাংলাদেশের মানুষের এক অপরিহার্য সঙ্গী। হয়ে ওঠে পরিবারেরই একজন। অল্প কয়েক বছরের মধ্যে প্রথম আলো লাভ করে সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিকের সম্মান। নানা রকমের বাধা, প্রতিকূলতা পেরিয়ে সত্যে তথ্যে প্রথম আলো আজ শুধু একটা কাগজ নয়, একটা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মও। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বে প্রথম আলো লাভ করেছে বাংলাভাষী পাঠকদের উষ্ণ অভ্যর্থনা, তেমনি ওয়ান–ইফরা বা ইনমার মতো আন্তর্জাতিক সংগঠন থেকে এ গণমাধ্যম লাভ করছে সম্মানজনক স্বীকৃতি, বিশ্বসেরা আর এশিয়া সেরার পুরস্কার।

প্রথম আলোর ঢাকা অফিস থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এরই মধ্যে বেজে উঠেছে উৎসবের আনন্দলহরী। জেলায় জেলায় চলছে প্রথম আলোর লেখক–সুধী পাঠক আর শুভানুধ্যায়ীদের সম্মিলনীর প্রস্তুতি। কাগজে, অনলাইনে, ভিডিও, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের জন্য কর্মী আর অংশীজনদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে কর্মচাঞ্চল্য।

প্রথম আলো কাগজটি মোট ৪ দিন প্রকাশিত হবে বর্ধিত কলেবরে। ৪ দিনে থাকবে ৪টি ক্রোড়পত্র। লিখবেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে সেরা লেখকেরা। থাকবে দেশবরেণ্য শিল্পীদের আঁকা প্রচ্ছদ।

৪ নভেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার বের হবে ‘বৈষম্য পেরিয়ে’

২০২৪ সালের বিপুল অভ্যুত্থানে ছাত্র–জনতা পথে এসেছিল বৈষম্যের বিলোপ চেয়ে। এই ক্রোড়পত্রে লেখকেরা খুঁজে দেখছেন রাষ্ট্রের ক্ষমতাকাঠামোয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ও রাজনীতির অঙ্গনে বৈষম্যের রূপ। খোঁজার চেষ্টা করেছেন উত্তরণের উপায়।

৫ নভেম্বর ২০২৫, বুধবার প্রকাশ পাবে ‘বৈষম্যের অন্দরে’

সমাজ আর জনগোষ্ঠীর গভীরে থেকে যাওয়া বৈষম্য প্রতিফলিত হয় রাষ্ট্রে। আবার রাষ্ট্রীয় বৈষম্য সামাজিক বৈষম্যকে ভিত্তি দেয়। দেশের নারী–লেখক ও ভাবুকেরা উন্মোচন করে দেখিয়েছেন সমাজে ছড়িয়ে থাকা নানা বৈষম্যের চেহারা।

৬ নভেম্বর ২০২৫, বৃহস্পতিবার আসছে ‘তারুণ্যের দিগন্ত’

তরুণদের সামনে নতুন পৃথিবীর আহ্বান। কিন্তু সে আহ্বানে সাড়া দেওয়ার পথে শত বাধা ও বৈষম্যের প্রাচীর। আবার তরুণেরাই সেসব বৈষম্যের বাধা উপড়ে ফেলে এগিয়ে চলেন। তরুণদের পথের সেসব বাধা আর বাধা পেরোনোর গল্প নিয়ে এই ক্রোড়পত্র।

৭ নভেম্বর ২০২৫, শুক্রবার প্রকাশিত হবে ‘আলোর গল্প’

সাংবাদিকতা শেষ পর্যন্ত জনমানুষের জন্য। সত্য ও তথ্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্য প্রথম আলো সেসব মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ। প্রথম আলোর নানা উদ্যোগের লক্ষ্যও মানুষ। এই ক্রোড়পত্র গত একটি বছরে প্রথম আলোর সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের গল্পের সমাবেশ।

অনলাইনে থাকছে আকর্ষণীয় আয়োজন

লেখা, ছবি, ভিডিও, পডকাস্টসহ নানা কনটেন্ট দিয়ে সাজানো হবে প্রথম আলো ডটকম, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনন্দালোকিত দিনগুলোতে প্রথম আলো ডটকম থাকবে জমজমাট। পাশাপাশি ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, টিকটকসহ সামাজিক মাধ্যমগুলোতে প্রথম আলোর ফলোয়ারদের জন্য থাকবে বাড়তি কিছু, উৎসবের উপহার।

প্রথম আলোর কর্মীরা মিলবেন প্রীতিসম্মিলনীতে

৪ নভেম্বর প্রথম আলো তার সব কর্মীকে নিয়ে আয়োজন করতে যাচ্ছে প্রীতিসম্মিলনী। রাজধানীর একটি বড় মিলনায়তনের একাধিক হলরুমজুড়ে বসবে এই আসর। তাতে সারা দেশের প্রথম আলো প্রতিনিধি, ঢাকার সর্বস্তরের স্টাফদের সঙ্গে যোগ দেবেন প্রথম আলোর আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিরাও। থাকবেন অতিথি বক্তা ও শিল্পীরা।

প্রথম আলো বন্ধুসভার একটি করে ভালো কাজ

এরই মধ্যে সারা দেশে প্রথম আলোর শতাধিক বন্ধুসভা ‘একটি করে ভালো কাজ’ শীর্ষক কর্মসূচি পালন করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সুধী সম্মিলনী আয়োজনের জন্য প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বন্ধুসভা কাজ করে চলেছে উৎসাহের সঙ্গে। ঢাকা বন্ধুসভাও ১৩ নভেম্বর আয়োজন করতে যাচ্ছে বন্ধুদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উৎসব।

২০২৩ সালে প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্লোগান ছিল ‘হারবে না বাংলাদেশ।’ গত বছর প্রথম আলো বলেছিল ‘জেগেছে বাংলাদেশ’। সত্যে তথ্যে ২৫, সত্যে তথ্যে ২৬ পেরিয়ে এল ২৭ বছর পূর্তির উৎসব।

প্রথম আলো আজকের দিনে, যখন চারদিকে ভুয়া খবরের ছড়াছড়ি, যখন দেশবাসী অনিশ্চয়তার ধোঁয়াশার মধ্যে দিগন্তে তাকিয়ে আছেন আলোকরেখার জন্য, তখন প্রথম আলো ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কী স্লোগান নিয়ে আসছে? জানা যাবে আর কয়েক ঘণ্টা পরই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনগুলোয় প্রথম আলোর জমজমাট আয়োজন
  • প্রদর্শনী, কুইজ, সুডোকুতে জমজমাট বিজ্ঞান উৎসব