ফরিদপুরের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী বৈশাখী ইসলাম বর্ষাকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত সাগর কাজী নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।

সোমবার সকালে অজ্ঞাত স্থান থেকে ফেসবুক লাইভে এসে সাগর কাজী নিজেকে নির্দোষ দাবি করে দায় চাপান বিএনপির নগরকান্দা উপজেলা যুগ্ম সম্পাদক বদিউজ্জামান তারা মোল্যার ওপর। লাইভের পরপরই তিনি ভিডিওটি সরিয়ে ফেলেন।

ফেসবুক লাইভে সাগর কাজী বলেন, ‘এখানে রাজনীতি করতেছেন বদিউজ্জামান তারা মোল্যা। তিনি রাজনৈতিক ইস্যু করে ফেলছেন। তিনি নিজে সেখানে উপস্থিত ছিলেন, নিজে সালিশ করেছেন, তাকে অমান্য করে বৈশাখী।’

তারা মোল্যাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘সে আমাকে এখন চিনে না, আমাকে জড়িয়ে দিচ্ছে। আরে মিয়া আমারে চিনেন না, আপনার সাথে ব্যানার করলাম, বিএনপির যখন ব্যানার করলাম, আপনি তখন চিনেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এখন আমি বিপদে পড়েছি, আমাকে চিনেন না। আমার ওপরে দোষ চাপিয়ে দিচ্ছেন কেন?’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা মোল্যা সেদিন বলেছেন, বিএনপির কোনো লোক ছিল না ওখানে, কিন্তু সব তারা মোল্যার লোকজন ছিল। তারা মোল্যা শেল্টার দিয়ে সবকিছু করাইছে।’

এ সময় সাগর কাজী মারধরের বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি আর আব্বু নাকি পিটাইছি, একটা মানুষকে যদি ২০ থেকে ২৫ মিনিট পেটানো হয় তাহলে তার এক সপ্তাহ হাসপাতালে থাকা উচিত। আমাদের পরিবারের ব্যাকগ্রাউন্ড নষ্ট করার জন্য মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে। প্রতিদিন আমার বাড়িতে পুলিশ, সেনাবাহিনী, র‍্যাব আসতেছে।’

সাগর আরও বলেন, ‘ঘটনাস্থলে নিজে ছিলেন তারা মোল্যা। নিজেই সালিশ করেছেন। এখন বলেন তিনি ছিলেন না। আমি তো তার নির্দেশ অমান্য করিনি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘সে এখন বলছে, বিএনপির কেউ ছিল না। অথচ তার লোকজনই তো ছিল।’

ফেসবুক লাইভের বিষয়ে জানতে চাইলে বদিউজ্জামান তারা মোল্যা বলেন, ‘ওতো (সাগর কাজী) আমাকে আর বৈশাখী নিয়ে যেসব কথা বলছে, তাহলে বোঝেন কেমন লোক। কারণ, সাগর যুবলীগ নেতা ফরহাদের লোক। ওরা এখনও চাচ্ছে যে বিএনপিকে কীভাবে হেনস্তা করা যায়। আমার দল করলে অবশ্যই চিনতাম। ওদের আমার দলে মিশিয়ে তো আমি দল থেকে বহিষ্কার হতে চাই না।’

গত ৩০ মে বিকেলে ফরিদপুরের নগরকান্দার ভবুকদিয়া গ্রামে বৈশাখীকে রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে সাগর কাজী, তার বাবা সেকেন কাজী, স্থানীয় বিএনপি নেতার সমর্থকদের নাম উঠে আসে।

বৈশাখীর দাবি, তার ছোট বোনকে স্থানীয় শরিফ ব্যাপারী উত্ত্যক্ত করেছিলেন। পুলিশ তাকে আটক করলে উত্তেজিত হয়ে সাগর ও তার লোকজন হামলা চালায়। পরে রাত ১০টা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।

এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন, ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে তিনটি মামলা হয়েছে। বৈশাখী দুটি মামলার বাদী, আর একটি করেছে পুলিশ। ইতোমধ্যে শরিফ বেপারীসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার পর নগরকান্দা থানার ওসি মো.

সফর আলীকে তাৎক্ষণিকভাবে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। 

মারধরের শিকার বৈশাখী বর্তমানে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি। তার মাথা ও গলায় আঘাতের কারণে তিনি চিকিৎসাধীন। 

তিনি বলেন, নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান তারা মোল্যার নেতৃত্বে আমার ওপর সাগর কাজী ও তার বাবা সেকেন্দার কাজীসহ বিএনপির নেতারা হামলা চালায়। 

বৈশাখী বলেন, এ হামলায় যারা অংশ নিয়েছেন তারা এক সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল, এখন বিএনপি করে। আমার ওপর হওয়া হামলায় যারা জড়িত তারা সন্ত্রাসী, এদের কোনো দল নেই। আমি দলমতের ঊর্ধ্বে গিয়ে এই সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নগরক ন দ ব এনপ র কর ছ ন ম রধর র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

ফরিদপুরে চাঁদাবাজির মামলায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর গ্রেপ্তার

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কোদালিয়া গ্রাম থেকে চাঁদাবাজির মামলায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর গোলাম হায়দারকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। সোমবার রাত ২ টায় তার নিজ বাড়ি থেকে যৌথবাহিনীর অভিযানে তিন সহযোগীসহ তাকে আটক করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোলাম হায়দার নিজেকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর প্রার্থী হিসেবে পরিচয় দিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়া অন্যরা হলেন ফরহাদ হোসেনসহ আরও দুইজন।

নগরকান্দা থানার ওসি আমিরুল ইসলাম জানান, মেজর হায়দার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, হুমকি-ধমকি এবং সাধারণ মানুষকে হয়রানির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সোমবার বিকালে কোদালিয়া শহীদনগর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান মো. রাজু মোল্লা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
 
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন মালামালের ভাগ ও কাবিখা-কাবিটার টাকা দাবি করতেন মেজর হায়দার। রাজু মোল্লা আরও জানান, ২৯ মে গণকবরের পাশে ডেকে নিয়ে হুমকি দেন মেজর হায়দার, পরে তার দোকানে মোটরসাইকেলে এসে লোকজন আবারও হুমকি দেয়।

গ্রেপ্তারের সময় ফরহাদ হোসেন ‘মেজরের বাড়িতে ডাকাত পড়েছে’ বলে মসজিদের মাইক ব্যবহার করে গুজব ছড়ান, যা পরে পুলিশ মাইকিং করে মিথ্যা প্রমাণ করে।

এছাড়া, সম্প্রতি এক নারী নেত্রীর বোনকে ইভটিজিং নিয়ে উত্তেজনার সময় মেজর হায়দার সেনাবাহিনীর কর্মকর্তার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।

স্থানীয়রা জানান, মেজর হায়দার SS07 নামের একটি বাহিনী গঠন করে মোটরসাইকেল বহর নিয়ে এলাকায় চলাফেরা করতেন এবং এনসিপির নাম ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটাতেন। এমনকি এনসিপির ব্যানারে একাধিক জনসংযোগ কার্যক্রমেও অংশগ্রহণ করেন।

তবে এনসিপির ফরিদপুর জেলা সংগঠক মো. বায়োজিদ হোসেন জানান, “তিনি আমাদের দলের কেউ নন, শুধু প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন।” একইভাবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও তাকে তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন এবং তাকে “বাটপার প্রকৃতির” বলে অভিহিত করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নগরকান্দায় চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার ৪
  • ফরিদপুরে চাঁদাবাজির মামলায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর গ্রেপ্তার