আর্থিক সংকটে পড়া শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংক মিলে একটি বড় ইসলামি ধারার ব্যাংক গঠন করা হচ্ছে। নতুন এই ব্যাংকের যাত্রার শুরুতে মূলধন জোগান দেবে সরকার। ব্যাংকটির প্রধান কাজ হবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে (এসএমই) অর্থায়ন করা। এই ব্যাংকের অনুমোদন (লাইসেন্স) দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অধীনে এই পাঁচ ব্যাংকের আমানত ও সম্পদ স্থানান্তর করা হবে। এই প্রক্রিয়া ঈদের ছুটির পরই শুরু হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল বুধবার ওই পাঁচটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) ডেকে এই প্রাথমিক সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সভায় অংশ নেওয়া পাঁচ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। তাঁরা বলেছেন, ব্যাংক একীভূত হলেও গ্রাহকদের লেনদেনে কোনো সমস্যা হবে না। তাঁরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন ব্যাংকটির গ্রাহক হবেন। এ ছাড়া শীর্ষ পর্যায় ব্যতীত অন্য ব্যাংকাররা একীভূতকরণের প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত চাকরিতে বহাল থাকবেন। এ প্রক্রিয়া শেষ হতে অন্তত তিন বছর লাগতে পারে বলে জানা গেছে। সভায় ব্যাংকগুলোকে একীভূত হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

ব্যাংক পাঁচটি হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। এর আগে বাংলাদেশ গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গত ৯ এপ্রিল ব্যাংকিং সম্মেলনে বলেছিলেন, ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো একীভূত করে বড় দুটি ব্যাংক গড়ে তোলা হবে।

একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে এক্সিম ব্যাংকের মালিকানা রয়েছে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মজুমদারের। বাকি চার ব্যাংকের মালিকানা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘনিষ্ঠ এস আলম গ্রুপের কাছে। বিগত সরকারের মেয়াদে এসব ব্যাংক থেকে বিভিন্ন নামে অর্থ তুলে নেন এসব মালিক। এতে দুর্বল হয়ে পড়ে ব্যাংকগুলো।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই পাঁচ ব্যাংকের নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নিয়েছে। এক্সিম ব্যাংক ছাড়া বাকি চারটিতে স্বতন্ত্র পরিচালকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

তাঁরা বলেছেন, ব্যাংক একীভূত হলেও গ্রাহকদের লেনদেনে কোনো সমস্যা হবে না। তাঁরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন ব্যাংকটির গ্রাহক হবেন। এ ছাড়া শীর্ষ পর্যায় ব্যতীত অন্য ব্যাংকাররা একীভূতকরণের প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত চাকরিতে বহাল থাকবেন। এ প্রক্রিয়া শেষ হতে অন্তত তিন বছর লাগতে পারে বলে জানা গেছে।যেভাবে গঠিত হবে নতুন ব্যাংক

জানা গেছে, ঈদের ছুটির পর পাঁচ ব্যাংক পরিচালনার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক যুক্ত হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে ব্যাংকগুলো পরিচালনায় পৃথক কমিটি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতিমধ্যে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই পাঁচ ব্যাংকের সম্পদের মান নিরীক্ষা শেষ হয়েছে। এসব ব্যাংককে নিরীক্ষা প্রতিবেদন নিয়ে কোনো আপত্তি থাকলে তা জানানোর সুযোগ দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে কেউ নিজেকে সবল প্রমাণ করতে পারলে সেই ব্যাংক তালিকা থেকে বাদ পড়বে। না হলে ব্যাংক একীভূত প্রক্রিয়া শুরু হবে। ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ ২০২৫-এর আওতায় এই কার্যক্রম শুরু হবে। আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শেষ হবে।

একীভূতকরণের আওতায় ব্যাংকগুলোর যেসব ঋণ খারাপ হয়ে পড়েছে, তা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির (এএমসি) কাছে হস্তান্তর করা হবে। এমনভাবে সম্পদ হস্তান্তর করা হবে, যাতে নতুন ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে থাকে। এতে বিদেশি বাণিজ্যে লেনদেনে খরচ কম হবে ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃ অর্থায়ন তহবিল থেকে ব্যাংক টাকা নিতে পারবে।

এরপর নতুন একটি ব্যাংকের লাইসেন্স অনুমোদন দেওয়া হবে। এতে মূলধন জোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার ও বিদেশি উন্নয়ন-সহযোগীরা। এ জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পাঁচ ব্যাংকের সম্পদ ও দায় সেই ব্যাংকের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এরপর ধীরে ধীরে ব্যাংকের শাখাগুলো একীভূত করা হবে। এ জন্য জনবলও কমানো হবে। ব্যাংক পূর্ণাঙ্গভাবে যাত্রা শুরুর পর বেসরকারি খাতে শেয়ার ছাড়া হবে, এরপর বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাংকটি পরিচালনা যুক্ত হতে পারবেন। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অন্তত তিন বছর সময় লাগতে পারে বলে জানা গেছে।

ব্যাংক পাঁচটি হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। এর আগে বাংলাদেশ গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গত ৯ এপ্রিল ব্যাংকিং সম্মেলনে বলেছিলেন, ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো একীভূত করে বড় দুটি ব্যাংক গড়ে তোলা হবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, গতকাল দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত সভায় গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ও ডেপুটি গভর্নর কবির আহম্মদ ব্যাংক পাঁচটির চেয়ারম্যান ও এমডিদের এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে অবহিত করেন। পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে সভায় ব্যাংক দুটির চেয়ারম্যানরা জানান।

সভার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচ ব্যাংক মিলে একটি বড় ব্যাংক গঠনের কথা জানানো হয়েছে। এর আগে কেউ নিজেকে ভালো প্রমাণ করতে পারলে সেই ব্যাংক তালিকা থেকে বাদ যাবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সবাই কাজ করতে রাজি হয়েছে। এই সভার মাধ্যমে ব্যাংক রেজল্যুশনের প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছে।

ব্যাংকগুলোতে জনবল রয়েছে ১৫ হাজারের বেশি। এসব ব্যাংকের গ্রাহকের হিসাবের সংখ্যা সব মিলিয়ে ৯২ লাখ। আমানত ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা, তবে ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ধার করে আমানতের চেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে ব্যাংকগুলো।পাঁচ ব্যাংকের সম্পদ-দায় কত

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ওই পাঁচ ব্যাংকের শাখা রয়েছে ৭৭৯টি। এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের শাখা ২২৬টি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১৮০টি, ইউনিয়ন ব্যাংকের ১১৪টি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ১০৪টি ও এক্সিম ব্যাংকের ১৫৫টি। এ ছাড়া এসব ব্যাংকের ৬৯৮ উপশাখা, ৫০০ এজেন্ট ও ১ হাজার এটিএম বুথ রয়েছে।

ব্যাংকগুলোতে জনবল রয়েছে ১৫ হাজারের বেশি। এসব ব্যাংকের গ্রাহকের হিসাবের সংখ্যা সব মিলিয়ে ৯২ লাখ। আমানত ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা, তবে ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ধার করে আমানতের চেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৯০ শতাংশ ঋণ এস আলম গ্রুপের কাছে, যা খেলাপি হয়ে পড়ছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৭০ শতাংশ ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ২০ শতাংশ ঋণ এস আলম-সংশ্লিষ্ট। এক্সিম ব্যাংকের ১০ শতাংশ ঋণ সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট। এসব ঋণ আদায় করতে পারছে না ব্যাংকগুলো।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, দেশে বড় আকারের একটা ইসলামি ধারার ব্যাংক গঠনের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে দেশে ইসলামি ব্যাংক খাতের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।

অবশ্য জবাবদিহি না ফিরলে ব্যাংক একীভূত করেও ব্যাংক খাত ঠিক হবে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংক যদি রাজনৈতিক লুটপাটের লক্ষ্য হয় এবং আর্থিক খাতের মূল সংস্কারগুলো না হয়, তাহলে কাজ হবে না। এ জন্য আগে সুশাসন, জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। গত ৯ মাসেও আর্থিক খাতে পুরোপুরি সুশাসন ফেরেনি। কেন এই সময়ে ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়াতে পারল না, এটাও বড় প্রশ্ন।

মোস্তফা কে মুজেরী আরও বলেন, ব্যাংক একীভূত করে ভালোভাবে পরিচালনা করা গেলে সেটা ভালো কিছু হবে। এ জন্য কারা পরিচালনা করবে ও সুশাসন কতটা মেনে চলবে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ ল ব ল ইসল ম স শ য ল ইসল ম এক স ম ব য ১৫ হ জ র প রক র য় ক এক ভ ত র গ র হক নত ন ব য এসব ব য এ জন য এই প র আর থ ক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

১৩ লাখ ২০ হাজার টন জ্বালানি তেল কিনবে সরকার

আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৫ সময়ের জন্য ১৩,২০,০০০ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল আমদানি করবে সরকার।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) দেশের জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে জি-টু-জি ও উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক দরপত্রের (টেন্ডার/কোটেশন) ভিত্তিতে বিভিন্ন গ্রেডের জ্বালানি তেল আমদানি করে থাকে। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভার সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৬ সাল থেকে বিপিসি মোট জ্বালানি তেলের চাহিদার ৫০% আন্তর্জাতিক দরপত্রের (কোটেশন) মাধ্যমে এবং অবশিষ্ট ৫০% জি-টু-জি প্রক্রিয়ায় আমদানি করে থাকে।

দেশে জ্বালানি তেলের সরবরাহ উৎস বহুমুখীকরণ, সরবরাহ লাইন-আপ অধিকতর নিশ্চিতকরণ এবং প্রতিযোগিতামূলক দর প্রাপ্তির লক্ষ্যে আমদানিতব্য জ্বালানি তেলের পরিমাণকে ৪টি প্যাকেজে (এ, বি, সি এবং ডি) বিভক্ত করে জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৫ সময়ের জনা আন্তর্জাতিক দরপত্র (কোটেশন) আহ্বান করা হয়। দরপত্র বিজ্ঞপ্তি ২৭-০৪-২০২৫ তারিখে ২টি ইংরেজি, ৩টি বাংলা জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, ১টি স্থানীয় পত্রিকা এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, বিপিসি ও বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ) এর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

আরো পড়ুন:

কমল ডিজেল-অকটেন-পেট্রোলের দাম, কেরোসিনে বেড়েছে ১০ টাকা

বিমানের ফুয়েলের দাম কমল, রাত ১২টা থেকে কার্যকর

এছাড়া, বাংলাদেশে অবস্থিত তেল সমৃদ্ধ দেশের দূতাবাস ও মিশনকে ই-মেইলে দরপত্র (কোটেশন) বিজ্ঞপ্তি পাটানো হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিপিসির চট্টগ্রামে প্রধান কার্যালয় এবং ঢাকাস্থ লিয়াজোঁ অফিস হতে মোট ১৩টি দরপত্র দলির বিক্রয় করা হয়।

জানুয়ারি-জুন ২০১৫ সময়ে উন্মুক্ত দরপত্র (কোটেশন) ভিত্তিতে ১৩,২০,০০০ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল আমদানির অনুমতির বিপরীতে ২০২৫ জুন মাসের সম্ভাব্য আমদানিতব্য পরিমাণসহ জানুয়ারি-জুন ২০২৫ সময়ে আন্তর্জাতিক দরপত্র (কোটেশন) ভিত্তিতে প্রায় ১২,৪০,০০০ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে।

উল্লেখ্য, জ্বালানি তেলের ব্যবহার কিছুটা হ্রাস পাওয়ায় অনুমোদিত পরিমাণ জ্বালানি তেল আমদানির প্রয়োজন হয়নি। দেশে জ্বালানি তেলের ব্যবহার হ্রাস-বৃদ্ধি, আগামী অক্টোবর হতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের কার্যক্রম ও নভেম্বর হতে কৃষিসেচ মৌসুম শুরু হলে এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ফার্নেস অয়েল গ্রহণ প্রবণতাসহ পর্যাপ্ত মজুত নিশ্চিতকরণে জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৫ প্রান্তিকে আন্তর্জাতিক দরপত্র (কোটেশন) প্রক্রিয়ায় ১২.৭৫ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল আমদানির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

একটি একক দরপত্রের মাধ্যমে ৪টি প্যাকেজের আওতায় জ্বালানি তেল ক্রয়ের প্রক্রিয়া প্রহণ করা হয়। দর প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক একটি দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে (বিডা) ৪টি প্যাকেজের সবকটি অথবা যেকোনো সংখ্যক প্যাকেজের জন্য দরপ্রস্তাব করার সুযোগ রাখা হয়। দরপত্র দলিলের ক্লজ-৬ অনুযায়ী প্যাকেজ ‘এ’ এবং প্যাকেজ ‘বি’তে আলাদাভাবে ওয়েটেড অ্যাবরেজ (প্যাকেজভিত্তিক মোট প্রিমিয়াম মার্কিন ডলার-মোট সর্বোচ্চ পরিমাণ ব্যারেল) অনুযায়ী এবং প্যাকেজ ‘সি’ এবং ‘ডি’-তে ১টি করে পণ্য হওয়ায় প্রস্তাবিত দর অনুযায়ী সর্বনিম্ন দর নির্ধারণ করা হয়েছে।চাহিদার বিপরীতে আমদানিতব্য পরিমাণে ফ্লেক্সিবিলিটির বিষয় বিবেচনা করে দরপত্র প্রক্রিয়ায় গ্যাস অয়েল, ফার্নেস অয়েল ও গ্যাসোলিন পার্সেল আমদানির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ সীমা রাখা হয়েছে। সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদা বিবেচনা করে জ্বালানি তেলের মূল্য (প্রিমিয়ামের ভিত্তিতে) নির্ধারণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পরিমাণ বিবেচনা করা হয়েছে। দরপত্র বিজ্ঞপ্তি অনুসারে দরপত্র দাখিলের সর্বশেষ সময় ০৭-০৫-২০২৫ এর মধ্যে ৯টি প্রতিষ্ঠান হতে দরপ্রস্তাব পাওয়া যায়। দরদাতার মনোনীত প্রতিনিধি ও উন্মুক্তকরণ কমিটির সব সদস্যের উপস্থিতিতে দরপত্র খোলা হয়। প্রাপ্ত ৯টি দরদাতা প্রতিষ্ঠানের দরপ্রস্তাব হতে প্রাথমিক মূল্যায়নে ৮টি দরদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব প্রাথমিকভাবে প্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।

দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির মূল্যায়নে একটি প্রতিষ্ঠান অযোগ্য বিবেচিত হয়। এ প্রেক্ষিতে ৮টি গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠানসমূহ প্যাকেজ এ-তে ৬টি, প্যাকেজ বি তে ৪টি, প্যাকেজ সি তে ৫টি এবং প্যাকেজ ডি তে ৬টি গ্রহণযোগ্য দরপ্রদান দাখিল করে। ৪টি প্যাকেজের গ্রহণযোগ্য দরদাতা প্রতিষ্ঠানের প্যাকেজভিত্তিক প্রাপ্ত দর প্রস্তাবসমূহের তুলনামূলক বিবরণী প্রস্তুত করা হয়েছে।প্রাপ্ত দরপ্রস্তাবের সাথে টেন্ডার সিকিউরিটি হিসেবে ৯টি প্রতিষ্ঠানের দাখিলকৃত বিডবডের সঠিকতা বিপিসি নিশ্চিত করেছে। দরপ্রস্তাবের বৈধতার মেয়াদ ৩০-০৯-২০২৫ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

১২-০৫-২০২৫ অনুষ্ঠিত মূল্যায়ন কমিটির সভায় প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক দাখিলকৃত কোটেশনের কারিগরি ও আর্থিক বিষয়াদি পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক মূল্যায়ন প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। প্রাথমিক মূল্যায়নে প্রহণযোগ্য ৬টি প্রস্তাব হতে কারিগরি মূল্যায়নে ৮টি প্রতিষ্ঠানের দাখিলকৃত প্রস্তাব প্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রস্তাবিত প্রিমিয়াম তথা নিরুপিত ওয়েট অ্যাভরেজ এর ভিত্তিতে প্যাকেজ ‘এ’ তে পেট্রোচায়না ইন্টারন্যাশনাল (সিঙ্গাপুরা প্রা.লি. সিঙ্গাপুর এবং প্যাকেজ ‘বি’ এবং ‘সি’ তে ভিটল এশিয়া প্রা.লি. সিঙ্গাপুর এবং প্যাকেজ ‘ডি’ তে সায়নোসেম ইন্টারন্যাশনাল ওয়েল (সিঙ্গাপুর) প্রা.রি.-কে সর্বনিম্ন মূল্যায়িত ও কৃতকার্য দরদাতা হিসেবে চারটি প্যাকেজে (প্রিমিয়াম রেফারেন্স প্রাইস অনুযায়ী) সর্বমোট মার্কিন ডলার ৭৪,৯১,১৮,১২০.০০ মার্কিন ডলার বাংলাদেশি মুদ্রায় আনুমানিক ৯ হাজার ১৩৯ কোটি ২৪ লাখ ২০ হাজার টাকা দরপ্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি সুপারিশ করেছে।

ঢাকা/হাসনাত/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাঁচ ইসলামী ব্যাংক এক করতে সাড়ে তিন মাসের রোডম্যাপ
  • ফতুল্লায় পলিথিন শপিং ব্যাগ বিক্রয় করায় জরিমানা, শপিং ব্যাগ জব্দ
  • ১৩ লাখ ২০ হাজার টন জ্বালানি তেল কিনবে সরকার