ঈদের আগে নিতাইগঞ্জে লবণের দাম বস্তায় বেড়েছে ২৫০ টাকা
Published: 5th, June 2025 GMT
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের পাইকারি বাজার নিতাইগঞ্জে ৭৪ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা লবণের দাম একলাফে বেড়েছে ২৫০ টাকা। চামড়া সংরক্ষণের জন্য কোরবানির ঈদে চাহিদা বেশি থাকায় লবণের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাইকারেরা। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, সিন্ডিকেট, আবহাওয়া পরিস্থিতি ও পরিবহন ব্যয় বাড়ার কারণে লবণের দাম বেড়েছে।
নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র নিতাইগঞ্জ। এখানে আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল, চিনি, লবণ মিলসহ লবণের পাইকারি ব্যবসা চলে। নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদীসহ অনেক জেলায় লবণ সরবরাহ করা হয় এই পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র নিতাইগঞ্জ থেকে।
সরেজমিনে ব্যবসায়ী ও পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পবিত্র কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে লবণের বাজার দুই সপ্তাহ ধরে চড়া যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারেরা এখানে আসেন লবণ কিনতে। অনেকে লবণ কিনে নিয়ে গাড়িতে লোড করে নিয়ে যাচ্ছেন। আয়োডিনবিহীন ৭৪ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা লবণ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা এবং ক্রসিং লবণ প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। এ ছাড়া ডাইং কারখানায় ও ইটিপি প্ল্যান্টে এই লবণ ব্যবহৃত হয়। মূলত এই সময়ে লবণগুলো কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণের জন্য কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এক মাস আগেও প্রতি বস্তা লবণের দাম ছিল ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। ঈদের কয়েক দিন পরও এই লবণের চাহিদা বেশি থাকে। এ কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা নিতাইগঞ্জ থেকে লবণ সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন।
নিতাইগঞ্জের ডিএস এন্টারপ্রাইজের মালিক দিলীপ সাহা প্রথম আলোকে বলেন, চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণের প্রয়োজন পড়ে। চাহিদা অনুযায়ী বাজারে লবণ আছে। মোকামে মূল্যবৃদ্ধি, বৃষ্টি ও পরিবহন ব্যয় বাড়ার কারণে বাজারে লবণের বাজারদর বেড়েছে।
চামড়া সংরক্ষণের জন্য বড় ট্যানারি ব্যবসায়ীরা আগেই লবণ মজুত করেছেন বলে দাবি করেন নারায়ণগঞ্জ সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপক বিপ্লব সরকার। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এক মাস আগেই লবণ উৎপাদনের সিজন শেষ হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে বস্তাপ্রতি লবণ ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। পরিবহন ব্যয় বাড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগে ট্রলারে প্রতি বস্তা লবণ পরিবহনের ভাড়া ছিল ৯০ টাকা, সেটি এখন বেড়ে ১২০ টাকা হয়েছে। এসব কারণে লবণের বাজারদর চড়া।
পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক মাস আগেও ৭৪ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা গবাদি পশুর লবণ বিক্রি হয়েছে ৬৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায়। এখন সেই লবণ প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা দরে।
লবণ কিনতে মুন্সিগঞ্জের বালিগাঁও এলাকা থেকে আসা পাইকার আমান মিয়া বলেন, গত ১৫ দিন আগেও লবণের দাম কম ছিল। কোরবানির ঈদের কারণে একলাফে লবণের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ২৫০ টাকা।
সিন্ডিকেটের কারণে ব্যবসায়ীরা লবণের দাম বাড়িয়েছেন বলে অভিযোগ করেন নরসিংদীর মাধবীর পাইকার সুনীল রায়। তিনি বলেন, মাত্র লবণের মৌসুম গেল। এই মুহূর্তে লবণের দাম বাড়ানোর কোনো কারণ নেই। কিন্তু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে বেচাকেনা করছেন।
তবে ব্যবসায়ীরা বলেন, লবণের বাজারে সিন্ডিকেট করেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। তারা যেটা বাজারদর নির্ধারণ করে দেন, সেটির ওপর নির্ভর করে বাজার নিয়ন্ত্রণ হয়। এই ঈদে লবণের বাড়তি চাহিদা থাকে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারেরা এসে লবণ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
নিতাইগঞ্জের পাইকারী লবণ ব্যবসায়ী খাজা গরিবে নেওয়াজের ব্যবস্থাপক ফাহাদ খান প্রথম আলোকে বলেন, কোরবানির ঈদে লবণের চাহিদা প্রচুর। বড় বড় ট্যানারির ব্যবসায়ীরা সরাসরি চট্টগ্রাম মোকাম থেকে লবণ কিনে নেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারেরা লবণ কিনে নিয়ে যান নিতাইগঞ্জ থেকে। বাজারে লবণের সরবরাহ ভালো। বাজারে লবণের কোনো ঘাটতি নেই।
এ বিষয়ে নিতাইগঞ্জ পাইকারী ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি শংকর সাহা প্রথম আলোকে বলেন, কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছেন, যাঁরা সুযোগ পেলেই পণ্যের দাম বাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ বিষয়ে বাজারে নজরদারি ও আইনের প্রয়োগ প্রয়োজন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: লবণ র দ ম ব ড় লবণ র ব জ র ন র য়ণগঞ জ প রথম আল ক ন ত ইগঞ জ ব যবস য় র লবণ ক ন র ব যবস পর বহন ই লবণ লবণ ব
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি খাল দখল করে চাঁদাবাজি!
সিদ্ধিরগঞ্জের হীরার্ঝিল আবাসিক এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) খাল দখল করে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে। এর ফলে ডিএনডি খালটি ফের সংকুচিত হতে শুরু করেছে। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
এদিকে এই এলাকাটি শিমরাইল পাম্প স্টেশনের নিকটবর্তী এলাকা হওয়ায় দোকানগুলোর কারণে ঠিকমতোন পানি সরবরাহ হতে পারছে না। তবে প্রশাসনের ভাষ্য, খুব শিগগিরই এখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে নাসিক ১নং ওয়ার্ডের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালু খালপাড় দখল করে হরেক রকমের ছোট-বড় প্রায় ২৫টি দোকান বসানো হয়েছে। হাবিবুল্লাহ হবুলের মালিকানাধীন হাবিবুল্লাহ টাওয়ার থেকে শুরু করে মোক্তার হোসেন সরকারের মালিকানাধীন বিএম ভবন, সিদ্দিকুর রহমানের মালিকানাধীন মমতাজ ভিলা, নূর মোহাম্মদ টাওয়ার, নুরুল হুদা’র বাড়ির সামনে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
এর বিনিময়ে প্রতি দোকান থেকে টাকা তুলছেন স্ব স্ব বাড়ির মালিকরা। চাঁদা তোলার বিষয়টি কয়েকজন বাড়িওয়ালা অকপটে স্বীকারও করেছেন।
এদিকে, দোকানগুলোর কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মিত ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পথচারীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। পাশাপাশি হীরাঝিল এলাকাবাসীকেও ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, হীরাঝিল আবাসিক এলাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। যানবাহন ও মানুষের চাপ বেশি থাকায় এই এলাকায় সবসময় যানজট লেগেই থাকে। চলাচলের সুবিধার্তে এলাকাবাসী ডিএনডি খালের পাড় দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে যেতেন। কিন্তু কয়েকজন বাড়িওয়ালা এহেন কর্মকান্ডের কারণে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।
এসব দোকানের কারণে খালের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং চাঁদাবাজি প্রশাসন বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে ফের বন্যা হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘কাবাব বাড়ি’ ভবনের মালিক মো. রফিক বলেন, আমার বাড়ির সামনে ডিএনডি খাল দখল করে আমি কোনো দোকান বসাই নি। আমি নিজেও চাই এখানে কোনো দোকান না বসুক। কিন্তু আমি যতটুকু শুনেছি টিএইচ তোফা নামের এক ব্যক্তি এই দোকানগুলো বসিয়েছেন। আমি অনেক চেষ্টা করেছে দোকানগুলো সরিয়ে দেওয়ার। আর এখানে দোকান বসিয়ে টাকা তোলার প্রশ্নই উঠে না।
একই অভিযোগ স্বীকার করে মমতাজ ভিলার মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অন্যসবাই দোকান বসিয়েছে। আমি তা দেখাদেখি ২টি দোকান বসিয়েছি। এটা আমার অপরাধ হয়েছে তা আমি নিজেও বুঝি। আমি মূলত সবার দেখাদেখি দোকান বসিয়েছি।
নুরুল হুদা নামের আরেক বাড়িওয়ালা বলেন, আমি দোকান বসিয়েছি। কিন্তু ওইখান থেকে কোনো অর্থ আদায় করি না। চাইলে এ বিষয়ে তদন্ত করা হতে পারে। আর এখানে দীর্ঘদিন ধরেই দোকান ছিল।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনূর আলম বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। তবে অভিযোগ যেহেতু পেয়েছি তাহলে অবশ্যই ঘটনাস্থলে লোক পাঠানো হবে। ডিএনডি খালপাড় থেকে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমে আমরা একাধিকবার তাদের নোটিশ পাঠাবো।
যদি তারা কথা না শোনেন তাহলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। খাল দখলের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন খাল পরিষ্কার করা শুরু করেছি। ডিএনডি খালসহ যেকোনো খাল এভাবে দখল হয়ে থাকলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি শিগগিরই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ৮ ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে ডিএনডি প্রকল্প হাতে নেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শুরুতে প্রকল্পের বাজেট ৫৫৮ কোটি টাকা ধরা হলেও তা বাস্তবায়নে সবমোট ১৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়।
২০২৫ সালের জুন মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর প্রকল্প বাস্তবায়ন করাকালে তখন খালটি দখল না হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর পরই হীরাঝিল এলাকার কয়েকজন বাড়িওয়ালা ডিএনডি খাল দখল করে দোকান বসানো শুরু করে।