দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ দেশের শতাধিক গ্রামে কাল ঈদুল আজহা
Published: 5th, June 2025 GMT
দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ দেশের শতাধিক গ্রামে আগামীকাল শুক্রবার ঈদুল আজহা উদ্যাপন করবেন মির্জাখীল দরবার শরিফের অনুসারীরা। হানাফি মাযহাব অনুসরণ করে তাঁরা প্রতিবছর হজের পরদিন ঈদ পালন করেন।
মির্জাখীল দরবার শরিফের মুখপাত্র মোহাম্মদ মছউদুর রহমান জানান, দরবার শরিফের অনুসারীরা দুই শতাধিক বছর ধরে এই ধারায় ঈদ উদ্যাপন করে আসছেন।
দরবার সূত্রে জানা গেছে, সাতকানিয়া উপজেলার মির্জাখীল দরবার শরিফের খানকাহ মাঠে সকাল সাড়ে নয়টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ইমামতি করবেন দরবার শরিফের বর্তমান সাজ্জাদানশীন হজরত শাহ জাহাঁগীর তাজুল আরেফীন (ক.
দরবারের অনুসারীরা শুধু সাতকানিয়া নয়, আশপাশের এলাকাসহ দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছেন। তাঁদের ঈদ উদ্যাপনকারী গ্রামের মধ্যে রয়েছে মির্জাখীল, গাটিয়াডাঙ্গা, আলীনগর, মাদার্শা, খাগরিয়া, মৈশামুড়া, পুরানগড়, বাজালিয়া, মনেয়াবাদ, চরতি, সুঁইপুরা, হালুয়াঘোনা, কাঞ্চননগর, হারালা, বাইনজুরি, চর বরমা, কেশুয়া, কানাইমাদারি, সাতবাড়িয়া, বরকল, দোহাজারী, জামিরজুরি, কালীপুর, চাম্বল, ডোংরা, শেখেরখীল, ছনুয়া, পুইছড়ি, বরুমচড়া, তৈলারদ্বীপ, বারখাইন, খাসখামা, কাটাখালী, রায়পুর, গুজরা, পুঁটিবিলা, কলাউজান, চুনতী, মাহমুদাবাদ, বারিয়াঢালা, বাঁশবাড়িয়া, সলিমপুর, মহালংকা, মিরসরাই, পটিয়া, বোয়ালখালী, হাটহাজারী, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, রাউজান, ফটিকছড়ি, ফেনী, রাঙামাটি, কুমিল্লা, ঢাকা, মুহাম্মদপুর, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, মনোহরদী, মঠখোলা, বেলাব, আবদুল্লাহনগর, কাপাসিয়া, মতলব (চাঁদপুর), সিলেট, হবিগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালী, বরিশাল, পটুয়াখালী ও ভোলার কয়েকটি গ্রাম।
এ ছাড়া পার্বত্য জেলার বান্দরবানের লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজারের চকরিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার অনেক গ্রামেও একই দিনে ঈদ উদ্যাপন করবেন মির্জাখীল দরবারের অনুসারীরা।
ঈদ উদ্যাপন প্রসঙ্গে মির্জাখীল দরবার শরিফের মুখপাত্র মছউদুর রহমান বলেন, ‘আমরা হানাফি মাযহাব অনুসরণ করি। দুই শতাধিক বছর ধরে হজের পরদিনই ঈদুল আজহা পালন করে আসছি। বৈজ্ঞানিকভাবে চাঁদের অবস্থান এবং আরাফাত থেকে হজের খুতবা দেখেশুনেই ঈদের দিন নির্ধারণ করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর সৌদি আরবে হজের খুতবা সরাসরি দেখেশুনে, সেই অনুযায়ী শুক্রবার সারা দেশে আমাদের অনুসারীরা ঈদের নামাজ আদায় করবেন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করবেন।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র অন স র র শত ধ ক করব ন ন দরব
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।
সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।
ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’
হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’
কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।
এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।