প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে উজবেকিস্তান–জর্ডান, আরও যারা বিশ্বকাপের টিকিট পেল
Published: 6th, June 2025 GMT
প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল উজবেকিস্তান ও জর্ডান। কাল রাতে ২০২৬ বিশ্বকাপের পর্বের টিকিট নিশ্চিত করেছে দক্ষিণ কোরিয়াও। আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায় ৪৮ দলের বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে।
স্বাগতিক হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডার বিশ্বকাপ খেলা আগে থেকেই নিশ্চিত। কাল এই তিন দলসহ বাছাইপর্ব খেলে বিশ্বকাপের মূল পর্ব নিশ্চিত করেছে আরও সাতটি দল।
উজবেকিস্তানের জন্য কাল সমীকরণ সহজ ছিল। সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে না হারলেই হতো। সেটাই হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে বিশ্বকাপে জায়গা পাকা করে ফেলেছে উজবেকিস্তান।
অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়া ২-০ গোলে ইরাককে হারিয়ে টানা এগারোবার বিশ্বকাপ খেলা নিশ্চিত করেছে। জর্ডান বিশ্বকাপ নিশ্চিতের ম্যাচে ৩-০ গোলে হারিয়েছে ওমানকে। কাল বিশ্বকাপ নিশ্চিতের জন্য শুধু নিজেরা জিতলেই হতো না, ইরাকেরও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হারতে হতো। দুটো ফল পক্ষে আসাতেই হয়েছে ইতিহাস।
বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে উজবেকিস্তান আছে ৫৭ নম্বরে। ৩৬ মিলিয়ন মানুষের এই দেশ ১৯৯২ সালে স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রথম ম্যাচ খেলে। এর আগে ২০০৬ সালে বিশ্বকাপে ওঠার দারুণ সুযোগ ছিল তাদের। জর্ডানের তখন বাহরাইনের বিপক্ষে দুই লেগের প্লে-অফে খেলতে হয়েছিল।
বিশ্বকাপের টিকিট পেল যারাআর্জেন্টিনা, যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, কানাডা, উজবেকিস্তান, জর্ডান, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ইরান ও নিউজিল্যান্ডএই প্লে-অফের মাধ্যমে নির্ধারিত হতো কে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের প্রতিনিধি হিসেবে কনকাকাফ অঞ্চলের ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর মুখোমুখি হবে। ওই ম্যাচের বিজয়ী পরে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফাইনালে কোয়ালিফাই করত। উজবেকিস্তান প্রথম লেগে ১-০ গোলে জিতেছিল, কিন্তু রেফারির একটি ভুলের কারণে ফিফা ম্যাচটি আবার খেলার নির্দেশ দেয় এবং তারা শেষ পর্যন্ত অ্যাওয়ে গোলের ভিত্তিতে বাদ পড়ে।
আরও পড়ুনমেসির ফেরার ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে জেতালেন আলভারেজ১ ঘণ্টা আগেতবে দলটি ১৯৯৬ থেকে প্রতিটি এশিয়ান কাপে খেলেছে। ২০০৪ থেকে প্রতিবারই নকআউটে উঠেছে। ২০১১ সালে সেমিফাইনালে, সর্বশেষ আসরে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে।
এশিয়ান কাপের রানার্সআপ জর্ডান বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ৬২তম। তারা ১৯৮৬ সাল থেকে সপ্তমবারের মতো বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে অংশ নিচ্ছে। এর আগে বিশ্বকাপ খেলার সবচেয়ে কাছাকাছি গিয়েছিল ২০১৪ সালে, তবে তখন তারা আন্তমহাদেশীয় প্লে-অফে উরুগুয়ের কাছে হেরে যায়।
আরও পড়ুনআনচেলত্তির অভিষেক রাঙাতে পারলেন না ভিনিসিয়ুসরা, ব্রাজিলের হতাশার ড্র৩ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উজব ক স ত ন ব শ বক প র
এছাড়াও পড়ুন:
বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা
কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।
আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।
তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।
বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।
গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।
ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’
বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’
সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’
জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’
আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’
ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।