রাতে শতভাগ বর্জ্য অপসারণের দাবি, সকালের ঢাকায় ভিন্ন চিত্র
Published: 8th, June 2025 GMT
রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় পরিসংখ্যান ব্যুরোর দপ্তর। সংলগ্ন সড়কটি ‘পরিসংখ্যান সড়ক’ নামে পরিচিত। পবিত্র ঈদুল আজহার দিন গতকাল শনিবার বেলা দুইটায় সড়কটিতে বিজ্ঞান জাদুঘরের পাশের একটি স্থানে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা উত্তর সিটির সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কোরবানির বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু করা হয়েছিল। জায়গাটি থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে মধ্য পীরেরবাগ এলাকা।
সরেজমিনে আজ রোববার সকাল ৭টা ৩৭ মিনিটে ওই এলাকার ‘৬০ ফুট সড়ক’ হিসেবে পরিচিত কামাল সরণিতে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের অর্ধেকজুড়ে কোরবানির পশুর বর্জ্য জমে আছে। পচতে শুরু করা বর্জ্য থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে।
৬০ ফুট সড়কের মধ্য পীরেরবাগের ওই জায়গাটি ছাড়াও আরও দুটি জায়গায় কোরবানির বর্জ্যের স্তূপ দেখা গেল। দুটি স্থান হচ্ছে—মধ্যমণিপুর ও পশ্চিম আগারগাঁও। অথচ গতকাল রাত সাড়ে ১০টার কিছু পরে শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে জানিয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের হালনাগাদ তথ্য জানিয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ বিভাগ।
শুধু মিরপুরের ৬০ ফুট সড়ক এলাকায় নয়, আজ সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ঢাকার দুই সিটির (ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ) বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে সড়কের পাশে, অলিগলিতে, বর্জ্য স্থানান্তরের অস্থায়ী কেন্দ্র বা সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে (এসটিএস) কোরবানির বর্জ্যের স্তূপ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। কিছু জায়গায় স্তূপাকারে জমে না থাকলেও অল্প পরিমাণে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে বর্জ্য।
শুধু উত্তর সিটি নয়, গত রাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও (ডিএসসিসি) রাতের মধ্যেই শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
আজ সকাল সাড়ে ৬টার দিকে প্রথম আলোর এ প্রতিবেদক প্রথমে যান মিরপুরের কালশী এলাকাসংলগ্ন সাংবাদিক আবাসিক এলাকায়। ওই এলাকার ৪ নম্বর সড়কের একটি অংশে পৌনে ৭টার দিকেও কোরবানির কিছু বর্জ্য দেখা যায়।
মিরপুর–১১ নম্বরের সি ব্লকের ৫ নম্বর অ্যাভিনিউতে সিটি করপোরেশনের একটি কনটেইনারভর্তি পশুর বর্জ্য ছিল। স্থানীয় লোকজন জানান, গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে পড়ে আছে। সিটি করপোরেশনের গাড়ি সেটা নিতে আসেনি।
সড়কের পাশে পড়ে আছে কোরবানির বর্জ্য। হাজারীবাগ মনেশ্বর সড়কের মনেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে। রোববার, সকাল সোয়া ৮টায় তোলা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঘুঘুডাঙ্গার মনোরম তালসড়ক
অক্টোবরের প্রথম দিকে লম্বা এক ছুটিতে বেড়াতে গেলাম বগুড়া। দেশের উত্তরের জনপদ বরাবরই আমার পছন্দ। মানুষ কম, হালকা বসতি। পথে বা হাটবাজারে ততটা ভিড়ভাট্টা নেই। বাজারে কম দামে টাটকা শাকসবজি মেলে। এসব কেনার চেয়ে দেখেই তুমুল আনন্দ পাই। নিঝুম গ্রামের ভেতর ফসলের মাঠে ছড়িয়ে থাকা বৈচিত্র্য দেখতে দেখতে উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি বেশ উপভোগ করি। যত দূর চোখ যায়Ñ গ্রামের পর গ্রাম। মুঠো মুঠো সবুজের ভেতর এঁকেবেঁকে ছুটে চলা মেঠো পথ মাড়িয়ে আমরা প্রতিদিন দূরে কোথাও হারিয়ে যাই। দিনের মুহূর্তগুলো মানুষের জীবনাচারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কতটা নিপুণভাবে ক্ষণে ক্ষণে বদলে যেতে পারে,Ñ এসব গ্রামে না এলে তা বোঝার উপায় নেই। কৃষিনির্ভর এই জনপদে প্রতিমুহূর্তের ব্যস্ততা যেন অনিবার্য নিয়তি।
বগুড়ার গ্রামীণ জনপদ ঘুরে, দর্শনীয় স্থানগুলো দেখে মনে হলো যথেষ্ট নয়! চোখের তৃষ্ণা মেটেনি। মনের ক্ষুধাও যায়নি! তখনই মনে পড়ল নওগাঁর ঘুঘুডাঙ্গার বিখ্যাত তালসড়কটির কথা। এত কাছে এসে তালসড়কটি দেখতে যাব না, তা কি হয়? স্থানীয় সাংবাদিক আনোয়ার পারভেজ বললেন, ‘বগুড়া থেকে মাত্র ৩ ঘণ্টারই তো জার্নি। ঘুরে আসুন।’ আমারও মনে হলো, এমন একটি অসাধারণ দৃশ্যের জন্য এই দূরত্ব কিছুই না।
সকালে তুমুল বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভাঙল। কিছুক্ষণের মধ্যে আবার থেমেও গেল। গাড়িতে ওঠার সময় স্থলপদ্মের গাছটি চোখে পড়ল। গাছভর্তি ফুলগুলো বৃষ্টির দাপটে একেবারে নেতিয়ে পড়েছে। অথচ বিকেলে ভেবে রেখেছিলাম, সকালে শরতের মধুর আলোয় স্থলপদ্মের ছবি তুলব। তা আর হলো না। দ্রুত বেরিয়ে পড়ি। প্রথমে গেলাম নওগাঁর সাপাহারের কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানার বাগানে। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যখন স্বপ্নমণ্ডিত সেই তালসড়কে পৌঁছাই, তখন ঠিক দুপুরবেলা।
কিন্তু দুপুর হলেও দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখর তালসড়ক। শুধু বৃহত্তর রাজশাহী নয়, দূরদূরান্ত থেকেও পর্যটকেরা এখানে আসেন। নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার হাজীনগর ইউনিয়নে এই তালসড়কের অবস্থান। মূলত ঘুঘুডাঙ্গা-শিবপুর সড়কের দুপাশজুড়ে থাকা বীথিবদ্ধ তালগাছের জন্যই সড়কটি ‘তালসড়ক’ বা ‘তালতলী’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। হাজীনগর গ্রামের মজুমদার মোড় থেকে ঘুঘুডাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়কজুড়ে এই তালসড়কের অবস্থান।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন রাস্তা ও খালপাড়ে ৭২০ কিলোমিটারের বেশি জায়গাজুড়ে লাগানো হয়েছে কয়েক লাখ তালগাছ। তখন বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত নওগাঁর নিয়ামতপুর, পোরশা, পত্নীতলা ও ধামইরহাট, রাজশাহীর তানোর, গোদাগাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, রহনপুর উপজেলার রাস্তার দুপাশে রোপণ করা হয়েছে অনেক তালগাছ। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার অভাবে অনেক গাছই হারিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে বেঁচে আছে কিছু। তবে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ঘুঘুডাঙ্গার এই গাছগুলো এখনো কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে। বর্তমানে গাছগুলো ৫০ থেকে ৬০ ফুট উঁচু হওয়ায় রাস্তার দুপাশে শোভাবর্ধন করছে।
একসময় নিয়ামতপুর উপজেলার হাজীনগর ইউনিয়নের ঘুঘুডাঙা-শিবপুর সড়কটি ছিল একটি মেঠো পথ। ২০১২ সালের দিকে সড়কটি পাকা করা হয়। বর্তমানে তালসড়কের দুপাশে দিগন্তবিস্তৃত ফসলের মাঠ থাকায় সড়কটি বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
ভাদ্র মাসে তাল পাকার মৌসুমে তালসড়ক ঘিরে উৎসবেরও আয়োজন করা হয়। নানা স্বাদের তালের পিঠা এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ। তবে বেড়াতে আসা পর্যটকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য এখানে মানসম্পন্ন পর্যটনসেবা থাকা প্রয়োজন।
শুধু বরেন্দ্র অঞ্চলই নয়, বৃহত্তর ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানেও প্রচুর পরিমাণে তালগাছ চোখে পড়ে। খেতের আলপথ, বাড়ির সীমানা, খালপাড়, পুকুরপাড় বা পথের ধারে এসব সুদৃশ্য তালগাছ প্রকৃতিতে ভিন্ন এক ব্যঞ্জনা তৈরি করেছে। দেশের বিভিন্ন জনপদে ছড়িয়ে থাকা এসব তালগাছের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও আছে। দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দৃশ্যমান তালগাছের রস থেকে ভালো মানের সুস্বাদু গুড় ও মিছরি তৈরি করা হয়। বাজারে এসব গুড়-মিছরির চাহিদাও ব্যাপক। আমাদের দেশেও এসব গাছ থেকে বাণিজ্যিকভাবে তালের গুড় তৈরি করা সম্ভব। প্রয়োজন যথাযথ উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতার।
মোকারম হোসেন, প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক