বর্জ্য ল্যান্ডফিলে নেওয়ার আগেই গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করেছে: উত্তর সিটি
Published: 8th, June 2025 GMT
নিজেদের আওতাধীন এলাকায় শতভাগ কোরবানির বর্জ্য অপসারণ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সংস্থাটি বলছে, গতকাল শনিবার রাতের মধ্যেই তাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কোরবানির বর্জ্য ল্যান্ডফিলে (স্থায়ী বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র) নিতে রাস্তায় ও এসটিএসে (সেকেন্ডারি বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র) জমা করে রেখেছিলেন। সকালে জমা রাখা এসব বর্জ্য ল্যান্ডফিলে নেওয়ার আগেই সেসব ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বর্জ্য শতভাগ অপসারণ হয়নি বলে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।
আজ রোববার বিকেলে ঢাকা উত্তর সিটির জনসংযোগ বিভাগ থেকে এ–সংক্রান্ত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। রাতে ডিএনসিসি এলাকার শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে জানানোর পরও সরেজমিন পরিদর্শনে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে মর্মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা উত্তর সিটি জানায়, রাত ১০টা৩৫ মিনিটের (শনিবার রাত) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হালনাগাদ তথ্যের ভিত্তিতে কোরবানির ঈদের প্রথম দিনের শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। তবে এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরেও নগরীর অনেক স্থানে পশু কোরবানি করা হয়েছে। পশু কোরবানির স্থান থেকে নতুনভাবে উৎপন্ন বর্জ্য ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা রাতের মধ্যেই সরিয়ে এনে ল্যান্ডফিলে স্থানান্তরের উদ্দেশ্যে রাস্তায় ও এসটিএসে জমা রাখেন।
এতে বলা হয়, সকালে এসটিএস এবং রাস্তা থেকে বর্জ্য অপসারণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ল্যান্ডফিলে নিয়ে যাওয়ার পূর্বেই কিছু স্থানের বর্জ্যের ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি জানিয়েছে, বর্জ্য অপসারণ প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়নি। আজ এবং আগামীকালও বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। পবিত্র ঈদুল আজহায় নগরবাসী ঈদের তৃতীয় দিন পর্যন্ত পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। যার কারণে প্রতিনিয়ত নগরীতে বর্জ্য উৎপন্ন হয়। একই সঙ্গে চলতে থাকে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। ডিএনসিসির ১০ হাজারের বেশি কর্মী এ কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছেন এবং বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
ঘোষিত সময়ের পূর্বেই ডিএনসিসির আওতাধীন এলাকা থেকে সম্পূর্ণ বর্জ্য অপসারণ করে নগরবাসীকে একটি পরিচ্ছন্ন সুন্দর শহর উপহার দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
ঢাকার দুই সিটির শতভাগ বর্জ্য অপসারণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আজ সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত সরেজমিন করে প্রথম আলো। এতে দেখা যায়, দুই সিটিতেই বিভিন্ন এলাকায় কোরবানির বর্জ্য রাস্তায় জমে রয়েছে। এসব বর্জ্য পচে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এ নিয়ে আজ দুপুরে প্রথম আলোর অনলাইনে ‘রাতে শতভাগ বর্জ্য অপসারণের দাবি, সকালের ঢাকায় ভিন্ন চিত্র’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র বর জ য ড এনস স র ক রব ন র প রক শ
এছাড়াও পড়ুন:
এই অদম্য মেয়েদের আমরা হারিয়ে যেতে দিতে পারি না
অবহেলিত মেয়েরা কঠিন একটি কাজ সম্পন্ন করেছেন। অনেকের কাছে এখনো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। অসাধ্য এক অর্জনকে বাস্তবের জমিনে নামিয়ে এনেছেন আমাদের বাঘিনীরা। সাফ পর্যায় জয় করে নারীদের ফুটবলকে এশীয় পর্যায়ে নিয়ে গেলেন। বিশ্বকাপও খেলে ফিরতে পারেন এই অদম্য বাঘিনীরা।
এখন বলাই যায়, নারী ফুটবলের বিশ্ব পর্যায়ে কড়া নাড়ছেন আমাদের মেয়েরা। ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তাঁরা। শুধু ফুটবলই নয়, আমাদের নারী জাগরণের নতুন দিশা হতে পারে মেয়েদের এই সাফল্য। এই মেয়েরা সারা দেশের মেয়েদের জন্য উদাহরণ। নারী অধিকার, নারী ক্ষমতায়নের নতুন দিনের আলোকবর্তিকা আমাদের নারী ফুটবল দল।
ফুটবলে মেয়েদের এই সাফল্যের পেছনে আছে দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস। সফলতা খুব সহজে আসেনি। নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে কঠিন এক সংগ্রামের ফসল মেয়েদের আজকের এই অর্জন। ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত পল্লি থেকে কোহাটি কিষ্ক, কলসিন্দুরের মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার, তহুরা খাতুন, সানজিদা আক্তার বা রাঙামাটির দুর্গম গ্রাম মগছড়ি থেকে ঋতুপর্ণা চাকমাদের আজকের এই পর্যায়ে আসার ইতিহাসটা আমরা কমবেশি সবাই জানি।
এই পথচলায় সামাজিক বিধিনিষেধ ছিল। ছিল আর্থিক টানাপোড়েন, অনিশ্চয়তা। জীবনের এমন কোনো সংকট নেই, যা তাঁদের সামনে আসেনি। কিন্তু হিমালয়সম সেই বাধাকে সাহসিকতার সঙ্গে পেছনে ঠেলে আজকে তাঁরা এশীয় পর্যায়ে নিজেদের উন্নীত করেছেন।
তাঁদের অর্জনের তুলনায় রাষ্ট্র দিতে পেরেছে খুবই কম। বলতে গেলে, তাঁরা পেটেভাতে দেশের জন্য খেলে দিচ্ছেন। যেন খেলার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চলছে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আদলে। যৎসামান্য যে বেতন দেওয়া হয়, সেটাও অনিয়মিত। যেকোনো সাফল্যের পর যখন মেয়েদের কাছে শুনতে চাওয়া হয়, ‘আপনারা কী চান?’ উত্তরে মেয়েরা জানান, ‘নিয়মিত বেতনটা চাই। আর বেতনটা বাড়ালে আরও ভালো হয়।’ ২০২৫ সালে এসে এটা মেনে নেওয়া কঠিন।
দেশে মেয়েদের নিয়মিত লিগ হয় না। অন্য কোনো টুর্নামেন্টও হয় না নিয়মিত। নিয়মিত খেলার জন্য আমাদের মেয়েদের ভুটান লিগে খেলতে যেতে হয়। কেবল আবাসিক ক্যাম্পের প্রশিক্ষণ ও কিছু প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলেই মেয়েদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতামূলক খেলায় নামতে হয়। সেই সব খেলায় তাঁরা নিয়মিত লিগ খেলা দলগুলোকে বলে-কয়ে হারাচ্ছে।
আমাদের খেলাধুলাকে রাজধানীকেন্দ্রিক না রেখে প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। শুধু নারী ফুটবল নয়, সব ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করতে হবে তৃণমূল থেকে। তবেই নতুন নতুন প্রতিভাবান খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে। ঢাকাকেন্দ্রিক খেলার কুফল কী হতে পারে, তার বড় উদাহরণ আমাদের ছেলেদের ফুটবল। সারা দেশে নিয়মিত প্রতিযোগিতামূলক লিগ না হওয়ার কারণে নতুন নতুন ফুটবলার বেরিয়ে আসছেন না।কী পরিমাণ প্রতিভার অধিকারী হলে ন্যূনতম সুবিধা না পেয়েও এ পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করা যায়, তা এককথায় অবিশ্বাস্য। ভারত ও নেপালে নিয়মিত মেয়েদের খেলা হয়, লিগ হয়। আর আমরা তাদের এখন নিয়মিতই হারাই। এখন সাফের বাইরের দলগুলোকেও আমরা হারাতে শুরু করেছি।
এই মেয়েদের প্রচেষ্টা ও সাহস নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রচণ্ড রকম ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে তাঁরা খেলতে নামেন। ভয়হীন ফুটবল খেলেন। সব থেকে বড় কথা, খেলার যেকোনো ধরনের ট্যাকটিকসের সঙ্গেই তাঁরা দ্রুত মানিয়ে নিতে পারেন। আগে আমাদের মেয়েরা কিছুটা রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতেন। রক্ষণ সামলে প্রতি-আক্রমণে যেতেন। এবার এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে মেয়েরা পুরো খেলার ধরন বদলে ফেলেছেন।
আমাদের মেয়েরা এবার হাই প্রেসিং ফুটবল খেলেছেন। এই দল আগের থেকে দ্রুতগতিসম্পন্ন ফুটবল খেলে। বল পায়ে রাখতে পারে। তাদের বল ডিস্ট্রিবিউশন আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। পাসিংও ভালো। পজিশন সেন্স চমৎকার। বিশেষ করে বল হারালে দ্রুত নিজেরা অবস্থান নিতে পারে।
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে হাই লাইন ডিফেন্স করে গেছে দুর্দান্তভাবে। আর বাহরাইনের সঙ্গে শামসুন্নাহার জুনিয়র যেভাবে গতি সঞ্চার করে ডিফেন্স থেকে বেরিয়ে ওয়ান টু ওয়ানে গোলরক্ষককে পরাজিত করলেন ঠান্ডা মাথায়, তা আমাদের পুরুষ দলের স্ট্রাইকার বা উইঙ্গাররাও করতে পারেন না। নিয়মিত খেলার মধ্যে না থাকা একটি দলের কাছে এর বেশি আশা করা উচিত নয়। কিন্তু তাঁরা আমাদের সেই আশাকে ছাড়িয়ে গেছেন। তাঁরা পরিস্থিতি বুঝে মাঠে খেলাটা তৈরি করতে পারেন।
মেয়েদের এই লড়াইকে ধরে রাখতে হবে। তাঁদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সিরাত জাহান স্বপ্না বা আঁখি খাতুনের মতো খেলোয়াড়দের আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে ফুটবল থেকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। মেয়েদের প্রতিযোগিতামূলক লিগ নিয়মিত আয়োজন করতে হবে। এর পাশাপাশি জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে লিগের আয়োজন করতে হবে।
‘সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এই মেয়েরা আমাদের ফুটবল নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।’