কোরবানির চামড়া বেশ কয়েক বছর ধরে সংকটের যে বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছিল, এবারও সেখান থেকে বের হতে পারেনি। সরকার ঈদুল আজহার পূর্বে এবার বেশকিছু পদক্ষেপ নিলেও সেগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিশেষত, কোরবানির গরুর লবণযুক্ত চামড়ার প্রতি বর্গফুটের দাম গতবারের চেয়ে এবার ৫ টাকা বাড়িয়ে ৬০-৬৫ টাকা নির্ধারণ করলেও শনিবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন বলছে, বাস্তবে সেই দামে চামড়া বিক্রি হয়নি। কোথাও গতবারের মতো ৫-১০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে, কোথাও তাও পাওয়া যায়নি। উত্তরাঞ্চল, রাজধানীসহ সারাদেশের চিত্র এমনই। এতে সংকটে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এমনকি চট্টগ্রামে প্রত্যাশিত দাম না পেয়ে চামড়া রাস্তায় ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

আমরা জানি, ঈদুল আজহার সময়েই বছরে ব্যবহৃত ৮০ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ করা হয়। স্পষ্টতই সময়টা চামড়া শিল্পের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অথচ চামড়ার ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই খুশি নন। ঈদের মৌসুমে চামড়া সংগ্রহে নামেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা, যারা এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রাম পর্যায় থেকে কোরবানির চামড়া সংগ্রহ করেন। অনেক মাদ্রাসা-এতিমখানার পক্ষ থেকেও চামড়া সংগ্রহ করা হয়। আগে কোরবানির চামড়া  এসব প্রতিষ্ঠানের আয়ের অন্যতম উৎস ছিল, যা দরিদ্র কিংবা এতিম শিক্ষার্থীদের ভরণপোষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করত। কয়েক বছর ধরে চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ার ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি দরিদ্র মানুষও বঞ্চিত হচ্ছে। 

২০১৯ সালে চামড়ার বাজারে যে ধস নেমেছিল তারপর থেকে প্রতিবছরই পরিস্থিতি পরিবর্তনের আশা থাকলেও বাস্তবে অবস্থার পরিবর্তন হয়নি, এবারও তথৈবচ।
 
স্থানীয় ব্যবসায়ী কিংবা মাদ্রাসাগুলো চামড়া সংগ্রহে পরিবহন, লবণ, শ্রমিক ও সংরক্ষণ ব্যয় শেষে চামড়া বিক্রি করতে গিয়ে অনেককেই ফিরতে হয় শূন্য হাতে।
 
ঈদুল আজহায় লাখ লাখ কোরবানি হয়, তার মানে চামড়ার উৎপাদন বাড়ছে, অথচ দিন দিন কমছে রপ্তানি। বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্য হলো- উল্টো চামড়াজাত পণ্য তৈরির জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। জুতাসহ চামড়াজাত পণ্যের যে চাহিদা রয়েছে, তা পূরণে আমাদের দেশীয় চামড়া থাকা সত্ত্বেও আমদানি করতে হচ্ছে কেন? এবং চামড়া  রপ্তানি কমে যাচ্ছে কেন? কারণ আমাদের চামড়া শিল্প এখনও সে মান ও কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে পারেনি। 

রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারে এ শিল্প হস্তান্তরের পরও দুরবস্থা কাটেনি। কোরবানির চামড়ার দাম কমার পেছনে এটাও অন্যতম কারণ। সেজন্য কোরবানির চামড়ার দাম পেতে গোড়ায় হাত দিতে হবে। দরিদ্র মানুষ, ব্যবসায়ী এবং সর্বোপরি দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের সুরক্ষার স্বার্থে চামড়া নিয়ে ভালোভাবে ভাবতেই হবে। টোটকা দাওয়াই দিয়ে যে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না, গত কয়েক বছর ধরে তা-ই আমরা দেখে আসছি।

মাহফুজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল
mahfuz.

manik@gmail.com 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মত মত ব যবস য় ব যবস য় স গ রহ

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী গ্রেপ্তার 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের (কুসিক) সহকারী প্রকৌশলী মো. তোফাজ্জল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সদর দক্ষিণ মডেল থানা পুলিশ নগরীর কোটবাড়ি রোডের চাঙ্গেনী মোড় এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
 
তিনি ওই এলাকার সুলতান আহম্মদের ছেলে এবং কুসিকের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর যুবলীগের বহিস্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর হোসেনের ছোট ভাই।  সোমবার সকালে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।  

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তোফাজ্জল হোসনের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় গত বছরের ৫ আগস্টের পর সদর দক্ষিণ ও কোতয়ালি মডেল থানায় দুটি মামলা হয়। এসব মামলায় তিনি এজাহার নামীয় আসামি। দুটি মামলায় আসামি হলেও তিনি কর্মস্থলে নিয়মিত অফিস করতেন। এছাড়া নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

সদর দক্ষিণ মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার মামলায় রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওসির ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি (তোফাজ্জল) ২০২০ সালের ১০ জুলাই চাঙ্গেনী এলাকার ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। তবে ওই মামলায় জামিনে আছেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ