ঈদুল আজহা এলেই কোরবানির চামড়ার বাজার নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। বছরের এই একটি সময়েই লাখ লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ হয়, যা দেশের চামড়া শিল্পের প্রধান কাঁচামাল। তবে বছরের পর বছর ধরে বাজারের চিত্র প্রায় একই। সরকার দাম বেঁধে দেয়, কিন্তু হাটে তার প্রতিফলন মেলে না।

চলতি বছরও ব্যতিক্রম নয়
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার বর্গফুটপ্রতি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। ঢাকার বাইরে সেটি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। এছাড়া ছাগলের চামড়ার দাম নির্ধারিত হয়েছে ২০–২২ টাকা এবং খাসির চামড়া ২২–২৭ টাকা। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।

চামড়া বিক্রি হচ্ছে এক তৃতীয়াংশ দামে
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, সায়েন্সল্যাব ও পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকায় ঈদের দিন ঘুরে দেখা গেছে, গরুর কাঁচা চামড়া গড়ে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট আকৃতির চামড়া মিলছে ৬০০ টাকাতেই। অথচ একই চামড়া সরকারি দরের ভিত্তিতে বিক্রি হলে মূল্য হওয়া উচিত কমপক্ষে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা।

আরো পড়ুন:

মেট্রোরেলে রান্না ও কাঁচা মাংস বহনে নিষেধাজ্ঞা

ঈদের শহরে মাংসের হাট 

রায়েরবাগের মৌসুমি ব্যবসায়ী সালাউদ্দীন আহমেদ, কলাবাগান থেকে সায়েন্সল্যাব এলাকায় ৫৩টি চামড়া বিক্রি করতে আনেন। প্রতি চামড়া কিনেছেন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায়। বিক্রির সময় ১১০০ টাকা করে দাম চাইলেও সর্বোচ্চ ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকাতেই তাকে সব বিক্রি করতে হয়। তিনি বলেন, “ভ্যান ভাড়া, সহকারীর মজুরি বাদ দিলে হাতে কিছুই থাকছে না।”

ছাগলের চামড়ার দাম নেই
ছাগলের চামড়া বিক্রির অবস্থা আরো শোচনীয়। অনেক জায়গায় ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে চামড়া, কেউ কেউ বিনা মূল্যে দিয়ে দিচ্ছেন। পোস্তার এক আড়তদার বললেন, "ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করাটাই লোকসানের খাতায় যাচ্ছে।”

অতিরিক্ত সরবরাহ, বাজারে চাপ
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর কোরবানির জন্য প্রস্তুত ছিল প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ পশু। চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ। কিন্তু চামড়ার ক্রয়ক্ষমতা, সংরক্ষণের খরচ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যয় বিবেচনায় অনেক আড়তদার ও ট্যানারি প্রতিষ্ঠান নিরাপদ দামে চামড়া কিনতেই আগ্রহী হচ্ছেন না।

সায়েন্সল্যাবে চামড়া সংগ্রহ করছিলেন নয়ন ব্রাদার্স ট্যানারির পরিচালক আবুল হোসেন। তিনি বলেন, “গত বছরের তুলনায় চামড়ার দর কিছুটা বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা মতো। তবে ক্রয় ও প্রক্রিয়াজাতকরণ খরচ তুললে লাভের মার্জিন নেই বললেই চলে।”

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, এই বছর ছোট গরুর চামড়ার সংখ্যাই বেশি, তাই দামও কিছুটা কম। তবে সরবরাহ ভালো এবং ট্যানারি মালিকেরা সরাসরি মাঠে নেমে চামড়া কিনছেন যাতে দাম স্থিতিশীল রাখা যায়।চলতি বছর ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো অন্তত ৫ থেকে ৬ লাখ চামড়া নিজেরা সংগ্রহ করবে।

মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দুঃখ
পুরান ঢাকার পোস্তা চামড়ার আড়তের চিত্র ছিল ব্যস্ত ও এলোমেলো। রিকশা, ভ্যান ও ছোট ট্রাক ভর্তি চামড়া এনে দাঁড়িয়ে আছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। কেউ দাম পাচ্ছেন, কেউ হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

ব্যবসায়ী তানভীরুল ইসলাম বলেন, “বাজার ভালো না। চামড়া কিনছি ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায়। অথচ লবণ, শ্রমিক, খরচ সব মিলিয়ে ৪০০ টাকা উঠে যায়। লাভ থাকবে কীভাবে।”

আরকে মিশন রোডের বাসিন্দা আতিয়ার মোহাম্মদ বলেন, “চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে হলে শুধু দাম নির্ধারণ করলেই হবে না। দর ঠিকভাবে বাস্তবায়ন, বাজার মনিটরিং, মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব হ্রাস এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনা ও সহায়তার ব্যবস্থাও প্রয়োজন। না হলে প্রতি বছরই চামড়ার দাম কমবে।”

ঢাকা/এএএম/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক রব ন র হ ট ব যবস য় স গ রহ

এছাড়াও পড়ুন:

এপ্রিলে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ দুরভিসন্ধিমূলক: এমরান সালেহ প্রিন্স

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল প্রধান উপদেষ্টার সামনেই আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি করেছে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা আগামী এপ্রিলের প্রথমার্ধ্বে নির্বাচনের যে সময়সীমা উল্লেখ করেছেন, তা জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। জনগণ তথা রাজনৈতিক দলের মতামতকে অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করে এপ্রিলে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ দূরভিসন্ধিমূলক ও স্বৈরাচারী মনোবৃত্তির পরিচয় বহন করে। কেন প্রধান উপদেষ্টা বা অন্তর্বর্তী সরকার এপ্রিলে নির্বাচন দিতে চায় তা উল্লেখ করেন নাই। তিনি বলেন, ঐকমত্যের ভিত্তিতে এক মাসের মধ্যে সংস্কার করে অবলীলায় ডিসেম্বরের আগেই নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব। রোববার দুপুরে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। 

তিনি বলেন, বিএনপিও যেনতেন নির্বাচন চায় না। বিএনপি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সমর্থন যাচাই করতে চায়। জনগণের আস্থা ও রায় নিয়ে জনগণের সেবা করতে চায়। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, তিন মাসের মধ্যেই অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেখানে গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন অয়োজন করেছে, সেখানে তিনটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় পার করেও ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার কেন নিরপেক্ষ নির্বাচন অয়োজন করতে পারছে না? 

এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, সরকারের ভেতর ও বাইরে কয়েকটি স্বার্থান্বেষী মহল ড. ইউনূসকে ব্যবহার করে নির্বাচন অনিশ্চিত করতে যড়যন্ত্র করছে। তিনিও তাদের প্ররোচণায় সম্প্রতি কয়েকটি বিতর্কিত পদক্ষেপ নিয়ে নিজেও বিতর্কিত হচ্ছেন, যা বিএনপিসহ রাজনৈতিক দল ও জনগণর কাছে বিস্ময়কর। বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো তাঁর ওপর আস্থা রেখে তাঁর নেতৃত্বেই ইতিহাস সৃষ্টিকারী নিরপেক্ষ নির্বাচন চেয়েছে। কিন্তু তিনি বা তাঁর অন্তর্বর্তী সরকার কেন রাজনৈতিক দলকে অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করছে তা জাতি জানতে চায়।

ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এনায়েত উল্লাহ কালাম, হালুয়াঘাট উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মোয়াজ্জেম হোসেন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম মিয়া বাবুল, সদস্য সচিব আবু হাসনাত বদরুল কবীর, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হানিফ মোহাম্মদ শাকের উল্লাহ, সদস্য সচিব আবদুল আজিজ খান, বিআরডিবির সাবেক চেয়ারম্যন শাহ আফাজ উদ্দিন, ট্র্যাইবল ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি বিপুল হাজং, হালুয়াঘাট শাখার চেয়ারম্যন সুব্রত রেমা, প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।  

সম্পর্কিত নিবন্ধ