চামড়ার দাম কাগজে বাড়লেও বাজারে বাড়েনি
Published: 8th, June 2025 GMT
ঈদুল আজহা এলেই কোরবানির চামড়ার বাজার নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। বছরের এই একটি সময়েই লাখ লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ হয়, যা দেশের চামড়া শিল্পের প্রধান কাঁচামাল। তবে বছরের পর বছর ধরে বাজারের চিত্র প্রায় একই। সরকার দাম বেঁধে দেয়, কিন্তু হাটে তার প্রতিফলন মেলে না।
চলতি বছরও ব্যতিক্রম নয়
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার বর্গফুটপ্রতি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। ঢাকার বাইরে সেটি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। এছাড়া ছাগলের চামড়ার দাম নির্ধারিত হয়েছে ২০–২২ টাকা এবং খাসির চামড়া ২২–২৭ টাকা। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।
চামড়া বিক্রি হচ্ছে এক তৃতীয়াংশ দামে
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, সায়েন্সল্যাব ও পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকায় ঈদের দিন ঘুরে দেখা গেছে, গরুর কাঁচা চামড়া গড়ে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট আকৃতির চামড়া মিলছে ৬০০ টাকাতেই। অথচ একই চামড়া সরকারি দরের ভিত্তিতে বিক্রি হলে মূল্য হওয়া উচিত কমপক্ষে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা।
আরো পড়ুন:
মেট্রোরেলে রান্না ও কাঁচা মাংস বহনে নিষেধাজ্ঞা
ঈদের শহরে মাংসের হাট
রায়েরবাগের মৌসুমি ব্যবসায়ী সালাউদ্দীন আহমেদ, কলাবাগান থেকে সায়েন্সল্যাব এলাকায় ৫৩টি চামড়া বিক্রি করতে আনেন। প্রতি চামড়া কিনেছেন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায়। বিক্রির সময় ১১০০ টাকা করে দাম চাইলেও সর্বোচ্চ ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকাতেই তাকে সব বিক্রি করতে হয়। তিনি বলেন, “ভ্যান ভাড়া, সহকারীর মজুরি বাদ দিলে হাতে কিছুই থাকছে না।”
ছাগলের চামড়ার দাম নেই
ছাগলের চামড়া বিক্রির অবস্থা আরো শোচনীয়। অনেক জায়গায় ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে চামড়া, কেউ কেউ বিনা মূল্যে দিয়ে দিচ্ছেন। পোস্তার এক আড়তদার বললেন, "ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করাটাই লোকসানের খাতায় যাচ্ছে।”
অতিরিক্ত সরবরাহ, বাজারে চাপ
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর কোরবানির জন্য প্রস্তুত ছিল প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ পশু। চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ। কিন্তু চামড়ার ক্রয়ক্ষমতা, সংরক্ষণের খরচ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যয় বিবেচনায় অনেক আড়তদার ও ট্যানারি প্রতিষ্ঠান নিরাপদ দামে চামড়া কিনতেই আগ্রহী হচ্ছেন না।
সায়েন্সল্যাবে চামড়া সংগ্রহ করছিলেন নয়ন ব্রাদার্স ট্যানারির পরিচালক আবুল হোসেন। তিনি বলেন, “গত বছরের তুলনায় চামড়ার দর কিছুটা বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা মতো। তবে ক্রয় ও প্রক্রিয়াজাতকরণ খরচ তুললে লাভের মার্জিন নেই বললেই চলে।”
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, এই বছর ছোট গরুর চামড়ার সংখ্যাই বেশি, তাই দামও কিছুটা কম। তবে সরবরাহ ভালো এবং ট্যানারি মালিকেরা সরাসরি মাঠে নেমে চামড়া কিনছেন যাতে দাম স্থিতিশীল রাখা যায়।চলতি বছর ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো অন্তত ৫ থেকে ৬ লাখ চামড়া নিজেরা সংগ্রহ করবে।
মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দুঃখ
পুরান ঢাকার পোস্তা চামড়ার আড়তের চিত্র ছিল ব্যস্ত ও এলোমেলো। রিকশা, ভ্যান ও ছোট ট্রাক ভর্তি চামড়া এনে দাঁড়িয়ে আছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। কেউ দাম পাচ্ছেন, কেউ হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
ব্যবসায়ী তানভীরুল ইসলাম বলেন, “বাজার ভালো না। চামড়া কিনছি ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায়। অথচ লবণ, শ্রমিক, খরচ সব মিলিয়ে ৪০০ টাকা উঠে যায়। লাভ থাকবে কীভাবে।”
আরকে মিশন রোডের বাসিন্দা আতিয়ার মোহাম্মদ বলেন, “চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে হলে শুধু দাম নির্ধারণ করলেই হবে না। দর ঠিকভাবে বাস্তবায়ন, বাজার মনিটরিং, মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব হ্রাস এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনা ও সহায়তার ব্যবস্থাও প্রয়োজন। না হলে প্রতি বছরই চামড়ার দাম কমবে।”
ঢাকা/এএএম/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক রব ন র হ ট ব যবস য় স গ রহ
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার একটি বাড়িতে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার মশিপুর ইউনিয়নের ছোট ইতালি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
বিস্ফোরণে আতাউর রহমান (৩৫) নামের একজন গুরুতর আহত হন। তাঁকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আতাউর কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার রামপ্রসাদের চর গ্রামের বাসিন্দা। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।।
গতকালের ওই ঘটনার পরপরই ছোট ইতালি গ্রামের বিস্ফোরণস্থল ঘিরে ফেলেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও ডিবি সদস্যরা। উদ্ধার করা হয় বেশ কয়েকটি তাজা হাতবোমা। বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা এসে উদ্ধার হওয়া হাতবোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করেন। পরে বাড়িটি সিলগালা করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েক দিন আগে আতাউর রহমানসহ কুমিল্লা থেকে আসা চার ব্যক্তি ছোট ইতালি গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেনের বাড়িতে ওঠেন। মুক্তারের স্ত্রী নাছিমা আক্তার (৪৫) মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মুক্তারের বাড়ির ভেতরে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হন। পরে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে রক্তাক্ত অবস্থায় আতাউর রহমানকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশকে খবর দেওয়ার পর মুক্তার হোসেনের তিন সহযোগী দ্রুত পালিয়ে যান। স্থানীয় লোকজন আহত আতাউরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেরাজুল হক বলেন, ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত হাতবোমা ও কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। বাগবাড়ি তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল সাদিক বাদী হয়ে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছেন। মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ঘটনার সঙ্গে আগামী নির্বাচনে নাশকতার পরিকল্পনার যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।