সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেই চামড়া বিক্রি হচ্ছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
Published: 8th, June 2025 GMT
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেই বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশুর চামড়া। নির্ধারিত দাম কার্যকরে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ দল।
রোববার সন্ধ্যায় ঢাকার লালবাগের পোস্তায় কোরবানির পশুর চামড়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমরা যে চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছিলাম, সেটি ছিল লবণসহ দাম। ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, যেটা বিক্রি হচ্ছে সেটি লবণ ছাড়া। বিগত বহু বছর ধরে যে দামে বিক্রি হতো, এই দাম তার থেকে বেশি।’
মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়ার দাম পাচ্ছেন না, এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, এটা কিছু কিছু ক্ষেত্রে সত্য, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অসত্য। অসত্য এ জন্য যে কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী যাঁদের চামড়া সংরক্ষণের ব্যাপারে কোনো অভিজ্ঞতা নেই, তাঁরা চামড়া নিয়ে আধা পচা করে ফেলছে । আধা পচা চামড়া ৭০০-৮০০ টাকা বিক্রি হলে তো এটা অনেক বেশি। আর যেটি ভালো চামড়া সেটি ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে আমরা যে কাজটা শুরু করি, তা হলো স্থানীয়ভাবে মজুত এবং লবণ দেওয়াকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে চামড়া সংরক্ষণ ও মজুত উপযোগী করা। যার ফলে বাজার ব্যবস্থাপনায় একটা স্থিতি এবং বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে সামঞ্জস্য তৈরি হয়।’ তিনি আরও বলেন, মাঠপর্যায়ে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন চামড়া ব্যবস্থাপনায় কাজ করছে। জাতীয় পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ করা হয়েছে। সেখানে ২৪ ঘণ্টা চামড়া ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে লবণ দেওয়া চামড়ার উপযুক্ত মূল্য পাওয়া যাচ্ছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যেই সেটা বিক্রি হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মূল ধারার কিছু গণমাধ্যম ভুল তথ্য প্রচার করছে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘এককভাবে সরকারকে দায়ী করে কিছু ভুল তথ্য ও অপতথ্য ছড়িয়ে চামড়ার বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করা ন্যক্কারজনক কাজ হবে বলে আমি মনে করি।’
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘চামড়ার দাম গতকালের তুলনায় আজ বেড়েছে। আশা করছি, লবণযুক্ত চামড়ার দাম আগামীকাল আরও বাড়বে। আমরা চামড়া সংরক্ষণের সক্ষমতা তৈরি করেছি, যার মাধ্যমে দুই থেকে তিন মাস চামড়া ধরে রাখতে (সংরক্ষণ) পারবেন।’ তিনি উপযুক্ত দাম না পাওয়া পর্যন্ত চামড়া বিক্রি না করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ণ জ য উপদ ষ ট সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
রোনালদো গোল করলেন, পর্তুগাল জিতল উয়েফা নেশন্স লিগ
এমন না যে নিজেকে প্রমাণ করার আরো কিছু আছে তার। তবুও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো অঝোরে কাঁদেন। উল্লাসে কাঁদেন। অর্জনে কাঁদেন। সেই সুখের কান্নায় আরেকবার ভিজলো জার্মানির আলিয়াঞ্জ এরিনার সবুজের গালিচা।
যেখানে স্পেনকে হারিয়ে পর্তুগাল জিতে নেয় উয়েফা নেশন্স লিগ কাপ। নির্ধারিত সময়ের খেলা ২-২ এ অমীমাসিংত থাকে। অতিরিক্ত আরো ৩০ মিনিটেও চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণ করা যায়নি। টাইব্রেকারেই হয় ফয়সালা। যেখানে ৫-৩ গোলে স্পেনকে হারিয়ে পর্তুগাল নিশ্চিত করে শিরোপা। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার পর্তুগাল জিতল উয়েফা নেশন্স লিগ। ২০১৯ সালে পেয়েছিল প্রথমবার।
চল্লিশ পেরোনো রোনালদো এই ম্যাচেও গোল করেছেন। হয়তো ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোল। দ্বিতীয়ার্ধের খেলা চলছিল। স্পেন ২-১ এ এগিয়ে। গোল শোধে মরিয়া পর্তুগাল একের পর এক আক্রমণে যাচ্ছে কিন্তু ফিনিশিংয়ের ঘাটতির কারণে গোল পাওয়া হচ্ছিল না।
৬৫ মিনিটে রোনালদো দলকে সমতায় ফেরান। মেনডেসের ক্রস থেকে ডি বক্সের ভেতরে বল পান রোনালদো। স্পেনের রক্ষণের খেলোয়াড়ের বাধায় বল ঠিকঠাক জায়গা মতো পাননি রোনালদো। কিন্তু তার নিখুঁত শট খুঁজে নেয় স্পেনের জাল। স্কোরলাইন ২-২। এরপর নির্ধারিত সময়ের খেলা অমীমাংসিত থাকে। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেও গোলের দেখা পায়নি কেউ।
ফাইনাল ম্যাচ টাইব্রেকারে গিয়ে উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়। পর্তুগাল সবগুলো শটে গোলের দেখা যায়। স্পেনের প্রথম তিনটি শটও ছিল গোল। চতুর্থ শট নিয়েছিলেন অধিনায়ক মোরাতা। কিন্তু গোলরক্ষক কস্তা ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে বল আটকে দেন। পরের শটে নেভেস গোল করে পর্তুগালকে জেতান শিরোপা।
ম্যাচের ৮৮ মিনিটে চোট পেয়ে উঠে যান রোনালদো। পেনাল্টির পুরোটা সময় তার চোখে মুখে ছিল চিন্তার ভাঁজ। স্পেন গোল করলেই মুখটা বিষন্ন হয়ে আসে। নিজের দলের খেলোয়াড়রা গোল করলে তার মুখে হাসি ফোটায়। মিশ্র এই অনুভূতির মাঝেই কস্তা মোরাতার শট আটকে দিলে চোখের কোণে জল চলে আসে রোনালদোর।
এরপর নেভেসের শট লক্ষ্যভেদ হলে নিজেকে আর আটকে রাখতে পারেননি সিআরসেভেন। মাটিতে বসে কান্নায় সবুজ গালিচা ভিজিয়ে দেন। উঠে দাঁড়িয়েও আনন্দাশ্রু ঝরতে থাকে। মাঠের আনুষ্ঠানিকতা শেষে যখন শিরোপা উঁচিয়ে ধরেন তখন আনন্দের জোয়ারে ভেসে যায় সব। ব্যক্তিগত অর্জনে টইটুম্বুর রোনালদো দেশের জার্সিতে ২০১৬ ইউরো, ২০১৯ নেশন্স লিগ জিতেছিলেন। ছয় বছর পর আবার জিতলেন নেশন্স লিগ।
কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল ও ফাইনাল…তিন নক আউট ম্যাচেই রোনালদো গোল করেছেন। ২২০তম ম্যাচে এটি রোনালদোর আন্তর্জাতিক ফুটবলে ১৩৮তম গোল। যা তার পেশাদার ক্যারিয়ারের ৯৩৮তম গোল।
ফাইনাল ম্যাচে স্পেন দুইবার এগিয়ে যায়। প্রথমে ২২ মিনিটে। জুবিমেন্ডি অতি সহজেই গোল পেয়ে দলকে এগিয়ে নেন। লিড অবশ্য বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি স্পেন। বক্সের বাইরে থেকে নেটোর বাড়ানোর পাস নিয়ে এগিয়ে নেন মেনডেস। ক্ষীপ্রতায় এগিয়ে যান ভেতরে। এরপর বামপায়ের জোরালো শটে বল পাঠান জালে। ১-১ এ খেলা সমতা।
কিন্তু বিরতিতে যাওয়ার আগে আবার গোল হজম করে পর্তুগাল। পেড্রির বাড়ানো বল ইয়ারজাবাল শট নিয়ে স্পেনকে এগিয়ে দেন। কিন্তু ওই এগিয়ে যাওয়াতে তেমন লাভ হয়নি। রোনালদোর গোলে পর্তুগাল ম্যাচে সমতা ফেরায়। এরপর টাইব্রেকারে পর্তুগাল উড়ায় বিজয়ের পতাকা। পাঁচবারের ব্যালন ডি অরের সাফল্যের মুকুটে আরেকটি পালক যুক্ত হলো। দেখার বিষয়, চল্লিশ পেরিয়ে যাওয়া রোনালদো কোথায় গিয়ে থামেন।
ঢাকা/ইয়াসিন