খাবারের অনিয়ম শরীরের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। সঠিক সময়ে সঠিক খাবার পরিমিত পারিমাণে না খাওয়া শরীরের জন্য বেশি ক্ষতিকর। তাই আসুন ঈদের ছুটির বাকি দিনগুলোর একটা পরিকল্পনা করে ফেলা যাক।  

সকালের নাশতা

সকালের নাশতায় রুটি/পরোটা/খিচুড়ির সঙ্গে থাকতে পারে একটা ডিম, মাংস বা সবজি। এক্ষেত্রে গতানুগতিক সবজির পরিবর্তে চাইনিজ সবজি রাখা যেতে পারে। খাবারকে সুষম করতে হলে সবজি রাখতেই হবে। সঙ্গে ঈদ উপলক্ষে ডেজার্ট, যেমন নবাবি সেমাই, সেমাই, পায়েস, ফিরনি, মিষ্টি বা পুডিং থাকতে পারে। এসব যেহেতু সরল শর্করাযুক্ত খাবার, সেক্ষেত্রে পরিমাণে কিছুটা কম খেতে হবে। অন্যান্য কার্বোহাইড্রেট-সমৃদ্ধ খাবারও পরিমিত পারিমাণে খেতে হবে।

মধ্যসকাল

অন্যান্য দিনের মতো এই ছুটির দিনগুলোতেও সকাল ও দুপুরের মাঝের সময়টাতে হালকা কিছু খেতে হবে। অনেকেই ফুচকা, চটপটি খেতে পছন্দ করেন। তবে এখন যেহেতু বেশ গরম, তাই এই সময় ফলের সালাদ বা বাসায় তৈরি তাজা ফলের রস খাওয়া যেতে পারে। টকদই, বাদাম ও ফল দিয়ে বানানো লাচ্ছিও হতে পারে ভালো বিকল্প। এতে গরমে শরীরে পানিস্বল্পতা হবে না।

দুপুরের খাবার

ঈদের ছুটির দিনগুলোতে আমরা চেষ্টা করি খাবারগুলো একটু স্পেশাল করতে। তবে স্পেশাল খাবার অবশ্যই স্বাস্থ্যকর হতে হবে এবং খেতে হবে পরিমিত পরিমাণে। 

এসব দিনে দুপুরে কম তেলে রান্না পোলাও বা বিরিয়ানি খাওয়া যেতে পারে। সঙ্গেচিকেন, রোস্ট, কাবাব এবং গরু/খাসির মাংস রাখতে পারেন। পাতে রাখতে পারেন শসা, গাজর, টমেটো, লেটুসপাতা ওক্যাপসিকামের মিশ্র সালাদ। এইসালাদ একটু বেশি পরিমাণে খেলে শাকসবজি না খেলেও চলবে।যাঁদের অ‍্যাসিডিটির সমস্যা বেশি, তাঁরা রোস্টের পরিবর্তে মুরগির কোরমা খাবেন। যেহেতু মাংসের অধিক পদ থাকবে, তাই প্রতিটি পদ থেকে অল্প পরিমাণে খেতে হবে। অনেকে এসবদিনে কোমলপানীয় খেতে পছন্দ করেন। এক্ষেত্রে মাঠা, লাবাং বা বোরহানি খাওয়াই উত্তম। 

বৈকালিক স্ন্যাকস

বৈকালিক স্ন্যাকস হিসাবে নুডুলস, পাস্তা, গ্রিল, কাবাব, শর্মা, লাসানিয়া রাখা যেতে পারে। এ ছাড়া চাইলে দুধ দিয়ে বানানো খাবারও খেতে পারেন। 

রাতের খাবার

এসব দিনে দুপুরে একটু ভারী খাবারই খাওয়া হয়। তাই রাতে সহজপাচ্য খাবারগুলোতেই প্রাধান্য দিতে হবে। রাতে রুটি বা সাদা ভাতের সঙ্গে মাছ, সবজি আর ডাল খাওয়া যেতে পারে। দিনে মাংস খাওয়া হলে রাতে বাদ দিতে পারেন। দরকার হলে স্বাদ পালটাতে মাছের ফিলে, স্টেক, কোফতা, পাতুরি বা ভাপা ইলিশ খাওয়া যেতে পারে। আরও সহজপাচ্য কিছু খেতে চাইলে চিকেন ভেজিটেবল স্যুপ খাওয়ার চেষ্টা করবেন। 

ব্যায়াম

ঈদের ছুটির দিনগুলোতেও সকাল, বিকেল বা রাতে আপনার সুবিধামতো সময়ে একবেলা শরীরচর্চা করতে হবে। আমরা ঈদের ছুটির দিনগুলোতে না চাইলেও কিছুটা বেশি খাবার খেয়ে ফেলি। তাই অতিরিক্ত ক্যালরি খরচ করতে শরীরচর্চা আবশ্যক।

মো.

ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম

আরও পড়ুনযে খাবারগুলো ঈদের সময়ে খাওয়া হয়, কারা খাবেন না০৫ জুন ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঈদ র ছ ট র পর ম ণ

এছাড়াও পড়ুন:

সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন

প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।

জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।

অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।

কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।

সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ