বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, দেশের চামড়া শিল্পে বিগত ১৫ বছরে ব্যাপক নৈরাজ্য হয়েছে এবং এর ফলে শিল্পটির চরম অধঃপতন হয়েছে। এ খাতে যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, তা নির্মূলে সরকার কাজ করছে।

সোমবার দুপুরে যশোরের রাজারহাটে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চামড়ার হাটে কোরবানির চামড়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। 

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আমরা চামড়া শিল্পে সবার আগে এতিমখানা ও মাদরাসার স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছি। পাশাপাশি দেশের চামড়া শিল্পের সার্বিক স্বার্থ ও ভবিষ্যৎ চিন্তা করেই কার্যক্রম পরিচালনা করছি। 

তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে চামড়া শিল্পের যে অধঃপতন ঘটেছে, তা পুনরুদ্ধার এবং অবৈধ সিন্ডিকেট ভাঙতে আমরা সারাদেশে কাজ করছি। আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। কন্ট্রোল টিমও সক্রিয় রয়েছে। 

চামড়ার সঠিক মূল্য নিশ্চিত ও মূল্য বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার সারাদেশে লবণ বিতরণ করেছে উল্লেখ করে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, চামড়ার দাম বাড়াতে সংরক্ষণের জন্য ৭ লাখ ৫০ হাজার মন লবণ বিতরণ করা হয়েছে। সরকারের এই পদক্ষেপ চামড়ার মূল্য নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। অনেক মাদরাসা লবণ ছাড়াই চামড়া সংগ্রহ করেছে। অথচ সরকার লবণ ছাড়া চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে না। অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া সম্পর্কে ধারণা না থাকায় তা নষ্ট করেছেন। ফলে কাঙ্ক্ষিত মূল্য পাননি। 

তিনি বলেন, ট্যানারি মালিকদের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সরকার ঈদের আগেই ২২০ কোটি টাকার প্রণোদনা ছাড় করেছে। বাজার ব্যবস্থাপনা সম্প্রসারণের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের চাহিদা তৈরি হবে বলে যোগ করেন তিনি। 

তিনি আরও বলেন, চামড়া শিল্পের নৈরাজ্য নিয়ে এখনও সরকারের ওপর দায় চাপানো হচ্ছে। অথচ সরকার চামড়া রক্ষায় যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। সবার সহযোগিতা পেলে আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণ করতে পারব।  

এসময় যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহার ইসলাম এবং পুলিশ সুপার রওনক জাহান উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ণ জ য উপদ ষ ট যশ র উপদ ষ ট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে রেকর্ড বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি

বরেন্দ্র অঞ্চলে বছরে বৃষ্টি হয় প্রায় ১,২০০ থেকে ১,৫০০ মিলিমিটার পর্যন্ত। বৃষ্টি কম হওয়ায় ভূ-গর্ভস্থ পানিও ক্রমাগত নিচে নামছে। ফলে দিনকে দিন অঞ্চলটি খরাপ্রবণ হয়ে উঠছে। তবে, গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাতের স্মরণকালের ভারী বর্ষণে বরেন্দ্র অঞ্চলের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মাটির বাড়ি ধসে পড়ার পাশাপাশি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে এবং মাঠের ধান শুয়ে পড়েছে।

রবিবার (২ নভেম্বর) সকালে রাজশাহীর কাঁকনহাট পৌরসভার দরগাপাড়া গ্রামে কৃষক জহিরুল ইসলাম নিজের জমির পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, “মাঠের ৮০ ভাগ ধান শুয়ে পড়েছে। এই ধান তুইলতে লোকও পাওয়া যাবে না। সবাইকে একসঙ্গে ধান তুইলতে হবে। আমরা এবারের খুব ক্ষতির শিকার।”

আরো পড়ুন:

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভারী বর্ষণে ৪০০ পুকুর ভেসে গেছে

পদ্মা-মেঘনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে পাঙ্গাস

সরেজমিনে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কৃষকের কথার সত্যতা পাওয়া গেছে।

বরেন্দ্র অঞ্চলের ফসলি মাঠ উঁচুনিচু সিঁড়ির মতো। দুই পাশ উঁচু হলেও মাঝের অংশ তুলনামূলক নিচু থাকে, যা স্থানীয়রা ‘কান্দর’ বলেন। এবার এই কান্দরগুলো তলিয়ে গিয়ে বিলের মতো হয়েছে। এসব জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। কখনো কখনো বিলের ধান পানিতে ডুবলেও কান্দর কখনো ডুবে না। শুক্রবার রাতের বৃষ্টিতে সবই তলিয়েছে।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, “গ্রামের দিকে খুব বৃষ্টি হয়েছে। তবে, শহরে আমরা মাত্র ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছি।”

এদিকে, বিলের পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় মানুষ দলবেঁধে মাছ ধরতে নেমেছেন। শনিবার (১ নভেম্বর) থেকেই মাছ ধরার মহোৎসব চলছে। পবা উপজেলার শুলিতলা ভিমারডাইং এলাকায় জোয়াখালি নদীতে অর্ধশতাধিক মানুষ মাছ ধরছিলেন।

ক্ষেত থেকে শুয়ে পড়া ধান কাটছেন এক কৃষক

আলোকছত্র গ্রামের কৃষক মো. মনিরুজ্জামান (৬৫) বলেন, “জাল ফেললেই বড় বড় মাছ পাওয়া যাচ্ছে। আমি আমার জীবনে এবার দ্বিতীয়বার উত্তরা পেলি দেখছি। সাধারণত নদীর স্রোত উত্তর দিকে যায়, কিন্তু এবার উত্তরেই এত বেশি বৃষ্টি হয়েছে যে পানি দক্ষিণে যাচ্ছে।”

বিলের মধ্যে খনন করা পুকুরগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মাছচাষিরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন। গোদাগাড়ীর কালোসাঁকো বিলে চারটি পুকুরে মাছচাষ করতেন মারিফুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রায় ৪ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। অন্তত ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

রিশিকুল ইউনিয়নের খড়িয়াকান্দি এলাকায় দুটি স্থানে পাকা রাস্তা প্লাবিত হয়ে একপাশ থেকে অন্যপাশে পানি যাচ্ছে। স্থানীয়রা সেখানে জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। রাস্তার দুই পাশে শত শত বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। খড়িয়াকান্দি খালের পাশে ১০–১২টি বাড়ির মাটির দেয়াল ভেঙে পড়েছে।

মান্ডইল নলপুকুর গ্রামের বিশ্বনাথ সরেন জানান, তার বাড়ির দুটি ঘর ধসে পড়েছে।

জালে বড় মাছ উঠায় খুশি স্থানীয় এক বাসিন্দা

রিশিকুল এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, “আমাদের এলাকায় এমন বন্যা হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। তারপর এত বৃষ্টি ও বন্যা হয়নি। এবার প্রথম।”

এলাকাবাসী জানান, পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রান্নাবান্না সম্ভব হচ্ছে না। স্বেচ্ছাসেবীরা খিচুড়ি রান্না করে বাড়ি বাড়ি বিতরণ করছেন। গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট, আলোকছত্র হয়ে তানোরের সরনজাই ও কালীগঞ্জ এলাকায় মাঠের পর মাঠের ধান শুয়ে পড়েছে।

কালীগঞ্জের কৃষক সাবিয়ার রহমান বলেন, “আমার ১২ বিঘা জমির ধান শেষ। আধাপাকা ধান ঘরে তুলতেও লোক পাওয়া যাবে না।”

এবার মাঠ তলিয়ে যাওয়ায় আলু ও শীতকালীন সবজি চাষে বিলম্ব হবে। পার্শ্ববর্তী মোহনপুর ও বাগমারায় ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি ঢুকে যাওয়ায় পানবরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দুই পাশের জমি প্লাবিত করে বৃষ্টির পানি সড়কে উঠেছে

শনিবার বাগমারার বাসুপাড়ায় নুর মোহম্মাদ নামের এক পানচাষির মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়দের ধারণা, বরজে পানি ঢুকে যাওয়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গিয়ে থাকতে পারেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন দাবি করেছেন, “ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি।” তিনি বলেন, “৫০০ হেক্টর ধানের ক্ষতির প্রতিবেদন আমরা দিচ্ছি। ধান শুয়ে পড়লেই কিন্তু ক্ষতি হবে না। মাঠে যাচ্ছি, দেখছি।”

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “কিছু উপজেলা থেকে পুকুর ভেসে যাওয়ার খবর পেয়েছি। মাছ বেরিয়ে গেছে। এটি অপরিকল্পিত পুকুর খননের কারণে হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানার জন্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি।”

ঢাকা/কেয়া/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ