সিরাজগঞ্জের তাড়াশে রবিশস্য তুলে সাত বিঘা জমিতে ব্রি-২৯ জাতের বোরো ধান রোপণ করেছিলেন আজগার আলী। ঈদের পরপরই ধান কাটার কথা ছিল তার। কিন্তু মাত্র তিনদিনের ভারি বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে ডুবেছে পাকা ধানের ক্ষেত। এতে ফসল তোলার আনন্দ বিষাদে রূপ নেয় আজগার আলীর পরিবারে।

তিনি জানান, কোমর সমান পানি থেকেই বাড়তি পারিশ্রমিকে কামলা (কৃষি শ্রমিক) এনে কিছু ধান কাটার ব্যবস্থা করেছেন। এতেও সুবিধা করতে পারেননি। অধিকাংশ ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে পরিবারের বার্ষিক খোরাকির ধানও জোটানো নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে শঙ্কা।

তাড়াশের মাগুড়াবিনোদ এলাকার ভুক্তভোগী কৃষক আজগারের মতো ভাগ্য বিস্তীর্ণ এলাকার আর সবার। একই এলাকার পাচান গ্রামের কৃষক আরমান আলী। তিনি জানান, কামলা না পেয়ে মোট জমির এক মুঠো বোরো ধানও কাটতে পারেননি।

স্থানীয়রা বলছেন, আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন মূলত ব্রি-২৯ বা নাবী জাতের বোরো ধানের চাষিরা। যদিও একই এলাকায় আগাম জাতের বোরো যারা চাষ করেছিলেন; তারা বন্যার শুরুর ১২-১৫ দিন আগেই ধান কাটা শেষ করেছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, মাত্র কয়েক দিনের আকস্মিক বন্যায় চলনবিলের ‘শস্যভাণ্ডার’ খ্যাত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর; পাবনার ভাঙ্গুরা, চাটমোহর এবং নাটোরের গুরুদাসপুর ও সিংড়া এলাকার নিচু জমি ডুবে গেছে। এতে হাজার হাজার বিঘা জমির পাকা ও আধা পাকা বোরো ধান কোথাও তলিয়ে গেছে; কোথাও হাবুডুবু খাচ্ছে। মিলছে না ধান কাটার পর্যাপ্ত শ্রমিক। এছাড়া কোমর সমান পানিতে কাজ করছে না ধান কাটা যন্ত্রও।

এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন পশ্চিম চলনবিল অঞ্চলের নাবী জাতের ধানের আবাদ করা কৃষকরা। তাড়াশের ঘরগ্রাম এলাকার কৃষক ইসমাইল হোসেন সমকালকে বলেন, তাড়াশ উপজেলার সদর, সগুনা, মাগুড়াবিনোদ ও নওগাঁ ইউনিয়ন এলাকার কমপক্ষে ২৫-৩০টি গ্রামের পাকা বোরো ধানের জমিতে এখন হাঁটু বা কোমর সমান পানি। এ এলাকার কৃষকের ঘরে এবার ঈদ নেই। জমির ধান কাটতে শ্রমিক আর হারভেস্টরের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছি।

পাবনার চাটমোহরের নিমাইচড়া এলাকার কৃষক পুলক কুমার বলেন, চলনবিলের আট উপজেলার কৃষকরা ফাল্গুন মাসে রবিশস্য তুলে বোরো ধান রোপণ করেন। এগুলো সাধারণত ১১০-১২০ দিনে ঘরে তোলা যায়। ধান পাকতে দেরি হওয়ায় এ বছর জ্যেষ্ঠ মাসেই আকস্মিক বন্যায় চলে এসেছে। এখন আর ঘরে তুলতে পারছি না।

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিলসা এলাকার কৃষক আয়নাল মন্ডল সমকালকে বলেন, পানিতে ধানের শীষ জেগে আছে- এমন জমির ধান কাটতে বর্তমানে বিঘাপ্রতি খরচ হচ্ছে সাড়ে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। এরমধ্যে হারভেস্টরে বিঘাপ্রতি সাড়ে ৪ থেকে সাড়ে সাড়ে ৫ হাজার টাকা; দিন হাজিরায় শ্রমিকপ্রতি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা। পাশাপাশি চলমান এই দুর্যোগের মুহূর্তে যে পরিমাণ কৃষি শ্রমিক বা হারভেস্টর প্রয়োজন, তাও মিলছে না।

তিনি আরও বলেন, পাকা বোরো ধান চোখের সামনে ডুবতে দেখে চলনবিলের আট উপজেলার ১৫-২০ ইউনিয়নের শতশত কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সোমবার বিকেল পর্যন্ত বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। পাকা ধান ঘরে তুলতে না পেরে অনেকেই কাঁদছেন।

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.

আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রকৃতির ওপর কারো হাত নেই। তারপরও যতটুকু পারা যায়, জমির পাকা ধান ঘরে তোলার জন্য কৃষক ভাইদের চেষ্টা চালিয়ে যাবার পরামর্শ দিচ্ছি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ধ নক ষ ত বন য চলনব ল চলনব ল র উপজ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

বিয়ে বাড়িতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বরের বাবার মৃত্যু

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় বিয়ে বাড়ির আলোকসজ্জায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারালেন বরের বাবা বিষু পাল (৬৫)। বুধবার (৩০ জুলাই) উপজেলার গুনই মদনমুরত গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

স্থানীয়রা জানান, বিষু পালের বড় ছেলে বিজয় পালের বিয়ে ঠিক হয় ৩১ জুলাই (বৃহস্পতিবার)। সেই উপলক্ষে বাড়িতে আলোকসজ্জার আয়োজন করা হয়। বাড়ির একটি গ্রিলে অস্থায়ী বিদ্যুৎ লাইনের তার ঝুলছিল। যেখানে লিকেজ ছিল। সকালে অসাবধানতাবশত সেই গ্রিলে হাত দিলে বিষু পাল বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্দার করে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

আরো পড়ুন:

কুড়িগ্রামে সাপের কামড়ে সাপুড়ের মৃত্যু

কিশোরগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ২ কৃষকের মৃত্যু

বানিয়াচং থানার এসআই সজিব ঘোষ জানান, ঘটনাটি মর্মান্তিক। বিয়ের আনন্দময় পরিবেশ হঠাৎ করে বিষাদে পরিণত হয়েছে। বিকেলে বিষু পালের পরিবারের সদস্যরা বিনা ময়নাতদন্তে লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য হবিগঞ্জ জেলা সদরে গিয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর আবেদন করেছেন। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। 

ঢাকা/মামুন/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ