চার দিনের সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে পৌঁছেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি আজ মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৫ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে এই তথ্য জানান।

সফরকালে বাকিংহাম প্যালেসে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে দেখা করবেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় তিনি রাজা চার্লসের হাত থেকে গ্রহণ করবেন ‘কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’।

এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাজ্যের নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউস আয়োজিত এক সংলাপে অংশ নেবেন।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্র জানায়, তাঁর এই সফরে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে যুক্তরাজ্যের সমর্থনের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে। এর পাশাপাশি পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়টিতে প্রাধান্য দেবে বাংলাদেশ।

১৪ জুন প্রধান উপদেষ্টার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর জ য র

এছাড়াও পড়ুন:

ক্যালিফোর্নিয়া কেন জ্বলছে

ঘটনা শুরু হয়েছিল বৈধ কাগজপত্রবিহীন বহিরাগত ব্যক্তিদের ধরপাকড় থেকে। গত সপ্তাহে ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসের যে দুটি এলাকায় এ অভিযান শুরু হয়, তার প্রায় ৬০ শতাংশ বহিরাগত–অধ্যুষিত। এঁদের মধ্যে বৈধ নাগরিক নন, এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবৈধ অভিবাসনবিরোধী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফেডারেল আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ‘আইস’ সেখানে বহিরাগত ব্যক্তিদের কর্মস্থলে অভিযান চালায়। আর তাতেই বিপত্তির শুরু।

পরপর তিন দিনের বিক্ষোভ ও দাঙ্গার পর অবস্থা সামাল দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দুই হাজার ন্যাশনাল গার্ড পাঠানোর নির্দেশ দেন। নিয়মিত বাহিনীর অংশ হিসেবে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা একই সঙ্গে ফেডারেল পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট ও অঙ্গরাজ্যে গভর্নরের নির্দেশে কাজ করে থাকে। কয়েক দিন আগে গার্ডদের প্রথম দলটি আইস বা ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট–বিরোধী দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছায়। ভারী অস্ত্রসজ্জিত এসব গার্ডের উপস্থিতি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বদলে তা আরও উসকে দেয়। দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে।

অঙ্গরাজ্য পর্যায়ের একটি আইনশৃঙ্খলাজনিত ঘটনাকে কেন এভাবে একটি ফেডারেল সমস্যায় দাঁড় করানো হলো, তা নিয়ে এখন বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রেসিডেন্টের নির্দেশে ন্যাশনাল গার্ডদের নিয়োগ নতুন ঘটনা নয়—গত ৬০ বছরে অবস্থা সামাল দিতে দুই ডজনের বেশি সময় তাদের ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু একবার ছাড়া প্রতিটি ক্ষেত্রেই হয় স্থানীয় গভর্নরের অনুরোধে, অথবা গভর্নরের অনুমতি ও সমর্থনেই তেমন নিয়োগ হয়েছে। এবার তার ব্যতিক্রম কেন?

আরও পড়ুনলস অ্যাঞ্জেলেসের পর টেক্সাসেও বিক্ষোভ, আরও ২ হাজার ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন২০ ঘণ্টা আগে

সেই প্রশ্ন তুলে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গেভিন নিউসাম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তাঁর যুক্তি—যে আইনের ভিত্তিতে ন্যাশনাল গার্ডদের ট্রাম্প প্রেরণ করেছেন, তা শুধু বহিরাগত ‘আক্রমণ’ বা বড় ধরনের ‘বিদ্রোহ’ ঠেকাতে করা হয়ে থাকে। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ায় কোনো বিদেশি আক্রমণ ঘটেনি, কোনো বিদ্রোহ হয়নি। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষমতা ক্যালিফোর্নিয়ার নিজের রয়েছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিষয়টিকে রাজনীতিকরণের উদ্দেশ্যেই এমন অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার ন্যাশনাল গার্ডের তিনি সেনাধ্যক্ষ, অথচ এ বিষয়ে তাঁর সম্মতি নেওয়ার কোনো প্রয়োজন ট্রাম্প দেখেননি।

ট্রাম্প ও নিউসামের মধ্যে বিরোধ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নতুন নয়। নিউসামকে যে তিনি পছন্দ করেন না, সেটাও কোনো গোপন ব্যাপার নয়। তাঁকে অযোগ্য ও ব্যর্থ অতি বাম রাজনীতিক হিসেবে হরহামেশাই বিদ্রূপ করে থাকেন ট্রাম্প। তিনি নিউসামের নতুন নাম দিয়েছেন নিউস্কাম (স্কাম শব্দের এক অর্থ জঘন্য বা আবর্জনা)। আইসের অভিযানের সময় গোলযোগ ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় তাঁকে অযোগ্য ও অপদার্থ প্রমাণের এমন একটি সুযোগ তিনি সম্ভবত হাতছাড়া করতে চাননি।

নিউসামের পক্ষ নিয়ে ডেমোক্রেট দলীয় গভর্নররা এক যৌথ বিবৃতিতে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে ন্যাশনাল গার্ডের অধিনায়ক হচ্ছেন সে রাজ্যের গভর্নর। অথচ সেই অধিনায়কের সম্মতি ছাড়াই ন্যাশনাল গার্ড নিয়োগের এই সিদ্ধান্ত অকার্যকর ও ভয়াবহ।

আরও পড়ুনলস অ্যাঞ্জেলেসে এবার মেরিন সেনা মোতায়েন০৯ জুন ২০২৫

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য সব সমালোচনা শুধু অগ্রাহ্য করেছেন তা–ই নয়, প্রয়োজন হলে নিউসামকে গ্রেপ্তারের পক্ষে মত দিয়েছেন। উত্তাপ কমানোর বদলে তার প্রশাসন আরও দুই হাজার গার্ডকে গোলযোগ দমনে পাঠাচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। কয়েক হাজার নৌ সেনাকেও সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে।

‘দেশ বাঁচাও’ যুক্তিতে ন্যাশনাল গার্ড ও নিয়মিত সেনাসদস্যদের নিয়োগ করা হলেও ট্রাম্প যে একটি রাজনৈতিক এজেন্ডা অনুসরণ করছেন, তাতে সন্দেহ নেই। তাঁর অন্যতম উপদেষ্টা স্টিভেন মিলার বলেছেন, তাঁরা ‘সভ্যতা বাঁচানোর’ লড়াইয়ে লিপ্ত রয়েছেন। অথচ ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের অনুসারীরা কংগ্রেস ভবন আক্রমণ করে মার্কিন গণতন্ত্রের ওপর সরাসরি হুমকি দিয়েছিল, তা ঠেকাতে শত অনুরোধ সত্ত্বেও কোনো ন্যাশনাল গার্ড তিনি পাঠাননি।

ট্রাম্প অনেক দিন থেকেই বলে আসছেন ক্যালিফোর্নিয়ার মতো ডেমোক্রাটদের নিয়ন্ত্রিত রাজ্য ও শহরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যেমন নিউইয়র্ক সিটি সম্বন্ধে তিনি বলেছিলেন, এটি অপরাধ ও দুষ্কর্মে ভরা এক অবিশ্বাস্য ‘নরকের গর্ত’ (তাঁর কথায় ‘হেল হোল’)। শিকাগো, বাল্টিমোর বা ফিলাডেলফিয়াসহ যেকোনো ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত শহর ও রাজ্যকেও তিনি এই ভাষায় আক্রমণ করেছেন। লস অ্যাঞ্জেলেসের আইসবিরোধী দাঙ্গার উদাহরণ তুলে ট্রাম্প এখন তাদের ওপর একহাত নেওয়ার ভালো সুযোগ পেয়েছেন।

আরও পড়ুনন্যাশনাল গার্ড না দিলে লস অ্যাঞ্জেলেস পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যেত: ট্রাম্প০৯ জুন ২০২৫

এ কথা ভাবার কারণ রয়েছে, একই রকম প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ ঠেকাতে ট্রাম্প অন্য অনেক শহরেও সৈন্য পাঠাতে পারেন। যে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তিনি সৈন্য প্রেরণের নির্দেশ দেন, তাতে কোথাও ক্যালিফোর্নিয়ার নাম উল্লেখ করা হয়নি। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের যেখানেই অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বা প্রতিবাদ হবে, এমনকি তা যদি শান্তিপূর্ণও হয়, তা প্রতিরোধে ন্যাশনাল গার্ড পাঠানো হবে। অর্থাৎ ট্রাম্প ভাবছেন আইনবিরোধী বিক্ষোভ দেশের অন্যত্রও হবে। তাদের দমনেও ফেডারেল সৈন্য ব্যবহার করা হবে—এমন আগাম হুঁশিয়ারি তিনি এই নির্বাহী আদেশে দিয়ে রাখলেন।

কয়েক দিনের বিক্ষোভ ও দাঙ্গায় লস অ্যাঞ্জেলেসের শহরতলির কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, হাতবোমা থেকে কিছু লোক আহত হয়েছেন। কিন্তু কেউ নিহত হননি। এ ধরনের বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় শহরে মোটেই নতুন কোনো ঘটনা নয়। নতুন যা হলো, এ ঘটনাকে একটি যুদ্ধক্ষেত্রে রূপান্তরের চেষ্টা। সে কথা উল্লেখ করে নিউইয়র্ক টাইমস এক সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করেছে, আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার বদলে ট্রাম্পের আসল লক্ষ্য বেপরোয়া শক্তির প্রদর্শনী।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল গার্ড’ কী, কখন এই বাহিনী মোতায়েন করা হয়০৯ জুন ২০২৫

আরও কঠোর ভাষায় ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে ব্রেনন সেন্টার ফর জাস্টিস। মানবাধিকারভিত্তিক এই সংস্থার অন্যতম পরিচালক এলিজাবেথ গয়তিন স্থানীয় গভর্নরের সম্মতি ছাড়া সৈন্য প্রেরণের সিদ্ধান্তকে অভূতপূর্ব ও আইনবহির্ভূত বলেছেন। যে আইনের ব্যবহার করে ট্রাম্প এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে শুধু ‘শেষ ব্যবস্থা’ হিসেবে সৈন্য ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। একই কথা বলেছেন নাগরিক অধিকার সংস্থা এসিএলইউ। এই সংস্থার পরিচালক হিনা শামসি বলেছেন, বেসামরিক পরিস্থিতিতে সামরিক শক্তি ব্যবহার না করার যে নীতি এত দিন আমরা মেনে এসেছি, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত তার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এর ফলে শুধু যে স্থানীয় নাগরিকেরা বিপদের মুখে পড়বে তা নয়, সৈন্যরাও বিপদে পড়তে পারে। কারণ, তারা একে অপরের মুখোমুখি হয়ে পড়বে।

যেভাবে ও যে ভাষায় হোয়াইট হাউস থেকে এই অভিযানের পক্ষে কথা বলেছেন, তাতে মনে হয় ব্যাপারটায় তারা মহাখুশি। অবৈধ অভিবাসন ও আইনশৃঙ্খলা প্রশ্নে তিনি আপসহীন ও কঠোর, নির্বাচনের আগে থেকেই ট্রাম্প বলে আসছেন। এখন হাতে–কলমে সে কথার এক প্রমাণ দিলেন। ঠিক এই মুহূর্তে কেন, তারও একটা ব্যাখ্যা রয়েছে। বাণিজ্যযুদ্ধ, বাজেট প্রশ্নে বিতর্ক ও অব্যাহত অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে এখন তাঁর প্রয়োজন ছিল দেশের মানুষের মনোযোগ অন্যদিকে ফেরানো। ক্ষমতা গ্রহণের চার মাস হতে না হতেই তাঁর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। তবে যে একটি বিষয়ে তিনি এখনো আমেরিকানদের, বিশেষ করে তাঁর রিপাবলিকান সমর্থকদের কাছে জনপ্রিয়, তা হলো অবৈধ অভিবাসন প্রশ্নে তাঁর অব্যাহত কঠোর অবস্থান। মনে হয়, নিজের নড়বড়ে জনপ্রিয়তাকে জোড়া লাগাতে তিনি সেই অভিবাসন প্রশ্নটিকেই ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তাতে কাজও দিয়েছে। সিবিএস নিউজ পরিচালিত এক জনমত জরিপ অনুসারে, দেশের ৫৪ শতাংশ মানুষ অভিবাসন প্রশ্নে তাঁর এই কঠোর অবস্থানে খুশি। খুশি নন, এমন মানুষের সংখ্যা ৪৪ শতাংশ।

আরও পড়ুনলস অ্যাঞ্জেলেসে ট্রাম্পের ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনকে কেন বিপজ্জনক মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা০৯ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ