টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল: দেখে নিন দুই দলের একাদশ
Published: 10th, June 2025 GMT
ক্রিকেটের তীর্থভূমি লর্ডসে কাল (বুধবার) থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (ডব্লিউটিসি) ফাইনাল, যেখানে মুখোমুখি হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ও এবারের আসরে চমক দেখানো দক্ষিণ আফ্রিকা। ম্যাচের আগের দিন, দুই দলই নিজেদের একাদশ ঘোষণা করেছে সংবাদ সম্মেলনে।
প্রোটিয়াদের উত্থান:
প্রথম টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে (২০১৯–২১) দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থান ছিল পাঁচ নম্বরে। তবে ২০২১–২৩ চক্রে তারা উঠে আসে তিন নম্বরে। এবার ২০২৩–২৫ চক্রে এসে দলটি জায়গা করে নিয়েছে ফাইনালে, যেখানে তারা লড়বে শিরোপা ধরে রাখার মিশনে থাকা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
প্রোটিয়া একাদশে রয়েছে অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের ভারসাম্য। টপ অর্ডারে আছেন এই চক্রে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক রায়ান রিকেলটন। তার সঙ্গে আছেন অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা, যিনি নিজেও ছিলেন দারুণ ফর্মে। মিডল অর্ডারে দেখা যাবে এইডেন মার্করাম, কাইল ভেরেইনে, ট্রিস্টান স্টাবস এবং ডেভিড বেডিংহামকে। অলরাউন্ডার হিসেবে খেলছেন উইয়ান মুলডার। পেস আক্রমণে নেতৃত্ব দেবেন কাগিসু রাবাদা, লুঙ্গি এনগিদি ও মার্কো ইয়ানসেন। একমাত্র স্পিনার হিসেবে আছেন কেশব মহারাজ।
আরো পড়ুন:
যোগ দিয়েছেন মুশতাক, ১৩ জুন বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা যাত্রা
বিসিবি নির্বাচনে সৈয়দ আশরাফুলের ‘আগ্রহ’
অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞতা ও ফিরে আসা:
অস্ট্রেলিয়া তাদের একাদশে বেশ কিছু চমক রেখেছে। বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে ২১ উইকেট নেওয়া পেসার স্কট বোল্যান্ডকে জায়গা না দিয়ে একাদশে ফিরিয়েছে অভিজ্ঞ জশ হ্যাজলউডকে। বাদ পড়েছেন তরুণ ব্যাটার স্যাম কনস্টাস ও মিচেল মার্শ। তাদের পরিবর্তে দলে সুযোগ পেয়েছেন মার্নাস ল্যাবুশেন ও ক্যামেরন গ্রিন, যিনি ১৬ মাস পর টেস্টে ফিরছেন। নতুন মুখ হিসেবে পেস বোলিং অলরাউন্ডার বো ওয়েবস্টার রয়েছেন একাদশে। দলের একমাত্র স্পিনার হিসেবে খেলছেন নাথান লায়ন।
ফাইনালের লড়াই হতে যাচ্ছে দুই ভিন্ন ঘরানার দলের। একদিকে অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞতা ও ধারাবাহিকতা, অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন যুগের আত্মবিশ্বাস। কে জিতবে লর্ডসের ট্রফি? তা জানার জন্য অপেক্ষা আর মাত্র কয়েকদিন।
অস্ট্রেলিয়ার একাদশ:
উসমান খাজা, মার্নাস ল্যাবুশেন, ক্যামেরন গ্রিন, স্টিভেন স্মিথ, ট্র্যাভিস হেড, বো ওয়েবস্টার, অ্যালেক্স ক্যারি (উইকেটরক্ষক), প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), মিচেল স্টার্ক, নাথান লায়ন ও জশ হ্যাজলউড।
দক্ষিণ আফ্রিকার একাদশ:
এইডেন মার্করাম, রায়ান রিকেলটন, উইয়ান মুলডার, টেম্বা বাভুমা (অধিনায়ক), ট্রিস্টান স্টাবস, ডেভিড বেডিংহাম, কাইল ভেরেইনে (উইকেটরক্ষক), মার্কো ইয়ানসেন, কেশব মহারাজ, কাগিসু রাবাদা ও লুঙ্গি এনগিদি।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মাদ্রাসা ছাত্র হত্যার ঘটনায় দুই থানায় পৃথক মামলা, বাদী চিনেনা আসামিদের
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নারায়ণগঞ্জে মাদরাসা ছাত্র মো. ইব্রাহিম (১৩) হত্যার ঘটনায় দুই থানায় পৃথক পৃথক মামলা হয়েছে। নিহতের বাবা-মাকে মৃত দেখিয়ে কথিত মামা বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এর কিছুদিন পর একই ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী মো. হানিফ বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় মামলা দায়ের করেন। এ নিয়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে নিহত ইব্রাহিমের বাবা হানিফ মিয়া ও মা সখিনা বিবি কে মৃত দেখিয়ে তার মামা পরিচয়ে মো. সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি গত ২২ আগস্ট ফতুল্লা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, মানবজমিন পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ও বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির জেলা প্রতিনিধি বিল্লাল হোসেন রবিন, আইনজীবী কামাল হোসেন সহ ৬১ জন নামীয় আসামি করা হয়। এছাড়া আরও অজ্ঞাত ১৫০-১৬০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকাল আনুমানিক ৩ টার দিকে কোটা বিরোধী দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ছাত্র-জনতা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রোডের পাসপোর্ট অফিসের বিপরীত পাশে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে সমবেত হলে আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র সহ বিভিন্ন দেশিয় অস্ত্র নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাথারি গুলি করে ও ককটেল বিস্ফোরণ করে।
এ সময় আমি ও আমার ভাগিনা মোহাম্মদ ইব্রাহিম (১৩) ভয়ে একটি দোকানের আড়ালে আশ্রয় নেই। হঠাৎ আমার ভাগিনা ইব্রাহিমের মাতায় ও বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরের দিন ২০ জুলাই মাগরিবের নামাজের পূর্বে মাতুআইল কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী ও নিহত ইব্রাহিমের কথিত মামা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নিহত ইব্রাহিম আমার বাড়ির পাশে কাজ করতো ও মাদ্রসায় পড়াশোনা করতো। তার বাবা-মায়ের সাথে তার সম্পর্ক নেই। আমি একটি সাইডের কন্ট্রাকটারি করি।
সম্প্রতি সে আমার সাথেও ওস্তাকারের সহকারী হিসেবে কাজ করেছে। সেই কাজের সুবাদে সে আমাকে মামা বলে ডাকতো। সে আমার আপন ভাগিনা না। তার হত্যার ঘটনার পর রাজনীতিক মামলা হয়েছে। যারা আন্দোলন করেছে তারা মামলার সবকিছু করেছে, আমি শুধু স্বাক্ষর দিয়েছি। আসামিদের কাউকে আমি চিনি না।
মামলার এজাহারে ইব্রাহিমের বাবা-মাকে মৃত উল্লেখ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইব্রাহিমের বাবা-মায়ের সংসার অনেক আগে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কিন্তু মামলায় কেন মৃত লেখেছে তা জানা নেই। তাছাড়া এই মামলায় স্বাক্ষর করা ছাড়া আমি আর কিছু জানিনা। মামলার কাগজে কি লিখছে তা আমি জানিনা।
এই ঘটনার নিহত ইব্রাহিমের বাবা সোনারগাঁ থানায় আরেকটি মামলা করেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা কী আমারটা আগে হয়েছে নাকি পরে হয়েছে। আপনে ফোন রাখেন ভাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় সোনারগাঁ থানায়ও মামলা হয়েছে। এক ঘটনায় দুই থানায় মামলা হতে পারেনা। এ কারণে উর্ধ্বতনদের নির্দেশে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে একই ঘটনায় নিহত মো. ইব্রাহিম (১৩) এর বাবা মো. হানিফ (৬৫) বাদী হয়ে গত ২৪ আগস্ট সোনারগাঁ থানায় আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ইব্রাহিমের নিহত হওয়ার স্থান ভিন্ন দেখানো হয়েছে।
এই মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে পন্ড করার জন্য সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর ব্রীজের পূর্ব ঢাল হতে ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে অস্ত্র নিয়ে হামলা করে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী হামলা চালিয়ে এলোপাথারি গুলি ছুড়ে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।
বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৩ টার দিকে ইব্রাহিমের বাম চোখের ভেতরে দিয়ে মাথায় পেছনের অংশ দিয়ে গুলি বের হয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে নেওয়া হলে তার মৃত্যু হয়।
মামলার আসামি করা হয়েছে- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ সহ ২৩৫ জন নামীয় আসামি এবং অজ্ঞাত আরও ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে সোনারগাঁ থানার মামলার বাদী ও নিহত ইব্রাহিমের বাবা মো. হানিফ কে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মফিজুর রহমান বলেন, এই মামলা আমাদের এখানে ফাইনাল হবে। এই ঘটনার প্রকৃত ঘটনাস্থল যেখানে সেই থানায় মামলা হবে।