‘আগে কয়েকটা ঘর ভাঙছিল। চামড়া কিননের টেহা-পয়সা লুট কইরা লইয়া গেছিল। আইজ দুপুরে দল বাইন্দা আইয়া বাকি সবার ঘরবাড়ি ভাইঙা গুঁড়াইয়া দিছে। গাছপালও কাইট্টা ফালাইয়া দিয়া গেছে। আর কোনো কিছুই নাই। তারা যা করছে, তা মাইনষের সাথে মাইনষে করে না। আমরা মুচারজাত দেইখ্খা কোনো বিচার পাই না। আমরার কী দোষ, বাবু, আপনিই কইন, আমরার জন্মই কি দোষের? এই ২২ জন মানুষ লইয়া অহন আমরা কই থাকবাম?’

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কথাগুলো বলছিলেন নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার জালশুকা এলাকার ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ অনীল রবিদাস। তাঁর অভিযোগ, পাশের ধারা গ্রামের সিরাজ মিয়া লোকজন নিয়ে দফায় দফায় তাঁর বাড়িতে হামলা করে এসব ঘটনা ঘটিয়েছেন। এখন তিনি কোথায় থাকবেন, কী খাবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

উপজেলা প্রশাসন, থানা-পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার বিশকাকুনি ইউনিয়নের জালশুকা বাজারসংলগ্ন রেললাইনের পাশের একটি খাসজমিতে বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসছে মুচি সম্প্রদায়ের পাঁচটি পরিবার। নারী-শিশু মিলে পরিবারগুলোর সদস্যসংখ্যা বর্তমানে ২২। সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী খলিশাউর ইউনিয়নের ধারা গ্রামের মৃত জানু মিয়ার ছেলে সিরাজ মিয়া ও বকুল মিয়া ওই জমি তাঁদের ব্যক্তিমালিকানাধীন বলে দাবি করেন এবং পরিবারগুলোকে উঠে যেতে বলেন। এ অবস্থায় পরিবারের পক্ষ থেকে সুনীল রবিদাস জেলা প্রশাসকের কাছে একটি অভিযোগ করেন। এর জেরে সিরাজ মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথমে গত বৃহস্পতিবার সুনীল রবিদাসের বাড়িতে হামলা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মারধর করেন। সুনীলের অভিযোগ, হামলাকারীরা কোরবানির চামড়া কেনার জন্য ধার করে আনা ও গচ্ছিত কিছু টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। এরপর ঈদের পরদিন পুনরায় হামলা চালিয়ে তিনটি ঘর ভাঙচুর করা হয়। আবার গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সেখানে হামলা চালিয়ে অবশিষ্ট দুটি ঘরও গুঁড়িয়ে দেওয়াসহ পরিবারের সদস্যদের মারধর করে উচ্ছেদ করা হয়। ফলে পরিবারের নারী, শিশুসহ ২২ জন সদস্য এখন আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন।

গতকাল বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, জালশুকা বাজারসংলগ্ন রেললাইনের পাশে একটুকরা বিধ্বস্ত জমি। গুঁড়িয়ে দেওয়া ঘরের মোচড়ানো টিন পড়ে আছে। হাঁড়িতে রান্না করা ভাত-তরকারি ছিটানো। ভাঙা চৌকি, খাটের পাশে বিছানার তোশক, কাপড়চোপড় মাটিতে মিশে আছে। পাশে খেতে জমে থাকা পানিতে আসবাব পড়ে আছে। এর পাশে মাথায় হাত দিয়ে কান্না করছিলেন বৃদ্ধা চম্পা রবিদাস। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা অনীল রবিদাস বিবর্ণ মুখে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। পরিচয় দিয়ে কারা এ রকম করল, জিজ্ঞেস করলে তিনি কেঁদে ওঠেন। জানান, এই জায়গায় তাঁরা বহু বছর ধরে বসবাস করছেন। সম্প্রতি সিরাজ মিয়া জায়গাটি দখল করে নিতেই এই তাণ্ডব চালিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বাবু, এখন আমরা কই যাইয়াম, কই থাকবাম, কই বিচার দিয়াম? আমরার কোনোখানে জায়গা নাই। দুপুরে সেনাবাহিনী আইয়া দেইখ্খা গেছে। ভূমি অফিস থাইক্কা নায়েব সাহেবও আইছিলেন। বলছে, ব্যবস্থা একটা হইব। কিন্তু যারা আমরারে এই অবস্থা করল, তাদের কী বিচার হইব?’

হামলা চালিয়ে পাঁচটি ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়াসহ পরিবারের সদস্যদের মারধর করে উচ্ছেদ করায় নারী, শিশুসহ ২২ জন সদস্য এখন আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ল রব দ স পর ব র র আমর র সদস য র সদস

এছাড়াও পড়ুন:

নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট, তরুণেরা কেন আগাম ভোট দিচ্ছেন

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচন সামনে রেখে ৭ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বাদে অন্য কোনো নির্বাচনে নিউইয়র্কে এটাই সর্বোচ্চ আগাম ভোট পড়ার ঘটনা। আগামীকাল ৪ নভেম্বর নিউইয়র্ক নগরে মেয়র পদে ভোট গ্রহণ হতে যাচ্ছে।

গতকাল রোববার ছিল আগাম ভোট দেওয়ার শেষ দিন। এদিন প্রায় ১ লাখ ৫১ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। নগরের নির্বাচন কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, আগাম ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকে এটি এক দিনে সর্বোচ্চ ভোট পড়ার ঘটনা। তা ছাড়া এদিন ৩৫ বছরের কম বয়সী ভোটারদের উপস্থিতিও বেশি ছিল। এর মধ্য দিয়ে আগাম ভোট দেওয়া ভোটারদের গড় বয়সও কমে এসেছে। গড় বয়স ৫০ বছরে নেমে এসেছে।

আগের সপ্তাহের প্রথম দিকে কম বয়সী ভোটারের উপস্থিতি কম ছিল। ওই সপ্তাহের রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৮০ হাজার নিউইয়র্কবাসী ভোট দিয়েছিলেন। তবে গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত এই সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ৩৫ বছরের কম বয়সী ১ লাখের বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন, যার মধ্যে শুধু গতকাল রোববারই এ বয়সী ভোটারের সংখ্যা ছিল ৪৫ হাজারের বেশি।

আরও পড়ুনমামদানিকে বারাক ওবামার ফোন, করলেন নির্বাচনী প্রচারের প্রশংসা০২ নভেম্বর ২০২৫

নিউইয়র্কে চলতি বছর মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনের তুলনায় চারগুণের বেশি। এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমো ও কার্টিস স্লিওয়ার চেয়ে এগিয়ে আছেন।

নিউইয়র্কে চলতি বছর মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনের তুলনায় চারগুণের বেশি। এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমো ও কার্টিস স্লিওয়ার চেয়ে এগিয়ে আছেন।

নিউইয়র্কে সর্বপ্রথম মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয় ২০২১ সালে। ওই নির্বাচনে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। তবে ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা যায়নি। ওই নির্বাচনে এরিক অ্যাডামস তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্লিওয়াকে দ্বিগুণের বেশি ভোটে হারিয়েছিলেন।

অবশ্য চলতি বছর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের সংখ্যা গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগাম ভোটকে ছাড়াতে পারেনি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১০ লাখ মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তুলনায় মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের বয়স তুলনামূলক কম। এটা অবাক করা বিষয়। কারণ, সাধারণত যারা আগাম ভোট দেন তাঁদের গড় বয়স মোট নিবন্ধিতদের গড় বয়সের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে।

আরও পড়ুনব্যালটে মামদানি, অদৃশ্য ‘প্রার্থী’ ট্রাম্প১ ঘণ্টা আগে

চলতি বছরের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের তুলনায়ও অনেক বেশি। ওই সময় নিউইয়র্কে প্রায় ৪ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। সে সময় আগাম ভোট দেওয়া ভোটারের অধিকাংশের বয়স ছিল ৫৫ বছরের বেশি।

চলতি বছরের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের তুলনায়ও অনেক বেশি। ওই সময় নিউইয়র্কে প্রায় ৪ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। সে সময় আগাম ভোট দেওয়া ভোটারদের অধিকাংশের বয়স ছিল ৫৫ বছরের বেশি।

গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের গড় বয়স ছিল ৫১ বছর। তবে এবার মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটারদের গড় বয়স আরও কমে ৫০ বছরে নেমেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ