নিখোঁজের পর মিলল ব্যবসায়ীর ৬ টুকরো লাশ
Published: 13th, June 2025 GMT
নিখোঁজের এক সপ্তাহ পর রাজধানীর সবুজবাগের বাইকদিয়া এলাকা থেকে জাকির হোসেন (৫৫) নামে এক ব্যবসায়ীর ছয় টুকরো লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার মাটিচাপা অবস্থায় দেহের খণ্ডগুলো পাওয়া যায়। এর আগে হত্যায় সন্দেহভাজন আজহারুল ইসলামকে গত বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তার দেওয়া তথ্যে মেলে মৃতদেহের সন্ধান।
সবুজবাগ থানার ওসি ইয়াছিন আলী সমকালকে বলেন, হত্যার কারণ এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে জাকিরের কাছে কোরবানির গরু কেনার জন্য আড়াই লাখ টাকা ছিল। সেই তথ্য জানত আজহারুল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সেই টাকা লুটের জন্য হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। এতে গ্রেপ্তার ব্যক্তি ছাড়া আরও চার-পাঁচজন জড়িত ছিল। তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কাজ করছে পুলিশ। এর বাইরে অন্য কোনো কারণে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে কিনা, তাও জানার চেষ্টা চলছে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, সবুজবাগের মানিকনগর এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন জাকির। তিনি প্লাস্টিকের বোতলের ব্যবসা করতেন। রংমিস্ত্রি আজহারুলের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। ৪ জুন রাতে মোবাইলে ফোন করে তাঁকে বাসায় ডেকে নেয় আজহারুল। সিসিটিভি ফুটেজে জাকিরকে ওই বাসায় যেতে দেখা গেছে। এর পর থেকে তাঁর খোঁজ মিলছিল না। ৫ জুন সবুজবাগ থানার সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন স্বজন। তবে পুলিশও তাঁর অবস্থান সম্পর্কে কিছু জানতে পারেনি। পরে কিছু তথ্যের ভিত্তিতে ১০ জুন অপহরণের মামলা করেন জাকিরের স্ত্রী রেখা বেগম। তাঁর সন্দেহের সূত্র ধরে তদন্তে এগিয়ে যায় পুলিশ। আজহারুলকে আটকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। জানা যায়, নিখোঁজ হওয়ার রাতেই জাকিরকে হত্যা করা হয়।
সবুজবাগ থানা পুলিশ জানায়, জাকিরের মাথায় প্রথমে রড দিয়ে আঘাত করা হয়। আহত অবস্থায় লুটিয়ে পড়লে তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এর পর মৃতদেহের দুই হাত, দুই পা ও মাথা বিচ্ছিন্ন করা হয়। শেষে মৃতদেহের ছয়টি খণ্ড বাইকদিয়ার টেকপাড়া এলাকার জঙ্গলে মাটিচাপা দেওয়া হয়। মৃতদেহের টুকরো উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
জাকিরের ভাই শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, আজহারুল ও তার সহযোগীরা এ ঘটনায় জড়িত। তারা আগে থেকেই এ ব্যাপারে সন্দেহ করলেও পুলিশ সেই সময় উদ্যোগ নেয়নি। জড়িত একজনকে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কল্পনা চাকমার অপহরণের বিচার চেয়ে ফেরার পথে হামলার অভিযোগ, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির নিন্দা
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমার অপহরণকারীদের বিচার চেয়ে আয়োজিত আলোচনা সভা শেষে ফেরার পথে কয়েকজনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে তারা।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, চিকিৎসক হারুন-অর-রশীদ, সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা ও নারীনেত্রী সীমা দত্ত।
বিবৃতিতে বলা হয়, কল্পনা চাকমার অপহরণের ২৯ বছর উপলক্ষে রাঙামাটি জেলা শহরের আশিকা কনভেনশন হলে বৃহস্পতিবার সকালে আলোচনা সভার আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন। সেখানে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মার্জিয়া প্রভা এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের শিক্ষক অলিউর রহমান সান।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির অভিযোগ, আলোচনা শেষে চট্টগ্রামে ফেরার পথে তাঁদের ওপর হামলা করে কতিপয় দুর্বৃত্ত। এ হামলার আগে আলোচনা সভাস্থলে আসা বিভিন্ন এলাকার বাসগুলোর বাঙালি চালকদের তুলে নিয়ে নির্যাতন করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ হামলা ও নির্যাতনের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই অভ্যুত্থানের মূল স্লোগান ছিল একটি বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জবাবদিহিমূলক বাংলাদেশ। কিন্তু রাঙামাটির এ ঘটনা প্রমাণ করে, সেই স্বপ্ন আজও অধরা।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি মনে করে, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক অধিকার ও মানবাধিকারের প্রশ্নে রাষ্ট্রের উদাসীনতা ও আক্রমণাত্মক মনোভাব বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য শহীদদের আত্মদানের সঙ্গে বেইমানি ছাড়া আর কিছুই নয়।
কিছুদিন আগে ঢাকায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের মিছিলে হামলার ঘটনার কোনো কার্যকর বিচার এখনো হয়নি উল্লেখ করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলেছে, প্রতিনিয়ত নানা স্থানে নারীসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ওপর পরিকল্পিত সংঘবদ্ধ আক্রমণ চলছে। এসব থামাতে রাষ্ট্রের উদাসীনতা অগণতান্ত্রিক শক্তির অপতৎপরতা বৃদ্ধিতে শক্তি জোগাচ্ছে।
কল্পনা চাকমার অপহরণসহ সব খুন-গুমের বিচার দাবি করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। একই সঙ্গে দেশের সব জনগোষ্ঠীর নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে সবাইকে সচেতনভাবে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ১১ জুন মধ্যরাতে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার লাইল্যাঘোনায় নিজ বাড়ি থেকে অপহৃত হন কল্পনা চাকমা। পরদিন কল্পনার বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা বাদী হয়ে বাঘাইছড়ি থানায় অপহরণের মামলা করেন।