ড. ইউনূসকে হারমনি অ্যাওয়ার্ড দিলেন রাজা চার্লস
Published: 13th, June 2025 GMT
ব্রিটেনের মর্যাদাপূর্ণ ‘হারমনি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ গ্রহণ করলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বৃহস্পতিবার লন্ডনে সেন্ট জেমস প্যালেসে অনুষ্ঠানে রাজা তৃতীয় চার্লস এ পুরস্কার তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টার হাতে। বিশ্বব্যাপী শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং পরিবেশ-প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আজীবন অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
পুরস্কার গ্রহণের আগে ড.
প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, প্রধান উপদেষ্টা ও রাজা চার্লসের মধ্যে বৈঠকটি ছিল একেবারে ব্যক্তিগত। এতে বাংলাদেশের চলমান গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা তাঁর সরকারের নেওয়া সংস্কার কার্যক্রম সম্পর্কে রাজা চার্লসকে অবহিত করেছেন।
শফিকুল আলম বলেন, ‘বেলা ১১টা ২০ মিনিট থেকে প্রায় আধ ঘণ্টার বৈঠক অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল। রাজা চার্লস বহু দিন ধরে প্রফেসর ইউনূসকে চেনেন। নানা বিষয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এই পুরো সফরের মধ্যে আমি বলব, এটি ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।’
একান্ত সাক্ষাতের পর রাজা ও রানীর স্বাক্ষরযুক্ত একটি ছবি উপহার হিসেবে অধ্যাপক ইউনূসকে দেওয়া হয়। এটি প্রধান উপদেষ্টার জন্য বড় সম্মানের বিষয় বলে জানান প্রেস সচিব। বাকিংহাম প্যালেসে অধ্যাপক ইউনূসকে ব্যক্তিগত সাক্ষাতের জন্য স্বাগত জানান রাজা চার্লস।
নিয়মিত কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সাক্ষাতের পাশাপাশি রাজা এমন ব্যক্তিদের সাক্ষাৎ দেন, যারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে বা ‘অডিয়েন্স’-এর মাধ্যমে রাজা কোনো ব্যক্তি ও তাঁর কাজের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক অধ্যাপক ইউনূসকে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার পাওয়ার জন্য আগাম অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। বর্তমানে লন্ডনে থাকা সারা কুক বলেছেন, তিনি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফরে সন্তুষ্ট। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, তাঁর (অধ্যাপক ইউনূস) বিস্তৃত বৈঠকের কর্মসূচি গণতন্ত্র, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জলবায়ু নিয়ে কাজ, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন বিষয়ে তাদের অংশীদারিত্বের প্রতিশ্রুতি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?