ইরানজুড়ে আজ শুক্রবার পাঁচটি ধাপে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। অজ্ঞাতনামা একজন ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা টাইমস অব ইসরায়েল পত্রিকাকে এ কথা জানিয়েছেন।

এই কর্মকর্তা বলেন, শত শত হামলা চালানো হয়েছে এবং অন্তত আটটি স্থানে (শহরে) লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে পাওয়া বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ইরানের ছয়টি স্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে।

আর ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, গত কয়েক ঘণ্টায় অন্তত দুটি ধাপে হামলা চালানো হয়। তবে নিশ্চিত না হলেও এখন তৃতীয় দফার হামলা চলমান থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যেসব স্থানে হামলার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে, সেসব হলো রাজধানী তেহরান ও এর আশপাশের সামরিক স্থাপনা; তেহরানের দক্ষিণে নাতানজ শহর, যেখানে ইরানের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র অবস্থিত; তেহরানের উত্তর-পশ্চিমে তাবরিজ শহর, যেখানে একটি পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র ও দুটি সামরিক ঘাঁটির কাছে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে; তেহরানের দক্ষিণে ইস্পাহান শহর; তেহরানের দক্ষিণ-পশ্চিমে আরাক শহর ও পশ্চিমে কেরমানশাহ শহর।

ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, তেহরানজুড়ে ৬ থেকে ৯টি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। হামলা হয়েছে আবাসিক ভবনেও।

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের প্রাণঘাতী এসব হামলার কঠোর জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে তেহরান।

ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফের মুখপাত্র আবুলফজল শেখারচি বলেন, ‘জায়নবাদী এই হামলার জবাব অবশ্যই ইরানি সশস্ত্র বাহিনী দেবে।’

মুখপাত্র আরও বলেন, ‘ইসরায়েলকে তার হামলার চড়া মূল্য দিতে হবে এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর কঠোর জবাবের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’

আরও পড়ুনইসরায়েলকে হামলার চড়া মূল্য দিতে হবে: ইরান১ ঘণ্টা আগে

এদিকে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, ‘ইসরায়েলের হামলার জবাব হবে কঠোর ও ফলাফল নির্ণায়ক।’

হামলা কি অত্যাসন্ন—জানতে চাইলে একই সূত্র বলেছে, ইরানের প্রতিশোধ কেমন হবে, তার বিস্তারিত নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা চলছে।

হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি ছাড়াও ২৫ বছর ধরে দেশটির আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধানের দায়িত্বে থাকা ফারেদুন আব্বাসি নিহত হয়েছেন।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তেহরান থেকে প্রায় ২২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে নাতানজ শহরে অবস্থিত ইরানের প্রধান পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে তাঁর দেশ। ইরানের যেসব বিজ্ঞানী দেশটির জন্য (পারমাণবিক) বোমা তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়। তিনি আরও বলেন, ‘যত দিন প্রয়োজন, তত দিন এমন হামলা চলবে।’

আরও পড়ুনইসরায়েলের হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের প্রধান হোসেইন সালামি নিহত২ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনইসরায়েলের হামলা: নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করল ইরান১ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র

এছাড়াও পড়ুন:

‘আরও দ্রুত মুছে ফেলব’, ইরানকে আবার হামলার হুমকি দিলেন ট্রাম্প

পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরানকে আবারও হামলার হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ইরানের পারমাণবিক সম্ভাবনাকে এত দ্রুত মুছে ফেলার হুমকি দিয়েছেন যে কেউ আঙুল তোলার আগে সেটা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

গতকাল সোমবার স্কটল্যান্ডে এক সংবাদ সম্মেলনে এ হুমকি দেন ট্রাম্প। সম্প্রতি তেহরান বলেছে, তারা বেসামরিক উদ্দেশ্যে পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।

ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি নিয়ে এ বছর তেহরানের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের আলোচনা চলছিল। জুনে ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর ওই আলোচনা ভেস্তে যায়।

গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে একটি আলোচনার আগে দিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জোর দিয়ে বলেছিলেন, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার আছে।

এ প্রসঙ্গে স্কটল্যান্ডে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ইরান খুব খারাপ সংকেত দিচ্ছে, খুবই বাজে বার্তা পাঠাচ্ছে।

ট্রাম্পের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও উপস্থিত ছিলেন।

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘তাদের (ইরান) এটা করা উচিত নয়। আমরা তাদের পারমাণবিক সম্ভাবনাকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি। তারা আবার এটা শুরু করতে পারে। যদি তারা করে, আপনি আঙুল তোলার আগেই আমরা সেটা নিশ্চিহ্ন করে দেব। আমরা এটা আনন্দের সঙ্গেই করব—খোলাখুলিভাবে ও নির্দ্বিধায়।’

গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে একটি আলোচনার আগে দিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জোর দিয়ে বলেছিলেন, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার আছে। এ আলোচনাকে ইরানি কর্মকর্তারা ‘গুরুত্বপূর্ণ, খোলামেলা ও বিস্তারিত’ বলে বর্ণনা করেছেন।

আমি এখান থেকে ‘স্বৈরশাসক’ খামেনিকে স্পষ্ট করে বার্তা দিতে চাই, আপনি যদি ইসরায়েলকে হুমকি দেওয়া অব্যাহত রাখেন, আমাদের লম্বা হাত আরও শক্তিশালী হয়ে আবারও তেহরান অবধি পৌঁছে যাবে। এবার ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাছেও পৌঁছে যাবে।ইসরায়েল কাৎজ, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী

গত জুনে ইরানের তিনটি বড় পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর এটা ছিল পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে তেহরানের প্রথম বড় কোনো কূটনৈতিক আলোচনা। তবে আলোচনা থেকে তেমন কোনো অগ্রগতি বা সাফল্যের ঘোষণা আসেনি।

ট্রাম্পের গতকালের বক্তব্যের পর আরাগচি বলেন, ইরান কখনোই হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো ভাষায় সাড়া দেবে না। তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, চিকিৎসা ও বেসামরিক কারণে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রয়োজন। যদি ইরান আবারও হামলার শিকার হয়, তাহলে আরও দৃঢ়ভাবে তার প্রতিক্রিয়া জানাতে তেহরান দ্বিধা করবে না।

বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের ওপর ইসরায়েলের আবার যেকোনো ধরনের হামলা শুরু করার জন্য কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

গত সপ্তাহে আল–জাজিরার সঙ্গে কথা বলার সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও বলেছিলেন, ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি ত্যাগ করবে না। তবে আলোচনার দরজা খোলা রাখবে। ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাতের পর যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে, সেটি স্থায়ী হওয়া নিয়ে তিনি খুব বেশি আশাবাদী নন বলেও জানান তিনি।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা ইরানে আবারও হামলা শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছেন। এর মধ্যে দেশটির নেতৃত্বকে সরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে হামলার পরিকল্পনাও রয়েছে।

আরও পড়ুনইসরায়েল কি ইরানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে২৫ জুলাই ২০২৫

গত রোববার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে একটি বার্তা পাঠাতে চান। তাঁর বরাত দিয়ে ইসরায়েলের একটি পত্রিকায় বলা হয়, ‘আমি এখান থেকে “স্বৈরশাসক” খামেনিকে স্পষ্ট করে একটি বার্তা দিতে চাই, আপনি যদি ইসরায়েলকে হুমকি দেওয়া অব্যাহত রাখেন, আমাদের লম্বা হাত আরও শক্তিশালী হয়ে আবারও তেহরান অবধি পৌঁছে যাবে। এবার ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাছেও পৌঁছে যাবে।’

বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের ওপর ইসরায়েলের আবার যেকোনো ধরনের হামলা শুরু করার জন্য কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

আরও পড়ুনখামেনিকে হত্যার হুমকি দিলেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী: আনাদোলু২৮ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘আরও দ্রুত মুছে ফেলব’, ইরানকে আবার হামলার হুমকি দিলেন ট্রাম্প