ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রামমোহন নায়ডু জানিয়েছেন, দেশটির বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরো আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান ভেঙে পড়ার ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক প্রটোকল মেনেই এ তদন্ত হবে বলে জানানো হয়েছে।

নিজের এক্স হ্যান্ডেলে রামমোহন নায়ডু জানিয়েছেন, ‌‘এছাড়া সরকার একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটিও গঠন করেছে যেখানে বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। এই কমিটির কাজ হবে বিমান পরিবহন খাতের সুরক্ষা আরও কঠোর করা এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, তার দিকেও নজর দেওয়া।’

শুক্রবার সকালেই ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে নমুনা সংগ্রহ শুরু করেছেন। ভারতের নিজস্ব তদন্ত ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পক্ষে ইতিমধ্যেই একটি বিশেষজ্ঞ দল ভারতে রওনা হয়েছে। তারা ভারতের তদন্তকে সহায়তা করার জন্য যাচ্ছেন।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার জানিয়েছেন, তার দেশ থেকেও একটি বিশেষজ্ঞ দল গুজরাট রওনা হয়েছে তদন্তে সহায়তা করার জন্য।

 
বৃহস্পতিবার দুপুরে আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী বোয়িংয়ের একটি ড্রিমলাইনার বিমান উড্ডয়নের পরপরই বিধ্বস্ত হয়। উড়োজাহাজের পাইলট-ক্রুসহ ২৪১ আরোহী নিহত হন। আর যে ভবনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয় তা স্থানীয় বিজে মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের একটি হোস্টেল। ওই সময় হোস্টেলের ক্যান্টিনে অনেকে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, এই দুর্ঘটনায় অন্তত ২৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে পরিষ্কার, হাসপাতাল এলাকায়ই মারা গেছে অর্ধশতাধিক। হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে। 

গুজরাটের উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা বিধি চৌধুরী রয়টার্সকে বলেন, ‘দুর্ঘটনায় অন্তত ২৯৪ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কিছু শিক্ষার্থী রয়েছেন, যারা মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে ছিলেন।’ 

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের আহমেদাবাদ থেকে ২৪২ আরোহী নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি যাত্রা শুরু করেছিল। আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের গ্যাটউইকের উদ্দেশে উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে আবাসিক এলাকায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এ সময় সৃষ্টি হয় বিশাল আগুনের গোলক। বিমানে ২৩২ যাত্রী ও ১০ ক্রু ছিলেন। স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বিমানের ২৪১ আরোহী নিহত হলেও বিস্ময়করভাবে বেঁচে গেছেন একজন। জীবিত উদ্ধার হওয়া ওই যাত্রীকে উদ্ধারের পর হাঁটাচলা করতেও দেখা যায়। 

আহমেদাবাদের পুলিশ কমিশনার জি এস মালিক বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় স্থানীয় কয়েক বাসিন্দাও মারা গিয়ে থাকতে পারেন। তবে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা এখনও স্পষ্ট জানা যায়নি। বিমান দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শোক জানিয়েছেন।

বিধ্বস্ত বিমানে গুজরাটের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানি ছিলেন বলে স্থানীয় এক বিজেপি নেতা জানিয়েছেন। পুলিশ বলছে, রুপানি নিহত হয়েছেন। দ্য হিন্দু অনলাইন জানায়, এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ বিমানে ১৬৯ ভারতীয় ও ৫৩ ব্রিটিশ ছিলেন। এ ছাড়া সাত পর্তুগিজ ও এক কানাডার নাগরিক ছিলেন। আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর বিমানটি আবাসিক এলাকা মেঘানিনগরের কাছে ধরপুরে বিধ্বস্ত হয়। তবে কী কারণে এটি বিধ্বস্ত হয়েছে, তা জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। বিমান ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার ২৪ জানায়, তারা বিমানটি থেকে সর্বশেষ সংকেত পেয়েছে ৬২৫ ফুট উঁচুতে থাকা অবস্থায়। এটা উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এ উচ্চতায় পৌঁছায়।

ফ্লাইট এআই-১৭১ বিধ্বস্ত হওয়ার একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এসব ভিডিওতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের তৈরি বিমানটি উড্ডয়নের পর ওপরের দিকে না গিয়ে ক্রমেই নিচে নামতে থাকে। দূর থেকে অনুমান করা যাচ্ছিল, চালক এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। কিছুক্ষণ পরই বিমানটি আবাসিক এলাকায় আছড়ে পড়ে।  

এনডিটিভি জানায়, বিমানটি দূরের যাত্রার উদ্দেশে রওনা করায় এতে পরিপূর্ণ জ্বালানি ছিল। বিধ্বস্ত হওয়ার পর বিশাল আগুনের গোলক তৈরি হয়। বিধ্বস্তের পরপরই দুই ডজনের বেশি অ্যাম্বুলেন্স এসে ঘটনাস্থলে হাজির হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে ভবনের আশপাশে বিমানের ধ্বংসাবশেষ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
ভারতের ইতিহাসে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা এটি। বিমানের প্রধান পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন সুমিত সাবহারওয়াল ও সহকারী পাইলট ছিলেন ক্লাইভ কুন্ডার। বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ জানতে বিমানের ‘ব্ল্যাক বক্স’-এর দিকে তাকিয়ে আছেন তদন্তকারীরা। ভারতের গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, বিধ্বস্ত হওয়ার আগে বিমানের পাইলট এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে (এটিসি) বিপদ বার্তা বা ‘মে ডে কল’ পাঠিয়েছিলেন। ফ্লাইটরাডার ২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, বিপদবার্তা পেয়ে এটিসি যোগাযোগেরও চেষ্টা করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যোগাযোগ করা যায়নি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র তদন ত ব ম ন দ র ঘটন আহম দ ব দ দ র ঘটন য় ব ম নট য ক তর প ইলট তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানে হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ইসরায়েলের 

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা ইরানে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা অব্যাহত রেখেছে। টেলিগ্রামে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে আইডিএফ বলেছে, ইরানে ইসরায়েলের জন্য হুমকিস্বরূপ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাচ্ছে দেশটির বিমান বাহিনী। তাদের উদ্দেশ্য, ইসরায়েলের জন্য সবরকম হুমকি নির্মূল করা।

এর আগে শুক্রবার রাতে ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরায়েল প্রথমে হামলা চালায়। ওই হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনী প্রধান ও রেভ্যুলেশনারি গার্ড প্রধানসহ বেশ কয়েকজন সামরিক কমান্ডার ও অন্তত ছয় জন পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ইরান।

এরপর ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলার জবাবে রাতে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ভোর হওয়ার ঠিক আগে ইসরায়েলে বেজে ওঠে সাইরেন। এর ফলে ইসরায়েলের লাখ লাখ মানুষ নিরাপদ আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ ৩’ নামের এ অভিযানে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা করা হয়। এতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। 

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে দেশটির জনগণকে আশ্রয়স্থল থেকে বেরিয়ে আসতে বলেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি পর্যালোচনার পর জনগণকে দেশের সব অঞ্চলে সুরক্ষিত এলাকা (আশ্রয়স্থল) থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। তবে আশ্রয়স্থলের কাছাকাছি অবস্থান করতে হবে।

ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে কাজ করছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ইসরায়েলিদের নিরাপদ এলাকায় চলে যেতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।  এএফপির খবর বলছে, শনিবার ভোরে ইরান নতুন করে ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, ইরান থেকে ছোড়া বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র তাঁরা শনাক্ত করেছে।

ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে রক্ষা পেতে ইসরায়েলের অনেক অঞ্চলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়। ইরান ইসরায়েলে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এ কথা জানিয়েছে।

এক্সে দেওয়া পোস্টে তারা লিখেছে, ‌‘ইরানের ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার বিষয়টি শনাক্ত হওয়ার পর-ই বিভিন্ন অঞ্চলের ওয়ার্নিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে।’ সেখানে আরও বলা হয়, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী হামলার উৎস শনাক্ত করছে। প্রয়োজন অনুযায়ী উৎসকে লক্ষ্য করে প্রতিরোধমূলক অভিযানে নামছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ