পর্যটকের মৃত্যু: ট্যুর এক্সপার্টের এডমিন বর্ষা গ্রেপ্তার
Published: 14th, June 2025 GMT
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় নারী পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনায় ভ্রমণভিত্তিক ফেসবুক গ্রুপ ‘ট্যুর এক্সপার্টের’ এডমিন বর্ষা ইসলাম বৃষ্টির বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।
শনিবার (১৪ জুন) নিহত স্মৃতি আক্তারের বাবা হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে আলীকদম থানায় মামলা করেন। পরে বর্ষা ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখানো হয় বলে নিশ্চিত করেন আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির্জা জহির উদ্দিন।
যে ধারায় মামলা করা হয়েছে, সেই ধারায় বলা আছে, ‘‘যদি কেউ অবহেলা বা অসাবধানতার কারণে কারো মৃত্যুর কারণ ঘটায়, তবে সেটি এই ধারায় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।’’
আরো পড়ুন:
দিনাজপুরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার দুই আসামি গ্রেপ্তার
কাছারি বাড়িতে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ২
গ্রেপ্তার বর্ষা ইসলাম যশোরের চৌগাছা থানার জগদীশপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আড়পাড়ার বাসিন্দা রবিউল ইসলামের মেয়ে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত বর্ষা ইসলাম বৃষ্টি তার ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে বিভিন্ন ট্যুরের আয়োজন করেন। তার ক্রিসতং-রুংরাং পাহাড় সামিট (৩০ তম) ইভেন্টে অংশ নিতে গিয়ে স্মৃতি আক্তার গত (৮ জুন) আলীকদমের উদ্দেশে রওনা হন। এরপর থেকে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে (১৩ জুন) আলীকদমের তৈন খালের মোড় থেকে স্মৃতি আক্তারের লাশ উদ্ধার করা হয়।
এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, বর্ষা ইসলাম স্থানীয় প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে মাত্র সিদ্ধার্থ তঞ্চঙ্গ্যা নামে একজন গাইড নিয়ে ৩৩ জনের ট্যুর আয়োজন করেন এবং তিনি পর্যটকদের আবহাওয়া সম্পর্কে জানাননি। তারা ৯ জুন দুর্গম রুংরাং-ক্রিসতং এলাকার উদ্দেশে রওয়ানা হন। ১০ জুন গাইডসহ ১২ জন খেমচং পাড়া থেকে আন্ধারমানিক ট্রেইলের উদ্দেশে চলে যায়।
বাকি ২২ জন, যার মধ্যে স্মৃতি আক্তারও ছিলেন; অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও গাইড ছাড়াই মো.
মামলার বাদী মো. হাবিবুর রহমান অভিযোগ করেন, ‘‘বর্ষা ইসলাম বৃষ্টির দায়িত্ব অবহেলা ও অদক্ষতার কারণে স্মৃতি আক্তারের মৃত্যু হয়েছে।’’
শুক্রবার (১৩ জুন) স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের জিজ্ঞেসাবাদে বর্ষা ইসলাম দাবি করেছেন, তিনি কেবল পাঁচ দিনের ট্যুরে ছিলেন। আর দুর্ঘটনা ঘটে তিন দিনের অন্য ট্যুরে, যার নেতৃত্বে ছিলেন নিখোঁজ কো-অপারেটর হাসান চৌধুরী।
এ বিষয়ে আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির্জা জহির উদ্দিন জানান, নারী পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনায় ভ্রমণভিত্তিক ফেসবুক গ্রুপ ‘ট্যুর এক্সপার্টের’ এডমিন বর্ষা ইসলাম বৃষ্টির বিরুদ্ধে নিহত স্মৃতি আক্তারের বাবা বাদী হয়ে আলীকদম থানায় মামলা মামলা করেছেন। অভিযুক্ত বর্ষা ইসলামকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাওছার বলেন, ‘‘পার্বত্য অঞ্চলে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ট্যুর অপারেটর এজেন্সিগুলোর আরো বেশি দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য ট্যুর অপারেটর ও গাইডদের সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী।’’
ঢাকা/চাইমং/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসল ম ব ষ ট র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
ইসলাম অনুসারে সন্তানের আধুনিক নাম
সন্তানের নাম দেওয়া একটি পবিত্র ও তাৎপর্যপূর্ণ দায়িত্ব। ইসলামে নামকরণ শুধু একটি সামাজিক রীতি নয়, বরং এটি সন্তানের পরিচয়, যা চরিত্র ও ভবিষ্যৎ জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
আধুনিক যুগে মুসলিম পরিবারগুলো সন্তানের নাম রাখার ক্ষেত্রে এমন নাম খুঁজছে, যা ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, অথচ সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক, সংক্ষিপ্ত ও শ্রুতিমধুর।
ফলে ইসলামের আলোকে মুসলিম সন্তানের নামকরণের গুরুত্ব, আধুনিক নামের প্রবণতা এবং কীভাবে ইসলামি ও আধুনিকতার সমন্বয় ঘটানো যায়, তা নিয়ে আলোচনার দাবি রাখে।
ইসলামে নামকরণের গুরুত্বইসলামে সন্তানের নামকরণ একটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক দায়িত্ব। রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক সন্তানের বেলায় পিতার দায়িত্ব হলো তাকে একটি সুন্দর নাম দেওয়া এবং তাকে ভালো শিক্ষা দেওয়া।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪,৯৪৯)
নাম শুধু একটি পরিচয় নয়, বরং এটি সন্তানের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ইসলামে নামের অর্থের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। রাসুল (সা.) নিজে কিছু নাম পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন, যদি সেগুলোর অর্থ ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বা অশোভন হতো। তিনি ‘হারব’ (যুদ্ধ) নামটি পরিবর্তন করে ‘হাসান’ (সুন্দর) রেখেছিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,১৯০)
এটি প্রমাণ করে যে নামের অর্থ সুন্দর, ইতিবাচক ও ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।
আরও পড়ুনদস্তরখানের নামে সুরার নাম০৪ মার্চ ২০২৫রাসুল (সা.) নিজে কিছু নাম পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন, যদি সেগুলোর অর্থ ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বা অশোভন হতো। তিনি ‘হারব’ (যুদ্ধ) নামটি পরিবর্তন করে ‘হাসান’ (সুন্দর) রেখেছিলেন।আধুনিক নামকরণের প্রবণতাআধুনিক যুগে মুসলিম সমাজে নামকরণের ক্ষেত্রে কিছু নতুন প্রবণতা লক্ষ করা যায়। মা–বাবা এখন এমন নাম পছন্দ করেন, যা সংক্ষিপ্ত, উচ্চারণে সহজ এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গ্রহণযোগ্য। যেমন ‘আয়ান’, ‘ইয়াসির’, ‘জায়ান’, ‘নুয়াইরা’, ‘আদিয়া’ ইত্যাদি নাম বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম সম্প্রদায়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই নামগুলোর অর্থও ভালো, যেমন ‘আয়ান’ অর্থ ‘ঐশী উপহার’ এবং ‘নুয়াইরা’ অর্থ ‘আলো’ বা ‘দীপ্তি’।
আধুনিক নামের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো প্রায়ই লিঙ্গ-নিরপেক্ষ। ‘রায়ান’, ‘ইমান’ বা ‘নূর’–এর মতো নাম ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্যই ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলা, আরবি, ফারসি ও উর্দু ভাষার শব্দের পাশাপাশি কিছু নাম স্থানীয় সংস্কৃতি থেকেও গৃহীত হচ্ছে, যা ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়।
ইসলামি ও আধুনিক নামের সমন্বয়ইসলামি নাম বলতে শুধু আরবি নাম বোঝায় না। ইসলাম যেকোনো ভাষার নাম গ্রহণ করতে উৎসাহিত করে, যতক্ষণ তা অর্থপূর্ণ ও ইতিবাচক। শায়েখ উসাইমিন (রহ.) বলেন, ‘নাম যেকোনো ভাষার হতে পারে, যদি তা শরিয়াহের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয় এবং অর্থে কোনো নেতিবাচকতা না থাকে।’ (ফাতাওয়া নূর আলা আদ-দারব, পৃষ্ঠা: ১২৫, দারুল ইফতা প্রকাশনী: ১৯৯৮)
আধুনিক নামকরণে এই নীতি মেনে চলা যায়। যেমন ‘তাহা’ (কোরআনের সুরার নাম), ‘ইলিয়াস’ (একজন নবীর নাম), ‘আমিনা’ (রাসুলের মায়ের নাম) ইত্যাদি নাম ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং আধুনিক পরিবেশেও গ্রহণযোগ্য।
নাম যেকোনো ভাষার হতে পারে, যদি তা শরিয়াহের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয় এবং অর্থে কোনো নেতিবাচকতা না থাকে।শায়েখ সালেহ উসাইমিন (রহ.), ফাতাওয়া নূর আলা আদ-দারবএ ছাড়া ‘জায়নাব’, ‘ফাতিমা’, ‘আলি’, ‘ওমর’ ইত্যাদি ঐতিহ্যবাহী নাম আজও জনপ্রিয় এবং সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে।
আরও পড়ুনপাপ থেকে প্রত্যাবর্তন করার নাম তওবা২৮ জানুয়ারি ২০২৫নামকরণে সতর্কতানামকরণের ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।
প্রথমত, নামের অর্থ যেন ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়। কোনো দেব-দেবীর নাম বা শিরকের সঙ্গে সম্পৃক্ত নাম ব্যবহার করা উচিত নয়।
দ্বিতীয়ত, জটিল বা উচ্চারণে কঠিন নাম এড়িয়ে চলা ভালো।
তৃতীয়ত, নামটি এমন হওয়া উচিত, যা সন্তানের জন্য গর্বের এবং সমাজে তার পরিচয়কে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে।
অনেক মা–বাবা পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে এমন নাম রাখেন, যা ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ‘ডায়ানা’র মতো নাম অর্থের দিক থেকে সুন্দর হলেও ইসলামি পরিচয়ের সঙ্গে সব সময় মানানসই না–ও হতে পারে। এই ক্ষেত্রে মা–বাবাকে নামের অর্থ ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
মা–বাবার করণীয় অনেক মা–বাবা পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে এমন নাম রাখেন, যা ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।ইসলামে নামকরণের জন্য কিছু নির্দেশনা রয়েছে।
প্রথমত, সন্তান জন্মের পর সপ্তম দিনে নামকরণ করা সুন্নাহ। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২,৮৩২)
এই সময়ে আকিকা দেওয়ার রীতিও রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, নাম রাখার আগে পরিবারের সদস্য, আলেম বা বিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
তৃতীয়ত, নামটি এমন হওয়া উচিত, যা সন্তানের জন্য আত্মবিশ্বাসের উৎস হয়।
আধুনিক যুগে নামকরণের ক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, বই ও অ্যাপের সাহায্য নেওয়া যায়। তবে এসব ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, কারণ, অনেক সময় ভুল অর্থ বা অপ্রমাণিত তথ্য দেওয়া হতে পারে।
নাম শুধু একটি শব্দ নয়, এটি সন্তানের পরিচয়, চরিত্র ও সমাজে তার অবস্থানের প্রতিফলন। তাই মা–বাবার উচিত এমন নাম নির্বাচন করা, যা ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও শ্রুতিমধুর।
আরও পড়ুন‘আল-ওয়াহিদ’ আল্লাহর অনন্য নাম২৩ জুন ২০২৫