সরকারি হিসাবের চেয়ে করোনায় মৃত্যু ছিল বেশি
Published: 15th, June 2025 GMT
করোনা মহামারিকালে মৃত্যুর যে হিসাব স্বাস্থ্য বিভাগ প্রকাশ করেছিল, তা বাস্তব চিত্রের চেয়ে ভিন্ন ছিল। অন্তত দুটি গবেষণায় বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। এতে দেখা গেছে, সরকারি হিসাবের চেয়ে করোনায় মৃত্যু বেশি ছিল।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলা এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় করোনাকালে মৃত্যু নিয়ে পৃথক দুটি গবেষণা করেছেন। একটি ছিল গ্রামীণ এলাকা, অন্যটি শহর এলাকা।
বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। আর দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যু হয় ওই বছরের ১৮ মার্চ। ১৩ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত সাড়ে পাঁচ বছরে ২৯ হাজার ৫০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বারবার দাবি করেছে, সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ায় দেশে করোনায় মৃত্যু কম হয়েছে।
অনেকে রোগ লুকিয়ে রেখেছিলেন, মৃত্যুর ঘটনাও জানাজানি হতে দেননি। অনেক ক্ষেত্রে লোকচক্ষুর অগোচরে মরদেহ কবর দেওয়া হয়েছে। সরকারি হিসাবে আছে শুধু হাসপাতালে মৃত্যুর তথ্য। যাঁরা হাসপাতালে আসেননি, যাঁরা করোনার সব ধরনের উপসর্গ নিয়ে ভুগেছেন, তাঁদের মৃত্যু সরকারি পরিসংখ্যানে নেই।যদিও মহামারিকালে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে করোনাকালে মৃত্যু অনেক বেশি ছিল। ২০২২ সালের ১০ মার্চ বাড়তি মৃত্যুর অনুমিত সংখ্যা প্রকাশ করেছিল চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেট। এতে বলা হয়, করোনাকালে ২০২০ ও ২০২১ সালে বাংলাদেশে বাড়তি ৪ লাখ ১৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
একই বিষয়ে আরও দুটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। সীতাকুণ্ড এলাকায় করোনাকালে মৃত্যুবিষয়ক গবেষণাটি ২০২৪ সালে জার্নাল অব গ্লোবাল হেলথ–এ প্রকাশিত হয়েছে। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার মৃত্যু নিয়ে গবেষণাটি এ বছর ছাপা হয়েছে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, ঢাকা শহরে করোনাকালে মৃত্যু নিয়ে আরও একটি গবেষণাকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিজেদের গবেষণায় বলেছে, মৃত্যুর যে সংখ্যা বলা হয় সারা বিশ্বে কোভিডে মৃত্যু হয়েছে তার চেয়ে তিন গুণ বেশি। আইসিডিডিআরবির গবেষণাটি গুরুত্বপূর্ণ, এবং তারা সত্যের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেছে। পরোক্ষ কারণে মৃত্যুর হিসাব সরকার দেয় না, তাই সংখ্যা কম থাকে, কম দেখায়।জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেনআইসিডিডিআরবির গবেষকেরা দাবি করছেন, সরকার যে সংখ্যা দিচ্ছে তা সঠিক নয়। মহামারি শুরুর সময় রোগ পরীক্ষার এবং চিকিৎসার সুযোগ কম ছিল। কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত অনেকের মৃত্যু বাড়িতে হয়েছে, অনেকের রোগ শনাক্ত হয়নি, অনেক ঘটনা লিপিবদ্ধ হয়নি। অনেকে রোগ লুকিয়ে রেখেছিলেন, মৃত্যুর ঘটনাও জানাজানি হতে দেননি। অনেক ক্ষেত্রে লোকচক্ষুর অগোচরে মরদেহ কবর দেওয়া হয়েছে। সরকারি হিসাবে আছে শুধু হাসপাতালে মৃত্যুর তথ্য। যাঁরা হাসপাতালে আসেননি, যাঁরা করোনার সব ধরনের উপসর্গ নিয়ে ভুগেছেন, তাঁদের মৃত্যু সরকারি পরিসংখ্যানে নেই।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিজেদের গবেষণায় বলেছে, মৃত্যুর যে সংখ্যা বলা হয় সারা বিশ্বে কোভিডে মৃত্যু হয়েছে তার চেয়ে তিন গুণ বেশি। আইসিডিডিআরবির গবেষণাটি গুরুত্বপূর্ণ, এবং তারা সত্যের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেছে। পরোক্ষ কারণে মৃত্যুর হিসাব সরকার দেয় না, তাই সংখ্যা কম থাকে, কম দেখায়।’
আমরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণে মৃত্যুর হিসাব বের করার চেষ্টা করেছি। আমরা দেখেছি মহামারির আনুষঙ্গিক কারণে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারেননি, মানুষ হাসপাতালে যেতে ভয় পেয়েছেন, ঠিক সময়ে চিকিৎসা নেননি। এসব কারণে মৃত্যু বেড়েছে।আইসিডিডিআরবির মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী আনীকা তাসনিম হোসেনসীতাকুণ্ডে করোনাকালে মৃত্যুআইসিডিডিআরবির গবেষকেরা চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় করোনাকালে মৃত্যুর তথ্য সংগ্রহের কাজটি করেন ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে। গবেষক দলের সদস্যরা ২৫ হাজার ৬৬৯টি পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করেন। গবেষকেরা মূলত ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে ওই সব পরিবারে কোন বয়সী কতজন মানুষ মারা গেছেন সেই তথ্য সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে ২০২০ সাল ছিল করোনার বছর।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৮ সালে সীতাকুণ্ডের ওই পরিবারগুলোতে ৪৯৩টি মৃত্যুর ঘটনা ছিল। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ছিল ৪৯৪টি মৃত্যু। অর্থাৎ পরপর দুই বছর মৃত্যুর সংখ্যায় বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। মাত্র একটি মৃত্যু বেশি। পরিসংখ্যানের দিক থেকে তা তাৎপর্যপূর্ণ নয়।
কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায় ২০২০ সালে। ওই বছর ওই সব পরিবারে ৭৬১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আগের বছরের তুলনায় ২৬৭ জন বেশি। অর্থাৎ আগের দুই বছরের তুলনায় ২০২০ সালে ৫৪ শতাংশ মৃত্যু বেশি হয়েছিল সীতাকুণ্ডে।
২০২০ সালের শেষে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্যে বলা হয়েছিল, করোনায় সীতাকুণ্ডে মৃত্যু হয় ৮ জনের। আর করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যায় আরও ১৫ জন।
সীতাকুণ্ডের গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন আইসিডিডিআরবির মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী আনীকা তাসনিম হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণে মৃত্যুর হিসাব বের করার চেষ্টা করেছি। আমরা দেখেছি মহামারির আনুষঙ্গিক কারণে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারেননি, মানুষ হাসপাতালে যেতে ভয় পেয়েছেন, ঠিক সময়ে চিকিৎসা নেননি। এসব কারণে মৃত্যু বেড়েছে।’
কবরস্থানে বেশি মৃতদেহমৃত্যুর সংখ্যা জানার একটি সূত্র হচ্ছে কবরস্থান। হঠাৎ মৃত্যু বেড়ে গেলে চাপ পড়ে কবরস্থানে। এই বিবেচনা থেকে আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা করোনাকালে মৃত্যুর পরিস্থিতি জানার জন্য কবরস্থানের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের উদ্যোগ নেন।
গবেষকেরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ছয়টি কবরস্থানকে গবেষণার জন্য বেছে নেন। এগুলো হচ্ছে—উত্তরা সেক্টর ১২ কবরস্থান, উত্তরা সেক্টর ১৪ কবরস্থান, উত্তরা সেক্টর ৪ কবরস্থান, বনানী কবরস্থান, রায়েরবাজার কবরস্থান ও মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান। এর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো হচ্ছে বনানী কবরস্থান, এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৪ সালে। সবচেয়ে নতুন উত্তরা সেক্টর ১৪ কবরস্থান, এটি তৈরি হয় ২০১৯ সালে।
গবেষকেরা এই ছয়টি কবরস্থান থেকে ১ লাখ ২ হাজার ৭৫৪টি মৃত্যুর তথ্য নেন। এর মধ্যে ৩২ হাজার ১০৮টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭৪ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে। বাকি ৭০ হাজার ৫৮৫টি মৃত্যু ছিল ২০০১ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে। গবেষকেরা তাঁদের গবেষণার জন্য ২০০১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ৭০ হাজার ৫৮৫টি মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ছয়টি কবরস্থানে ৬৯ শতাংশ বেশি কবর দেওয়া হয়েছিল। ২০২৩ সালে তা ছিল ৩১ শতাংশ বেশি।
স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় করোনা মহামারিকালে বাড়তি এই মৃত্যু করোনার কারণে হয়েছে বলে গবেষকেরা মনে করছেন। যদিও বাড়তি এই মৃত্যুর তথ্য সরকারি হিসাবে প্রতিফলিত হতে দেখা যায়নি।
দুটি গবেষণায় যুক্ত ছিলেন আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য আহমেদ এহসানূর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের গবেষণা দুটি ছিল ছোট পরিসরে, কিন্তু গবেষণা ফলাফল থেকে একধরনের তাগিদ অনুভব করা যায়। তা হচ্ছে, বাংলাদেশে জরুরি ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী মৃত্যুনিবন্ধন পদ্ধতি থাকা দরকার। প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি জরুরি প্রতিটি মৃত্যুর হিসাব থাকা। কোভিড–১৯ মহামারি অনিবন্ধিত মৃত্যুর এক করুণ উত্তরাধিকার রেখে গেছে। এখন সময় এসেছে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যার মুখোমুখি হওয়ার।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ত য র ঘটন য় ২০২০ স ল কবরস থ ন কর ন ক ল কর ন র হয় ছ ল পর ব র প রক শ য় কর ন কর ন য় সরক র ক সময় ই বছর প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই বিরোধিতা: ৩০ শিক্ষক-কর্মচারী ও ৩৩ ছাত্রলীগ নেতার ‘শাস্তি’
জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিরোধী তালিকায় থাকা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ৩০ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত এবং একই অভিযোগে ৩৩ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার বা সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭১তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আরো পড়ুন:
আ.লীগে যোগ দেওয়া মুবিনকে আইনজীবী ফোরাম থেকে বহিষ্কার
ববির ৪ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
সিন্ডিকেট সভা সূত্রে জানা গেছে, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের বিরুদ্ধে ভূমিকায় থাকা ইবির ১৯ জন শিক্ষক, ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে ‘শাস্তি নির্ধারণ কমিটি’ করবেন উপাচার্য অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ।
এদিকে একই অপরাধে জড়িত থাকায় ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট। যাদের পড়াশোনা শেষ হয়েছে, সেই শিক্ষার্থীদের সনদ বাতিল করা হবে। আর যারা অধ্যয়নরত, তাদের বহিষ্কার করা হবে।
এর আগে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের বিরুদ্ধে ভূমিকায় অবতীর্ণ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের চিহ্নিতকরণে গত ১৫ মার্চ আল-হাদীস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আকতার হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে প্রশাসন।
এই কমিটি প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ, বিভিন্ন তথ্যচিত্র, ভিডিও এবং পত্রিকার খবর পর্যালোচনা করে তালিকায় থাকা শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানবিরোধী এবং নিবর্তনমূলক কার্যকলাপের সংশ্লিষ্টতা পায়।
কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সর্বশেষ কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিন্ডিকেট সভায় তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সাময়িক বরখাস্তের তালিকায় থাকা শিক্ষকরা হলেন: ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মন, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ ও অধ্যাপক ড. রবিউল হোসেন, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেন ও অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিন, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. এইচ. এম আক্তারুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. মিয়া রাশিদুজ্জামান।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আরফিনসহ আরো রয়েছেন, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহজাহান মণ্ডল ও অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাজেদুল হক, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আফরোজা বানু, আল-ফিকহ অ্যান্ড ল বিভাগের অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেহেদী হাসান এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জয়শ্রী সেন।
সাসপেন্ড হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকায় রয়েছেন প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার উপ-রেজিস্ট্রার আলমগীর হোসেন খান ও আব্দুল হান্নান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার ও কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান মুকুট, একই দফতরের উপ-রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম সেলিম, প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার উপ-রেজিস্ট্রার ড. ইব্রাহীম হোসেন সোনা।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শাখা কর্মকর্তা উকীল উদ্দিনসহ তালিকায় নাম রয়েছে ফার্মেসি বিভাগের জাহাঙ্গীর আলম (শিমুল), আইসিটি সেলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জে এম ইলিয়াস, অর্থ ও হিসাব বিভাগের শাখা কর্মকর্তা তোফাজ্জেল হোসেন, তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ দপ্তরের উপ-রেজিস্ট্রার (ফটোগ্রাফি) শেখ আবু সিদ্দিক রোকন এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার মাসুদুর রহমানের।
বহিষ্কার ও সদন বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৩-১৪ বর্ষের বিপুল খান, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৪-১৫ বর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ বর্ষের মেহেদী হাসান হাফিজ ও শাহীন আলম, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের রতন রায়।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৪-১৫ বর্ষের মুন্সি কামরুল হাসান অনিকসহ তালিকায় রয়েছেন, মার্কেটিং বিভাগের ২০১৫-১৬ বর্ষের হুসাইন মজুমদার, বাংলা বিভাগের ২০১৬-১৭ বর্ষের তরিকুল ইসলাম।
ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের মৃদুল রাব্বী, ইংরেজি বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের ফজলে রাব্বী, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের শাকিল, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের শিমুল খান, আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের কামাল হোসেন, ইংরেজি বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের মাসুদ রানা, আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের মেজবাহুল ইসলাম বহিষ্কার ও সনদ বাতিলের তালিকায় রয়েছেন।
সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের অনিক কুমার, বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের আব্দুল আলিম, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের বিজন রায়, শেখ সোহাগ ও শাওনও এই শাস্তি পেয়েছেন।
জুলাই অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করায় শাস্তি পেয়েছেন অর্থনীতি বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের তানভীর ও শেখ সাদি, সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের মাজহারুল ইসলাম, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের মনিরুল ইসলাম আসিফ, সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের মারুফ ইসলাম, চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের পিয়াস, বাংলা বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের ফারহান লাবিব ধ্রুব, আল-ফিকহ অ্যান্ড ল বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের প্রাঞ্জল, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের নাবিল আহমেদ ইমন।
ফিনান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের রাফিদ, লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের আদনান আলি পাটোয়ারি, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের লিয়াফত ইসলাম রাকিব এবং ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের ইমামুল মুক্তাকী শিমুলও শাস্তির তালিকায় রয়েছেন।
এদিকে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে প্রকাশ্যে বিরোধিতাকারী হিসেবে এই ৬৩ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিলেও তাদের উস্কানিদাতা এবং পেছন থেকে আন্দোলন দমনকারী অনেকেই ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। একই অভিযোগ অভিযুক্তদেরও। তবে তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলমান রয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকা/তানিম/রাসেল