রাজশাহীতে হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ
Published: 15th, June 2025 GMT
রাজশাহীর পবা উপজেলায় হিমাগারে আলু সংরক্ষণে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছেন। রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির উদ্যোগে আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার বায়া এলাকায় এ কর্মসূচি পালিত হয়।
সমাবেশে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, আগের বছরগুলোতে তাঁরা বস্তা করে আলু হিমাগারগুলোয় রাখতেন। তখন বস্তা ধরে হিসাব রাখা হতো। প্রতি বস্তায় ৮০ থেকে ৯০ কেজি পর্যন্ত আলু থাকত। গত বছর আলু কমিয়ে রাখা হয় ৫০ কেজি করে। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলু রাখতে তাঁদের খরচ পড়ে যেত ৪ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু এবার হিমাগারের মালিকেরা কেজিপ্রতি ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আলু রাখা থেকে শুরু করে অন্যান্য খরচ মিলে এখন ৭ থেকে ৮ টাকা খরচ হচ্ছে।
সমাবেশে বক্তব্য দেন সমিতির সভাপতি আহাদ আলী, সাধারণ সম্পাদক মিঠুন আহমেদ, আলুচাষি হাফিজুর রহমান, রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। তাঁরা বেলা ১টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে কর্মসূচি পালন করেন।
পবার বড়গাছি গ্রামের আলুচাষি রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি ৫ হাজার বস্তা আলু রেখেছেন হিমাগারে। তাঁর এলাকার আরও আলুচাষিরা তাঁর মাধ্যমে আলু রেখেছেন। তিনি প্রতি বস্তা আলু ২৩০ টাকা দরে রেখেছেন। গত বছর অক্টোবরে তিনি সব টাকা পরিশোধ করেছেন (পেইড বুকিং)। পরে চলতি বছর মার্চে আলু রেখেছেন। এখন আবার বাড়তি টাকা চাচ্ছে। বাড়তি টাকা না দিলে আলু দেবে না। কয়েক দিন ধরে তাঁরা আলু বের করতে পারেননি।
হিমাগারে দেড় হাজার বস্তা আলু রেখেছেন মোহনপুরের কৃষক হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, এ বছর আলু চাষে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এবার লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি। অনেকে আলু চাষ করে পথে বসে গেছেন। আলুর দাম তো বাড়ছেই না। এখন হিমাগারে আলুর খরচ বাড়ালে তাঁরা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। হিমাগারের সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য তাঁরা রাস্তায় নেমেছেন।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিঠু আহমেদ বলেন, তাঁরা গত শুক্রবার থেকে রাস্তায় আন্দোলনে আছেন। হিমাগারের মালিকদের হঠকারী সিদ্ধান্তে হাজার হাজার কৃষক ও ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত। তাঁরা বাড়তি ভাড়া দেবেন না। আর হিমাগার মালিকেরা বাড়তি ভাড়া আদায় ছাড়া আলু ছাড়ছেন না। তাঁরা আলু আটকে রেখে কৃষক, ব্যবসায়ীদের জিম্মি করেছেন। কোনো সুরাহা না হলে কঠোর আন্দোলনে যাবেন তাঁরা।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত আমান আজিজকে মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি।
রহমান সিডস স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, স্টোরেজে আলু রাখার ভাড়া কমানোর দাবিতে তাঁরা আন্দোলন করছেন। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হতে পারে। তাঁরাও আলোচনায় বসতে চান।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঋণ নেওয়ার আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা উচিত
নানা কারণে আপনার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ নেয়। আবার গাড়ি কেনার জন্যও অনেকে ঋণ নেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়া হয়।
কিন্তু অনেকেই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন এসব শব্দ বলেন, তখন অনেক কিছুই বোঝেন না ঋণ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা। ফলে নিয়মকানুন না জেনেই ঋণ নেন। এতে নানা অপ্রত্যাশিত ঝামেলা তৈরি হয়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা খুব দরকার।
১. আসল টাকা (প্রিন্সিপাল)
আপনি যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, সেটিই আসল। এর ওপরই সুদ ধরা হয়। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে আসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
২. সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট)
ঋণ নেওয়ার আগে সবচেয়ে ভাবতে হয় সুদের হার নিয়ে। সুদের হার বেশি হলে খরচ বেড়ে যায়। ঋণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুদের হার। এটি স্থিরও হতে পারে, আবার বাজারদরের ওপর নির্ভর করে বাড়তে-কমতেও পারে।
৩. মাসিক কিস্তি (ইএমআই)
ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট টাকা আপনাকে দিতে হবে। সেটি হলো ইএমআই বা ঋণের কিস্তি।
৪. ঋণের মেয়াদ
কত বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, সেটিই হলো ঋণের মেয়াদ। মেয়াদ বেশি হলে কিস্তি ছোট হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদে কিস্তি বড় হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা কমে।
৫. অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)
শুধু সুদ ও আসল নয়, বরং ঋণের সব খরচ (যেমন ফি, চার্জ) মিলিয়ে আসল ব্যয় কত হবে, তার হিসাব হলো অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)। এটিই প্রকৃত খরচ বোঝায়।
৬. আগাম পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট)
ঋণের বোঝা কমাতে অনেকে ঋণের সুদ ও আসলের টাকা আগেই শোধ করে দিতে চান। এতে সুদের খরচ কমে যায়।
৭. প্রসেসিং ফি
আপনি ঋণের জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেন। কিন্তু ঋণ আবেদন মঞ্জুর থেকে শুরু করে ছাড় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু মাশুল দিতে হয়। এটিই প্রসেসিং ফি। এটি কখনো ঋণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আলাদা দিতে হয়।
৮. স্থগিতকাল (মোরাটোরিয়াম)
বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সুযোগকেই বলে স্থগিতকাল। তবে এই সময়েও সুদ জমতে থাকে। অনেক সময় ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ কিস্তি ভাগও করে দেওয়া হয়।
৯. জামানত (কোলেটারাল)
ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে আপনার সম্পদ (যেমন বাড়ি, সোনা, জমি) ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয়। কিস্তি না দিলে ব্যাংক ওই সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।
১০. লোন-টু-ভ্যালু রেশিও
আপনি যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন আর জামানতের মূল্য কত—এই অনুপাতকে বলে লোন টু ভ্যালু রেশিও (এলটিভি)। এর অনুপাত যত কম হয়, ব্যাংকের ঝুঁকি তত কম।