নানা আলোচনা সমালোচনা থাকলেও ফের জমে উঠেছে সিলেটের বৃহত্তম জনতার বাজার গরুর হাট। এই হাট নিয়ে প্রশাসনের আপত্তি এবং মামলা থাকলেও বাজার কমিটি বলছে, আদালতের নির্দেশনা নিয়েই তারা বাজার পরিচালনা করছেন। অভিযোগ রয়েছে, ওই মামলায় বাজার কমিটির অধিকাংশ সদস্যের নাম নেই। আসামি করা হয়েছে নিরীহ ব্যক্তিদের।
রোববার সরেজমিন নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের ওই বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের মতোই বাজার জমে উঠেছে। বাজারটি নিয়ে প্রশাসনের মামলা থাকলেও তা আমলে নিচ্ছে না পরিচালনা কমিটি। এমনকি মামলার ইস্যু ধরে প্রশাসনও কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। মামলা ও প্রশাসনিক বাধার শঙ্কা তুচ্ছ করে মহাসড়কের পাশের এই পশুরহাট বসিয়েছে পরিচালনা কমিটি।
এই হাটের ওপর জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে এখনও। তা সত্ত্বেও শনিবার ২১তম বারের মতো পশুর হাট আয়োজন করে বাজার কমিটি। এ দফায় ৪ থেকে ৫ হাজার গরু উঠেছে। এরই মধ্যে বিক্রি হয়েছে হাজারের বেশি গরু। তবে ঠিক কতটি গরু বিক্রি হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব বাজার কমিটির কাছে পাওয়া যায়নি।
এদিকে জনতার বাজার নিয়ে প্রশাসনের দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়নি বাজার কমিটির অধিকাংশ প্রভাবশালী নেতাকে। তাদের জায়গায় যাদের নাম দেওয়া হয়েছে তাদের অনেকের কোনো সম্পৃক্ততাই নেই বাজার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে। সেই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেন বাজার পরিচালনা কমিটির সদস্যরা। বাজার পরিচালনা কমিটির যারা আসামি নয় তারাই পরিচালনা করছেন এবারের হাট। রাজনৈতিক আধিপত্যে হেরফের হয়েছে আসামির তালিকায়। মূলত বাজার কমিটির সদস্যদের মধ্যে বিভিন্ন দলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে আসামির তালিকার বাইরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজার পরিচালনা কমিটির এক নেতা বলেন, জনতার বাজার পরিচালনা কমিটির মধ্যে, বিএনপি, জামায়াত, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জাসদের লোকজন থাকলেও ৫৭ সদস্যের কমিটির মাত্র ১০জন সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু আওয়ামী ঘরানার লোকজন বেশির ভাগ আসামি। যারা আসামি নয় তারা এখন বাজার পরিচালনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
২০২৫ সালের ৩১ মে জনতার বাজার গরুর হাট বসানো নিয়ে হাটে দায়িত্ব পালনরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সন্দ্বীপ তালুকদারের সঙ্গে কমিটির লোকজনের তর্কবিতর্ক ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে সরকারি কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগ এনে বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা আবুল খায়ের গোলাপকে প্রধান আসামি করে ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এ মামলায় এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। 
সিলেটের সবচেয়ে বড় এই পশুর হাট পরিচালনা করে বিপুল অর্থ আদায় করা হচ্ছে। সরকারিভাবে বৈধ ইজারা ব্যবস্থার ভিত্তিতে না হওয়ায় এখান থেকে কোনো রাজস্ব আদায় করা না হলেও বাজার কমিটি প্রত্যয়নের নামে রশিদের মাধ্যমে প্রতিটি পশুর জন্য বিক্রেতার কাছ থেকে আদায় করেন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। 
অভিযোগ রয়েছে, এভাবে প্রতি হাটে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ আদায় করা হয়। যার কোনো বৈধতা নেই। চার মাসে অন্তত ২০টির বেশি হাট বসেছে এখানে। যার মাধ্যমে কোটি টাকার বেশি আদায় করা হয়েছে।
বাজারের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জনতার বাজার নিয়ে ত্রিমুখী খেলা চলছে। প্রশাসন, রাজনৈতিক চক্র ও সামাজিক নেতৃত্ব একটি জটিলতা তৈরি করে জনতার বাজারের রাজস্ব আদায়ে বেড়াজাল তৈরি করেছেন। 
চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফরিদুর রহমান হাটটিকে অবৈধ ঘোষণা করেন। ৩১ জানুয়ারির পর হাট বন্ধের নির্দেশ দেন তিনি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে মাইকিং করতে হয়। টাঙানো হয় নোটিশও। নির্দেশনায় উল্লেখ ছিল, মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি বা অনুমোদনহীন হাট পরিচালনা করলে হাট-বাজার আইন ২০২৩ এবং মহাসড়ক আইন ২০২১ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এসব নির্দেশনার বিরুদ্ধে জনতার বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী তোফায়েল আহমদ হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। তখন জেলা প্রশাসনের আদেশ হাইকোর্ট স্থগিত করে রুল জারি করে। এরপর থেকে উক্ত বাজারটি থেকে সরকারিভাবে কোনো রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে না; বরং আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে বাজার পরিচালনা কমিটি। তারা প্রত্যয়নপত্রের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করছে দাবি করলেও সে টাকা সরকারি খাতে জমা হচ্ছে না।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বাজার কমিটির সদস্যরা এই টাকা ভাগ করে নিচ্ছেন। ২ হাজার থেকে ৫ হাজার, ১০ টাকা করে ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছেন নেতারা। বাজার কমিটির খাতায় এসব হিসাব থাকলেও কেউ টাকা নেওয়ার কথা সরাসরি স্বীকার করেননি। সচেতন মহল বলছেন, হাটটি নিয়ে প্রশাসন ও বাজার কমিটির মধ্যে জটিলতা তৈরি হওয়ায় এর কোনো প্রত্যয়ন বা অর্থ আদায়ের আইনগত ভিত্তি নেই।
জনতার বাজার পরিচলানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক, কাজী তোফায়েল আহমদ বলেন, জোর করে বাজার বসানো হয়নি। ব্যবসায়ীরা গরু নিয়ে আসছে, জনতার বাজার, এলাকার জনতাই বসিয়েছে। বর্তমানে তাদের কমিটি বাজার পরিচালনা করছে না। এলাকার যুব সমাজ আইনশৃঙ্খলা দেখভালের দায়িত্বে কিছু স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিয়ে বাজার তদারকি করছে। তারা হয়তো প্রত্যয়নের মাধ্যমে সামান্য কিছু টাকা আদায় করছে। 
এ বিষয়ে নবীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দুলাল মিয়া বলেন, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অসুস্থ থাকায় তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। এখন পর্যন্ত জনতার বাজার নিয়ে দায়ের করা মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাঁর জানা মতে, আসামিরা আদালতের মাধ্যমে জামিন নিয়েছে।
ইউএনও রুহুল আমিন বলেন, তাদের পক্ষ থেকে খাস আদায় হচ্ছে না। কেউ রশিদের মাধ্যমে টাকা আদায় করে থাকলে, সেটা অবৈধ। স্থানীয়দের পক্ষ থেকে হাটটি স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি উঠেছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব জ র কম ট র জনত র ব জ র কম ট র স থ কল ও ব যবস সরক র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

সেই আছিয়ার পরিবারকে গরু ও ঘর দিল জামায়াত

মাগুরায় যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে মারা যাওয়া আলোচিত শিশু আছিয়ার পরিবারকে দুটি গরু ও একটি গোয়ালঘর উপহার দেওয়া হয়েছে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের পক্ষ থেকে আছিয়ার পরিবারকে এ উপহার দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া গ্রামে আছিয়ার বাড়িতে উপস্থিত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উপহার হস্তান্তর করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এবং কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসাইন।

এ সময় জেলা জামায়াতের আমির এম বি বাকের, সাবেক আমির ও কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আব্দুল মতিনসহ স্থানীয় এবং জেলা কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা 

অপারেশনের পর শিশুর মৃত্যু: তদন্ত কমিটি গঠন, থানায় মামলা

গত ১৫ মার্চ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান আছিয়ার বাড়িতে যান। তিনি শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় দ্রুত বিচার চান। সে সময় আছিয়ার পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে একটি গোয়াল ঘর এবং দুটি গরু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জামায়াতের আমির। 

আট বয়সী আছিয়া মাগুরার নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয় বলে পরিবারের তরফ থেকে অভিযোগ ওঠে। গত ৬ মার্চ অচেতন অবস্থায় মাগুরার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। অবস্থার অবনতি হলে মাগুরা হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে শিশুটিকে নেওয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে থেকে সেদিন সন্ধ্যায় উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে ঢাকায় নেওয়া হয় এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। দুই দিন পর ৮ মার্চ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়। ১৩ মার্চ বৃহস্পতিবার সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আছিয়ার।

ঢাকা/শাহীন/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ