কক্সবাজার মেরিনড্রাইভ সড়কে পাকা কলার বাজার, ক্রেতারা সবাই পর্যটক
Published: 16th, June 2025 GMT
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ দিয়ে টেকনাফের দিকে যাতায়াতের সময় রাস্তার পাশে দেখা যায় রাশি রাশি কলার ছড়ি। গাড়ি থামিয়ে বাজার থেকে কলা কেনেন পর্যটকেরা। উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের রূপপতী গ্রামের টেকব্রিজ এলাকায় সকাল ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলে পাকা কলা বেচাবিক্রি।
গত রোববার সকালে কলার বাজারে নেমে দেখা গেল, বাঁশের সঙ্গে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ৪০-৪৫টি পাকা কলার ছড়া। প্রতিটি ছড়াতে ৫০ থেকে ১২০টি কলা আছে। প্রতিটি কলা বিক্রি হচ্ছে পাঁচ টাকায়। পাহাড়ে চাকমা সম্প্রদায়ের চাষিদের কলার বাগান রয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী সেখান থেকে গাছে পাকা ফলমূল কিনে মেরিন ড্রাইভের বাজারে বিক্রি করেন। পর্যটকেরা পাকা কলা কিনে বাজারেই খেয়ে নেন, কেউ কেউ কলার ছড়া কিনে নিয়ে রওনা হন গন্তব্যে।
ঢাকার ধানমন্ডির ঠিকাদার সালাহ উদ্দিন (৪৮) বাজার থেকে ২১৫ টাকায় কিনেছেন একটি কলার ছড়া। ছড়াতে কলা আছে ৪৩টি। সালাহ উদ্দিন বলেন, ঢাকা শহরে বাংলা কলা খুব একটা পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও প্রতিটির দাম ১০-১২ টাকা। কক্সবাজার শহরেও প্রতিটি বাংলা কলার দাম ১২ টাকা। অথচ এখানে পাঁচ টাকা। তা–ও গাছ পাকা। সড়কের অন্য কোথাও পাকা কলা বিক্রির এ রকম বাজার চোখে পড়ে না।
দেখা গেছে, পাহাড় থেকে লোকজন পাকা কলার ছড়া কাঁধে নিয়ে বাজারের দিকে আসছেন। বিক্রেতারা জানান, প্রতিদিন গড়ে ২০০ ছড়া কলা বিক্রি হয় এ বাজারে। চাহিদা অনুযায়ী গাছ থেকে ছড়া কাটা হয়। পর্যটকের সমাগম বাড়লে কলা বিক্রিও বেড়ে যায়।
স্থানীয় লোকজন জানান, সাত বছর আগে রূপপতী গ্রামের কৃষক আবুল হোসেনের বাড়িতে একসঙ্গে চারটি গাছের বাংলা কলা পেকে যায়। এত কলা খাওয়ার লোক ঘরে নেই। উপায় না দেখে তিনটি কলার ছড়া বাড়ির পাশের মেরিন ড্রাইভের টেকব্রিজে নিয়ে আসেন। কলাগুলো সড়কের পাশে রেখে দাঁড়িয়ে থাকেন আবুল হোসেন। পর্যটকেরা পাকা কলা দেখে গাড়ি থামান। দুই ঘণ্টায় সব কলা বিক্রি হয়ে যায়। এর পর থেকে আবুল হোসেন গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে পাকা কলা কিনে মেরিন ড্রাইভ সড়কে এনে বেচাবিক্রি শুরু করেন। তিন মাসের মাথায় বাজারে কলা বিক্রি শুরু করেন আরেক কৃষক আবদুল নবী। এখন বাজারে কলা ব্যবসায়ীর সংখ্যা ১৪।
বাজারে কথা হয় মো.
রূপপতী গ্রামের স্কুলছাত্রী সেনুয়ারা বেগম বাজারে নিয়ে এসেছে তিনটি কলার ছড়া। সঙ্গে কিছু থোড়, ঢেঁকিশাক ও অন্য ফলমূল। সে বলে, তার বাবা দিন মজুর। সেনুয়ারা সোনারপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ে। বাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের স্কুলে যাতায়াতে খরচ লাগে ৬০ টাকা। এ টাকা বাবার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। লেখাপড়া যেন মাঝপথে বন্ধ হয়ে না যায়, সে জন্য কলার ব্যবসায় নেমেছে সে। যা আয় হয়, তা দিয়ে লেখাপড়া খরচ চলে যাচ্ছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
একঝলক (৩ নভেম্বর ২০২৫)
ছবি: আবদুর রহমান