জীবনের দ্বিতীয় পর্বে পা রাখার স্বপ্ন ছিল রিমঝিমের চোখে। বিয়ের প্রস্তুতি চলছিল পরিবারে। এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম রওয়ানা হয়েছিলেন কক্সবাজারের রামু উপজেলার এই তরুণী। সেখান থেকে কেনাকাটা করার কথা ছিল। কিন্তু কক্সবাজারগামী কাভার্ডভ্যানের চাপায় অন্য দুই বাসযাত্রীর সঙ্গে প্রাণ গেছে এই তরুণীর। এ সংবাদে পুরো পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
রিমঝিম বড়ুয়া (২১) রামুর রাজারকুল ইউনিয়নের পূর্ব রাজারকুল গ্রামের হিমাংশু বড়ুয়ার মেয়ে। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার হয়ে রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত ছিলেন তিনি। আগামী ৬ জুলাই তাঁর বিয়ে ঠিক হয় চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ভান্ডারগাঁও গ্রামের সানি বড়ুয়া উৎপলের সঙ্গে।
রিমঝিমের মামাতো ভাই সাবেক ইউপি সদস্য রিটন বড়ুয়ার ভাষ্য, তাঁর বোন বিয়ের বাজার করতে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন। পথেই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণ হারান।
স্বজনের বরাতে বর্তমান ইউপি সদস্য স্বপন বড়ুয়া জানান, চট্টগ্রামের পটিয়ায় রিমঝিমের হবু শ্বশুরবাড়ি। তাঁর ছোটবোন চট্টগ্রামে পড়ালেখা করেন। সবাই মিলে বিয়ের বাজার করার কথা ছিল। সে কারণে সকালে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রামুর বাইপাস থেকে পূরবী বাসে ওঠেন। কয়েক মিনিট পরই রশিদনগর এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে।
একই দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে কক্সবাজার সদরের পিএমখালী ইউনিয়নের খরুলিয়া দক্ষিণ পাতলী গ্রামের হাবিব উল্লাহ (৫৫) ও তাঁর মাদ্রাসাপড়ুয়া ছেলে মো.
রিয়াদ পড়ত পটিয়ার একটি মাদ্রাসায়। তাকে সেখানে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন বাবা হাবিব উল্লাহ। পথে দু’জনেরই প্রাণ যায়।
রামু থানার ওসি তৈয়বুর রহমান জানান, সকাল ৭টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে আসা কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে ওই বাসের সংঘর্ষ হয়। এতে বাসটি উল্টে সড়কের পাশে পড়ে যায়। রামু তুলাতলী ক্রসিং হাইওয়ে পুলিশের ওসি নাসির উদ্দিন বলেন, তারা তিনজনের মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন ন হত দ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।