আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে অপতথ্যের প্রসার বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে) দল হিসেবে বিএনপি সবচেয়ে বেশি অপতথ্যের শিকার হয়েছে। রাজনৈতিক দল ও সরকারের উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তিদের নামে ভুয়া ও সম্পাদিত বক্তব্যের মাধ্যমে সিংহভাগ অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। মঙ্গলবার ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

অপতথ্য ফেসবুকেই বেশি

চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে নির্বাচনকেন্দ্রিক ৩৯টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। নির্বাচন-সংক্রান্ত অপতথ্য শনাক্তের ক্ষেত্রে তথ্য যাচাই করা হয়েছে ৩৭টি এবং ভিডিও যাচাই করা হয়েছে দুটি। এসব অপতথ্যের ৭৪ শতাংশই ছড়িয়েছে শেষ দুই মাসে (এপ্রিল-মে)। 

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তথ্যকে বিকৃত করা হয়েছে এমন ঘটনা ১৯টি। ভুয়া ঘটনাসংবলিত অপতথ্য ১৮টি। অপতথ্য ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে ফেসবুক। শনাক্ত হওয়া ৩৯টি অপতথ্যের ৩৮টিরই হদিস মিলেছে এই প্ল্যাটফর্মে। এ ছাড়া টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে দুটি করে ও থ্রেডসে একটি অপতথ্য ছড়িয়েছে। দেশের গণমাধ্যমও নির্বাচন-সংক্রান্ত ভুল তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। গত পাঁচ মাসে গণমাধ্যমগুলোতে এমন দুটি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। 

ভুয়া মন্তব্যের শিকার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা 

ভুয়া ও বিকৃত মন্তব্যের সবচেয়ে বড় শিকার হতে হয়েছে বিএনপিকে। দলটির নেতাকর্মীকে জড়িয়ে গেল পাঁচ মাসে আটটি ভুয়া মন্তব্য ও সাতটি বিকৃত মন্তব্য প্রচার করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারকে জড়িয়ে পাঁচটি, জামায়াতে ইসলামীকে জড়িয়ে সাতটি এবং জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) জড়িয়ে তিনটি ভুয়া ও বিকৃত মন্তব্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা ও জনগণকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া-সংক্রান্ত ছয়টি করে অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। 

অপতথ্য বেশি বিএনপিকে নিয়ে 

গত পাঁচ মাসে বিএনপিকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি (১৯) অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এর মধ্যে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি সাতটি অপতথ্য ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে পাঁচটি এবং মির্জা আব্বাসকে নিয়ে দুটি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে সাতটি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপিও তিনটি অপতথ্যের শিকার হয়েছে। পাঁচ মাসে আওয়ামী লীগকে জড়িয়ে দুটি এবং গণঅধিকার পরিষদকে জড়িয়ে একটি অপতথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। 

নির্বাচন-সংক্রান্ত অপতথ্যের শিকার হতে হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারকেও। সরকারকে জড়িয়ে পাঁচটি নেতিবাচক অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূসকে জড়িয়ে চারটি এবং উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে জড়িয়ে একটি অপতথ্য রয়েছে। 

অপতথ্যে গিনিপিগ গণমাধ্যম ফটোকার্ড

রিউমর স্ক্যানার বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় গণমাধ্যমের ফটোকার্ডকে কাজে লাগিয়ে ভুয়া ও অপতথ্যের প্রচার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। গত পাঁচ মাসে সম্পাদিত ও ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহার করে ১৩টি সংবাদমাধ্যমকে জড়িয়ে ২৭টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। অপতথ্য প্রচারে কালের কণ্ঠের নাম সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে। এর পর যমুনা টিভি, কালবেলা ও জনকণ্ঠের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। গণমাধ্যমকে জড়িয়ে প্রচারিত এসব অপতথ্যের সিংহভাগই রাজনীতিবিদদের ভুয়া ও সম্পাদিত মন্তব্যসংবলিত। খোদ সাংবাদিকসহ দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্বরাও প্রায়ই বিভ্রান্ত হয়ে সেসব শেয়ার দেন। 

গণমাধ্যমকে জড়িয়ে অপতথ্যের প্রচারের বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মশিহুর রহমান বলেন, আগামী নির্বাচনে অবশ্যই অপতথ্যকে একটি গুরুতর গণতান্ত্রিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা উচিত। কারণ, এটি ভোটারের মত গঠনে প্রভাব ফেলে; রাজনৈতিক বিভাজন, সহিংসতা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। ভুয়া ফটোকার্ড ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে গণমাধ্যমগুলো ভেরিফিকেশন লোগো ও ডিজিটাল ওয়াটারমার্ক ব্যবহার করতে পারে। 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অপতৎপরত ব এনপ ব যবহ র কর অপতথ য র র জন ত ক সবচ য ব এনপ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মন্ত্রণালয়ের প্রচার কার্যক্রম জোরদারের নি‌র্দেশ তথ্য কর্মকর্তার

সব মন্ত্রণালয়ের প্রচার কার্যক্রম আরো জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান তথ্য অফিসার মো. নিজামূল কবীর।

বুধবার (৩০ জুলাই) তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ নির্দেশনা দেন তি‌নি।

প্রধান তথ্য অফিসার বলেন, “বর্তমান সময়ে সব মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন ও সংস্কারমূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার প্রতিফলন না ঘটায় জনগণ বর্তমান সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে পারছে না। এ বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত জনসংযোগ কর্মকর্তাদেরকে আরো আন্তরিক ও একনিষ্ঠভাবে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের এসব সংস্কার ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ব্যাপকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”

আরো পড়ুন:

নদীর মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা গাছ নিয়ে গুজবের ছড়াছড়ি

সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ঠেকাতে ডিসিদের সতর্ক থাকার নির্দেশ

তিনি বলেন, “বর্তমান সময়ে গুজব একটি বড় চ্যালেঞ্জ। একটি মহল পরিকল্পিতভাবে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে গুজব ও অপতথ্য প্রচার করছে। গুজবের নেতিবাচক প্রভাব থেকে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে গুজব সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই।”

গুজব মোকাবিলায় তথ্য কর্মকর্তাদের ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, “গুজব শনাক্তকরণ ও সঠিক তথ্য প্রচারে তথ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগণ কাজ করছেন। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত অপতথ্য তথা গুজব মনিটরিং ও এর সত্যতা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তথ্য অধিদপ্তরের ‘গুজব প্রতিরোধ ও অবহিতকরণ কমিটি’ কাজ করছে। এই কমিটি গুজব প্রতিরোধে নিয়মিত আইকনোটেক্সট ও ভিডিও তৈরি করছে। গুজব প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে এসব আইকনোটেক্সট ও ভিডিও কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।”

গুজব মোকাবিলায় তথ্য কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে নিজামূল কবীর বলেন, “তথ্যের চরিত্র নির্ধারণ ও তথ্যের উৎস যাচাইয়ে আধুনিক প্রযুক্তির বহুমুখী ব্যবহার সম্পর্কে তথ্য কর্মকর্তাদের দক্ষতা অর্জন করতে হবে। গুজব প্রতিরোধে আন্তরিকভাবে কাজ করার জন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয়, সংস্থায় সংযুক্ত তথ্য কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ১ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় নানা কর্মসূচির আয়োজন করছে। মন্ত্রণালয়গুলোর জুলাই গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কিত কার্যক্রম গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার নিশ্চিত করতে তিনি জনসংযোগ কর্মকর্তাদের নিদের্শনা প্রদান করেন প্রধান তথ্য কর্মকর্তা।

আলোচনা সভায় তথ্য অধিদপ্তরের সিনিয়র উপপ্রধান তথ্য অফিসার ইয়াকুব আলী ও ম. জাভেদ ইকবালসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মন্ত্রণালয়ের প্রচার কার্যক্রম জোরদারের নি‌র্দেশ তথ্য কর্মকর্তার