দেশের শীর্ষ ব্যাংকারদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসরুর আরেফিন।

সম্প্রতি এবিবি’র বোর্ড অব গভর্নরসের এক সভায় তাকে সংগঠনটির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। তিনি আগামী বার্ষিক সাধারণ সভা পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সময়ে এই দায়িত্ব পালন করবেন।

এবিবি’র চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হুসেইন সম্প্রতি ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও সিইও পদ থেকে পদত্যাগ করার পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনের চেয়ারম্যান পদটি শূন্য হয় এবং নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

একই সভায় পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ আলী এবিবি’র নতুন ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ডাচ বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আবুল কাশেম মো.

শিরীন এবিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে তার আগের দায়িত্ব পালন করে যাবেন।

মাসরুর আরেফিন ১৯৯৫ সালে এএনজেড গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে তার ব্যাংকিং ক্যারিয়ার শুরু করেন। ৩০ বছরের পেশাগত জীবনে তিনি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক কাতার, এএনজেড ব্যাংকের মেলবোর্ন হেড অফিস, আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে কাজ করেন। গত ছয় বছর ধরে তিনি সিটি ব্যাংকের সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এবিবিতে প্রায় চার বছর ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করার পর এবার তিনি সংগঠনটির নেতৃত্বে এলেন। ব্যাংকার পরিচয়ের বাইরে তিনি একজন লেখক ও অনুবাদক হিসেবেও সুপরিচিত।

মোহাম্মদ আলী ২০০৮ সালে পূবালী ব্যাংকের চিফ টেকনোলজি অফিসার হিসেবে যোগ দেন। এরপর ২০১৬ সালে তিনি ব্যাংকটির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং ২০২০ সালে অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং পরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও পদে উন্নীত হন। এই ব্যাংকে তার দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি চিফ অপারেটিং অফিসার, চিফ অ্যান্টি মানিলন্ডারিং অফিসার, চিফ রিস্ক অফিসার এবং ক্রেডিট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও কাজ করেছেন। তার নেতৃত্বে পূবালী ব্যাংক মুনাফা ও সুনামের দিক থেকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। এবিবিতে নতুন ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি সংগঠনটির গভর্নিং বডির একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে গত কয়েক বছর ধরে কাজ করছিলেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স গঠন কম ট গঠন ক জ কর অফ স র নত ন চ

এছাড়াও পড়ুন:

নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো সংগ্রামী বীরের মহাপ্রস্থান

সাতাশি বছর বয়সে আফ্রিকার বিশিষ্ট লেখক এবং নয়া-উপনিবেশবিরোধী চিন্তাবিদ নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো ২৮ মে পরলোকগমন করেছেন। পরিণত বয়সের এই মৃত্যুতে আক্ষেপের কিছু নেই। বরং সন্তুষ্টির কারণ রয়েছে যে একজন মানুষ হিসেবে তিনি পরিপূর্ণ একটি জীবন যাপন করে গেছেন। তিনি মূলত একজন লেখক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হলেও কিন্তু নানা কর্মকাণ্ডে জীবনকে পরিপূর্ণ করে তুলেছিলেন। 
নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো প্রসঙ্গে প্রথম কথা সম্ভবত এই যে তাঁকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়নি। এ সূত্রে ২০১০ সালের ৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবারের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। তাঁর বাসার সামনে কয়েক ডজন সাংবাদিক ক্যামেরা নিয়ে হাজির হয়েছেন। তারা জেনে গেছেন ওই বছর সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা যাদের খুব বেশি, নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো তাদের মধ্য অগ্রগণ্য। সুইডেনের নোবেল একাডেমির‌ স্থায়ী সচিব পিটার এঙ্গলুন্ড বিকাল পৌনে ৫টায় সংবাদ সম্মেলনে সংক্ষিপ্তভাবে জানালেন যে মারিয়ো বার্গাস ইয়োসাকে নোবেল পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।‌ খবরটি শুনে নগুগি ঘর থেকে দরজা খুলে বের হয়ে এসে সাংবাদিকদের সান্ত্বনা দিতে দিতে বললেন, দুঃখিত হওয়ার কিছু নেই। নোবেল কমিটির মূল্যায়ন খারাপ না। বার্গাস ইয়োসা একজন ভালো লেখক; নোবেল পাওয়ার যোগ্য। অনেক অনেক বছর সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার প্রদানের জন্য নগুগির নাম সুপারিশ করা হয়েছে। লং লিস্ট করা হয়েছে। শর্ট লিস্ট করা হয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে নোবেল কমিটি সব সময় তাঁর পরিবর্তে অন্য কাউকে বেছে নিয়েছে। ‌ লাতিন আমেরিকার সাহিত্য বিষয়ে উৎসাহ জাগ্রত হওয়ার আগেই আফ্রিকার সাহিত্য সম্পর্কে আমাদের উৎসাহ উস্কে দিয়েছিল চিনুয়া আচেবে ও নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গোর উপন্যাস। তাদের সাহিত্য আমাদের নয়া-ঔপনিবেশিকতার আবির্ভাব সম্পর্কে ধীরে ধীরে সচেতন করে তুলেছিল। 
আফ্রিকা থেকে অনেকে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন– যাদের মধ্যে রয়েছেন আলবেয়ার কাম্যু, নাডিন গর্ডিমার ও আবদুলরাজাক গুরনাহ। কেনিয়ার মানুষ নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গোর অনন্য হয়ে উঠেছিলেন তাঁর কথাসাহিত্য, প্রবন্ধ ও বক্তৃতার মধ্য দিয়ে। ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৬৩ সালে কেনিয়া স্বাধীনতা অর্জন করে। কিন্তু এই স্বাধীনতা প্রকৃতই স্বাধীনতা কিনা তা বারংবার তার কথাসাহিত্যের মধ্য দিয়ে পরীক্ষা করেছেন নগুগি। যাদের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল, তাদের সঙ্গে রাষ্ট্র বিশ্বাসঘাতকতা করে– এই চিত্রটি তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর কথাসাহিত্য এমন এক ঘরানার যাকে বলা হয় ‘ফিকশনাল হিস্ট্রি’। কোনো কোনো উপন্যাসে রাষ্ট্র ও সরকারের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমরা মূর্তিমান দেখতে পাই। 
ঔপনিবেশিক শাসন থেকে আফ্রিকার মুক্তির যে বয়ান গড়ে তোলা হয়েছে তা নগুগির উপন্যাস প্রবন্ধ এবং বক্তৃতার মধ্য দিয়ে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ‌ কেনিয়ার ঔপনিবেশিক ইতিহাস থেকে শুরু করে স্বাধীনতা পরবর্তীকালের বিবিধ রূপ রাজনৈতিক দুর্নীতি ছিল তাঁর প্রিয় বিষয়।  এমনকি ভাষাগত স্বাধীনতার পক্ষেও আন্দোলনের সূত্রপাত করেছেন। নিজের জন্মগত নাম জেমস নগুগি বদলে করেছেন। নতুন নাম নিয়েছেন নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো। ইংরেজিতে লেখা বন্ধ করে মাতৃভাষায় (গিকুয়ু ভাষায়) লিখতে শুরু করেছেন। তাঁর জনপ্রিয় বইগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘দ্য উইজার্ড অব দ্য ক্রো’, ‘পেটালস অব ব্লাড’ ও ‘ডিকলোনাইজিং দ্য মাইন্ড’। এ বইগুলিতে তিনি মাতৃভাষায় লেখা ও ভাষার স্বাধীনতা ওপর সবিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। সরকারের কোপানলে পড়ে বহু বছর তাঁকে নির্বাসনে কাটাতে হয়েছে। ১৯৭০-এর দশকে এক বছর কারাবন্দি ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হন।
তিনি ম্যান বুকার পুরস্কারের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন এবং পার্ক কিয়ং-নি সাহিত্য পুরস্কার জিতেছিলেন। উল্লেখযোগ্য, তাঁর ‘দ্য আপরাইট রেভল্যুশন’ গল্পটি ১০০-এরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাঁর উপন্যাসগুলো কেনিয়া তথা আফ্রিকার সীমাহীন সামাজিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বিশ্বস্ত প্রতিরূপ। 
তাঁর শারীরিক ও রাজনৈতিক আক্রমণের শিকার হয়েছেন কিন্তু কখনও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা থেকে পিছিয়ে আসেননি। তাঁর কথা– “প্রতিরোধই জীবিত থাকার সেরা উপায়।” তাঁর সাহিত্যিক অবদান আফ্রিকান ভাষার পুনরুত্থান, ন্যায়বিচার এবং রাজনৈতিক সাহস নিয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তাঁর প্রথমদিকের উপন্যাস ‘উইপ নট, চাইল্ড’ ও ‘দ্য রিভার বিটুইন’ জেমস নগুগি নামে প্রকাশিত হয়েছিল। তবে ১৯৬৭-তে প্রকাশিত  ‘আ গ্রেন অব হুইট’-এ (একদানা গম) উপস্থাপিত ইতিহাস এবং কল্পকাহিনির মধ্যে সম্পর্ক নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করেছেন। একসময় রাজনৈতিক সক্রিয়তাকে জীবনের অভিলক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন।  সাহিত্য তাঁর জন্য কেবল সামাজিক বাস্তবতা প্রত্যাখ্যান করার মাধ্যম ছিল তা নয়, বরং তিনি সাহিত্যকে দেখেছেন ঐতিহাসিক সামাজিক শক্তি এবং চাপ দ্বারা নির্ধারিত একটি সৃজনশীল প্রক্রিয়া হিসেবে। যারা কেনিয়ার ইতিহাস রচনা করবেন তাদের জন্য নগুগির সাহিত্য একটি অন্যতম উপাদান। তাকে “রাজনৈতিক আন্দোলনের আলোচক, ভবিষ্যদ্বাণীকারী এবং দ্রষ্টা” হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। 
সাহিত্যের রাজনৈতিক ভূমিকা সম্পর্কে নগুগির মতো অকপট লেখক আর কাউকে দেখা যায় না। ১৯৭৫ সালে নগুগি একটি সাক্ষাৎকারে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, সাহিত্যকে অবশ্যই আমাদের সমাজের সমস্ত শক্তি এবং দুর্বলতাগুলো স্বাধীনভাবে এবং সঠিকভাবে প্রতিফলিত করতে সক্ষম হতে হবে। তিনি বলতেন:  এমন কোনো লেখক নেই যিনি অরাজনৈতিক। মূল কথা হলো: একজন লেখক তাঁর রচনায় কার রাজনীতিকে সমর্থন করেন? –তাঁর ব্যাপক সাহিত্যকর্মে স্বীয় সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি তাঁর অটল বিশ্বাস প্রতিফলিত হয়ে আছে। 
নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গোর প্রয়াণে পৃথিবী এমন একজন লেখককে হারাল যিনি নিরাপসভাবে রাষ্ট্র ও মানুষের মধ্যে অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্ব ও বৈরিতার ব্যাপারে আমাদের অক্লান্তভাবে সচেতন করে গেছেন। তাঁর প্রতি জ্ঞাপন করছি অতল শ্রদ্ধা। v

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরকারি সেবায় প্রতি তিনজনের একজন ঘুষ-দুর্নীতির শিকার
  • নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো সংগ্রামী বীরের মহাপ্রস্থান
  • জবিতে পরিবহন সংকট নিরসনে ছাত্র অধিকারের ৩ দাবি
  • মাসরুর আরেফিন এবিবির নতুন চেয়ারম্যান
  • উদীচী নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রবাসী শুভাকাঙ্ক্ষীরা, মতপার্থক্য ভুলে আলোচনার আহ্বান
  • ‘পাথরের সাম্রাজ্যে’ অভিযান, ৮৭ পাথর ভাঙার যন্ত্রের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন
  • যবিপ্রবিতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি
  • বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল উৎপাদনের শর্তে শিথিলতা চান ব্যবসায়ীরা
  • গোপালগঞ্জে উচ্ছেদ করা হলো ‘জ্ঞানের আলো পাঠাগার’