ভোলার মেঘনা নদীতে এক জেলের জালে ২ কেজি ৭০ গ্রাম ওজনের একটি রাজা ইলিশ ধরা পড়েছে। জেলার দৌলতখান উপজেলার মদনপুরের জেলে মো. তছির আহমেদের জালে মাছটি ধরা পড়ে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে সদর উপজেলার তুলাতুলি মাছঘাটে নিলামে ইলিশটির দাম উঠেছে ৬ হাজার ৪৮০ টাকা। মাছটি কিনেছেন আড়তদার মো. কামাল হোসেন। তিনি মাছটি ঢাকার আড়তে বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন।

আড়তদার কামাল হোসেন জানান, আজ দুপুরে দৌলতখানের মদনপুর ইউনিয়নের জেলে তছির আহমেদের জালে রাজা ইলিশটি ধরা পড়ে। সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়ন ও দৌলতখানের মদনপুর ইউনিয়নের মাঝামাঝি মেঘনা নদীতে ইলিশটি ধরা পড়ে। এটির ওজন ২ কেজি ৭০ গ্রাম। পরে বেলা দুইটার দিকে ইলিশটি তাঁদের কাছে নিয়ে আসেন জেলে। এরপর নিলামে ইলিশটি সর্বোচ্চ দামে কেনা হয়। তিনি বলেন, ঘাটে দেড় হাজার টাকা থেকে নিলাম শুরু হয়। এরপর বাড়তে বাড়তে ৬ হাজার ৪৮০ টাকায় শেষ হয়। মাছটি তিনি বরিশাল আড়তে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।

চলতি বছর মেঘনায় ইলিশের আকাল হলেও মাঝেমধ্যে জেলেদের জালে রাজা ইলিশ পড়ছে। ১৬ জুন ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় মেঘনা নদীতে উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের মহেশখালী মাছঘাটের জেলে রাকিব মাঝির জালে ধরা পড়ে ৩ কেজি ১০০ গ্রামের একটি রাজা ইলিশ। মাছটি স্থানীয় বাজারে তোলার আগেই নিলামে ডাক তুলে ৭ হাজার ২০০ টাকায় কিনে নেন পাইকার। পরে ঢাকার বাজারে মাছটি ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

১২ জুন ভোলার দৌলতখানে আবদুল করিমের মাছ ধরার নৌকার পাতা জালে ধরা পড়ে প্রায় চার কেজি ওজনের বড় একটি রাজা ইলিশ। মাছটি দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর হাবিবুল্লাহ হাবুর আড়তে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

জেলে ও আড়তদারেরা জানান, নদীতে এখন সব ধরনের মাছের আকাল। জেলেদের খরচ উঠছে না। ইলিশ যা পড়ছে, সেগুলোর আকার একেবারে ছোট নয়। এক কেজির ওপরে ইলিশ মাছের কেজি মাছঘাটেই কেনা হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায়। ৭৫০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছের কেজি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। ৪০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের হালি বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকায়।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, নভেম্বর থেকে জুন—এই আট মাস জাটকা সংরক্ষণ অভিযান ছিল। এ সময় নদী ও সাগরে বিভিন্ন মেয়াদে মাছ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। নিষেধাজ্ঞা অভিযান সফল হওয়ায় নদীতে এখন বড় বড় ইলিশ পাচ্ছেন জেলেরা। তবে মাছের সংখ্যা কম। বর্ষায় ইলিশ মাছ বাড়বে। ভবিষ্যতে জেলেরা আরও বড় আকারের ইলিশ ধরবেন বলে তিনি আশা করছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল র ওজন র

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে পাঙাশের বৃহত্তম আড়ত দ্বীপনগর, পাওয়া যায় দেশি-বিদেশি অনেক মাছ

রাজধানীর গাবতলী–মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের পাশে বিজিবি মার্কেটে গড়ে ওঠা দ্বীপনগর মাছের আড়ত প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বেশ জমজমাট থাকে। এই তিন ঘণ্টায় বিক্রি হয় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার মাছ। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসে এসব নানা জাতের দেশি-বিদেশি মাছ।

এ আড়তে গরিবের মাছখ্যাত পাঙাশ থেকে শুরু করে রুই, কাতলা, মৃগেল, তেলাপিয়া, কই, শিং, টাকি, মাগুর, পুঁটি, বাইম, চিংড়িসহ বিভিন্ন ধরনের দেশি ও চাষের মাছ পাওয়া যায়। নদীর পাশাপাশি সাগরের বাইলা, চাপিলা, সুরমা, পোয়া, রিঠা, লইট্টা, টুনা প্রভৃতি মাছ পাওয়া যায়। ওমান, চীন ও ভারত থেকে আমদানি করা মাছ সরাসরি এখানে আসে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৬ সালে প্রথমে বিজিবি মার্কেটে মাছ বিক্রি শুরু হয়। তবে ২০০৯ সালে এ বাজারে দ্বীপনগর আড়তের যাত্রা শুরু হলেও বাজার জমে ওঠে ২০১৫ সালের পর থেকে। পরে পাঁচটি হিমাগার ও একটি বরফকল নিয়ে এটি এখন একটি পূর্ণাঙ্গ মৎস্য আড়তে পরিণত হয়, যেখানে ছোট–বড় প্রায় ৪০০ পাইকারি দোকান রয়েছে।

আড়তদার ও বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, দ্বীপনগর আড়তে জ্যান্ত মাছের পাইকারদের বিনা মূল্যে পানি সরবরাহ করায় তাঁদের প্রত্যেকের প্রায় ৫০০ টাকা করে সাশ্রয় হয়। তার ওপর যাতায়াতের সুবিধা ভালো, ওজনে কেউ মাছ কম দেয় না, চুরিও হয় না এবং সবচেয়ে বড় কথা হলো, এখানে চাঁদাবাজিমুক্ত পরিবেশে বেচাকেনা করা যায়। এসব কারণে এটি এরই মধ্যে ঢাকার অন্যতম বৃহৎ ও জনপ্রিয় আড়তে পরিণত হয়েছে। ফলে এখানে দিন দিন পাইকার বাড়ছে এবং মোকামও আশপাশে বিস্তৃত হচ্ছে।

দ্বীপনগর আড়তের ‘অটুট বন্ধন মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতি’র সভাপতি মো. ইনসার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে দৈনিক প্রায় ৪০ হাজার কেজি পাঙাশ বিক্রি হয়, যা কারওয়ান বাজারেও হয় না। সব ধরনের মাছ মিলিয়ে দৈনিক দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়।’

* দ্বীপনগর আড়তে পাঙাশ, রুই, কাতলা, মৃগেল, তেলাপিয়া, কই, শিং, টাকি, মাগুর, পুঁটি, বাইম, চিংড়িসহ বিভিন্ন ধরনের দেশি ও চাষের মাছ পাওয়া যায়।
* নদী ও সাগরের বাইলা, চাপিলা, সুরমা, পোয়া, রিঠা, লইট্টা, টুনা প্রভৃতি মাছও বিক্রি হয়।
* প্রতিবেশী ভারত থেকে শুরু করে ওমান, সুদান, জর্ডান, চীন ও জাপান থেকে আমদানি করা মাছ এখানে বিক্রি হয়।

আড়তদার ও পাইকারদের দাবি, এটি দেশে পাঙাশ মাছের সবচেয়ে বড় আড়ত। এখানে দিনে ৩৫ থেকে ৪০ ট্রাক পাঙাশ মাছ আসে। এসব ট্রাকে ৩০ থেকে ৪০টি করে পাঙাশের ড্রাম থাকে। এর একেকটিতে ৪০ কেজি মাছ থাকে। গড়ে ৩৫টি ট্রাকে ৩৫টি করে ড্রাম এবং প্রতি ড্রামে ৪০ কেজি ধরে হিসাব করলে দেখা যায়, এখানে দৈনিক ৪৯ হাজার কেজি পাঙাশ মাছ বিক্রি হয়, যার দাম ৬৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

বিশেষ করে রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, শ্যামলী, গাবতলী, সাভার, উত্তরা এবং আবদুল্লাহপুর এলাকার পাইকারেরা দ্বীপনগর আড়তে মাছ কিনতে আসেন। অটুট বন্ধন মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মনির হোসেন বলেন, কম দামে পাওয়া যায় বলে পাইকারেরা এখানে মাছ কিনতে আসেন। তাঁর নিজস্ব বরফকল রয়েছে। ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বরফের পাটা বিক্রি করেন। তাই বাইরে থেকে বরফ আনতে হয় না।

সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভোরের আলো ফোটার আগেই বিভিন্ন এলাকার পাইকারেরা মাছ কিনতে দ্বীপনগর আড়তে চলে আসেন। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত নিলামের হাঁকডাকে সরগরম হয়ে ওঠে পুরো আড়ত। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা তাজা ও হিমায়িত মাছের পাশাপাশি বিদেশ থেকে আনা মাছের বেচাবিক্রি শেষ হয়ে যায়। ৯টার পরপরই সব ব্যস্ততা শেষে ধোয়ামোছার কাজ শুরু হয়ে যায়।

সাভার নবীনগর থেকে আসা পাইকার ফরিদুল ইসলাম জানান, তিনি এখান থেকে দৈনিক ১৫০–২০০ কেজি সাগরের মাছ নিয়ে এলাকার বাজারে বিক্রি করেন।

আড়তদারেরা জানান, দেশের সিলেট, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, নওগাঁ, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, টেকেরহাট, খুলনা, রাজশাহী, মোংলা, সাতক্ষীরাসহ সব অঞ্চল থেকেই মিঠাপানি এবং নদী ও সাগরের মাছ আসে দ্বীপনগর আড়তে। ওমান, সুদান, জর্ডান, জাপান, চীন এবং ভারত থেকেও সামুদ্রিক মাছ আনা হয়।

মেসার্স ঢাকা গাবতলী ফিশ আড়তের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দৈনিক ৫ টনের মতো মাছ বিক্রি হয়, যার দাম ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার মতো।’ তাঁদের হিমাগারে মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ২ মাস পর্যন্ত মাছ ঠিক থাকে। প্রয়োজনে তাপমাত্রা আরও কমানো যায় বলে জানান তিনি। তবে আড়তদারদের হিসাবে এসব হিমাগার থেকে দৈনিক ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়।

৫৫০ টাকা করে বাইম মাছ কেনার পর আদাবর বাজারের একজন পাইকার প্রথম আলোকে জানান, তিনি এই মাছ বিক্রি করবেন ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়। পোয়া মাছ কিনেছেন ৩৩০ টাকা কেজি দরে, বেচবেন ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। ওই পাইকার আরও জানান, আগে কারওয়ান বাজার থেকে মাছ কিনলেও এখন সুবিধা থাকায় দ্বীপনগরে আসেন। প্রতিদিন পাঙাশ, তেলাপিয়া, রুই মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৫০ থেকে ৭০ কেজি মাছ কেনেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছুটি না পেয়ে অসুস্থ শ্রমিকের মৃত্যু, মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ 
  • সামুদ্রিক মাছে ভরপুর আড়ত, দাম কেমন
  • মেঘনার পাড়ে ‘আড়াই ঘণ্টার হাট’, দৈনিক বেচাকেনা ২৫-২৬ লাখ টাকার টাটকা মাছ
  • দেশে পাঙাশের বৃহত্তম আড়ত দ্বীপনগর, পাওয়া যায় দেশি-বিদেশি অনেক মাছ