ঝিনাই নদীর ওপর দাঁড়িয়ে আছে বন্যায় ভেঙে যাওয়া গার্ডার সেতু। ভেঙে পড়ার প্রায় পাঁচ বছরেও সেতুটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। সেতুটি ভেঙে থাকায় ভোগান্তির শিকার চরাঞ্চলের অর্ধশত গ্রামের মানুষ।
ভাঙা সেতুটি সরিষাবাড়ী উপজেলা কামরাবাদ ইউনিয়নের শুয়াকৈর গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝিনাই নদীর ওপর। চরাঞ্চলের মানুষের উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র সড়কটি ভাঙা সেতুর সঙ্গে যুক্ত। সেতুটি ভেঙে পড়ার পর থেকে ঝুঁকি নিয়ে নৌকা দিয়ে নদী পারাপার হতে হচ্ছে।
২০২০ সালের ২২ জুলাই বন্যার পানির তোড়ে ২০০ মিটার গার্ডার সেতুর মাঝের চারটি পিলার ও তিনটি স্প্যানসহ ৬০ মিটার নদীতে ভেঙে পড়ে। এর পর থেকে নদী পারাপারে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন চরাঞ্চলের মানুষ। শুয়াকৈর গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ঝিনাই নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণ হওয়ার পর থেকে প্রায় ১৪ বছর ভোগান্তি ছিল না চরাঞ্চলের মানুষের। কৃষক তাদের ফসল নিয়ে হাটবাজারে, শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে, চিকিৎসাসেবাসহ জরুরি প্রয়োজনে সহজেই যাতায়াত করতে পারতেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরিষাবাড়ী উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের ২০০৩-০৪ অর্থবছরে এলজিইডির অর্থায়নে একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রায় দুই কোটি টাকায় সেতুটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায় এম এইচ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আক্তারুজ্জামান। শুয়াকৈর গ্রাম এলাকায় ঝিনাই নদীর ওপর ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০০৬ সালে। এর প্রায় ১৪ বছর পর ২০২০ সালের ২২ জুলাই বন্যার পানির তোড়ে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের গার্ডার সেতুর মাঝের চারটি পিলার ও তিনটি স্প্যানসহ ৬০ মিটার নদীতে বিলীন হয়। সেতুটি নির্মাণের পর থেকে চরাঞ্চলের অর্ধশত গ্রামের মানুষ ২৪ ঘণ্টা সুবিধামতো উপজেলা সদরে যাতায়াতসহ কৃষিপণ্য পরিবহন করতে পারতেন। সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে এই সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এখন কৃষিপণ্যের ন্যাযমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চরের কৃষকরা।
স্থানীয়রা জানান, সেতুটি নির্মাণের পর এলাকার হাজারো বেকার যুবক ও নিম্ন আয়ের মানুষ অটোরিকশা ও ভ্যান চালিয়ে উপার্জন করতেন। এতে এলাকার মানুষের অভাব-অনটন কিছুটা কমে যায়। এসব যান চলাচলের ফলে চরাঞ্চলের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, মুমূর্ষু রোগী যে কোনো সময় যাতায়াত করতে পারতেন। সেতুটি ভেঙে পড়ায় অটোরিকশা, ভ্যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার হয়ে পড়েছেন নিম্ন আয়ের হাজারো মানুষ।
কথা হয় ভুক্তভোগী মঞ্জুরুল ইসলাম, আলি আকবর, সাইফুল ইসলাম, আব্দুর রশিদ, হাফিজুর রহমান ও বাছেদ মিয়া নামে কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানান, এখন বন্যা চলে এসেছে। বর্ষা মৌসুম আসার আগেই নদীর ওপর ভাঙা সেতু সংস্কারের দাবি জানালেও কোনো সাড়া মেলেনি। যাতায়াতের কষ্টে আছেন তারা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত সেতুটি নির্মাণের দাবি তাদের।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলামের ভাষ্য, ভাঙা সেতুর পাশে নতুন করে
সেতু নির্মাণকাজের সব তথ্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে
পাঠানো হয়েছে। সেতু নির্মাণের প্রস্তুতি চলমান। নতুন করে সেতু নির্মাণের জন্য ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঝ ন ই নদ র ওপর র পর থ ক উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই বিরোধিতা: ৩০ শিক্ষক-কর্মচারী ও ৩৩ ছাত্রলীগ নেতার ‘শাস্তি’
জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিরোধী তালিকায় থাকা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ৩০ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত এবং একই অভিযোগে ৩৩ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার বা সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭১তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আরো পড়ুন:
আ.লীগে যোগ দেওয়া মুবিনকে আইনজীবী ফোরাম থেকে বহিষ্কার
ববির ৪ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
সিন্ডিকেট সভা সূত্রে জানা গেছে, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের বিরুদ্ধে ভূমিকায় থাকা ইবির ১৯ জন শিক্ষক, ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে ‘শাস্তি নির্ধারণ কমিটি’ করবেন উপাচার্য অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ।
এদিকে একই অপরাধে জড়িত থাকায় ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট। যাদের পড়াশোনা শেষ হয়েছে, সেই শিক্ষার্থীদের সনদ বাতিল করা হবে। আর যারা অধ্যয়নরত, তাদের বহিষ্কার করা হবে।
এর আগে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের বিরুদ্ধে ভূমিকায় অবতীর্ণ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের চিহ্নিতকরণে গত ১৫ মার্চ আল-হাদীস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আকতার হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে প্রশাসন।
এই কমিটি প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ, বিভিন্ন তথ্যচিত্র, ভিডিও এবং পত্রিকার খবর পর্যালোচনা করে তালিকায় থাকা শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানবিরোধী এবং নিবর্তনমূলক কার্যকলাপের সংশ্লিষ্টতা পায়।
কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সর্বশেষ কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিন্ডিকেট সভায় তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সাময়িক বরখাস্তের তালিকায় থাকা শিক্ষকরা হলেন: ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মন, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ ও অধ্যাপক ড. রবিউল হোসেন, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেন ও অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিন, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. এইচ. এম আক্তারুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. মিয়া রাশিদুজ্জামান।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আরফিনসহ আরো রয়েছেন, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহজাহান মণ্ডল ও অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাজেদুল হক, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আফরোজা বানু, আল-ফিকহ অ্যান্ড ল বিভাগের অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেহেদী হাসান এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জয়শ্রী সেন।
সাসপেন্ড হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকায় রয়েছেন প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার উপ-রেজিস্ট্রার আলমগীর হোসেন খান ও আব্দুল হান্নান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার ও কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান মুকুট, একই দফতরের উপ-রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম সেলিম, প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার উপ-রেজিস্ট্রার ড. ইব্রাহীম হোসেন সোনা।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শাখা কর্মকর্তা উকীল উদ্দিনসহ তালিকায় নাম রয়েছে ফার্মেসি বিভাগের জাহাঙ্গীর আলম (শিমুল), আইসিটি সেলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জে এম ইলিয়াস, অর্থ ও হিসাব বিভাগের শাখা কর্মকর্তা তোফাজ্জেল হোসেন, তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ দপ্তরের উপ-রেজিস্ট্রার (ফটোগ্রাফি) শেখ আবু সিদ্দিক রোকন এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার মাসুদুর রহমানের।
বহিষ্কার ও সদন বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৩-১৪ বর্ষের বিপুল খান, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৪-১৫ বর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ বর্ষের মেহেদী হাসান হাফিজ ও শাহীন আলম, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের রতন রায়।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৪-১৫ বর্ষের মুন্সি কামরুল হাসান অনিকসহ তালিকায় রয়েছেন, মার্কেটিং বিভাগের ২০১৫-১৬ বর্ষের হুসাইন মজুমদার, বাংলা বিভাগের ২০১৬-১৭ বর্ষের তরিকুল ইসলাম।
ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের মৃদুল রাব্বী, ইংরেজি বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের ফজলে রাব্বী, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের শাকিল, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের শিমুল খান, আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের কামাল হোসেন, ইংরেজি বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের মাসুদ রানা, আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের মেজবাহুল ইসলাম বহিষ্কার ও সনদ বাতিলের তালিকায় রয়েছেন।
সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের অনিক কুমার, বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের আব্দুল আলিম, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের বিজন রায়, শেখ সোহাগ ও শাওনও এই শাস্তি পেয়েছেন।
জুলাই অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করায় শাস্তি পেয়েছেন অর্থনীতি বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের তানভীর ও শেখ সাদি, সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের মাজহারুল ইসলাম, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের মনিরুল ইসলাম আসিফ, সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের মারুফ ইসলাম, চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের পিয়াস, বাংলা বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের ফারহান লাবিব ধ্রুব, আল-ফিকহ অ্যান্ড ল বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের প্রাঞ্জল, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের নাবিল আহমেদ ইমন।
ফিনান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের রাফিদ, লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের আদনান আলি পাটোয়ারি, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের লিয়াফত ইসলাম রাকিব এবং ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের ইমামুল মুক্তাকী শিমুলও শাস্তির তালিকায় রয়েছেন।
এদিকে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে প্রকাশ্যে বিরোধিতাকারী হিসেবে এই ৬৩ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিলেও তাদের উস্কানিদাতা এবং পেছন থেকে আন্দোলন দমনকারী অনেকেই ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। একই অভিযোগ অভিযুক্তদেরও। তবে তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলমান রয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকা/তানিম/রাসেল