খুচরায় চালের দাম কেজিতে ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে
Published: 20th, June 2025 GMT
দেশের বাজারে চালের দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ধরনভেদে প্রতি কেজি চালের দাম দুই থেকে আট টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। চালের পাশাপাশি বেড়েছে সোনালি মুরগি আর আলুর দামও।
বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদনস্থলে বোরো ধানের দাম হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরু তথা মিনিকেট চালের দাম এখন বাড়তি। সরু চালের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে মোটা ও মাঝারি চালের দামও বাড়ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউনহল বাজার ও মিরপুর–৬ কাঁচাবাজার ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে। খুচরা বিক্রেতারা জানান, গত এক সপ্তাহে মিনিকেট চালের দাম কেজিপ্রতি ছয় থেকে আট টাকা বেড়েছে। আর মোটা ও মাঝারি চালের কেজিতে বেড়েছে দুই–তিন টাকা।
শহরের মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভোক্তারা সাধারণত মিনিকেট চাল বেশি খান। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল ঢাকার খুচরা দোকানগুলোতে ডায়মন্ড, মঞ্জুর, সাগর, রশিদ প্রভৃতি ব্র্যান্ডের প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৮০ থেক ৮২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও এসব চালের কেজি ছিল ৭৫–৭৬ টাকা। এ ছাড়া মোজাম্মেল মিনিকেট চালের দাম কেজিতে প্রায় ছয় থেকে আট টাকা বেড়েছে। তাতে প্রতি কেজি মোজাম্মেল চাল গতকাল বিক্রি হয় ৮৮–৯০ টাকায়। দাম বেশি হওয়ায় অনেক বিক্রেতা এখন দোকানে মোজাম্মেল চাল রাখছেন না বলে জানান।
নিম্ন ও নিম্ন মাঝারি আয়ের মানুষেরা সাধারণত মোটা ও মাঝারি চাল বেশি খান। এসব চালের কেজি সাধারণত ৫০–৫৫ টাকার আশপাশে থাকে। সম্প্রতি এসব চালের দামও বেড়েছে। মোটা হিসেবে পরিচিত স্বর্ণা চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়ে গতকাল ৫৭–৫৮ টাকায় উঠেছে। আর ব্রি–২৮ ও ব্রি–২৯ জাতের মাঝারি চালের দামও কেজিতে ২ টাকা বেড়ে ৬০–৬২ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাস দেড়েক হলো বাজারে নতুন মৌসুমের বোরো ধান এসেছে। এই ধান থেকে তৈরি চাল গত মাসের শুরুতেই বাজারে আসে। তাতে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে মিনিকেটের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা কমেছিল। অনেকটা সেই দামেই এ চাল বিক্রি হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বোরো ধানের দাম আবার বেড়ে যাওয়ায় গত সপ্তাহ থেকে মিনিকেট চালের দামও বাড়িয়ে দেন চালকলমালিকেরা।
দেশে ধান–চালের অন্যতম উৎপাদনস্থল নওগাঁ জেলা। এই জেলার চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার প্রথম আলোকে বলেন, জিরাশাইল ও কাটারিভোগ ধানের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে জিরাশাইল ধানের দাম মণপ্রতি ১২৫–১৫০ টাকা ও কাটারি ধানের দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। এর প্রভাবে নওগাঁয় পাইকারিতে চালে কেজিপ্রতি এক থেকে তিন টাকা মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে বাজারে সোনালি মুরগির দামও বেড়েছে। কোরবানির ঈদের পরপর ক্রেতা কম থাকায় বেশ কয়েক দিন অনেকটা কম দামেই মুরগি বিক্রি হয়েছিল। চার দিন আগে প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হয়েছিল ২৪০ থেকে ২৮০ টাকায়। গতকাল খুচরা দোকানে প্রতি কেজি সোনালি মুরগির দাম রাখা হয় ২৮০–৩২০ টাকা। তবে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়েনি। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয় ১৫০–১৬০ টাকায়। আর ডিমের ডজন এখন ১২০–১৩০ টাকা।
বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির দাম অনেকটা স্থিতিশীল রয়েছে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দাম বাড়েনি, কমেওনি। তবে আলুর দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ২৫–৩০ টাকা হয়েছে। আর পাড়া–মহল্লায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেনা যাচ্ছে ৫৫–৬০ টাকায়।
গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে আফসানা রহমান নামের আদাবর এলাকা থেকে আসা এক ক্রেতা প্রথম আলোকে বলেন, ঈদ শেষ হতে না হতেই চালের দাম বাড়ল। মাত্র কয়েক দিন আগে নতুন বোরো ধান বাজারে এসেছে। এরপর চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন প্রতিনিধি, নওগাঁ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
আল-আকসা মসজিদ চত্বরে প্রার্থনা ইসরায়েলি কট্টরপন্থী মন্ত্রীর
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইসরায়েলের কট্টরপন্থী নেতা ও জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির আল-আকসা মসজিদ চত্বরে প্রকাশ্য প্রার্থনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। গত রোববার কয়েক শ ইহুদি বসতিস্থাপনকারী তাঁর সঙ্গে প্রার্থনায় অংশ নেয়। তাঁরা কড়া পুলিশি পাহারায় উচ্চস্বরে ইহুদি রীতি অনুযায়ী প্রার্থনা করেন। এ সময় তাঁরা মুসলিমদের উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করেন।
মিডল ইস্ট আই এ ঘটনার বেশ কিছু ভিডিও দেখেছে। ভিডিওতে শত শত বসতিস্থাপনকারীকে আল-আকসা মসজিদ চত্বরে অনুপ্রবেশ করতে দেখা গেছে। এ সময় কিছু লোককে নাচতে ও হৈহুল্লোড় করতে দেখা যায়। এ ধরনের কর্মকাণ্ড মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন করে।
ইসরায়েলের দখলে থাকা পূর্ব জেরুজালেমের ওল্ড সিটিতে আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনায় নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে মেনে আসা হচ্ছিল। যদিও ইহুদি গোষ্ঠীগুলো গত শতকে বারবার এই ভঙ্গুর ব্যবস্থাপনা লঙ্ঘন করেছে। শুধু তাই নয়, ইসলাম ধর্মের অন্যতম পবিত্র স্থানটির ওপর নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে তারা।
জেরুজালেমের ওল্ড সিটির বাসিন্দারা জানান, বেন গভির আসার আগে ও পরে পুরো এলাকাটিকে ‘একটি সামরিক ঘাঁটির’ মতো মনে হচ্ছিল। সেখানে অসংখ্য তল্লাশিচৌকি বসানো হয়। ইসরায়েলি সেনারা নিরাপত্তাব্যবস্থা ব্যাপকভাবে জোরদার করেছিল।
স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, বেন গভিরের পরিদর্শনের সময় ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনিদের মসজিদে প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। শুধু অল্পসংখ্যক স্থানীয় বাসিন্দাকে ওই স্থানে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়।
পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বেন গভির বলেন, ‘টেম্পল মাউন্ট ইহুদিদের জন্য। আমরা চিরদিন এখানে থাকব।’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের মন্ত্রী হওয়ার পর থেকে বেন গভির অন্তত ১১ বার আল-আকসা মসজিদ চত্বরে অনুপ্রবেশ করেন। এদিকে বেশ কয়েকজন কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিবিদ আল-আকসা ধ্বংস করে সেখানে একটি ইহুদি উপাসনালয় নির্মাণের পক্ষে মত দিয়েছেন। তাদের দাবি অনুযায়ী, সেখানে একসময় ইহুদি উপাসনালয় ছিল।
রোববার আল আকসা পরিদর্শনের সময় ডানপন্থী লিকুদ পার্টির আইনপ্রণেতা আমিত হালেভিও উপস্থিত ছিলেন। তিনি গাজায় পানি, খাদ্য ও জ্বালানির সব উৎস ধ্বংস করতে বারবার ইসরায়েল সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন।