সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের দুই ছেলে ও মেয়ের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা
Published: 22nd, June 2025 GMT
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ছেলে সাদাকাত জামান, তানায়েম জামান চৌধুরী ও মেয়ে জেবা জামানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন আজ রোববার এ আদেশ দেন।
দুদকের পক্ষ থেকে আদালতকে বলা হয়েছে, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর দুই ছেলে ও এক মেয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে দুদক জানতে পেরেছে। শুনানি নিয়ে আদালত তাঁদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন।
এর আগে ১৭ জুন বিদেশে অর্থ পাচারে সহায়তার অভিযোগে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ তিনজনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তাঁরা হলেন উৎপল পাল, আব্দুল আজিজ ও সৈয়দ কামরুজ্জামান।
গত ৯ মার্চ সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের নামে থাকা ২৩টি কোম্পানির ১০২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে ৯৫৭ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেওয়া হয়। ৫ মার্চ সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ২৯টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত। এসব ব্যাংক হিসাবে ৫ কোটি ২৬ লাখ ৮৩ হাজার ৮৫ টাকা লেনদেনের তথ্য আদালতকে জানিয়েছে দুদক।
দুদকের পক্ষ থেকে আদালতে বলা হয়, সাইফুজ্জামানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ অনুসন্ধানে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর সাইফুজ্জামান ও তাঁর স্ত্রী রুকমীলা জামানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তখন দুদকের পক্ষ থেকে আদালতকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছিল, সাইফুজ্জামানের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারসহ অনিয়ম–দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে।
দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাইফুজ্জামান বিদেশে অর্থ পাচার করে নিজ ও পরিবারের সদস্যদের নামে যুক্তরাজ্যে ৩৫০টি বাড়ি কিনেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে তিনি বাড়ি কিনেছেন ২২৮টি। যুক্তরাষ্ট্রে ৯টিসহ অন্যান্য দেশেও তিনি বাড়ি কিনেছেন। তবে যুক্তরাজ্যে তাঁর সম্পদ জব্দ করেছে দেশটির ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)। বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাইফুজ্জামানের বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনযুক্তরাজ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পত্তি জব্দ১১ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব ক ভ ম মন ত র য ক তর জ য
এছাড়াও পড়ুন:
ঘুষে চলে যায় বরাদ্দের অর্ধেক
সড়ক পাকাকরণের কাজ হয়েছে ৬০ শতাংশ। ঠিকাদার মোট বিলের ৮০ শতাংশ তুলে নিয়ে তিন বছর ধরে লাপাত্তা। এক কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের কাজ থমকে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের।
এ চিত্র দেখা গেছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে নওগাঁ মাজার থেকে রংমহল পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের। ইতোমধ্যে সড়কে বিছানো খোয়া উঠে গেছে। ধুলাবালি জমে সামান্য বৃষ্টিতে কাদাপানিতে একাকার সড়ক।
এ বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাব্বির এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলম হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে কল রিসিভ করলেও তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন জানান, কার্যাদেশ পাওয়ার মোট বরাদ্দের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রকৌশলী, অফিস সহকারীসহ বিভিন্ন জনকে দিতে হয়। কাজ চলাকালে উপজেলা প্রকৌশল অফিসের যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারী সাইটে যান, তাদের ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা হাজিরা হিসাবে দিতে হয়। এভাবে বরাদ্দের অর্ধেক টাকা চলে যায় ঘুষের পেছনে। যে টাকা থাকে, তা দিয়ে মানসম্মত কাজ করা সম্ভব হয় না। এ কারণে অনেক ঠিকাদার কিছুদিন কাজ করার পর বরাদ্দের টাকা তুলে লাপাত্তা হয়ে যান। কর্তারা তাদের কীভাবে বিল ছাড় করেন, তারাই বলতে পারবেন। অবৈধ আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশল অফিসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বীকার করেননি।
২০২১-২২ অর্থবছরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ৩-এর আওতায় নওগাঁ ইউনিয়নের নওগাঁ মাজার থেকে রংমহল পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এ কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৬৯ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯৪ টাকা। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ৬৬ লাখ ১১ হাজার ৮৯৯ টাকায় কার্যাদেশ পায় মেসার্স সাব্বির এন্টারপ্রাইজ। ২০২২ সালের ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। এর পর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও তা শেষ হয়নি।
২০২১ সালের ২২ অক্টোবর তৎকালিন সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ সড়ক পাকাকরণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর পর ঠিকাদার সড়কের উভয় পাশে মাটি খুঁড়ে বালু ফেলে খোয়া বিছিয়ে দেন। এর মধ্যে সড়কের কাজ হয়েছে ৬০ শতাংশ। কিন্তু ঠিকাদার ৮০ শতাংশ কাজের বিল তুলে লাপাত্তা। তিন বছর ধরে সড়কটি বেহাল পড়ে আছে।
সড়কের কাজ শেষ করতে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বারবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিলেও
সাড়া মেলেনি। নিরুপায় হয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কার্যাদেশ বাতিল করেছে। এখন চলছে পুনঃদরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া।
সড়কটি দিয়ে নওগাঁয় হজরত শাহ শরিফ জিন্দানী (র.)-এর মাজার, নওগাঁ জিন্দানী ডিগ্রি কলেজ, নওগাঁ ফাজিল মাদ্রাসা, নওগাঁ হাটবাজার, নওগাঁ সোনালী ব্যাংক, নওগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ অফিসে যাতায়াত করতে হয়।
উপজেলা প্রকৌশলী ফজলুল হক বলেন, ‘প্রকল্প পরিচালক সড়কটি পরিদর্শন করেছেন। ঠিকাদার প্যালাসাইডিং, সাববেজ, সেন্ট ফিলিং ও ডব্লিউবিএম করেছে। সে অনুযায়ী বিল পাঠিয়েছি। বাকি কাজ না করায় বেশ কয়েকবার তাগাদা দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সাড়া না পাওয়ায় ঠিকাদারের চুক্তিপত্র বাতিল করা হয়েছে।’