চট্টগ্রামের বাজারে চালের দাম বেড়েছে। গত এক মাসের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা বেড়েছে চালের দাম। এর প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারগুলোতেও। এর মধ্যে চট্টগ্রামে বেশি বিক্রি হওয়া জিরাশাইল চালের দাম বেড়েছে বস্তায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। আগামী মাসের শুরুতে দাম কমতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

নগরে কোরবানির ঈদের আগে চালের দাম কিছুটা কম ছিল। তখন আগের মাসের তুলনায় বস্তাপ্রতি চালের দাম কমে প্রায় ৩০০ টাকা পর্যন্ত। নতুন মৌসুমের বোরো ধান বাজারে আসায় দাম কমে। এই ধান থেকে তৈরি চাল গত মাসের শুরুতেই বাজারে আসে। তবে এক মাসের ব্যবধানে আবারও বেড়েছে দাম। এর মধ্যে সরু চালের দামই বেশি।

চট্টগ্রাম নগরে চালের মূল আড়ত পাহাড়তলী বাজার। এর বাইরে বড় আড়ত রয়েছে চাক্তাইয়ে। গত জুনের এ সময়ে চালের আড়তে মোটা চাল (গুটি, স্বর্ণা) কেজিপ্রতি ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে জিরাশাইল বিক্রি হয়েছে ৭২ টাকায়। কাছাকাছি দামে বিক্রি হয়েছে মিনিকেট আতপ। তবে বর্তমানে সব চালেই কেজিপ্রতি ৪ থেকে ৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো চাষিদের অগ্রিম টাকা দিয়ে চাল কিনে নিচ্ছে। এ কারণে মিলের মালিকেরা ধান পাচ্ছেন না। এটিও চালের দামে প্রভাব ফেলছেফরিদ উদ্দিন আহমেদ, সভাপতি, চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতি

ব্যবসায়ীদের দাবি, মূলত পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যাওয়া, ধানের দাম বাড়া এবং চালকলে খরচ বেশি পড়ায় দামে প্রভাব পড়েছে। এর বাইরে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মজুতের কারণেও প্রভাব পড়েছে বাজারে। এ ছাড়া কৃষকেরাও ধানের দাম বাড়িয়েছেন।

চট্টগ্রামে কিছু ধান উৎপাদিত হলেও এটি ধানের উৎপাদন এলাকা নয়। দেশের উত্তরাঞ্চল ও এর আশপাশের জেলা থেকে ধান আসে চট্টগ্রামে। বর্তমানে বোরো মৌসুমেও বাজারে ধান আসতে শুরু করেছে। এর মধ্যে ইরি ধান, ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ ধানের দাম মণপ্রতি ১০০ থেকে ২৫০ টাকা বেড়েছে। গত বছর এ সময়ে প্রতি মণ ধানের দাম ছিল ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা। বর্তমানে প্রতি মণ ধানের দাম ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত।

ব্যবসায়ীদের দাবি, মূলত পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যাওয়া, ধানের দাম বাড়া এবং চালকলে খরচ বেশি পড়ায় দামে প্রভাব পড়েছে। এর বাইরে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মজুতের কারণেও প্রভাব পড়েছে বাজারে। এ ছাড়া কৃষকেরাও ধানের দাম বাড়িয়েছেন।

চট্টগ্রামে রাইস মিল মালিক সমিতির আওতায় প্রায় ১২৬টি চালকল রয়েছে। তারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ধান সংগ্রহ করে চাল তৈরি করে। তারা বলছে, ধানের জোগান থাকলেও খরচ পড়ছে বাড়তি। চালকলে প্রতি মণ ধানে কেবল ৬৭ শতাংশ চাল হয়, বাকি অংশ কুঁড়া।

চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, হঠাৎই চালের দাম বেড়েছে বাজারে। এর কারণ পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যাওয়া আর ধানের দাম বেড়ে যাওয়া। তিনি আরও বলেন, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো চাষিদের অগ্রিম টাকা দিয়ে চাল কিনে নিচ্ছে। এ কারণে মিলের মালিকেরা ধান পাচ্ছেন না। এটিও চালের দামে প্রভাব ফেলছে।

চাল ব্যবসায়ীরা জানান, সাধারণত বিপুল পরিমাণে চাল ও ধান পরিবহনের জন্য পিকআপ ভ্যান ও ট্রাক ব্যবহার করেন ব্যবসায়ীরা। তবে কোরবানির ঈদের আগে অধিকাংশ ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান কোরবানির পশু পরিবহনে যুক্ত ছিল। আবার এখন দেশে ফলের মৌসুমেও ট্রাকগুলো ফলের বাজারকেন্দ্রিক বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে চালের পরিবহনে খরচ কিছুটা বেড়েছে।

আগে যেখানে পরিবহন খরচ ২০ হাজার টাকা ছিল, সেখানে এখন ৩০ হাজার টাকা। মাঝে প্রায় ১৫ দিন ঈদের কারণে চালকল বন্ধ ছিল। তখন মিলে শ্রমিকেরা কাজ করেননি। এর প্রভাব চালের সরবরাহে পড়েছে। ফলে সব মিলিয়ে দাম বেড়েছেনিজাম উদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, পাহাড়তলী বণিক সমিতি

পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, আগে যেখানে পরিবহন খরচ ২০ হাজার টাকা ছিল, সেখানে এখন ৩০ হাজার টাকা। মাঝে প্রায় ১৫ দিন ঈদের কারণে চালকল বন্ধ ছিল। তখন মিলে শ্রমিকেরা কাজ করেননি। এর প্রভাব চালের সরবরাহে পড়েছে। ফলে সব মিলিয়ে দাম বেড়েছে। তবে গত কয়েক দিনে একটু নিম্নমুখী আছে বাজার।

দেশে চালের দাম কয়েক বছর ধরে ওঠানামা করছে। বিগত কয়েক বছরে চালের দাম ৪০ টাকার নিচে নামেনি। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম প্রথম আলোকে বলেন, চালের দাম অনেক কারণেই বেড়েছে। এর মধ্যে ধানের দাম বেড়ে যাওয়া একটা কারণ। অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান চাল মজুত করছে। এটি একটি বড় কারণ, তবে সামনে দাম কমতে পারে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস য় র পর বহন র চ লকল

এছাড়াও পড়ুন:

স্বামী-সন্তানের সঙ্গে বান্দরবানে বেড়াতে যাচ্ছিলেন, মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে বাসের চাকায় মৃত্যু নারীর

চট্টগ্রামের পটিয়ায় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ার পর বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নারীর নাম ফজিলাতুন নেসা (২৮)। তিনি মাগুরা জেলার মহম্মদপুর থানার মহেশপুর গ্রামের আলিমুজ্জামান সুজনের স্ত্রী।

পুলিশ জানায়, স্বামীর সঙ্গে মোটরসাইকেলে গতকাল রোববার চট্টগ্রামে বেড়াতে আসেন ফজিলাতুন নেসা। তাঁদের ছয় বছর বয়সী সন্তানও সঙ্গে ছিল। গতকাল চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটের একটি বাসায় তাঁরা রাত্রিযাপন করেন। সকালে সেখান থেকে মোটরসাইকেলে করে তাঁরা বান্দরবানের উদ্দেশে রওনা দেন। আলিমুজ্জামান মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন এবং তাঁর পেছনে ছয় বছর বয়সী সন্তান হুমায়ের হাম্মাদ, এরপর ফজিলাতুন নেসা বসে ছিলেন।

সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ার নয়াহাট এলাকায় পৌঁছায় মোটরসাইকেলটি। সেখানে সামনে থাকা একটি লেগুনা হঠাৎ সড়কে থেমে গেলে তাৎক্ষণিক মোটরসাইকেলটির ব্রেক কষেন আলিমুজ্জামান। এ সময় ফজিলাতুননেসা মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়েন। এর পরপরই পেছন থেকে একটি যাত্রীবাহী বাস ফজিলাতুন নেসাকে পিষ্ট করে। তাঁকে উদ্ধার করে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

গতকাল রাতে চট্টগ্রাম নগরের যে বাসাটিতে ফজিলাতুন নেসা ছিলেন, সেটি তাঁর স্বামী আলিমুজ্জামানের বন্ধু রবিউল ইসলামের। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রবিউল ইসলামের বোন আশরিফা আহমদ ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ফজিলাতুন নেসার স্বামী নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির কনিষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক। পরিবার নিয়ে পাহাড় দেখতে বান্দরবানে বেড়াতে যাচ্ছিলেন তিনি। বেড়াতে যাওয়ার পথেই স্বামী-সন্তানের সামনে দুর্ঘটনায় তাঁর প্রাণহানি হয়েছে।

পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট ওয়াসিম আরাফাত দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নিহত নারীর লাশ আইনি–প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। লেগুনা ও বাসের চালককে আটক করা সম্ভব হয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ