গ্রেপ্তার আতঙ্কে গ্রাম পুরুষশূন্য, ২৪ ঘণ্টায়ও মামলা হয়নি, আটক নেই
Published: 4th, July 2025 GMT
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আকুবপুর ইউনিয়নের কড়ইবাড়ি গ্রামে দুই সন্তানসহ নারীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকা প্রায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ওই গ্রামে মা, ছেলেমেয়েসহ একই পরিবারের তিনজনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ সামনে এনে এলাকাবাসীকে খেপিয়ে নৃশংস এ ঘটনা ঘটানো হয়। তবে ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ ছাড়া থানায় মামলাও হয়নি।
মুরাদনগরের বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান শুক্রবার বেলা একটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। তাঁরা কুমিল্লা থেকে এজাহার লিখে এনে জমা দেবেন। ঘটনার পর এলাকা পুরুষশূন্য। সবাই পলাতক। তাঁরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন। তাঁদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
ওসি আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারটির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও এখন সবাই জামিনে ছিলেন। বৃহস্পতিবার যাঁরাই নেতৃত্ব দিয়ে ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।
নিহত তিনজন হলেন কড়ইবাড়ি গ্রামের খলিলুর রহমানের স্ত্রী রোকসানা বেগম ওরফে রুবি (৫৩), তাঁর ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫) ও মেয়ে তাসপিয়া আক্তার ওরফে জোনাকি (২৯)। এ ছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন রোকসানার আরেক মেয়ে রুমা আক্তার (২৭)। গতকাল আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে তাঁকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে রাতে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মুরাদনগর-নবীনগর সড়কের কড়ইবাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রোকসানাদের বাড়ি। সেখানে বাজারের মতো অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। পুরো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করায় আজ এলাকার বেশির ভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কড়ইবাড়ি গ্রামের এক বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রোকসানার বাড়ির সামনে অন্তত এক হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। যাঁদের বেশির ভাগই এলাকার যুবক শ্রেণির। এ জন্য এখন বেশির ভাগ বাড়ি পুরুষশূন্য। সবাই গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন। এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন টহল দিচ্ছেন।
‘চেয়ারম্যান-মেম্বারের ইন্ধনে’ হামলার অভিযোগস্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এ নিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর ক্ষোভ ছিল। মঙ্গলবার এলাকার একটি ওষুধের দোকান থেকে স্থানীয় এক শিক্ষকের মুঠোফোন চুরি যায়। অভিযোগ ওঠে, বোরহান উদ্দিন নামের এক তরুণ মুঠোফোনটি চুরি করেছেন। বোরহান নিহত তাসপিয়ার স্বামীর সঙ্গে কাজ করেন। এ ছাড়া এলাকাবাসী তাঁকে রোকসানার খুচরা মাদক বিক্রেতা হিসেবে চেনেন।
মঙ্গলবার মুঠোফোন চুরির অভিযোগে বোরহানকে আকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বাচ্চু মিয়া ও স্থানীয় ব্যবসায়ী বাছির উদ্দিনের নেতৃত্ব মারধর করা হয়। খবর পেয়ে রোকসানা বোরহানকে তাঁদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনতে গেলে বাচ্চু ও বাছিরদের সঙ্গে কথা–কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে কড়ইবাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ও সদস্য বাচ্চু মিয়া। এ সময় তাঁদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান রোকসানা বেগম ও তাঁর মেয়েরা। একপর্যায়ে রোকসানা মুঠোফোন চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাচ্চু মিয়াকে একটি চড় মারেন।
ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আধা ঘণ্টার মধ্যে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে বাছিরের নেতৃত্বে হামলা করে প্রথমে রোকসানার বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। একপর্যায়ে মাদক ব্যবসার বিষয়টি উসকে দিয়ে পুরো পরিবারকে হত্যাচেষ্টা করা হয়। এর মধ্যে ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যান। গুরুতর আহত হন একজন। রোকসানার স্বামী ও আরেক মেয়ে এলাকা থেকে পালিয়ে যান।
নিহত রাসেলের স্ত্রী মীম আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাছির নেতৃত্ব দিয়ে পুরো হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছে। বাছিরের পরিবারের অনেক লোকজন হত্যাকাণ্ডে জড়িত। চেয়ারম্যান ও মেম্বারের ইন্ধনে বাছির নেতৃত্ব দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। চেয়ারম্যান ঘটনার আগের দিনও এসেছিলেন কড়ইবাড়ি। ঘটনার দিন সকালে তিনি এখানেই ছিলেন। চেয়ারম্যান ও মেম্বার পুরো ঘটনায় জড়িত। তাঁরাই যুক্তি করে আমার স্বামীর পরিবারকে শেষ করে দিয়েছে। আমি তাঁদের বিচার চাই।’
আরও পড়ুনকুমিল্লায় মাদক বেচাকেনার অভিযোগে মা ও দুই সন্তানকে গণপিটুনি, কুপিয়ে হত্যা০৩ জুলাই ২০২৫ঘটনার পর থেকেই ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়া ও বাছির এলাকাছাড়া। তাঁদের মুঠোফোনও বন্ধ। ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি ঘটনার আগের দিন ওই এলাকায় গিয়ে কাউকে আইন হাতে তুলে নিতে নিষেধ করেছিলেন বলে দাবি করেন।
শিমুল বিল্লাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে কড়ইবাড়ি গিয়েছিলাম একটি রাস্তার কাজের শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য। তখন রোকসানার বাড়ির পাশে একটি দোকানে বসি। এ সময় রোকসানা ও তার মেয়েরা এসে আমার কাছে মোবাইল চুরিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে থাকে। আমি রোকসানাকে বলি, তোমার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। পরশু (মঙ্গলবার) তুমি ও তোমার লোকজন মেম্বারসহ কয়েকজনের গায়ে হাত তুলেছ। এর মধ্যে সেখানে আসেন বাচ্চু মেম্বার। তখন রোকসানার সঙ্গে তাঁর (বাচ্চু) কথা-কাটাকাটি হয়। পরে আমি তাঁদের দুই পক্ষকে দুই দিকে সরিয়ে দিই। এরপর আমি চলে যাই। চলে আসার প্রায় ৪০ মিনিট পর এ ঘটনা শুরু হয়েছে বলে জেনেছি। আমি কখনোই আইন হাতে তুলে নেওয়ার পক্ষে না। হত্যার ঘটনায় আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’
আরও পড়ুনমুঠোফোন চুরিকে কেন্দ্র করে খেপিয়ে তোলা হয় এলাকাবাসীকে১৭ ঘণ্টা আগেইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, রোকসানার পরিবার প্রায় তিন দশক ধরে মাদকের কারবারে জড়িত। এলাকার এমন কোনো পরিবার নেই, যারা রোকসানার লোকজনের হাতে হয়রানির শিকার হয়নি। কিছু হলেই মামলা দিয়ে হয়রানি করত। এ জন্য এলাকার লোকজন তাদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। কিন্তু তিনি আইন হাতে তুলে নেওয়াকে সমর্থন করেন না। তিনি চান, যাঁরা ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক হত য ক ণ ড ঘটন র পর র পর ব র এল ক ব স র ল কজন কড়ইব ড় ব রহ ন এল ক য় ন র পর এল ক র ব যবস আতঙ ক কজন র এ ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
মঙ্গলবার কুয়াকাটায় রাস উৎসব, গঙ্গা স্নান বুধবার
প্রায় ২০০ বছর ধরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মদনমোহন সেবাশ্রম মন্দির ও কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরে পৃথক আয়োজনে রাস উৎসব পালন করে আসছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এবছরও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে হবে এ উৎসব। রাস উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ায় বসছে ৫ দিনব্যাপী মেলা।
কলাপাড়ায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শেষ সময়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে মন্দিরের আঙ্গিনাসহ রাধা ও কৃষ্ণের ১৭ জোড়া প্রতিমা।
মঙ্গলবার পূর্ণিমা তিথিতে রাত ৯টা ২২ মিনিটে অধিবাসের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে রাস পূজার আনুষ্ঠানিকতা। পরের দিন বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৬ মিনিটে এ তিথি শেষ হবে। সেদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কুয়াকাটা সৈকতে গঙ্গা স্নান করবেন পুণ্যার্থীরা। এর পর মন্দিরের আঙ্গিনায় রাধা-কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা দর্শন করবেন তারা। তাই, দুই মন্দিরেই ১৭ জোড়া প্রতিমা বানানো হয়েছে। প্যান্ডেল সাজানোর কাজ শেষ। চলছে লাইটিং ও সাজসজ্জার কাজ।
এ উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ার মন্দির প্রাঙ্গণ, কুয়াকাটার মন্দির প্রাঙ্গণ ও সৈকতে অস্থায়ীভাবে বসছে শতাধিক পোশাক, প্রসাধনী, খেলনা ও গৃহস্থালী সামগ্রীর দোকান। কুয়াকাটায় তিন দিনব্যাপী উৎসব হলেও কলাপাড়ায় এ উৎসব চলবে পাঁচ দিন। এসব দোকানে অন্তত ৩০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রির আশা করছেন আয়োজকরা।
কলাপাড়ার শ্রী শ্রী মদনমোহন সেবাশ্রমের রাস উদযাপন কমিটির সভাপতি দিলীপ কুমার হাওলাদার বলেছেন, আজকের মধ্যেই আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। হিন্দু ধর্মালম্বীদের এ উৎসব হলেও এখানে ৫ দিনব্যাপী মেলায় সব ধর্মের মানুষের আগমন ঘটে। আমাদের মন্দির প্রাঙ্গণে অন্তত ৭০টি দোকান বসেছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে রাস উৎসব সম্পন্ন হবে।
কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নীহার রঞ্জন মন্ডল বলেছেন, আগামীকাল রাতভর মন্দির প্রাঙ্গণে ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলবে। পরদিন সকালে গঙ্গা স্নান হবে। লাখো পুণ্যার্থীর আগমনের আশা করছি আমরা। বুধবারও গঙ্গা স্নান হবে। উৎসব উপলক্ষে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউসার হামিদ বলেছেন, রাস উৎসব উপলক্ষে কুয়াকাটায় ১ লাখ পুণ্যার্থী সমাগমের আশা করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে এ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে।
ঢাকা/ইমরান/রফিক